ক্রাইমর্বাতা ডেস্করিপোট: চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত বজ্রপাতে সারাদেশে ৭৯ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। এসময় ব্রজাঘাতে আহত হয়েছেন ২১ জন। চার মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটেছে এপ্রিল মাসে। এপ্রিল মাসে ৭০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
এর মধ্যে আবার কৃষি কাজ করার সময় বজ্রাঘাতে মৃত্যুর ঘটনা সবচেয়ে বেশি। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে বেশি প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে।
আজ বৃহস্পতিবার (৭ মে) সেইভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থান্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম তাদের ফেসবুক পেজের অনলাইনে এসে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানায়। সংগঠনটির সেক্রেটারি মো. রাশিম মোল্লা এবং গবেষণা সেলের নির্বাহী প্রধান আব্দুল আলীম এসব তথ্য উপস্থাপন করেন।
রাশিম মোল্লা জানান, বেশ কয়েকটি জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা, অনলাইন নিউজ পোর্টালসহ টেলিভিশনের স্ক্রল থেকে তথ্যগুলো সংগ্রহ করে বজ্রপাতের এই পরিসংখ্যান বের করেছেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল আলীম জানান, ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখ পযন্ত চারমাসে বজ্রপাতে নিহত হয়েছেন ৭৯ জন। এর মধ্যে ১০ জন নারী, ৩ জন শিশু এবং আর বাকি ৬৮ জনই পুরুষ। নারী ও পুরুষের মধ্যে আবার ৩ জন শিশু এবং ৯ জন কিশোর নিহত হয়েছে। এদিকে এই চার মাসে বজ্রাঘাতে আহত হয়েছেন ২১ জন। তার মধ্যে ১৫ জন পুরুষ এবং ৬ জন নারী রয়েছে। নারী ও পুরুষের মধ্যে ২ জন কিশোর রয়েছে।.
তিনি জানান, সাধারণত জানুয়ারি মাসে প্রচণ্ড শীত থাকায় এ মাসে বজ্রপাত হয় না। তবে এবার কনকনে শীতের মধ্যেও জানুয়ারি মাসে বজ্রাঘাতে নিহত হয়েছে তিন জন। তারা তিন জনই পুরুষ। ফেব্রুয়ারি মাসে কোনও হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও মার্চ মাসে ছয় জন এবং এপ্রিল মাসে ৭০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।
এপ্রিল মাসে নিহতদের মধ্যে নারী আট জন এবং ৬২ জনই পুরুষ। এছাড়া এপ্রিল মাসে বজ্রাঘাতে মোট ১৫ জন আহত হয়েছেন। তার মধ্যে ১৩ জন পুরুষ এবং দুই জন নারী।
সবচেয়ে বেশি ৪০ জন নিহত হয়েছেন কৃষি কাজ করার সময়। এছাড়া নৌকায় বসে মাছ ধরার সময় দুই জন, মাঠ থেকে গরু আনার সময় ১২ জন, আম কুড়ানোর সময় এক জন, ঘরে অবস্থানকালীন চার জন, পাথর উত্তোলনের সময় দুই জন, মাঠে খেলা করার সময় এক জন, বাড়ির আঙিনায় খেলা করার সময় দুই জন, ফাঁকা রাস্তায় চলার সময় চার জন, রিকশা চালানোর সময় এক জন, গাড়িতে থাকাকালীন দুই জন নিহত হন। অন্যদিকে চিকিৎসা নিয়ে ফেরার সময়, নির্মাণ কাজ করার সময় ও হাওরে অবস্থানকালেসহ বিভিন্ন সময় বজ্রপাতে নিহত হয়েছে ছয় জন।
বজ্রাঘাতে হতাহতের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায় চলতি বছরের প্রথম চার মাসে শরীয়তপুরে তিন জন, কিশোরগঞ্জে দুই জন, মুন্সিগঞ্জে দুই জন, রাজবাড়ীতে এক জন, মাদারীপুরে তিন জন, ফরিদপুর তিন জন, কুমিল্লায় এক জন, কক্সবাজারে পাঁচ জন, খাগড়াছড়িতে এক জন, নোয়াখালীতে তিন জন, চাঁদপুরে এক জন, লক্ষ্মীপুরে চার জন, সিরাজগঞ্জে এক জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে এক জন, নাটোরে এক জন, নওগাঁয় একজন, খুলনায় একজন, যশোরে দুই জন, নড়াইলে এক জন, চুয়াডাঙ্গায় একজন, মাগুরায় একজন, ঝিনাইদহে একজন, পটুয়াখালীতে সাত জন, পিরোজপুরে দুই জন, ভোলায় একজন, বরগুনায় একজন, সিলেটে সাত জন, হবিগঞ্জে দুই জন, সুনামগঞ্জে চার জন, দিনাজপুরে একজন, গাইবান্ধায় পাঁচ জন, ময়মনসিংহে একজন, শেরপুরে একজন, জামালপরে একজন এবং নেত্রকোণায় চার জন নিহত হয়েছেন।
পটুয়াখালী ও সিলেট জেলায় সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। অন্যদিকে বিভাগ ওয়ারি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ঢাকা বিভাগে ১৪ জন, বরিশাল বিভাগে ১১ জন, চট্টগ্রামে ১৪ জন, রাজশাহিতে চার জন, খুলনায় সাত জন, সিলেটে ১৩ জন, রংপুরে ছয় জন এবং ময়মনসিংহে ৯ জন।
আব্দুল আলীম জানান, বজ্রপাত বৃদ্ধির কারণের মধ্যে আছে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আবহাওয়ার ধরন পরিবর্তন, লম্বা গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, আকাশে কালো মেঘের পরিমাণ ও মেঘে মেঘে ঘর্ষণের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া এবং বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি অন্যতম। তাপমাত্রা যত বাড়বে বজ্রপাতও ততো বাড়বে। তাপমাত্রা গড়ে এক ডিগ্রি বেড়ে গেলে বজ্রপাত ১০ শতাংশ বার তার চেয়ে বেশি বেড়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বজ্রপাতের সময় করণীয় হিসেবে জানানো হয়। বজ্রপাতের সময় বিশেষ করে যারা ঘরের বাইরে ক্ষেতখামারে কাজ করেন তারা বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। যে স্থান বা বস্তু যত উঁচু সে স্থান মেঘের তত সন্নিকটে থাকায় সেখানে বজ্রপাতের আশঙ্কা তত বেশি। বাড়ির ছাদ কিংবা উঁচু স্থানে অবস্থান করলে দ্রুত সেখান থেকে নেমে নিরাপদ স্থানে যেতে হবে। মৌসুমে ঘনকালো (ঝড়মেঘ) মেঘ দেখলেই সাবধান হতে হবে এবং বৃষ্টি শুরুর আগে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে হবে। পাকা বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া বেশি নিরাপদ। তবে পাকাবাড়ি সুউচ্চ হলে সেক্ষেত্রে বজ্র নিরোধক ব্যবস্থা থাকতে হবে। বজ্রপাতের সময় জানালার কাছে না থাকাই ভালো। পায়ে রাবারের স্যান্ডেল পরে থাকা এবং পানি ও যে কোনও ধাতববস্তু যেমন সিঁড়ির বা বারান্দার রেলিং, পানির কল ইত্যাদির স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে। বিদ্যুৎ পরিবাহী যে কোনও বস্তুর স্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। পুকুর বা জলাশয়ে থাকা নিরাপদ নয়।
বজ্রপাতে বাড়ির ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্র যেগুলো ইলেকট্রিক সংযোগ বা ডিসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে রাখা ভালো। এগুলো বন্ধ থাকলেও স্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে। গাড়িতে থাকা অবস্থায় বজ্রপাতের পরিস্থিতি তৈরি হলে গাড়ির মধ্যে থাকাই নিরাপদ। তবে মনে রাখতে হবে গাড়ির ধাতব কোনো অংশের সংস্পর্শ থেকে বিরত থাকতে হবে।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালে সব মিলিয়ে সারাদেশে বজ্রাঘাতে নিহত হন ২৪৬ জন।