ক্রাইমর্বাতা রিপোট : করোনা ভাইরাসে দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৩জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছেন আরও ৭০৬ জন। ফলে দেশে করোনায় মোট মৃত্যু হয়েছে ১৯৯ জন, আক্রান্তের সংখ্যা হয়েছে ১২ হাজার ৪২৫। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ১৩০ জন। সবমিলিয়ে সুস্থ হয়েছেন এক হাজার ৯১০ জন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ওয়েব সাইটে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকায় ছয় জন, ঢাকা বিভাগে তিন জন এবং চট্টগ্রাম বিভাগে চার জন রয়েছেন। মৃতদের মধ্যে ছয় জন ষাটোর্ধ্ব, চার জন ৫১-৬০ বছরের মধ্যে, দুই জন ৪১-৫০ বছরের মধ্যে এবং একজনের বয়স ১১-২০ এর মধ্যে। ১১-২০ বছরের মধ্যে মৃত ব্যক্তি ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন
আগে এক ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, দেশজুড়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ৭০৬ জন করোনা রোগী সহনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১২ হাজার ৪২৫ জন।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়মিত অনলাইন স্বাস্থ্য বুলেটিনে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় নমুনা সংগ্রহ করা হয় ৬ হাজার ৩৮২টি। এর মধ্যে পরীক্ষা করা হয় ৫ হাজার ৮৬৭টি। পরীক্ষা করা নমুনার মধ্যে ৭০৬ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ পাওয়া গেছে। ডা. নাসিমা সুলতানা বলেন, এ মুহূর্তে মৃত্যুর তথ্য দিতে পারছি না। প্রেস রিলিজে দিয়ে দেবো। তিনি আরো বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ১৩০ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট এক হাজার ৯১০ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ৮ই মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় বলে জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। শুরুর দিকে রোগীর সংখ্যা কম থাকলেও এখন সংক্রমণ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে চীনের উহানে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। ভাইরাসটি ক্রমে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। চীনের পর ইরান, কোরিয়াসহ বেশকিছু দেশে সংক্রমণ ছড়ালেও সবচেয়ে বেশি করোনা আঘাত হানে ইতালি, স্পেনসহ ইউরোপের দেশগুলোতে। তবে এ মুহূর্তে তা-ব চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডোমিটার বলছে, বিশ্বজুড়ে এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ২ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৮ জন মানুষ। এছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা ৩৮ লাখ ৩৪ হাজার ৩৮ জন । অন্যদিকে সুস্থ হয়েছেন ১৩ লাখ ৬ হাজার ৪৮৩ জন।
রংপুর অফিস ঃ রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় গতকাল ৭ ই মে বৃস্পতিবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে আরও ৪২৮ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। এই বিভাগে এ পর্যন্ত ৩ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। এছাড়া রংপুর বিভাগে একই দিনে ১০ জন সহ এ পর্যন্ত ২৩২ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়েছে বলে জানা গেছে।
করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর মধ্যে এর আগে দিনাজপুর, নীলফমারী এবং গাইবান্ধা জেলায় ১ জন করে এ রোগে মৃত্যু বরণ করেছে। আক্রান্ত রোগীর মধ্যে রংপুরে সর্বচ্চ ৮৯ জন, এর মধ্যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে ২৫ জন। পঞ্চগড়ে ১০ জন, নীলফামারীতে ৩১ জনের মধ্যে ২০ জন হাসপাতালে চিকিৎসারত, লালমনিরহাটে ৪ জনের মধ্যে ২ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, কুড়িগ্রামের ২২ জন রোগীর মধ্যে ১৯ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, ঠাকুরগাঁয় ২১ জন রোগীর মধ্যে ১৪ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, দিনাজপুরে ৩১ জন রোগী সনাক্ত হয়েছে এবং গাইবান্ধাা জেলায় ২৪ জন রোগীর মধ্যে ১২ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন বলে রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যলয়ের সূত্রে জানা গেছে।
নতুন করোনা ভাইরাস আক্রান্ত আশংকায় গত ২৪ ঘণ্টায় হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা রয়েছে ৪২৮ জন। এর মধ্যে রংপুরে ৮০, পঞ্চগড়ে ২২, নীলফামারীতে ২৬, কুড়িগ্রামে ১৪, ঠাকুরগাঁয় ১০, দিনাজপুরে ২৩০, গাইবান্ধায় ৪৬, জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। গতকাল ৭ ই মে বুধবার সকাল ৮ টা পর্যন্ত এ নিয়ে বর্তমানে রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা মানুষের সংখ্যা বেড়ে দাঁঁিড়য়েছে ৭ হাজার ২৬ জনে।
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল ৭ ই মে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় ২৪ ঘন্টায় ২৫৫ জন সহ মোট ২০ হাজার ৯১৮ জনকে ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। বর্তমানে এই বিভাগে হোম কোয়ারেন্টাইনে অবস্থান করছে ৭ হাজার ২৬ জন। এর মধ্যে রংপুরে ৮৬৮, পঞ্চগড়ে ২৯৯, নীলফামারীতে ১ হাজর ৭৬৯, লালমনিরহাটে ২৯০, কুড়িগ্রামে ৬৫৩, ঠাকুরগাঁও জেলায় ৩০৮ জন, দিনাজপুরে ১ হাজার ৯৮৪ জন এবং গাইবান্ধা জেলায় ৮৫৫ জন সহ মোট ৭ হাজার ২৬ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।
এদিকে রংপুর বিভাগের ৮ জেলা থেকে এ পর্যন্ত ৪৬ জন রোগী সুস্থ্য হওয়ায় তাদের ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রংপুরে ৭, পঞ্চগড়ে ১, নীলফামারীতে ১০, লালমনিরহাটে ২, কুড়িগ্রামে ৩ জন, ঠাকুরগাঁওয়ে ৬ এবং গাইবান্ধা জেলায় ১২ জন সুস্থ হয়েছেন।
কালিহাতি (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা ঃ টাঙ্গাইলের কালিহাতিতে প্রথম দুই ব্যক্তির করোনা সনাক্ত হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সাইদুর রহমান।
গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি। আক্রান্ত ১ ব্যক্তি সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নেওয়ায় ৩ ডাক্তার, ৬ নার্স ও ৫ ওয়ার্ডবয়কে ছুটি দিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে বলেও জানান এ কর্মকর্তা। আক্রান্তদের বাড়িসহ ৬টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে বলেও জানা যায়।
বাংড়া ইউনিয়নের বিলপালিমা গ্রামের (৬৫) বছর বয়সী করোনা শনাক্ত ব্যক্তিটি মানসিক ভারসাম্যহীন, ডায়াবেটিকস ও ঠান্ডা-জ্বর সমস্যা নিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দুইদিন চিকিৎসা নেয়। এসময় তার নমুনা নেওয়া হয়। বীরবাসিন্দা ইউনিয়নের রাজাফৈর গ্রামের (৪৫) বছরের কৃষক। সে দুইদিন আগে হাতের কাটা সেলাই বা ড্রেসিং করতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলে তার নমুনাও নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার তাদেও নমুনা পরীক্ষার ফলাফর পজিটিভ আসে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার শামীম আরা নিপা জানান, আক্রান্তদের বাড়িসহ ৬টি বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে।
মেহেরপুর সংবাদদাতা: মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের এক নার্সসহ আজ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৩ জন। এর মধ্যে একজন ওমান ফেরত ও অন্যজন ঢাকা ফেরত। বিষয়টি নিশ্চিত করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাড়ালো ৬ জনে। মারা গেছেন একজন।
মেহেরপুর সিভিল সার্জন ডাঃ নাসির উদ্দীন জানান, গেল কয়েকদিন ধরে বেশ কিছু রিপোর্টের অপেক্ষায় ছিলাম। দুপুর পর্যন্ত ৩ জনের কোভিড-১৯ পজিটিভের রিপোর্ট হাতে এসেছে। এর মধ্যে গাংনীর রংমহলের বাসীন্দা ৩৯ বছর বয়সী একজন ওমান ফেরত ও অপর জন একই উপজেলার ষোলটাকা গ্রামের ৩৮ বছর বয়সী একজন ঢাকা ফেরত। সদর উপজেলার রোগীটি মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের কর্মরত নার্স। তারা সকলেই হোম কোয়ারেইন্টাইনে ছিলেন। আক্রান্তদের বাড়ির আশাপাশের বাড়ি লকডাউন করা হয়েছে। তাদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসা প্রদান করা হবে। এখন পর্যন্ত তারা সূস্থ্য রয়েছে।
গত ২৭ এপ্রিল মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার ব্র্যাকের এক স্বাস্থ্য কর্মীর করোনা সনাক্ত হয়। পরদিন করনো উপস্বর্গ নিয়ে একই উপজেলায় একজনের মৃত্যু হয়। তার সাংস্পর্শে থাকায় মুজিবনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে নাসসর্হ ২৭ জন হোম কোয়ারেইন্টাইনে ছিলেন। এর মধ্যে একজন নার্স পজিটিভ হয়েছে।
চাটখিল (নোয়াখালী) সংবাদদাতা: চাটখিল উপজেলার রামনারায়নপুর গ্রামের আবদুর রব চৌধুরীর ছেলে আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী (৪৯) এর শরীরে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। চাটখিলে এটাই প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. খন্দকার মোস্তাক আহম্মেদ জানান, আবদুল কাইয়ুম ধান কাটার জন্য গত কয়েক দিন আগে ঢাকা থেকে তার গ্রামের বাড়ি আসে। এলাকাবাসী তার ঢাকা থেকে আসার খবর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জানালে তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয় এবং তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। নমুনা পরীক্ষায় তার শরীরে করোনা পজেটিভ পাওয়া গেছে। তাকে গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে নোয়াখালী শহিদ ভুলু স্টেডিয়ামে স্থাপিত করোনা চিকিৎসাকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ডা. মোস্তাক আরো জানান, তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রামে পাঠানো হবে।
আত্রাই (নওগাঁ) সংবদদাতা ঃ নওগাঁর আত্রাইয়ে আবারো দুই মহিলার শরীরে করোনা ভাইরাসের অস্তিত পাওয়া গেছে। এই দিয়ে উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৫ জনে। নতুন আক্রান্ত রোগীরা দুই মহিলা ঢাকা ফেরত। বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রোকসানা হ্যাপি এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানাগেছে, আক্রান্ত ২জন মহিলা রোগী তারা উপজেলার সদুপুর ও অপর একজন উপজেলার দিঘা গ্রামের। একজনের বয়স ৩৭ ও অপর জনের বয়স ৫২ বছর। এ নিয়ে উপজেলায় আগের ৩ জন সহ মোট ৫জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রোকসানা হ্যাপি বলেন, অন্য উপজেলা থেকে যে কেউ আত্রাইয়ে প্রবেশ করলে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে ল্যাবে পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয় তারই পেক্ষিকে কয়েক দিন যাবত যারা ঢাকা এবং অন্যান্য এলাকা থেকে আত্রাই উপজেলায় এসেছে তাদের কে প্রাতিষ্ঠানিক হোমকরান্টাইনে রাখা হয় এবং ১১জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়। তাদের মধ্যে ২জন মহিলার শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।