আবু সাইদ বিশ্বাস:ক্রাইমর্বাতা রির্পোাট: সাতক্ষীরা: টানা ঝড়-বৃষ্টি, কৃষক সংকট ও করোনা ভাইরাসের কারণে বোরো ধান ঘরে তোলা নিয়ে চরম শঙ্কয় সাতক্ষীরার বোরো চাষীরা। ধান ঘরে তোলার মুহূর্তে প্রতি দিন আকাশ বৃষ্টিতে নাস্তা নাবুদ সোনালি ধান ক্ষেত। মাঠের পর মাঠ কৃষরে ধান ক্ষেত পানিতে ভাসছে। চাষিদের চোখের পানিতে একাকার ধান ক্ষেত। পাকা ধান ক্ষেতে তাদের চোখ পড়লেই যেন চোখে আসে তাদের অনিমশা। সারা বছর খাবে কি আর মাহজনের ঋণ পরিশোধ করবে কি দিয়ে। কোন শান্তনায় যেন তাদের মন স্থির করতে পারছে না। মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে অনেক কৃষক। এতে জেলার সাড়ে তিন লক্ষ প্রান্তিক চাষী চরম ক্ষতির সুম্মুখিন হতে চলেছে। তবে বিগত বছরের চেয়ে বস্তা প্রতি একশ থেকে ২শ টাকা ধানের দাম বেশি থাকায় কিছুটা স্বস্থতিতে চাষিরা । কয়েকজন কৃষকরে সাথে কথা বলে এমন চিত্র উঠে এসেছে।
সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার সাত উপজেলায় ৭৫ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে বোরোর আবাদ হয়েছে। যে খানে গত বছর আবাদ হয়ে ছিল ৭৪ হাজার হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ২৫ হাজার ৪৭০ হেক্টর, কলারোয়ায় ১২ হাজার ৬৭১ হেক্টর, তালায় ১৬ হাজার ৯০০ হেক্টর, দেবহাটায় ৬ হাজার ৬০ হেক্টর, কালীগঞ্জ উপজেলায় ৫ হাজার ৮২০ হেক্টর, আশাশুনিতে ৬ হাজার ২৭০ হেক্টর ও শ্যামনগরে ১ হাজার ৬০৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে সারাদেশে এবছর বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হলো ২ কোটি ৪ লাখ ৩৬ হাজার মেট্রিক টন । এর মধ্যে সাতক্ষীরা জেলাতে ৩ লক্ষ ৪০ হাজার ৫শ মেট্রিক টন। এর মধ্যে সদরে এক লক্ষ ৮ হাজার ৩৪০ মেট্রিক টন, কালিগঞ্জে ২২ হাজার ৯৯০ মেট্রিক টন, শ্যামনগরে ৮ হাজার ১১০ মেট্রিক টন, দেবহাটায় ২৫ হাজার ৮১০ মেট্রিক টন, আশাশুনিতে ৩০ হাজার ৬৬০ মেট্রিক টন, তালায় ৮৬ হাজার ২৮০ মেট্রিক টন এবং কলারোয়াতে ৫৮ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন বোরো ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু ঝড় বৃষ্টির কারণে উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা অর্জন বাধা হয়ে দাড়িয়েছে।
কৃষকরা জানান, অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর জেলাতে বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে।
তালার মাগুরা গ্রামের আছির উদ্দীন মোড়লের ছেলে হাবিবুর রহমান জানান, শ্রমিক সংকট,করোনা ঝুকির পর এবার আকাশ বৃষ্টির কারণে তাদেরে বেশির ভাগ ধান এখনো মাঠে রয়েছে। কয়েক বিঘা জমির ধান এখনো পানির তলে।
একই এলাকার কৃষক মহাসিন জানান, তারও ক্ষেতের একই অবস্থা। ধানের ক্ষতির কারণে তার অনেক ক্ষতি হয়েছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ডেও মিয়াসাহেবের ডাঙ্গা গ্রামের চাষী অলিল জানান, শ্রমিক সংকট ও আকাশ বৃষ্টির কারণে তার এক বিঘা জমিতে কেটে রাখা ধান পানিতে তলিয়ে যায়। ঠিক মত সে ধার ঘরে তোলা সম্ভব হয়নি। তারা ক্ষতি পুরুণ দাবী করেছে।
সাতক্ষীরা সদরের দহখুলা গ্রামের জামায়াত আলী। ৪ বিঘা জমি হারি নিয়ে বোরো চাষ করেছে। সোমবার বিকেলে দহখুলা মাঠে কথা হয় তার সাথে। তিনি জানান,এখনো তার ক্ষেতে পানি। ধান ও পেকে গেছে। বাধ্য হয়ে পানির মধ্যে ধান কাটতে হচ্ছে। পানির কারণে তিনি ধানের ভাল দাম পাবেনা। কারণ ধানের রং নষ্ট হয়ে গেছে।
জেলা কৃষি বিভাগের হিসাব মতে জেলাতে ৩ লক্ষ ৮১ হাজার ৭৩০ হেক্টর ফসলি জমি আছে। এসব জমিতে ৩ লক্ষ ৫৮ হাজার ৫৫০টি পরিবার কৃষি কাজ করে থাকে। এর মধ্যে ভুমিহীন চাষী রয়েছে ৬৭ হাজার ২৩০টি,প্রান্তিক চাষী রয়েছে এক লক্ষ ৩১ হাজার ৩৭টি,ক্ষুদ্র চাষী রয়েছে এক লক্ষ ৯৫৭টি, মাঝারি চাষী রয়েছে ৪৪ হাজার ৮৪২টি এবং বড় চাষী রয়েছে ১৪ হাজার ৪৮৪টি। মোট ১৪ লক্ষ ৩৪ হাজার ২শ ব্যক্তি সরাসরি কৃষির সাথে জড়িত। এসব কৃষকের মধ্যে বর্তমান বোরো চাষের সাথে প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ জড়িত।
তবে কৃষি খামার বাড়ি বলছে ভিন্ন কথা। সাতক্ষীরা কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক নূরুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে জানান, ঝড়বৃষ্টিতে বোরো ধানের যে ক্ষতি হয়েছে তাতে উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে সমস্যা হবে না। এছাড়া বৃষ্টিতে ভিজে ধানের কোয়ালিটি খারাপ হলেও উৎপাদন ঠিক থাকবে। তবে গো-খাদ্যে কিছুটা সমস্যা হতে পারে। এর পরও উদ্ধুদ্ধ পরিস্থিেিত জেলা খামার বাড়ি কৃষকদের পাশে আছেন। সার্বিক খোজ খরব নেয়া হচ্ছে। পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধার ক্রয়ে চাষিদের সার্বিক সহযোগীতা করা হচ্ছে।