ক্রাইমবার্তা নিউজঃ বুধবার রাতে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে যশোরে সর্বশেষ ১২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তবে জেলা প্রশাসক ৬ জন নিহত হবার সংবাদ নিশ্চিত করেছেন। প্রশাসনের দেয়া তালিকা অনুযায়ী নিহতরা হলেন জেলার চৌগাছা উপজেলার পৌর এলাকার হুদো চৌগাছার ওয়াজেদ হোসেনের স্ত্রী চায়না বেগম (৪৫) ও মেয়ে রাবেয়া খাতুন (১৩), বাঘারপাড়া উপজেলার দরাজহাট ইউনিয়নের বুদোপুর গ্রামের ছাত্তার মোল−ার স্ত্রী ডলি খাতুন (৪৫) এবং শার্শা উপজেলার গোগা ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া গ্রামের শাহাজাহানের স্ত্রী ময়না খাতুন (৪০), বাগআচড়া ইউনিয়নের জামতলা গ্রামের আব্দুল গফুর পলাশের ছেলে মুক্তার আলী (৬৫) এবং শার্শা ইউনিয়নের মালোপাড়া গ্রামের সুশীল বিশ্বাসের ছেলে গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস। চৌগাছার একই ঘটনায় ওয়াজেদ হোসেনের ছেলে আলামিন (২২) আহত হয়েছেন। এদিকে পুলিশের বিশেষ শাখার রিপোর্ট অনুযায়ী মণিরামপুর উপজেলায় আরো ৫ জনের এবং শার্শা উপজেলায় ১ জনের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়া গেছে। মণিরামপুর উপজেলার পারখাজুরা গ্রামের খোকন দাস (৭০), তার স্ত্রী বিজন দাস (৬০), ওয়াজেদ আলী (৫০), তার ছেলে ইসা (১৫) ও আছিয়া বেগম (৭০)। এছাড়া শার্শা উপজেলার মহিপুড়া গ্রামের মিজানুর রহমান (৬০) নামে আরো একজনের মৃত্যু সংবাদ দিয়েছে পুলিশ। ডিসট্রিক্ট ইন্টেলিজেন্স অফিসার (ডিআইও-১) এম মসিউর রহমান সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। মণিরামপুরে মৃত্যুর তথ্য জেলা প্রশাসনের কাছে এখনো নেই। রাতে যোগাযোগ করা হলে জেলা প্রশাসক জানান, ওখানে বিদ্যুৎ ও মোবাইল নেটওয়ার্ক নেই। এমনকি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সঙ্গেও যোগাযোগ করা যাচ্ছে না। তবে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে আরো মৃত্যুর ঘটনা ঘটতে পারে বলে তিনি জানান। এদিকে চৌগাছায় নিহত মা-মেয়ে এবং আহত ছেলে ঝড়ের সময় ঘরে ছিলেন। রাত ১০টার দিকে ঘরের পাশের একটি গাছ ভেঙে ঘরের ওপর পড়ে। এ সময় চাপা পড়ে মা ও মেয়ে নিহত হন। আর বাঘারপাড়ার নিহত গৃহবধূ নামাজ পড়ার পর কোরআন তেলাওয়াত করছিলেন। ঝড়ে একটি আমগাছের ডাল টিনের ঘরের চালার ওপর ভেঙ্গে পড়লে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। শার্শায় নিহতদের মধ্যে মুক্তার আলী ও গোপাল চন্দ্র বিশ্বাস নিজেদের ঘরের মধ্যেই গাছ ভেঙে পড়লে মারা যান। আর ময়না খাতুন স্বামীর সাথে এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যাবার সময় গাছ পড়ে মারা যান। তবে স্বামী বেঁচে যান। এদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তাণ্ডবে যশোরের বিভিন্ন এলাকা লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। পড়ে গেছে অসংখ্য কাঁচাঘর। উড়ে গেছে আধাপাকা বাড়ির টিনের চাল। এছাড়া গাছ উপড়ে ও ডাল ভেঙ্গে পড়ায় বিভিন্ন সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। যশোর-বেনাপোল সড়কে শতবর্ষী গাছসহ অসংখ্য গাছ উপড়ে পড়ায় বিকাল ৫টা পর্যন্ত জেলা শহরের সাথে বেনাপোলের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করতে কাজ করছে ফায়ার সার্ভিস। এদিকে ফল ফসলেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। তবে সে ক্ষতির পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক। বুধবার রাত ১০টার দিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফান যশোরে আঘাত হানে। যশোরস্থ বিমান বাহিনীর আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা যায়, রাত ১২টার দিকে ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১৩৫ কিলোমিটার। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক ড. মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান জানিয়েছেন, যশোরে ৪ হাজার ৭০০ হেক্টর জমিতে আম ও লিচু রয়েছে। সবজি রয়েছে ২০ হাজার হেক্টর, পানের বরজ রয়েছে ১১শো হেক্টর। এসব ফল ফসলের কিছু ক্ষতি হয়েছে। তবে তার পরিমাণ এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শফিউল আরিফ জানিয়েছেন, আম্ফানের কারণে কি পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা এখনও নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করতে ফায়ার সার্ভিস কাজ শুরু করেছে। দ্রুতই সড়কগুলো চলাচলের উপযোগী হবে।
Check Also
যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার
নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …