ঈদের আনন্দ নেই সাতক্ষীরাবাসীর মনে:বিদ্যুৎহীন মানুষ গুলো রয়েছে চরম কষ্টে: ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে হাজার কোটি টাকা

আবু সাইদ বিশ্বাস:ক্রাইমর্বাতা রিপোর্ট: সাতক্ষীরা: আম্ফানের তান্ডবে সাতক্ষীরায় বিধ্বস্ত জনপদের মানুষের ঈদ আনন্দ নেই। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ জেলার প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ। টানা ৪ দিন বিদ্যৎ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়ায় অন্ধকারে রেয়েছে জেলার সিংহ ভাগ মানুষ। বিদ্যুৎহীন মানুষ গুলো চরম কষ্টে দিনাপাত করছে। আশ্রয়হীন কয়েক হাজার মানুষ ভেড়ি বাঁধের উপর ঈদ উৎযাপন করতে হচ্ছে। এছাড়া করোনা ভাইরাসের কারণে আতঙ্ক ও পরিবারের সদস্য ছাড়ায় অনেকেই এবার ঈদ উৎযাপন করবে। রাজনৈতিক সহিংশতা,সড়ক দুর্ঘটনা ও আশ্রয়হীন মানুষ গুলোও ব্যতিক্রম ঈদ পালন করবে। মসজিদে ঈদের নামাজ ও বাড়িতে সিমায় খাওয়ার মধ্য দিয়ে আবদ্ধ থাকছে এবারের ঈদ অনুষ্ঠান।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের তান্ডবে এলাকায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশা পাশি কেড়ে নিয়েছে এসব অঞ্চলের মানুষের ঈদ আনন্দও। সহায়-সম্বল হারিয়ে এখন তারা শুরু হা-পিত্যেস করে চলেছেন। ঝড়ের তান্ডবে বিধ্বস্ত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকার চিংড়ি ঘের, বেড়িবাঁধসহ বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবস্থার।
প্রিয়জনের নতুন কাপড় উপহার দেওয়া তো দূরের কথা অনেকেই সেমাই চিনি কেনার সাধ্যটুকুও হারিয়ে ফেলেছেন। প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের সংকটের মধ্যে প্রলয়ঙ্ককরী ঘূর্ণিঝড় উপকূলের মানুষদের সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন কাঁকড়া,চিংড়িচাষিরা ও আম চাষিরা।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়,ঘূর্ণিঝড় আমপানের আঘাতে সাতক্ষীরায় ২২ হাজার ৭১৫টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও প্রায় ৬১ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। কৃষি বিভাগের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ১৩৭ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। মৎস্য বিভাগের ক্ষতি হয়েছে ১৭৬ কোটি ৩ লাখ টাকা। প্রাণিসম্পদের (গবাদিপশু) ৭৭ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। এদিকে, ৮১ কিলোমিটার রাস্তা ও ৫৭.৫০ কিলোমিটার বেড়িবাধের ক্ষতি হয়েছে। দেড় শতাধিক বিদ্যুতের খুটি উপড়ে পড়েছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। জেলা প্রশাসক এসএম মোস্থফা কামাল জানান, জেলায় ৪ হাজার ৩৩২ হেক্টর জমির ফসলি জমি সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে। আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৮ হাজার ৬১৫ হেক্টর জমি। এ নিয়ে কৃষিতে মোট ক্ষতি হয়েছে ১৩৭ কোটি ৬১ লাখ ৩০ হাজার টাকার। ভেসে গেছে ১৩ হাজার ৪৯৭ হেক্টর জমির চিংড়ি ঘের ও ১ হাজা ৫০০ হেক্টর জমির মৎস্য খামার। সাড়ে ১২ হাজার মাছের ঘেরের ক্ষতির পরিমান ১৭৬ কোটি ৩ লাখ টাকা টাকা। ৯১টি খামার ও ৬৪০টি গবাদি পশু ও ৮৬টি হাস মুরগির খামারসহ মোট ৭৭ লাখ টাকা ৬৭ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলার উপকূলীয় নদ-নদীর ২৩টি পয়েন্টে বেঁড়িবাধ ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ৮১ কিলোমিটার রাস্তা ও ৫৭.৫০ কিলোমিটার বেঁড়িবাধ। জেলায় ২২ হাজার ৭১৫টি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত ও প্রায় ৬১ হাজার ঘরবাড়ি আংশিক বিধ্বস্ত হয়েছে।
এদিকে শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী ইউনিয়নের দাঁতিনাখালী গ্রামের মাসুম গতকাল জানান, আম্ফানের তান্ডবে বাড়ির সামনে চুনা নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে বাড়িঘর পানিতে থই থই করছে। ভেসে গেছে ১০০ বিঘা চিংড়ি ঘের, ও তিনটি মিষ্টি পানির পুকুরসহ ২ হাজার ডিম দেওয়া মুরগির (লেয়ার) খামার। বাঁধ মেরামত না হওয়ায় চরম ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা।
একই এলাকার মানুষ ছালেক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘এবারের ঈদ যেন তাদের কাছে মূর্তিমান দুঃস্বপ্ন। বাড়িতে অজু করার মতো একটু মিষ্টি পানিও নেই। সেখানে আবার ঈদ। জলোচ্ছ্বাসে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ঈদ আনন্দ।’ পার্শ¦বর্তী দাঁতিনাখালী গ্রামের ইটভাটা শ্রমিক মুছাগাইন জানান, চুনা নদীর বাঁধ ভেঙে বাড়ির উঠানে পানি উঠে আছে। এই পরিস্থিতিতে তারা ঈদের আনন্দ ভুলে গেছেন। বাড়িতে চাল নেই, ঈদের জন্য এখনো সেমাই চিনিও কিনতে পারেননি। একই এলাকার দিনমজুর ফারুখগাজী জানান, বাঁধ ভেঙে নদীর পানিতে তলিয়ে আছে বাড়িঘর। দুর্গাবাটি ও দাঁতিনাখালী বাঁধ মেরামত না হওয়ায় বাড়ির সঙ্গে নদীর পানির জোয়ার-ভাটা খেলছে। সেখানে এবারের ঈদের বিষয় মনে নেই তাদের।
এছাড়া রাজনৈতিক কারণে ২০১৩ সালের পর যারা নিহত হয়েছে সেই সব পরিবারের মাঝেও ঈদের আনন্দ নেই। উৎসব অনুষ্ঠানে প্রিয়জনের কথা স্মরণে আসায় প্রতিবারই তাদের মাঝে ভং ও আতঙ্ক কাজ করে। মনের কথা কারোর সাথে বলতে ও পারে না। অনেক পরিবারের অভিযোগ যাদের কারণে তাদের পরিবারের সদস্য হারাতে হয়েছে তারা আজ পাশে নেই।
আম্ফানের তান্ডবে সাতক্ষীরায় বিধ্বস্ত জনপদের ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ গুলো চেয়ে আছে সরকারের সহায়তার দিকে। ক্ষতিপূরণ পাবে অনেকে আশাও করছে। রাজনৈতিক ছত্রছাযায় যেন সেই আশা নিরাশার রূপ না নেয়। ত্রান কার্যক্রমে সেনাবাহিনীকে কাজে লাগানোর পরামর্শও ভুক্তভোগী মানুষ গুলোর।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।