আবু সাইদ বিশ্বাস : ক্রাইমর্বাতা রিপোট: এমন বিধ্বংসী ঝড় দেখেনি জীবনে, সবই শ্মশানে পরিনত হয়েছে। চারিদিকে হাহাকার, ধ্বংস স্তুপের নির্মমতা, ঘূর্ণিঝড় আম্ফান সত্যিকার অর্থে তার মহাশক্তি প্রদর্শন করেছে। অন্যান্য বারের ঘূর্ণিঝড় এবং জ্বলোচ্ছাস অপেক্ষা আম্ফানের ক্ষমতা যথেষ্ট আর ধ্বংসলীলা ভিন্ন হতে ভিন্নতর। ঘূর্ণিঝড় জ্বলোচ্ছাস সাধারণত অতি উপকূলীয় এলাকাকে স্পর্শ করে। নদী চরাঞ্চাল, ফাঁকা এলাকা সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্থ হয় কিন্তু এবারের বাস্তবতায় সাতক্ষীরা জেলা শহর, উপশহর, গ্রামীন জনপদ, উচ্চু এলাকা সর্বত্র নির্মমতা আর ধ্বংসস্তুপের ছোয়া। ঘূর্ণিঝড় সাধারনত মুহুর্তের মধ্যে শুরু আর মুহুর্তে শেষ হয় কিন্তু আম্ফানের চোখরাঙানি আর ভয়াবহ তান্ডব ছিল অন্তত দশ/এগার ঘন্টা। মড় মড় করে গাছ গাছালি পড়ে উপড়ে, ভেঙ্গে পড়ার প্রতিটি শব্দ আতঙ্ককে বহুগুন বাড়িয়ে দেয়। আর আশিভাগ কাচা, অর্ধকাচা, টিন, এ্যাডভেস্টার ভেঙ্গে পড়েছে। নিশ্চিহৃ হয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে শত সহস্র পরিবার। কারও ঘরের চাল নেই, কারও বারান্দার টিন নেই, ঘরবাড়ী ভেঙ্গে পড়েছে সড়কে এমন ভয়াবহ দৃশ্য সৃষ্টি করেছে আম্ফান। আম্ফানের তান্ডবে পড়ে যাওয়া ভেঙ্গে পড়া গাছ বা ডাল পরমুহুর্তে পুনরায় দমকায় পড়ে গাছ এবং ভাঙ্গা ডাল উড়ে পড়েছে বসত বাড়ীতে। দুপুর দুইটা হতে শুরু হওয়া আম্ফানের ভয়াবহতার তীব্রতা বৃদ্ধি পেতে থাকে সন্ধ্যা হতে। রাত আটটার পর হতে রুদ্রমুর্তিতে, বিধ্বংসীতাকে সঙ্গী করে এলাকার পর এলাকা শ্মশানে পরিনত করে। হাহাকার আত্মচিৎকার, কান্নাকাটি, আম্ফানের তীব্রতা হতে রক্ষা পেতে সব ধরনের চেষ্টা ছিল বুধবার রাতে। আম্ফানের নিষ্ঠুরতা যেমন ছিল সর্বকালের সেরা নিষ্ঠুরতা অনুরূপ ভাবে ধ্বংস যজ্ঞ আর দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতির কারন। সর্বত্র সবদিকে কান্না। যতই সময় অতিবাহিত হচ্ছিল ততোই যেন আম্ফান তার শক্তি প্রদর্শনে মত্ত হচ্ছিল। বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আম্ফান সাতক্ষীরার পথে পথে, সড়কে সড়কে রেখে গেছে নিষ্ঠুরতার ছোবল। ক্ষতিগ্রস্থ, বসতবাড়ী হারানো মানুষগুলোর আহাজারী আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠছে। মনজু খাতুন অনেক কষ্টে খোলা দিয়ে আধা পাকা ঘর নির্মান করেছিল। বুধবারের সর্বনাশা আম্ফান মনজুর বসতবাড়ী উড়িয়ে দিয়েছে। অসহায় হত দরিদ্র মজনুর কান্নায় দেবহাটার পারুলিয়ার বিশ্বাস বাড়ীর আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে জেলার সর্বত্র। এমন মনজুর অস্তিত্ব অগনিত। অসংখ্য শত সহস্র সর্বনাশা আম্ফান শহরের কামালনগরের করিমননেছা, বাকালের শামছুর রহমান মাষ্টারের জীবন কেড়ে নিয়েছে। আম্ফান সাতক্ষীরা সদরের ফিংড়ি কুলতলি গ্রামের আরও একজনকে না ফেরার দেশে নিয়ে গেছে। আম্ফানের নির্মমতা, নিষ্ঠুরতা এমনই বেদনা দায়ক, সর্বশান্ত, সর্বহারার দামামায় পৌছেছে যে কে কাকে সান্তনা দেবে। সাতক্ষীরার এমন কোন বাড়ী নেই, এমন কোন পরিবার নেই যে বাড়ী বা পরিবার আম্ফানের রুদ্ররোষের শিকার হয়নি। শ্যামনগরের গাবুরা পদ্মপুকুর, কৈখালী, আশাশুনির প্রতাপনগর, দেবহাটার সীমান্ত পারের অধিবাসি, কালিগঞ্জের বাবুরাবাদ বা কাঠমহল নয় আবার সাতক্ষীরা শহর নয় গোটা সাতক্ষীরার প্রতিটি প্রান্তে আম্ফান এর ছোবল স্মরণকালের সব ধরনের ঘূর্ণিঝড়কে অতিক্রম করেছে। আশার কথা এটাই যে যথাসময়ে প্রস্তুতি সাবধানতা, সতর্কতা জীবন হানি তেমন ঘটেনি। তবে গবাদি পশু, আম ক্ষেতের বরো ধান, মৎস্য, কাঠাল, লিচু, সবজি সহ বিভিন্ন ধরনের রবিশষ্যের ক্ষতির শেষ নেই। দেশের বা সাতক্ষীরার ইতিহাসে বুধবার আম্ফানের তান্ডবে যেভাবে গাছ গাছালি ভেঙ্গে পড়েছে তা অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনের গৃহীত পদক্ষেপ আশার সঞ্চার ঘটিয়েছে। সাতক্ষীরার পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আম্ফান তান্ডবের ক্ষত চিহৃ পরিস্কার, পরিচ্ছন্ন করেছে। সড়ক যাতায়াতে উপযুক্ত করেছে। বিধ্বংস হওয়া বসতবাড়ীর সদস্যদের উদ্ধার করেছে। সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান (পিপিএম বার) নিজেই স্বশরীরে উপস্থিত থেকে উদ্ধার তৎপরতা পরিচালনা করেছেন। সাতক্ষীরার বিশ লক্ষাধিক মানুষ আম্ফানের নিষ্ঠুরতা ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখিন। অবিলম্বে সরকারি সহায়তা অপরিহার্য।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …