* করোনা কি?
সম্প্রতি চীন থেকে পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে বিষাক্ত ভাইরাস ‘করোনা’ যেটার অন্য নাম কোভিড-১৯। যে ভাইরাসের সাথে কিছুদিন আগেও মানুষ পরিচিত ছিলো না। যে ভাইরাস দেখা যায় না। ছোঁয়া যায় না। আক্রান্ত হলেই জানা যায় না। যেনো এক ভয়ংকর অদেখা শত্রু। সারা দুনিয়ার বড় বড় চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা আজ হতাশ এক ক্ষুদ্র ভাইরাসের জন্য। কোথায় পেলো এতো ক্ষমতা? কে দিলো তাকে এতো পাওয়ার?* ইসলামের দৃষ্টিতে করোনা :
করোনা একটি ভাইরাস। কিন্তু তার নিজস্ব কোনো ক্ষমতা নেই। সারা দুনিয়ার একছত্র অধিপতি মহান আল্লাহ্ তাকে যতোটুকু ক্ষমতা দেন সে সেইটুকুই করতে পারে। এর একচুল বেশিও করার ক্ষমতা তার নেই। এটা বিশ্বাস করার নাম ইমান।* কেনো আসলো করোনা :–
সম্মানিত পাঠক ভালো করে খেয়াল করুন। আমাদের রোগ সারার আগে রোগের উৎপত্তিস্থল জানতে হবে। রোগের গোড়ায় যেতে না পারলে রোগ সারানো সম্ভব নয়। এটা কেবল ভাইরাস নয়। এটা একটা গজব বা মহামারী।ব্যাপক হারে মানুষ আল্লাহ তাআলার অবাধ্য হলে আল্লাহ পাক পৃথিবীতে গজব নাজিল করেন। যাতে মানুষ তাদের ভুল বুঝতে পেরে আল্লাহর দরবারে ফিরে আসতে পারে।@ আল্লাহ বলেছেন– “জলে-স্থলে যে দুর্যোগ, বিপর্যয় মহামারী ধেয়ে আসছে তা তোমাদের হাতের কামাই।”
(সুরা রোম)@ আল্লাহ বলেছেন, “কে তোমাদের ভালো কাজ সম্পাদন করে আর কে খারাপ কাজ করে তা তিনি দেখতে চান। এ জন্য আল্লাহ পরীক্ষা হিসেবে দুর্যোগ মহামারী পৃথিবীতে পাঠান।” ( সুরা মুলক)
@ আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন, কোনো সমাজে যখন অশ্লীলতা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে, তখন আল্লাহ ওই সমাজে মহামারী পাঠান।
(সুনানে ইবনে মাজা)
@ হাদিসে আরও বলা হয়েছে, আল্লাহ আজাব হিসেবেও পৃথিবীতে এই মহামারী পাঠান। পূর্ববর্তী অনেক জাতির ওপর এ রকম আজাব পাঠিয়েছেন আল্লাহ।
( সহীহ্ মুসলিম)
পবিত্র কুরআন ও হাদিসের ৪টা ঘোষনা দেখলাম। আমরা যারা মুসলমান তারা কুরআন হাদিস ১০০% বিশ্বাস করি। আর কুরআন ও হাদিসের বক্তব্যে এটা স্পষ্ঠ প্রতীয়মান যে, বর্তমান মহামারী আমাদের পাপেরই ফসল।এছাড়া কিয়ামতের নিদর্শনগুলোর একটি হলো মহামারি। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন,
“কিয়ামতের আগের ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখো। আমার মৃত্যু, অতঃপর বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়, অতঃপর তোমাদের মধ্যে ঘটবে মহামারি, বকরির পালের মহামারির মতো, সম্পদের প্রাচুর্য, এমনকি এক ব্যক্তিকে একশ’ দিনার দেয়ার পরও সে অসন্তুষ্ট থাকবে। অতঃপর এমন এক ফিতনা আসবে, যা আরবের প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করবে। অতঃপর যুদ্ধবিরতির চুক্তি, যা তোমাদের ও বনি আসফার বা রোমকদের মধ্যে সম্পাদিত হবে। অতঃপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং ৮০টি পতাকা উড়িয়ে তোমাদের বিপক্ষে আসবে; প্রতিটি পতাকার নিচে থাকবে ১২ হাজার সৈন্য।
(সহিহ বুখারি, হাদিস )
* মহামারীতে আমাদের করণীয় :
ইসলামে এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে। যে কোন মহামারি থেকে বাঁচতে প্রথম ও প্রধান করণীয় হচ্ছে- নিজেদের কৃতকর্ম থেকে তাওবা করা এবং বেশি বেশি ইস্তেগফার করা। কারণ যেহেতু তাকে পাঠানো হয়েছে আমাদের পাপের কারনে। আমরা বেশি বেশি পড়বো,,
নবিজি (সা.) মহামারি থেকে বাঁচতে বেশি বেশি এই দোয়া পড়তে বলেছেন,
“‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল বারাসি, ওয়াল জুনুনি, ওয়াল জুযামি,ওয়া সাইয়ি ইল আসক্কাম”।
সেই সাথে মহামারী সম্পর্কে বিশ্বনবী সা: এর কিছু নির্দেশনা আমাদের মেনে চলতে হবে।
@ মহামারি প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন,
“কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা থেকে চলে এসো না। অন্যদিকে কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করলে সে জায়গায় যেয়ো না”। (তিরমিজি শরিফ)
তাই আমাদের উচিত, যেখানে এ ধরনের রোগের প্রকোপ দেখা দেবে, সেখানে যাতায়াত থেকে বিরত থাকা। এরই মধ্যে বিভিন্ন দেশ সরকারিভাবে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোতে যাতায়াতে সতর্কতা জারি করেছে। যেহেতু চিকিৎসকদের মতে এ ভাইরাসটি একজনের দেহ থেকে আরেকজনের দেহে ছড়ায়। সাধারণত ফ্লু বা ঠান্ডা লাগার মতো তীব্র নিউমোনিয়া সিনড্রোমের মতো করেই এ ভাইরাস ছড়ায়। এজন্য চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যথাযথ স্বাস্থ্যসেবা গ্রহন করা।
* মহামারী বা গজবে মুমিনের জন্য সুসংবাদ :–
মহামারি আল্লাহর গজব হলেও এতে আক্রান্ত প্রত্যেক মৃত ব্যক্তিকে পাপী-জাহান্নামি মনে করা যাবে না। রাসুল (সা.)-এর ভাষায় মহামারিতে মারা যাওয়া ব্যক্তিও শহীদ।
@ আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, পাঁচ প্রকার মৃত শহীদ—মহামারিতে মৃত, পেটের পীড়ায় মৃত, পানিতে ডুবে মৃত, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মৃত এবং যে আল্লাহর পথে শহীদ হলো।
(সহিহ বুখারি)
@ অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, মহামারিতে মৃত্যু হওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত। (সহিহ বুখারি)
@ অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে,
“রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তিনবার বলবে ‘বিসমিল্লা-হিল্লাজী লা ইয়াদ্বুররু মাআসমিহি শাইউন ফিল আরদ্বি ওয়ালা ফিস সামা-ই, ওয়াহুয়াস সামী‘উল আলীম’, অর্থাৎ ‘আল্লাহর নামে, যাঁর নামের বরকতে আসমান ও জমিনের কোনো বস্তুই ক্ষতি করতে পারে না, তিনি সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী’; সকাল হওয়া পর্যন্ত তার প্রতি কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না। আর যে তা সকালে তিনবার বলবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তার ওপর কোনো হঠাৎ বিপদ আসবে না।
(আবু দাউদ)
সম্মানিত পাঠক,
বুঝতে হবে আমাদের এই শরীর আমাদের নয়। এটা আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে কিছুদিনের জন্য। তাই করোনার ব্যাপারে হতাশার কারণ নেই, বরং মনে রাখতে হবে পবিত্র কুরআনের অভয়বাণী
“আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না”
(সুরা ইউসুফ, আয়াত: ৮৭)।
মহান আল্লাহ্ কষ্ট দেওয়ার জন্য বা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করবার জন্য মানুষকে সৃষ্টি করেননি। বরং মহান আল্লাহ্ তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর কিছু নিদর্শন দেখান, যেন মানুষের বোধোদয় হয়।
তিনি বলেন
“আমি ভয় দেখানোর জন্যই (তাদের কাছে আযাবের) নিদর্শনসমূহ পাঠাই” (সুরা বনি ইসরাইল ৫৯)।
তাই কোনো রোগেই মু’মিনের হতাশ হওয়া উচিত নয়। প্রিয়নবী (স.) বলেন
“নিশ্চয়ই আল্লাহ্ রোগ ও চিকিৎসা দু’ই পাঠিয়ে দেন।সুতরাং চিকিৎসা গ্রহণ কর” (আবু দাউদ)
ইবনু আব্বাস (রা.) বর্ণিত ‘একদা ইব্রাহিম (আ.) জিজ্ঞেস করলেন: হে আমার প্রতিপালক রোগ কার পক্ষ থেকে? আল্লাহ্ বলেন “আমার পক্ষ থেকে”! জানতে চাইলেন ঔষধ কার পক্ষ থেকে? জবাব এলো “আমার পক্ষ থেকে” আবার জানতে চাইলেন তবে চিকিৎসক? জবাব এলো “চিকিৎসকের মাধ্যমে ঔষধ পাঠানো হয়….”।
রোগ-শোকের মাধ্যমে মু’মিনকে পরীক্ষা করা হয়, এতে তার ঈমানিশক্তি বৃদ্ধি পায়। রোগের মধ্যেও পাওয়া যায় কল্যাণের বার্তা। যেমন:
একদা প্রিয়নবী (স.) হযরত আবু হুরাইরাকে (রা.) সঙ্গে নিয়ে জ্বরের রোগী দেখতে যান। তিনি (স.) বলেন “সুসংবাদ গ্রহণ করো।
আল্লাহ্ বলেন, “আমার আগুন দুনিয়াতে আমি আমার মু’মিন বান্দার ওপর প্রবল করি, যেন তা আখিরাতের আগুনের বিনিময় হয়ে যায়’” (তিরমিযি)।
ইবনু উমর (রা.) বর্ণিত অন্য এক হাদিসে আছে, প্রিয়নবী (স.) বলেন “জ্বর জাহান্নামের উত্তাপ থেকে হয়। কাজেই তাকে পানি দিয়ে নিভাও”।
আসমা বিনতে আবু বকর (রা.) বলতেন ‘রাসুল (স.) আমাদের নির্দেশ করতেন, আমরা যেন পানির সাহায্যে জ্বরকে ঠান্ডা করি’ (মুসলিম শরিফ)।
শুধু তাই নয়, যে কোনো মহাবিপদ থেকে একমাত্র উদ্ধারকারী ও রক্ষাকারী মহান আল্লাহ্। এজন্যই পবিত্র কুরআনে উদ্ধৃত একটি মুনাজাত:
“রাব্বি ইন্নি লিমা আন্যালতা ইলাই-য়া মিন খাইরিন ফাকির” অর্থাৎ
‘হে প্রভু।
যেটা দয়া করবেন মোরে,
সেটাই চাই আমি নিজের তরে’
(কাব্যানুবাদ, সুরা কাসাস, আয়াত: ২৪)।
তাহলে উপরের আলোচনা থেকে আমরা এটাই জানলাম যে, করোনা কোনো সাধারণ ভাইরাস নয়। এটা সৃষ্টিকর্তা কর্তৃক প্রেরিত মানুষের কর্মের ফল। তবে এই মহামারীতে মুমিনের ভয় পাবার কিছু নেই। তারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুলের নির্দেশনা মেনে চলবে। তারপর যদি তারা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন তবে আল্লাহ্ তাঁর ওয়াদা অনুযায়ী শাহাদাতের মর্যাদা প্রদান করবেন।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে আমল করার তাওফিক দান করুন। -(৫)
আব্দুল আলিম মোল্যা
রেকর্ড কিপার
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত
সাতক্ষীরা।