আবু সাইদ বিশ্বাসক্রাইমর্বাতা রিপোট: সাতক্ষীরা: ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে সাতক্ষীরাতে আমের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আমের ভরা মৌসুমে এ ঝড়ে জেলার ৪০-৫০ শতাংশ আম ঝড়ে পড়েছে। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে আমচাষিদের । আম ছাড়াও লিচু, কলা, ভুট্টা, পেঁপে ও ধানসহ অন্যান্য ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাতক্ষীরা অঞ্চলের চাষিরা। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ভার প্রাপ্ত নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বৃহস্পতিবার ভোর থেকে আমরা আমসহ বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি নিরুপণে মাঠে নামি।
তাতে সরেজমিন পর্যবেক্ষণে যেটা দেখেছি তাতে আমাদের ধারণা গড়ে ৩০-৩৫ শতাংশ আমের ক্ষতি হয়েছে। গড়ে ১৫ শতাংশের কিছু বেশি আম ঝড়ে পড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘রাতেই বিভিন্ন স্থানে খোঁজ নিয়ে আমরাই জেলা প্রশাসককে জানিয়েছিলাম যে ২০ শতাংশ আম ঝরে পড়েছে। তবে সকালে আমরা বিভিন্ন বাগান পরিদর্শন করে দেখছি- ক্ষতির পরিমাণ একেক এলাকায় একের রকম।
শহরের ৫নং ওয়ার্ড এলাকার আমচাষি জালেম খা বলেন, ‘ঝড়ে সব শেষ। এবার হয়তো আম নামাতে যেতেই হবে না গাছে। কারণ সব আম ঝড়ে পড়েছে। দুই-চারটা থাকলেও সেগুলোরও বেশিরভাগ ঝড়ের কারণে ফেটে গেছে। ফলে আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে এবার। আমচাষিদের পাশে সরকার না দাঁড়ালে এবার তার বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বেন। অনেকই পুঁজি হারিয়ে পথে বসবেন।’
এদিকে জেলায় ৩১ মে থেকে হিমসাগর আম বাজারজাতের সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা জানায় জেলা প্রশাসক। যে কারণে অনুষ্ঠানিক ভাবে জেলাতে আম ভাঙ্গতে আর মাত্র ১০ দিন বাকি।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, চলতি মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় চার হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে ৫ হাজার ২৯৯টি আম বাগানে আম চাষ হচ্ছে। ১৩ হাজার ৯৯ জন চাষী আম উৎপাদনের সঙ্গে জড়িত। এছাড়া ব্যক্তি পর্যায়ে আরো কয়েক হাজার আম চাষী রয়েছে। চলতি মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন। মে মাসের শেষ সপ্তাহ সপ্তাহ থেকে আম পাড়া শুরু হবে। তার আগেই পাকা আম বাজারে উঠতে শুরু করবে।
জেলার প্রায় লক্ষাধীক পরিবার প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ভাবে আম চাষের সাথে যুক্ত। পরিবারিক আম চাষের পাশা-পাশি বাণিজ্যিক ভাবে জেলাতে আম চাষ হয়ে আসছে ঐতিহ্যগত ভাবে। শুধুই তাই নয়, বর্তমান রাঝধানীর বেশীরভাগ বাজার গুলিতে প্রধানত এই জেলার আম সরবরাহ হয়। ফলে এই জেলার অর্থনীতির অন্যতম উৎস হচ্ছে আম। হিমসাগর আম ইউরোপ ও আমেরিকার বাজারে রপ্তানি হয়ে আসছে গতকয়েক বছর ধরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র আরও জানায়, সাতক্ষীরা জেলা থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩১ দশমিক ৮৩ মেট্রিক টন এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৭ মেট্রিক টন নিরাপদ ও বালাইমুক্ত আম ইতালি, ডেনমার্ক, সুইডেন ও ফ্রান্সসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে এবছর আম রপ্তানি নিয়ে শঙ্কায় আম চাষীরা। আম রপ্তানি করা না গেলে আমের ন্যার্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হবে আম চাষীরা। হ্রাস পাবে দেশের রাজস্ব।
সাতক্ষীরা পৌরসভার মিয়াসাহেবের ডাঙ্গা গ্রমের আম চাষি জালেম খা ১০টি বাগানে তাঁর ১৫ বিঘা জমিতে ২০০-১৫০টি আম গাছ আছে। এসব আম বাগানের ইজারা ও পরিচর্যা করতে ঋণ নিয়ে খরচ করেছেন প্রায় তিন লাখ টাকা। এখন পরিচর্যা করছেন। আশা করেছিলেন সাড়ে ছয় লাখ টাকার আম বিক্রি করতে পারবেন। হঠাৎ আমফল ঝড়ের কারণে তার সব শেয় হযে গেছে । ৬ থেকে ৭ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে তার।
সাতক্ষীরা সুলতানপুর কাঁচা-পাকা বাজার সমবায় সমিতির সভাপতি রাশেদ জানান, আমফল ঝড়ে সাতক্ষীরা আমের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ৬০ থেকে ৭০ টাকা দরের হিম সাগর আম গতকাল বুধবার জেলায় বিক্রি হয়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা কেজি দরে। এছাড়া আম ভাঙ্গার সময় এখনো হয়নি।
আমের বেশ ক্ষতি হয়েছে। বাজার জাতকরণের কারণে দাম কম। আম চাষীদের পাশাপাশি তারাও আমরে ন্যার্য দাম নিয়ে শঙ্কায়।
একই ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রওশনআলী জানান, আম চাষী,খুচরা ও পাইকারী বিক্রেতারা প্রণোদনার দাবী রাখে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা আমজাদ হোসেন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে চাষিদের অনলাইনে আম বিক্রি করতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এছাড়া কালবৈশাখি ঝড়ে আমরে যে ক্ষতি হয়েছে তাতে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সমস্যা হবে না।
সাতক্ষীরা কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক নূরুল ইসলাম বলেন, আগামি ৩১ মে থেকে জেলা থেকে হিমসাগর আম পাড়ার কথা। কিন্তু হঠাৎ আমফল ঝড়ে চাষিরদের ব্যাপক ক্ষতি করে দিল। ক্ষতি পূরণের জন্য আমরা ক্ষতি গ্রস্থদের তালিকা করে মন্ত্রানালয়ে পাঠানো হবে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন,সাতক্ষীরায় ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকালে সদর উপজেলার ভোমরায় ঝড়ে বিধ্বস্ত হওয়া ঘর পুনর্নির্মাণে শিরিনা বেগম নামে এক গৃহকত্রীকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ সহায়তা হিসেবে দুই বান্ডিল টিন, নগদ ছয় হাজার টাকা ও খাদ্য সামগ্রী পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়।
আবু সাইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: ২১/০৫/২০২০— ০১৭১২৩৩৩২৯৯