আবু সাইদ বিশ্বাস: ক্রাইমর্বাতা রিপেট: সাতক্ষীরা: উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় ভুট্টা চাষে ঝুঁকছে চাষিরা। লবণাক্ত ও পতিত জমিতে ভুট্টা চাষ করে তারা সফলতা পাচ্ছে। লবনাক্ত ভূমিতে উৎপাদনশীলতা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে নানামুখী গবেষণার অংশ হিসেবে এ বছর জেলায় ৫৭০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। যা বিগত বছর গুলোর তুলনায় কয়েকগুণ বেশি। তবে করোনা ভাইরাসের ক্রণে দাম নিয়ে সঙ্কায় ভুট্টা চাষিরা। জেলা কৃষি খামার বাড়ি সূত্র জানায়, ভুট্টা চাষে চাষিদের বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রদান, প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রণোদনা এমন কি জেলাতে ৫টি ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। ফলে ভুট্টা চাষে চাষিদের মাঝে সাড়া পড়ে গিয়েছে। এছাড়া চলতি মৌসুমে ভুট্টার দাম বেশি থাকায় চাষিরা দ্বিগুণ লাহবান হবে আশাবাদ জেলা কৃষি অধিদপ্তরের।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে জেলায় ভুট্টা চাষ হয়েছে ৫৭০ হেক্টর জমিতে। যা বিগত বছররের তুলনায় ৩০ ভাগ বেশি। ২০১৮-১৯ সালে জেলায় ৩৫০ হেক্টর, ২০১৭-১৮ সালে ২৩৫ হেক্টর, ২০১৬-১৭ সালে ১১৫ হেক্টর, ২০১৫-১৬ সালে ১৬৫ হেক্টর এবং ২০১৪-১৫ সালে ২২০ হেক্টর জমিতে জেলায় ভুট্টা চাষ হয়। জেলা কৃষি খামার বাড়ির হিসাব মতে গত ৬ বছরে জেলায় ভুট্টা চাষ বেড়েছে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি।
চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরা সদরে ভুট্টা চাষ হয়েছে ১০৮ হেক্টর জমিতে, কালিগঞ্জে ৭৫ হেক্টর জমিতে, শ্যামনগরে ৯৬ হেক্টর জমিতে, দেবহাটায় ৪৪ হেক্টর জমিতে, আশাশুনিতে ৬৮ হেক্টর জমিতে, তালায় ৯৩ হেক্টর জমিতে এবং কলারোয়াতে ৫০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। এতে উৎপাদনের লক্ষ্য মাত্রা ধরা হয়েছে ২ হাজার ৯২০ মে:টন।
এরইমধ্যে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রকল্প, পুষ্টি প্রকল্প, বীজ ও বালাইনাশক সরবরাহকারী বিভিন্ন কম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে উপজেলা কৃষি অফিস। ভুট্টাচাষি কৃষক দল গঠন ও উৎপাদিত ভুট্টা সঠিক মূল্যে বিক্রয়ের জন্য স্থানীয় পর্যায়ে কৃষক কন্ট্রাক্টর তৈরি, নতুন জাতের ভূট্টার প্রদর্শনী প্লট স্থাপন, দলভুক্ত কৃষক ও কন্ট্রাক্টরদের আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ও সুষম সারের ব্যবহার সর্ম্পকে প্রশিক্ষণ প্রদান, বালাই দমনে কোয়ালিটি সমৃদ্ধ বালাইনাশক এবং হাইব্রিড জাতের বীজের সরবরাহ নিশ্চিতকরণের মতো কাজ করে যাচ্ছেন তারা। ফলে কৃষকদের মধ্যে ভুট্টা চাষের আগ্রহের সৃষ্টি হয়েছে।
পাটকেলঘাটার আচিমতলার চাষি মোসলেম আলি মোড়ল বলেন, কপোতাক্ষ পাড়ের ২ বিঘা জমিতে তিনি ভুট্টা চাষ করেছেন। তার জমিতে মাটি কেটে ইট-ভাটা করার কারণে ভাল ফসল হয়না। তাই তিনি কৃষি খামার বাড়ির পরামর্শ ও আশপাশের চাষিদের কাছ থেকে উৎসাহ নিয়ে ভুট্টা চাষ করছেন। এবছর তার ফলনও বেশ ভাল। ভাল দাম পাবার আশাও তার।
ভুট্টা বির্ষয়ক কৃষি বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, লবনাক্ত পতিত জমিতে কোনো প্রকার চাষ দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। ধান কাটার পর নরম মাটিতে ভুট্টার বীজ রোপণ করলেই চলে। আবার ভুট্টার বীজতলা তৈরি করে সেখান থেকে ১৫-২০ দিনের চারা তুলে এনে রোপণ করলেও হয়। আর সেচ দেওয়ার জন্য পানির তেমন সঙ্কটও হয় না।
সাতক্ষীরা জেলা বীজ উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের উপ-পরিচালক মোঃ নাজিম উদ্দিন শেখ জানান, সাতক্ষীরাতে ভুট্টার হাইব্রিড বীজ উৎপাদন হয়না। চাষিরা উদ্যোগ নিলে হাইব্রিড ভুট্টার বীজ উৎপাদনে সার্বিক সহযোগীতা করা হবে।
এ প্রসঙ্গে জেলা কৃৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক নূরুল ইসলাম জানান, ২০১৬-১৭ সালে জেলায় ভুট্টা চাষ হয় ১১৫ হেক্টর জমিতে আর বর্তমানে ২০১৯-২০ সালে জেলায় ভুট্টা চাষ হয়েছে ৫৭০ হেক্টর জমিতে। সরকারের নানা উদ্যোগ, চাষিদের সহযোগীতা, বিনামূল্যে বীজ সার প্রদান, মাড়াই যন্ত্র স্থাপনসহ কৃষি খামার বাড়ির সার্বিক সহযোগীতায় জেলায় ভুট্টা চাষ বেড়েছে। এবার বাজারে ভাট্টার দাম ও বেশি। তাই আগামিতে জেলায় ভুট্টা চাষে আগ্রহী হবে চাষিরা এমনটায় আশা তাঁর।