ঈদের দিনের কিছু করণীয়

। আবু ওমায়ের ।।প্রতি বছরই রমজান আসে মুমিন-মুত্তাকিদের মাঝে রহমত, বরকত ও নাজাতের পয়গাম নিয়ে। রমজান আসে মুমিন-মুত্তাকিদের মাঝে আনন্দের বারতা নিয়ে। এর অতি-উত্তম কারণ রমজান এলেই মুমিনের সাওয়াব কয়েকগুণ বৃদ্ধি পায় এবং গোনাহ মাফের মোক্ষম সুযোগ সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর শাওয়ালের চাঁদ দেখে যে উৎসব বিশ্বের মুসলমানরা পালন করে থাকেন, সেটি পবিত্র ঈদুল ফিতর। আর এই ঈদুল ফিতর মুসলমানদের এক গুরুত্বপূর্ণ ও অনাবিল আনন্দের উৎসব। এদিন প্রতিটি মুসলিমসত্তা নব উৎসাহ-উদ্দীপনায় জেগে ওঠে। কিন্তু এবার বৈশ্বিক মহামারি দুর্যোগ করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের মুসলিম-অমুসলিম সবার মতো বাংলাদেশের মানুষও করোনার ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছেন। এবার ঈদের আনন্দ অনেকটাই মলিন হতে চলেছে করোনার কারণে। তবে ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আমরা পবিত্র ঈদুল ফিতরের আনন্দ-উৎসব উপভোগের চেষ্টা করব, ইনশাআল্লাহ। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে ঈদ পালন করেছেন এবং সাহাবীদের ঈদ উদযাপন করার জন্য তাগিদ দিয়েছেন। মদিনায় যাওয়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দেখলেন, লোকজন দুটি দিনকে উদযাপন করে খেলাধুলা করছেন। তাদের এ খেলাধুলা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তারা বলে, আমরা জাহেলি যুগ থেকেই এ দুই দিন খেলাধুলা করতাম। তখন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, এ দুই দিনের পরিবর্তে তোমাদের এর চেয়ে শ্রেষ্ঠ দুটি দিন দিয়েছেন। তা হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।’ (আবু দাউদ)।

ঈদের দিনের করণীয়

গোসল করা : পাক-পবিত্র থাকার জন্য গোসল অপরিহার্য। এজন্য ঈদের দিন গোসল করে ঈদগাহে যাওয়া উত্তম। তাই সব মুসলমানের উচিত ঈদের দিন গোসল করে ঈদগাহে গিয়ে ঈদের দুই রাকাত নামাজ আদায় করা। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের দিন গোসল করতেন। হযরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদের দিন (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা) ঈদগাহে যাওয়ার আগে গোসল করতেন।’ (বায়হাকি)।

নতুন পোশাক পরিধান : পোশাক-সাজসজ্জা সৌন্দর্যচর্চার অন্যতম উপাদান। ঈদের দিন আমরা নতুন ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরে ঈদের নামাজ পড়তে যাব। ঈদের দিন নতুন বা উত্তম পোশাক পরিধান করা প্রয়োজন। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদগাহে যাওয়ার আগে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন। ইবনুল কাইয়িম (রা.) বলেন, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই ঈদেই ঈদগাহে যাওয়ার আগে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন।’ (যাদুল নায়াদ)।

খাবার গ্রহণ : ঈদুল ফিতরের দিন ঈদের নামাজ আদায়ের আগে খাবার গ্রহণ করা নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের একটি সুন্নত। তাই আমরা ঈদের নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে অবশ্যই খাবার খেয়ে ঈদগাহে যাব। হযরত বুরাইয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের সালাতের আগে খেতেন না।’ (তিরমিযী)।

হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া : পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত। তাই মুসলমাদের উচিত পবিত্র এই ঈদের দিনে (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা) পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া। তবে ওজররত ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য নয়। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হেঁটেই ঈদগাহে যেতেন। হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নত।’ (বুখারী)।

ফিতরা আদায় : প্রতি বছর আমরা দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনা (রোজা) করি। রোজার ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোর জন্য আমরা ফিতরা আদায় করে থাকি। তাই ঈদের দিন সুবহে সাদিক হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব হয়। সুতরাং কোনো ব্যক্তি যদি ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের আগে ইন্তিকাল করেন, তার সদকায়ে ফিতর আদায় করতে হবে না। আর যদি কোনো সন্তান সেদিন সুবহে সাদিকের আগে জন্মগ্রহণ করে, তার পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করতে হবে। (তাহতাবি)।

তাকবির বলা : পবিত্র ঈদের দিনে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ তাকবির পড়ে থাকেন। এ সম্পর্কে আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতরের দিন ঘর থেকে বের হয়ে ঈদগাহে পৌঁছা পর্যন্ত ‘আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ’ তাকবির পাঠ করতেন। (মুসতাদরাক)।

খুতবা শোনা : আমরা পবিত্র ঈদের দিনে ঈদগাহে গিয়ে দুই রাকাত নামাজ আদায় করি। নামাজ শেষে অনেকেই খুতবা শুনি; আবার কেউ কেউ খুতবা না শুনেই চলে যাই। আব্দুল্লাহ বিন সায়েব (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করলাম। যখন তিনি ঈদের নামাজ শেষ করলেন, তখন বললেন, যার ভালো লাগে সে যেন বসে, আর যে চলে যেতে চায় সে যেতে পারে।’ (আবু দাউদ)।

মুসাফাহ ও মু’আনাকাহ : ঈদের নামাজ শেষে ধনী-গরিব ছোট-বড় নির্বিশেষে সবাই একে-অপরের সঙ্গে বুকে বুক ও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কোলাকুলি করেÑ এমন দৃশ্য মুসলমান ছাড়া অন্য কোনো ধর্মাবলম্বীর মধ্যে দেখা যায় না। ঈদের নামাজের পর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সাহাবীদের সঙ্গে মুসাফাহ ও মু’আনাকাহ করতেন। আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘হযরত হাসান (রা.) একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলেন। তিনি তখন তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং কোলাকুলি করলেন।’ (শারহুস সুন্নাহ)।

শুভেচ্ছা বিনিময় : মুসলিম উম্মাহর জন্য পবিত্র দুটি ঈদ (ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা) আনন্দ-উৎসবের দিন। এই দিনে আমরা সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ধনী-গরিব সবাই সবার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করে থাকি। ইবনে হাজার (রহ.) বলেন, সাহাবীরা ঈদের দিন ঈদের নামাজের পর বিভিন্ন রকমের ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। ঈদ মোবারক ইনশাআল্লাহ, ঈদকুম সাঈদ এ ধরনের বাক্য বলে একে-অপরের সঙ্গে ঈদের নামাজের পর শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন।

আত্মীয়-স্বজনের খোঁজখবর নেয়া : বিশ্বের মুসলমানরা পবিত্র ঈদের দিন আনন্দ-উৎসবের পাশাপাশি আত্মীয়-স্বজনদের খোঁজখবর নিয়ে থাকেন। আমরা দেশে-প্রবাসে বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করা আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে টেলিফোন-ফেসবুকে খোঁজখবর নিয়ে থাকি। ঈদের দিন আত্মীয়-স্বজনদের বাসায় বেড়াতে যাওয়া একটি বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি করে। আত্মীয়দের সঙ্গে সবসময় সম্পর্ক রাখতে হবে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে আখিরাতে বিশ্বাস রাখে, সে যেন আত্মীয়দের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে।’ (বুখারী)।

ওপরে উল্লেখিত করণীয়গুলো পালনের ক্ষেত্রে অবশ্যই বর্তমান মহামারি পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধির মানতে হবে।

লেখক : সাংবাদিক।

 

Check Also

তাবলীগ জামায়াতের সাদপন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে সাতক্ষীরায় বিক্ষোভ-সমাবেশ

মুহাম্মদ হাফিজ, সাতক্ষীরা : তাবলীগ জামাতে সাদপন্থীদের বর্বোরিচত হামলার প্রতিবাদ ও সাতক্ষীরা জেলা আ.লীগের সহসভাপতি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।