ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ সাতক্ষীরা থেকে করোনা টেস্টের জন্য এ পর্যন্ত ৫২৭ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। ৩৪৫ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। ১৮২ জনের রিপোর্ট শীঘ্রই পাওয়া যাবে। সাতক্ষীরা জেলায় ৪ জনের করোনা পজিটিভ পাওয়া গিয়েছে। এদের মধ্যে ২ জন আক্রান্ত জেলা থকে আগত এবং বাকি ২ জন সাতক্ষীরা জেলায় অবস্থান করছিলেন। তাদের মধ্যে একজন সুস্থ হয়েছেন, দুজন নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন আছেন এবং অপরজন প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেসনে আছেন।
করোনা চিকিৎসা চিত্রঃ
সাতক্ষীরা সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে ৮ টি এবং বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে ২৪ টি । সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে বেডের সংখ্যা ৬৩১ টি এবং বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রে বেডের সংখ্যা ৪২০ টি । কোভিড-১৯ চিকিৎসায় প্রস্তুতকৃত বেড ৫৪ টি । সাতক্ষীরাতে সরকারি ডাক্তারের সংখ্যা ১২৩ এবং বেসরকারি ডাক্তার ১৩০ জন ও সরকারি নার্সের সংখ্যা ২৮৯ জন এবং বেসরকারি নার্সের সংখ্যা ২৪০ জন্ । ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) মোট ৬২৩৬ টি হতে ৪৫৯৪ টি বিতরণ করা হয়েছে।
চিকিৎসা সরঞ্জাম:
কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যাক্তির চিকিৎসায় ০৩ টি এ্যাম্বুলেন্স সার্বক্ষণিক প্রস্তুত আছে, ৮ টি ভেন্টিলেশন সম্পূর্ণ প্রস্তুত করা হয়েছে, ২০ অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং ২০ টি নেবুলাইজার প্রস্তুত রয়েছে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া, চিকিৎসকদের কোয়ারেন্টাইনের জন্য মোজাফফর গার্ডেন রিসোর্টকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারিন্টিন চিত্র:
প্রথম পর্যায়ে, ১ থেকে ২৮ মার্চ পর্যন্ত ভারতসহ বিশ্বের নানা দেশ থেকে আগত ১১,২৫৫ জন মানুষকে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, স্বাস্থ্য বিভাগ, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সেচ্ছাসেবীদের সমন্বয়ে হোম কোয়ারিন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে, দেশের করোনা আক্রান্ত ৭ টি জেলা থেকে ২০ হাজারের অধিক শ্রমজীবী লোক সাতক্ষীরা জেলায় আসেন। তাদের মধ্যে ১৫০০০ জনকে হোম কোয়ারেন্টাইন এবং ৩০৯৬ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়েছে।
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় হতে প্রাপ্ত, বিতরণ ও মজুদ:
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে ত্রাণ কার্য (নগদ) হিসেবে মোট ৮৬,50,000/- টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে । এর মধ্যে ৭৫,১০,০০০/- টাকা বিতরণ করা হয়েছে এবং বর্তমানে মজুদ আছে ১১,৪০,০০০/- টাকা । এছাড়া ত্রাণ কার্যে ১৮০০.০০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ পাওয়া গেছে । যার মধ্যে বিতরণকৃত ১৪২৫.০০০ মেট্রিক টন এবং বর্তমানে মজুদ আছে ৩৭৫.০০০ মেট্রিক টন চাউল । শিশু খাদ্যক্রয় বাবদ বরাদ্দ ২২,০০,০০,০/- টাকা । যার মধ্যে বিতরণকৃত ১৫,৯৯,৯৩১/-টাকা এবং মজুদ আছে ৬,০০০৬৯/- টাকা।
বেসরকারি ত্রাণ তহবিলের তথ্য:
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর অফিসে ত্রাণ তহবিল খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের ত্রাণ তহবিলে জেলা প্রশাসকের ঈদ বোনাস, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ১ দিনের বেতন সমপরিমান অর্থ, জেলা কৃষি বিভাগ তাদের ১ দিনের বেতন সমপরিমান অর্থ ত্রাণ তহবিলে আর্থিক সাহায্য হিসেবে প্রদান করেছেন। সাবেক সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান ১ লক্ষ টাকা নগদ অনুদান দিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের ত্রাণ তহবিলে এখন পর্যন্ত ৪,৫৮,২৫৭ টাকা সংগৃহীত হয়েছে। এখন পর্যন্ত এ টাকা ব্যয় করা হয়নি।
সাতক্ষীরা জেলার সকল উপজেলায় বেসরকারি ত্রাণ তহবিল গঠন করা হয়েছে। উপজেলা পর্যায়ে কর্মরত সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী তাদের একদিনের বেতন সমপরিমাণ অর্থ, উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ তাদের বেতন এবং প্রবাসী ও ধর্ণাঢ্য ব্যবসায়ীগণ তাদের নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য প্রদান করছেন। এ জেলাতে বেসরকারি ত্রান তহবিলে মোট আর্থিক সাহায্যের পরিমাণ ৪৬,২৫,৫০০/- টাকা । আশাশুনি উপজেলায় ১১,৮৪,০০০/- টাকা, দেবহাটা উপজেলায় ৩,৩০,০০০/- টাকা, কালিগঞ্জ উপজেলায় ১৬,০০,০০০/- টাকা, শ্যামনগর উপজেলায় ৭,২০,০০০/- টাকা, কলারোয়া উপজেলায় ১,৪৩,৫০০/- টাকা, তালা উপজেলায় ৪,৭৪,০০০/- টাকা, সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১,৭৪,০০০/- টাকা আর্থিক সহায়তা পাওয়া গেছে
জেলার সামগ্রিক প্রচারণা ও ভ্রাম্যমান বাজারের চিত্র:
সাতক্ষীরা জেলায় মোট ৩,৯৭,৫৭০ টি লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে । প্রতিদিন করোনা মোকাবেলায় জনসচেতনতার জন্য জেলায় ৩১৮ টি প্রচারণা মাইকের কার্যক্রম চলমান রয়েছে । প্রতিদিন বিভিন্ন উপজেলাতে ৩২২ টি জীবানুনাশকস্প্রে মেশিন দিয়ে স্প্রে করা হচ্ছে । জেলাতে মোট ২৭৭ টি ভ্রাম্যমাণ বাজার স্থাপন করা হয়েছে এবং ৩৯ টি ভ্রাম্যমাণ ইফতার বাজার চালু আছে। এছাড়া, ১৫৬ টি বাজার স্থানান্তর করা হয়েছে।
মোবাইল কোর্টের তথ্য:
জেলাব্যাপী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের মোবাইল কোর্টে ১৫ টি অভিযানে ১৪ টি মামলায় ৭৪০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত করোনা প্রতিরোধে ২৫৩২ টি মামলায় ২৮ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
রমজান চিত্র:
মাহে রমজান উপলক্ষে ১৬ টি পয়েন্টে ভ্রাম্যমাণ ইফতার বাজার চালু হয়েছে। প্রতিদিন বিকাল ৫ টা থেকে সন্ধ্যা ৬.১৫ পর্যন্ত এই ভ্রাম্যমাণ ইফতার বাজার চালু থাকবে। মাহে রমজান মাসে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণসহ নিবিড় বাজার মনিটরিংয়ের জন্য অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে টিম গঠন করা হয়েছে। মোবাইল কোর্টের কার্যক্রম বৃদ্ধি করা হয়েছে। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির অপতৎপরতাযুক্ত ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বাজার এলাকায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করা হয়েছে। ৯ টি মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটগণ সর্বদা দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রনে কাজ করে যাচ্ছেন।
টিসিবি কার্যক্রম:
কালিগঞ্জে আশা এন্টারপ্রাইজ, ভাই ভাই এন্টার প্রাইজ টিসিবি পণ্য বিতরণ করেছে। কলারোয়ায় শহীদ বীজ ভাণ্ডার, জাহিদ ট্রেডার্স, স্বপ্নিল স্টোর, সামিয়া স্টোর টিসিবি পণ্য বিতরণ করেছে। সাতক্ষীরা সদরে মেসার্স হাজী ট্রেডার্স, মেসার্স আয়ুব এন্টারপ্রাইজ মালামাল বিতরণ করেছে। শ্যামনগরে মেসার্স সততা বাণিজ্য ভাণ্ডার টিসিবি পণ্য বিতরণ করেছে। তালায় মেসার্স কল্লোল এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স শেখ ট্রেডার্স মালামাল বিতরণ করেছে। দেবহাটায় বৈশাখী এন্টারপ্রাইজ টিসিবি পণ্য বিতরণ করেছে। আশাশুনিতে বৈশাখী এন্টারপ্রাইজ টিসিবি পণ্য বিতরণ করেছে।
কর্মহীন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে সরকারি সহায়তা বিতরণঃ সর্বমোট ৯৬০২২
সাতক্ষীরা জেলার সকল উপজেলায় কর্মহীন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের মাঝে সরকারি সহায়তা বিতরণ করা অব্যাহত আছে। এখন পর্যন্ত কর্মহীন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ৯৬০২৩ জনকে সরকারি সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। তন্মধ্যে, বাস পরিবহন শ্রমিক ৬২৯৪ জন, স্থলবন্দর শ্রমিক ২২০০ জন , ইজি বাইক চালক ২৯৪৩ জন, ভ্যান চালক ১০৯২৬ জন, মাহিন্দ্র চালক ১৭৩১ জন, দিনমজুর ১৫৯৭৪ জন ও কৃষি শ্রমিক ৪৪5৬ জনকে সরকারি সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া, নরসুন্দর ১২৮০ জন, হরিজন ১৯১৮ জন, পরিছন্ন কর্মী ১২১৫ জন, হিজড়া ১৮০ জন, বেদে ৬২৯ জন, মুন্ডা ৬৯৩ জন, প্রতিবন্ধী ৬৫৫৭ জন, চা দোকানি ৫২২৬ জন, মধ্যবিত্ত ২৭৭১৩ জন, জেলে ৪৬০৭ জন, ঋষি ১৫০৭ জনকে সরকারি সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে ।
বিশেষ প্রচারণা:
জেলার জাতীয় সংসদ সদস্যগণ ফেসবুক লাইভে জনগণকে সচেতন থাকতে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে উদ্বুদ্ধ করেন। জেলা প্রশাসক প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ফেসবুক লাইভ এবং লোকাল ক্যাবল টিভি লাইভে সর্বশেষ জেলার করোনা পরিস্থিতি, ত্রাণ কার্যক্রম ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার জন্য স্বাস্থ্য বিধিমালা জনগণেরর সামনে তুলে ধরেন। জেলার সার্বিক করোনা সংক্রান্ত কার্যক্রম প্রতিদিন প্রেসনোট আকারে সরকারের ঊর্র্ধ্বতন মহল এবং প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের অবহিত করেন। ফেসবুকের মাধ্যমে সার্বক্ষনিক প্রচারণা চালিয়ে যান । জেলা পুলিশ সুপার প্রয়োজনানুসারে ফেসবুক ও লোকাল ক্যাবল চ্যানেলে আইনশৃঙ্খলাসহ করোনা সংক্রান্ত পুলিসী কার্যক্রম তুলে ধরা এবং জেলার করোনা পরিস্থিতি সংক্রান্ত মানুষের জিজ্ঞাসার সরাসরি উত্তর দেন। সিভিল সার্জন ফেসবুকে সর্বশেষ করোনা আপডেট প্রদান করেন এবং নিরাপদ থাকতে করনীয় ফেসবুক লাইভে তুলে ধরেন। জেলার সকল প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া এবং অনলাইন পোর্টাল সমূহ জেলার সর্বশেষ অবস্থা এবং করোনা প্রতিরোধে সকল ইতিবাচক এবং জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম তুলে ধরেন। ফলে জেলার সার্বিক পরিস্থিতি ও গৃহীত কার্যক্রম জেলাবাসী, দেশবাসী ও বিশ্ববাসী জানতে পারেন।
চেকপোস্ট:
সাতক্ষীরা জেলার সকল প্রবেশপথে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। আন্তঃজেলা সীমান্তে মোট ২০ টি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। এগুলো হলোঃ জেলার তালা সীমান্তে খুলনা- সাতক্ষীরা মহাসড়কের সুভাষিণী, কুমিরা – কেশবপুর সড়ক, ধানদিয়া চৌরাস্তা, সরুলিয়া-কোমরপুর খেয়াঘাট, জাতপুর বাজার, তালা মুক্তিযোদ্ধা কলেজ রোড, তালা-মাগুরা ব্রিজ, তালা-ঘোষ নগর খেয়াঘাট, তালা-ঘোষ নগর মিনন্ডি পয়েন্ট; কলারোয়া সীমান্তের কলারোয়া – যশোর মহাসড়কের বেলতলা, দেয়ারা – ত্রিমোহনী, জয়নগর – সরসকাটি খেয়াঘাট পয়েন্ট; আশাশুনি উপজেলার বাঁকা ব্রিজ- দরগাপুর, বড়দল- চাদখালি, খাঁজরা খেয়াঘাট, প্রতাপ নগর – দশানি খেয়াঘাট, চাকলা- প্রতাপনগর খেয়াঘাট পয়েন্ট; শ্যামনগরের পদ্ম পুকুর – খুটিকাটা খেয়াঘাট, জেলেখালি- গাবুরা খেয়াঘাট, গাবুরা – উত্তর বেতকাশি খেয়াঘাট পয়েন্ট। এক উপজেলা হতে মানুষ বিনা কারণে যেন অন্য উপজেলায় চলাচল করতে না পাসে সে জন্য আলীপুর, বিনেরপোতা, ঝাউডাঙ্গা ও ধুলীহর এই ৪ টি আন্তঃউপজেলা সীমান্তে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। সকল চেকপোস্টে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, এনজিওকর্মী এবং সেচ্ছাসবকগণ দায়িত্ব পালন করছেন।