আবু সাইদ বিশ্বাস: ক্রাইমবার্তা রিপোর্ট: প্রাণঘাতি করোনায় এবং সম্প্রতি সাতক্ষীরা জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘুণিঝড় আম্ফানের ক্ষত নিয়ে এবার সারা দেশর ন্যায় সাতক্ষীরাবাসী ঈদ উদযাপন করছেন । জেলার প্রায় ২০ লক্ষ মুসলিম সহ সারাদেশর মানুষ গৃহবন্দি অবস্থায় ঈদ উল ফিতর উদযাপন করছেন। সাতক্ষীরায় ঈদের জামাত সম্পর্কে জেলা প্রশাসকের ১৪ দফা নির্দেশনা দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। আম্ফনে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ গুলো ক্ষত নিয়েই আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করছেন।
গৃহবন্দি অবস্থায় দুনিয়ার দেশে দেশে ঈদ উল ফিতর উদযাপন করছেন ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা। বৈশ্বিক ওই মহামারি থেকে জীবন বাঁচাতে এবার পৃথিবীর খুব জায়গাতেই ১০ জনের বেশি জমায়েত হয়েছে। ঈদের জামাত হয়েছে পবিত্র দুই মসজিদ মক্কা মুকাররামা ও মদীনা মুনাওয়ারায়। ইমাম, মুয়াজ্জিন আর খাদেমরা জামাতে শামিল হয়েছেন। কিন্তু রাষ্ট্রজুড়ে কারফিউ বলবত থাকায় সাধারণ মানুষে ঘরের বাইরে যাওয়া বারণ। জেদ্দায় নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল ফয়ছল আহমেদ মানবজমিনকে জানিয়েছেন- দেশি বিদেশি সবাই রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত মেনে নিজ নিজ গৃহে যে যার মতো করে ঈদের নামাজ আদায় করেছেন। সৌদি আরবে ২৩ শে মে থেকে ঈদ উল ফিতরের ছুটি৷ করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে দেশটির সরকার ঈদ-ছুটি শুরুর দিন থেকে দেশজুড়ে কারফিউ জারি করেছে। যা বলবত থাকবে ২৭ শে মে পর্যন্ত।
সৌদি আরবে শতাধিক বাংলাদেশি করোনার কারণে প্রাণ হারিয়েছেন। আক্রান্ত প্রায় ১০ হাজার। যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেনের পর সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি মারা গেছেন সৌদি আরবে।
কূটনৈতিক সূত্র এবং আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের রিপোর্ট মতে, দুনিয়ার বেশির ভাগ রাষ্ট্র মুসলিম সম্প্রদায়ের আবেগের স্থান মসজিদুল হারাম (কাবা শরীফ) ও মসজিদে নববীর (রাসুল সা. শায়িত সেখানে) খাদেমদার রাষ্ট্র সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে রোববার ঈদ উল ফিতর পালন করেছে। ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ ও ভারত। এ দু’টি দেশে সোমবার ঈদ হবে রাষ্ট্রীয়ভাবে। তবে ব্যক্তি উদ্যোগ এবং কিছু কিছু অঞ্চলে বাংলাদেশ এবং ভারতেও রোববার ঈদ উদযাপিত হয়েছে সৌদির সঙ্গে মিল রেখে। ঘটনাচক্র বা কাকতালীয়ভাবে বাংলাদেশ ও ভারতের ঈদ যাপনের বিষয়টি মিলে গেছে। দু’দেশেই শনিবার (২৯ শে রমযান) শাওয়ালের চাঁদ খোঁজা হয়েছে, কিন্তু কোথাও দেখা যাওয়ার খবর মিলেনি। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে মুসলিম প্রধান পাকিস্তানের এবার শাওয়ালের চাঁদ তালাসের চেয়ে ক্যালেন্ডারের মনোযোগ ছিল বেশি। তাই ইসলামবাবাদ আগেবাগেই অর্থাৎ দিনের বেলায় রিয়াদের সঙ্গে মিল রেখে রোববার ঈদ উল ফিতর উদযাপনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয়। শ্রীলংকান মুসলিমরাও সম্মিলিত সিদ্ধান্তে রোববারই ঈদ পালন করেন। সেখানেও তারা ঘরোয়া আয়োজনে খুশির দিনটি কাটান। সদ্য সেক্যুলার নেপালের অল্প সংখ্যক মুসলিম রয়েছেন। তারা সোমবার ঈদ করছেন বলে জানা গেছে। থিম্পুতে বহিরাগত মুসলিমরার যে যার দেশের সঙ্গে মিল রেখে এবার ঈদ যাপন করছেন। অন্যান্য বছর থিম্পুস্থ বাংলাদেশ মিশন এবং ভারতীয় মিশন এলাকায় পৃথক জামায়াত হলেও করোনার কারণে এবার তা হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন থিম্পুতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. শহীদুল করিম। উল্লেখ্য, কিংডম অব ভুটানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে মেডিকেল পড়ুয়া লোটে শেরিং শনিবারই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে টেলিফোন করে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে মসজিদে প্রবেশাধিকার সীমিত, বৃটেনে পুরোপুরি বন্ধ
যুক্তরাষ্ট্র থেকে যে খবরা খবর এসেছে তাতে বলা হয়েছে- করোনার ভয়াবহতায় ঈদে মসজিদে সীমিত প্রবেশাধিকার রয়েছে। অনেকে মসজিদে ঈদের নামাজ পড়েছেন অত্যন্ত সতর্ক অবস্থায়, স্বাস্থ্যবিধি মেনে। তবে বেশিরভাগই বাসায় কাটাচ্ছেন। নিউইয়র্কের একজনের ভাষ্য ছিল এমন- মুত্যুপুরিতে আবার কিসের ঈদ, কিসের আনন্দ। প্রায় আড়াই শতাধিক বাংলাদেশি কেবল নিউইয়র্কেই মারা গেছেন জানিয়ে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত সিলেটের ওই নারী বলেন, এত মৃত্যু দেখার পরও নিউইয়র্কবাসী যে এখনও স্বাভাবিক আছে সেটাই বড় কথা। ব্যক্তিগতভাবে আমরাও সবাই ভালো আছি। এবার ঈদ গৃহবন্দি হয়ে করতে হচ্ছে। তুবুও আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আমরা এখনও সুস্থ আছি।
এদিকে
বৃটিশ সরকারের সিদ্ধান্ত মতে করোনার কারণে লন্ডনসহ গোটা বৃটেনে সব ধর্মীয় প্রার্থনা কেন্দ্র বন্ধ রয়েছে। করোনাের কঠিন সময় পার করছে দেশটি। প্রতিদিনই লাশের সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। লন্ডনে দেড় শতাধিক বাংলাদেশ বংশোদ্ভুত বৃটিশ করোনায় প্রাণ হারিয়েছেন। হাজার হাজার বৃটিশ নাগরিক মারা গেছেন। লন্ডনে নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার আশিকুন নবী চৌধুরীর মতে, করোনাকালের ঈদ সম্পূর্ণ নতুন এক অভিজ্ঞতা। ফেইথ বেইজড সব ইন্সটিটিউট বন্ধ। ফলে মসজিদও বন্ধ রয়েছে। যে যেভাবে পারছেন ঘরেই ঈদের নামাজ পড়েছেন। বৃটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটির পরিচিত মুখ গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব নবাব উদ্দিনের মতে, এবার ঈদও লকডাউনে পড়ে গেছে। এক মাস সিয়াম সাধনার পর যে পবিত্র দিনটি আল্লাহ মুসলিম সম্প্রদায়ের পরস্পরের সঙ্গে আনন্দ উদযাপনের জন্য দিয়েছেন সেটি এবার ভার্চুয়ালি করতে হচ্ছে। নবাব বলেন, শোকাবহ এই ঈদে চিকিৎসক, সমাজসেবী, কমিউনিটির পরিচিত মুখগুলো বারবার মননে আসছে, যারা করোনায় হারিয়ে গেছেন এই অল্প ক’দিন আগে।
সাতক্ষীরায় ঈদের জামাত সম্পর্কে জেলা প্রশাসকের ১৪ দফা নির্দেশনা দিয়ে গণবিজ্ঞপ্তি
এতদ্বারা সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে এ বছর কোন ঈদগাহে বা উন্মুক্ত স্থানে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর এর জামাত অনুষ্ঠিত হবে না। জেলার সকল মসজিদে নিম্নোক্ত নিয়মাবলী/নির্দেশনা অনুসরণপূর্বক ঈদের জামাতের আয়োজন করতে হবে।
(১) শহর ও গ্রামের সকল মসজিদে সকাল ৭.০০ টা থেকে ১০.০০টা বা সুবিধাজনক সময়ে একাধিক জামাত আয়োজন করতে হবে।
(২) প্রতিটি মসজিদে প্রবেশের পূর্বেই মুসল্লিগণের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার বা সাবান-পানি দ্বারা হাত ধৌত করার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
(৩) সকল ধর্মপ্রাণ মুসল্লিগণ বাসা থেকে ওযু সেরে নিজস্ব জায়নামাজ নিয়ে মুখে মাস্ক পরিধানপূর্বক মসজিদে আগমন করবেন।
(৪) মসজিদে কার্পেট রাখা যাবে না এবং নামাজের পূর্বে প্রতিটি মসজিদ জীবানুনাশক দ্বারা পরিষ্কার করতে হবে।
(৫) নামাজে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে সামাজিক দুরত্ব ( প্রত্যেককে কমপক্ষে ৩ ফুট দুরত্ব) ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে দাঁড়াতে হবে।
(৬) জামাত শেষে কোলাকুলি ও পরস্পর হাত মেলানো পরিহার করতে হবে।
(৭) শিশু, বয়স্ক ও অসুস্থ্য ব্যক্তিদেরকে ঈদের জামাতে অংশগ্রহণে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
(৮) করোনা ভাইরাসের মহামারি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য প্রতিটি জামাত শেষে আল্লাহর নিকট দোয়া প্রার্থনা করতে হবে।
(৯) সর্বসাধারণের সুরক্ষা নিশ্চিৎকল্পে জেলা/উপজেলা প্রশাসন , স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্দেশনা
অবশ্যই অনুসরণ ও প্রতিপালন করতে হবে।
(১০) স্ব-স্ব মসজিদ কমিটি উপরোক্ত নির্দেশনাসমুহ প্রতিপালন নিশ্চিত করবেন।
(১১) ঈদের প্রাক্কালে সকল প্রকার উচ্চশব্দ বিশিষ্টি পটকাবাজী নিষিদ্ধ করা হলো।
(১২) ঈদের ছুটি চলাকালীন বেপরোয়াভাবে মোটরসাইকেল চালানো এবং শালীনতা বিরোধী সকল কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করা হলো।
(১৩) ঈদের দিন বা ঈদ পরবর্তী সময়ে আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে ভ্রমণ বিরত রেখে নিজগৃহে অবস্থান করতে হবে।
(১৪) ঈদের দিন বা ঈদ পরবর্তী সময়ে দর্শণীয় স্থানে/যে কোন ধরণের জনসমাগম থেকে বিরত থাকতে হবে।
“ঘরে থাকুন, সুস্থ্য থাকুন”
জনস্বার্থে এ আদেশ জারী করা হলো । আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এস এম মোস্তফা কামাল
জেলা প্রশাসক