এক ঘোষণায় সাতক্ষীরা শহর ফাকা: দোকানপাট বন্ধ! শতাধীক ব্যক্তির সংস্পর্শে আসা করোনায় আক্রান্ত সেই মহিলা আইসোলেসনে

ছবির ক্যাপশান।  আজ শুক্রুবার সকাল ১১টা সাতক্ষীরা শহেরর দৃশ্য। ছিব : জজকোট সংলগ্ন সড়ক্।।

আবু সাইদ বিশ্বাস:ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট: সাতক্ষীরা: করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে জেলার প্রবেশে নিরাপত্তার চৌকি বসানো হয়েছে। ব্যাপক জিজ্ঞাসা ও তল্লাশি করা হচ্ছে। উপজেলার প্রবেশে ও তল্লাশি করা হচ্ছে। এক উপজেলার লোক অন্য উপজেলায় প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। গোটা  সাতক্ষীরা যেন স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছে। সকাল থেকে ঈদ কেনাকাটা- শফিংমহল বিশেষ করে ছিট কাপড়ের দোকান গুলো পূর্বঘোসণা অনুযায়ী বন্ধ থাকতে দেখা যায়। বেলা বাড়ার সাথে সাথে অন্যান্য দোকান পাট খুলতে দেখা যায়। এক পর্যায়ে ছিট কাপড়ের দোকান বাদে অন্যসব দোকান পাট ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান খোলা হয়। সকাল ১০টা দিকে পুলিশের কয়েকজন সদস্য দোকান পাট বন্ধ করতে বলায় ঝড় বেগে সব প্রতিষ্ঠান দোকানের শাটার টানতে থাকে। এর পর দোকানের সামনে কর্মচারিদের নিয়ে অবস্থান করতে দেখা যায় দোকানিদের। পরে অনেকে দোকান বন্ধ রেখে কর্মচালী নিয়ে বাড়ি চলে যায়। কয়েক জন দোকান দারের সাথে কথা হয়। তারা জানান, জেলার ছিট কাপড়ের দোকান বন্ধ রাখতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নোর্টিশ দেয়া হয়ে ছিল। কিন্তু অন্যান্য দোকাপাট বন্ধের ব্যাপারে কিছুই বলা হয়নি। তাই তারা দোকা পাট খুলে ছিল। সকাল ১০টার দিকে পুলিশ নিসেধ করার কারণে তারা আবার বন্ধ করে দেয়। শহরের নাজমূল শরনি,পাকাপুড়ের মোড়,খুলনার রোড মোড়,আমতলা,নিউমিার্কেট মোড়,তুফান মোড়,বাজার মোড়,বাঙ্গালের মোড়,বড় বাজারসহ জনবহুল স্থান সমূহ অনেটাই ফাঁকা হয়ে গেছে। অর্থনৈতিক ভাবে সাময়িক ক্ষতিগ্রহ হলেও জীবণ রক্ষার্থে প্রশাসনের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জেলার সর্বস্তরের মানুষ। তবে ওষুধ,খাদ্য সংবাদ পত্রে নিয়োজিত ব্যক্তি বর্গ এই আইনের বাইরে থাকবে। এর আগে প্রধান মন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সিমীত পরিসরে শফিংমহল ও বিপনি সমূহ খুলে দেয়া হলেও সামাজিক দূরাত্ব মানেনি তেমন কেই। এরই প্রেক্ষিতে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ব্যতীক্রমি সিদ্ধান্ত নেয়।
এদিকে ঢাকা থেকে পালিয়ে যাওয়া করোনা রোগী সাতক্ষীরার আশাশুনিতে শতাধীক ব্যক্তির সংস্পর্শে আসার ঘটনা ঘটেছে। এতে জেলাতে করোনা সংক্রম ঝুকি বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে হাসপাতালে রাখা হয়েছে।
ঢাকা থেকে সাতক্ষীরার আশাশুনিতে পালিয়ে আসা করোনা রোগীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এএসপি (দেবহাটা সার্কেল) শেখ ইয়াছিন আলীর নেতৃত্বে বুধবার (১৩ মে) রাত সাড়ে ১০টার দিকে কুল্যা ইউনিয়নের মহাজনপুর ফুটবল মাঠ এলাকার একটি মৎস্য ঘেরের বাসা থেকে তার স্বামী সোহেল ও তাকে উদ্ধার করা হয়।
জানা যায়, ঢাকা থেকে পালানো করোনা আক্রান্ত ওই রোগীর অবস্থান মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে শনাক্ত করে পুলিশ। করোনা আক্রান্ত ওই রোগী সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা ইউনিয়নের বাসিন্দা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তার অবস্থান শনাক্ত করে একটি ফোন নম্বর ও বাড়ির হোল্ডিং নম্বর দিয়েছিল। তবে সেই বাড়িতে গিয়ে বাড়ি তালাবদ্ধ অবস্থায় পান আশাশুনি থানা পুলিশ।
পরবর্তীতে স্থানীয়দের মারফত জানা যায় তার নানা বাড়ি কুল্যা ইউনিয়নের ইউনিয়নের কচুয়া গ্রামে গিয়েছেন। সেখানে প্রশাসনের উপস্থিতি বুঝতে পেরে তারা পালিয়ে যায়। পরে তাকে অনেক খোঁজাখুঁজির পরে এসপি (দেবহাটা সার্কেল) শেখ ইয়াছিন আলীর নেতৃত্বে মহাজনপুর ফুটবল মাঠ এলাকার একটি মৎস্য ঘেরের বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়।
এছাড়া গতকাল বৃহষ্পতিবার জেলা করোনা প্রতিরোধ কমিটির আজকের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে নিম্নলিখিত জানানো হয়
১। আন্তজেলা এবং আন্তউপজেলায় জনগণের চলাফেরা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। জেলার বাইরে থেকে কেউ ভেতরে প্রবেশ করতে পারবে না এবং জেলার ভেতর থেকে কেউ জেলার বাইরে যেতে পারবেনা। এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলায় এবং অন্যান্য উপজেলা থেকে জেলা সদরে কেউ আসতে পারবে না।
২। জেলার ভেরতে ঢোকার প্রতিটি পয়েন্টে কঠোরভাবে নজরদারি করা হবে। জেলা অভ্যন্তরে প্রবেশের চারটি পয়েন্টে চেকপোষ্ট স্থাপন করা হবে। চেকপোষ্ট এ পুলিশের পাশাপাশি এনজিও এবং স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী কাজ করবে।
৩। জেলা সীমান্ত দিয়ে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। কেউ প্রবেশের চেষ্টা করলে তাকে ফেরত পাঠানো হবে। যদি কেউ বাহিরে থেকে জেলার অভ্যন্তরে প্রবেশ করে তাহলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক আইনানুযায়ী শাস্তির প্রদান করা হবে।
৪। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত জেলার প্রতিটি বাজারে কাপড়ের দোকান সাময়িকভাবে বন্ধ থাকবে।
৫। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী সকাল ১০ টার আগে এবং বিকাল ৪ টার পরে হাট-বাজার, ব্যবসা কেন্দ্র, দোকান-পাট ও শপিংমলগুলো খোলা রাখা যাবে না। এর ব্যত্যয় হলে দোকানদারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং ঐ সব দোকান ও শপিংমল সিলগালা করা হবে।
৬। তথ্য গোপন করে করোনা রোগী জেলায় অবস্থান করলে বা প্রবেশ করলে এ তথ্য গোপনকারী এবং আশ্রয় প্রদানকারীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
জনস্বার্থে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে এই আদেশ জারি করা হলো।
এস এম মোস্তফা কামাল
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট
সাতক্ষীরা

বৃহষ্পতিবার সাতক্ষীরা থানা সংলগ্ন সড়কের রনিমনি মার্কেট।  ১৪/৫.২০২০

কোভিড-১৯ পরিস্থিতি: সাতক্ষীরা
সাতক্ষীরা থেকে করোনা টেস্টের জন্য এ পর্যন্ত ৫১০ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। ৩৪০ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। ১৭০ জনের রিপোর্ট শীঘ্রই পাওয়া যাবে। এদের মধ্যে ৩ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। সাতক্ষীরা সদরে ১ জন, দেবহাটায় ১ জন এবং তালায় ১ জন করোনা পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। তাদের মধ্যে দুজন নিজ বাড়িতে আছেন এবং অপরজন প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেসনে আছেন।

Check Also

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করেননি সমাজী

জুলাই-আগস্টের গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার সাবেক ৯ মন্ত্রীসহ ১৩ জনকে আন্তর্জাতিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।