করোনায় মানুষের কাছে পুলিশ কতটা আস্থা অর্জন করলো

পুলিশের মানবিক উদ্যোগ সাতক্ষীরা বাসির  হৃদয়ে স্থান পেয়েছে: পুলিশ সুপারের পক্ষ থেকে পিপি বিতরণ

ক্রাইমর্বাতা রিপোট:সাতক্ষীরা:   দেশে করোনা আক্রান্তের মধ্যে মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনী। এ দুর্দশায় মানুষের পাশে সেই পুলিশ। জীবন বাজি রেখে ছুটে চলা। বিশেষ করে সাতক্ষীরা পুলিশের কিছু উদ্যোগ জেলাবাসির  হৃদয়ে স্থান পেয়েছে।

পুলিশের মানবিক উদ্যোগ ও নিরলস কাজ এই বাহিনীকে নতুনভাবে উপস্থাপন করছে সাধারণ মানুষের কাছে।

কোভিড-১৯ নিয়ে আতঙ্কে মানুষ। আর সব ভয় অতিক্রম করে সার্বক্ষণিক সেবা দিয়ে যাচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। প্রয়োজনে ঝুঁকিও নিতে হচ্ছে। করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণকারী লোকজনের দাফনের দায়িত্বটুকু পড়েছে পুলিশের কাঁধে। শুধু তা-ই নয়, বিদেশফেরত লোকজনের হাতে কোয়ারেন্টিনের তারিখসমৃদ্ধ সিল বসানোর ঝুঁকি নিয়েছিল পুলিশ। দেশে সৃষ্ট এ অচলাবস্থায় মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি মানবিক কাজেও এগিয়ে আসছেন এ বাহিনীর সদস্যরা।

এর পরও প্রয়োজনিয় পিপির সল্পতার কারণে তারা অনেকটা হিমশিম খাচ্ছিল। আজ সকাল ১১টার দিকে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার জনাব মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান পিপিএম (বার) স্যার এর পক্ষ থেকে জেলায় র্কমরত পুলিশ সদস্যদের হাতে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রী তুলে দেয়া হয়।

ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সামগ্রী গুলি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সদর সার্কেল, জনাব মির্জা সালাহউদ্দিন পুলিশ সদস্যদের হাতে তুলে দেন। এ সময় পুলিশ সদস্যদের নিরাপত্তা সামগ্রী এর ব্যবহার বিধি বুঝিয়ে দেয়া হয়। এ সময় পুলিশ সদস্যদেরকে করোনা প্রতিরোধে অনুসরণীয় স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে ব্রিফিং দেওয়া হয়। পুলিশ সদস্যদের মানসম্মত পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের বিষয়টিও এ সময় নিশ্চিত করা হয়।

সাতক্ষীরা সদর থানা, সদর ফাঁড়ি, কাটিয়া ফাঁড়ি, ইটাগাছা ফাঁড়ি এবং ব্রহ্মরাজপুর ক্যাম্প এর সকল পুলিশ সদস্যকে এসব সামগ্রী প্রদান করা হয়।

দেশে এক হাজার ২০০ জন পুলিশ সদস্যের করোনা শনাক্ত হলো। এছাড়াও বুধবার (৬ মে) রঘুনাথ রায় (৪৮) নামের পুলিশের এক সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মারা গেছেন। এনিয়ে করোনায় ছয় পুলিশ সদস্য মৃত্যুবরণ করলেন।

বুধবার (৬ মে) সূত্র জানায়, এখন পর্যন্ত পুলিশের এক হাজার ১৯০ জন সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার পর্যন্ত এই হিসেব ছিল ১৫৩ জনে। আক্রান্তদের মধ্য থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৫ জন। আইসোলেশনে আছেন এক হাজার ৮৯ জন। কোয়ারান্টিনে আছেন এক হাজার ২৬০ জন।

আক্রান্তদের অর্ধেকই ঢাকা মহানগর পুলিশের সদস্য। বুধবার পর্যন্ত ঢাকা মহানগর পুলিশে ৫৭৬ জন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত হয়েছেন। পুলিশের যে ছয় সদস্য মারা গেছেন তাদের সবাই ঢাকায় বিভিন্ন ইউনিটে কর্মরত ছিলেন।

নানা আলোচনা ছাপিয়ে গত কয়েক দিনে দেশের গণমাধ্যমে ইতিবাচক সব মানবিক কাজের স্বীকৃতিও পেয়েছেন এ বাহিনীর সদস্যরা। বগুড়ার শিবগঞ্জে, রাজশাহীর বাগমারায়, শরীয়তপুর সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিদের দাফনে স্থানীয়দের বাধা অথবা অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ দাফন—এসব ঘটনা পুলিশের ব্যবস্থাপনায় সমাধানে আসে। এর মধ্যে দুই কিলোমিটার দূরে দাফনেও বাধা এবং করোনা-আতঙ্কে আত্মীয়স্বজন ছাড়াই শেষকৃত্যের ঘটনাও রয়েছে। প্রাণঘাতী এই ভাইরাস পরম আপনজনকে দূরে সরিয়ে দিলেও পাশে ছিল পুলিশ।

উপমহাদেশে পুলিশ বাহিনী সৃষ্টির ইতিহাসই নেতিবাচক। পুলিশের সৃষ্টি হয়েছিল আতঙ্ক-ভীতি সৃষ্টির জন্য; দমানোর অস্ত্র হিসেবে, যা ছিল ইংরেজ শাসকদের সহযোগিতার ‘লাঠিয়াল বাহিনী’। ১৮৬১ সালের সেই পুরোনো আইন দিয়ে চলছে দেশের পুলিশ। সেই থেকে এ বাহিনী সব সময় নেতিবাচকভাবে উপস্থাপিত হয়ে আসছে। নাটক-সিনেমায় পুলিশকে ‘জনবিরোধী’ হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। এর জন্য বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটও দায়ী। আমরা দেখেছি, ছোট বাচ্চাদের ভয় দেখাতে পুলিশের ভয়ংকর রূপ হাজির করেন মায়েরা।

এসব নেতিবাচক চরিত্রে উপস্থাপিত হওয়ার অন্যতম কারণ পুলিশের সেই ব্রিটিশ আমলের চরিত্র থেকে বের হতে না পারা। রাষ্ট্রের ক্ষমতায় বসা রাজনৈতিক দলগুলো পুলিশকে ব্যবহার করেছে ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ হিসেবে।

বছর কয়েক ধরে নেতিবাচক খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ বাহিনী। দূরত্ব ঘোচাতে ‘পুলিশ জনতা, জনতাই পুলিশ’ প্রতিপাদ্যে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছিল। এটি সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূলে সমাজের মানুষের সহায়তায় ‘অংশীদারত্বমূলক পুলিশিং কার্যক্রম’ প্রতিষ্ঠার ধারণা। অর্থাৎ সমাজের নাগরিকেরা অপরাধ নির্মূলে পুলিশকে তথ্য দিয়ে সহায়তার পাশাপাশি নিজেরাই ছোট সমস্যার সমাধান করবেন। এর ফলে জনগণের তুলনায় পুলিশের সংখ্যাত্মক সংকট দূর হবে। মূলত ধারণাটি উত্তরের দেশ অর্থাৎ উন্নত বিশ্ব থেকে ধার করা। তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে আমাদের সমাজে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। ধারণা বাস্তাবায়নে বাধা হিসেবে সামনে আসছে উন্নত বিশ্বের আর্থসামাজিক অবস্থার পার্থক্য। তবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধকতা হলো, বাংলাদেশের মানুষের কল্পিত-অঙ্কিত ‘পুলিশের নেতিবাচক চরিত্র’। জনসাধারণের সঙ্গে পুলিশের দূরত্ব হ্রাস, আস্থার সম্পর্ক তৈরি ছাড়া কমিউনিটি পুলিশিং ধারণাটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।করোনাকালে সবচেয়ে বেশি ব্যস্ত পুলিশের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীতদেশের এই সংকটে পুলিশের নিরলস দায়িত্ব পালন এবং মানবিক কাজে এগিয়ে আসা জনগণের সঙ্গে দূরত্ব হ্রাস ও আস্থার সম্পর্ক সৃষ্টিতে সহায়তা করবে। পুলিশভীতি দূর হচ্ছে বলেই সহায়তা চাওয়া হচ্ছে। ভরসা করছেন মানুষ, পুলিশের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে দেওয়া অনুরোধ আসছে। গাড়ি করে গর্ভবতী নারী, রোগী, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হাসপাতালে বা কর্মস্থলে পৌঁছে দিচ্ছে পুলিশ। এ সময়ে জনগণের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারছে পুলিশ। দীর্ঘস্থায়ী আস্থার সংকট দূর করে সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠার এখনই সময়। পুলিশের প্রতি জনসাধারণের দীর্ঘদিনের আস্থার সংকট দূরীকরণে এখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে। সংস্থাটির নীতিনির্ধারকেরা বিষয়টি নিয়ে ভাবতে পারেন এখন। পুলিশের ইতিবাচক ধারা অব্যাহত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হোক, যা ভবিষ্যৎ পুলিশের জন্য নতুন চরিত্র সৃষ্টি করবে এ সমাজে।

 

 

 

 

Check Also

ট্রাইব্যুনালে আ.লীগ নেতাদের বিচার দেখতে এসে যা বললেন সাঈদী পুত্র

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।