আম্ফানে বিধ্বস্ত আশাশুনির প্রতাপনগর- ত্রাণ বিতরণ খাতা কলমেঃ প্রশাসন ব্যস্ত ছবি তুলতে

আশাশুনির প্রতাপনগর ঘুরে আবু সাইদ বিশ্বাস: সাতক্ষীরা: ঘুর্ণিঝড় আম্ফানের ৭ দিন পর আশাশুনি উপজেলার শতভাগ বিধ্বস্ত প্রতাপনগর ইউনিয়নে ক্ষতিগ্রস্থতের ত্রাণ দিয়ে ছবি তুলে ত্রান ফেরত নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এঘটনায় এলাকায় ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকির হোসেন এসব ত্রান বিতরণ করেন। ত্রাণ বিতরণের ছবি তোলার পর অসহায় মানুষ গুলোর কাছ থেকে ত্রাণ ফেরত নেয়া হয়। আশাশুনির প্রত্যাপনগর ঘুরে ভুক্ত ভোগীরা প্রতিবেদকের কাছে এসব অভিযোগ করেন।

গত ২ মে ঘুর্ণিঝড় আম্পানে বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে যে কয়টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়ন। নদী বেষ্টিত একটি দ্বীপ প্রত্যাপনগর। উত্তর ও পশ্চিমে খোলপেটুয়া নদী অবস্থিত, পূবে কপোতাক্ষ এবং দক্ষিণে হরিষখালী নদী অবস্থিত। যার বেশিরভাগ অংশ জুড়েই রয়েছে জল দ্বারা আবদ্ধ।

৮ হাজার ৩৭২ একর আয়তন বিশিষ্ট ইউনিয়নটিতে প্রায় ৩৫ হাজার ৭৫৫ জন লোকের বসবাস। যে খানে ৭ হাজার ৩৫০টি পরিবার রয়েছে। গত ২৯ মে বুধবার সাতক্ষীরার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘুর্নিঝড় আম্ফানে ইউনিয়নটি শতভাগ ক্ষতি গ্রস্থ হয়। ৩১ কি:মিটার ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে গেছে। ৪০০ কি:মিটার ওয়াপদার ভেড়ীবাঁধ ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। ১০৩ কিলোমিটার রাস্তা নষ্ট হয়ে গেছে। প্রায় তিন হাজার ঘরবাড়ি ভেঙ্গে পড়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়েছে। এমতাবস্থা গত ৯ দিন ধরে তারা মানবতার জীবন যাপন করছে। ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র এসব তথ্য জানায়। এছাড়া ২৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ৪৫টি মসজিদ,৭টি মন্দির, ৩০০টি গভীর নলকুব, ৮০টি টিউবয়েল, ৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক ও একটি আশ্রায় কেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

এদিকে ঘুনিঝড় আম্ফানের সাতদিন পর মৌলিক মানবিক অধীকর থেকে বঞ্চিত ইউনিয়নটির এক নম্বর ওয়ার্ডের চাকলা গ্রামে ১০ জনের মাঝে ১০ কেজি করে চাল বিতরণ করা হয়। গত ২৬ মে মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকির হোসেন এসব ত্রান বিতরণ করেন। যে দশ জনের নামে ত্রাণ বিতরণ করাহয় তারা হলেন(১)তৌহিদুল ইসলাম ঢালী,(২) মনিরুল ইসলাম ঢালী,(৩) মনিরুজ্জামান,(৪) আছাকুর রহমান বিশ্বাস,(৫) নূর মোহাম্মদ,(৬) আব্দুল গফফর সানা,(৭) ওহিদুল ইসলাম (৮) আবু সাইদ বিশ্বাস(৯) আবু দাউদ বিশ্বাস ও (১০) মিজানুর সরদার। ত্রাণ বিতরণের পর ছবি তুলে তাদের কাছ থেকে ত্রাণ ফেরত নেয়া হয়।
স্থানীয় যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মুস্তাফিজুর রহমান জানান, যাদের নামে ত্রাণ দেয়া হয়েছে তারা ত্রান পায়নি। কে, করা কি ভাবে তালিকা করলো তাও কেউ জানেনা।
যাদের নামে ত্রাণ বিতরণ করা হয় তার মধ্যে মনিরুজ্জামান,আবু সাইদ সহ কয়েক জনের নামে কথা হয়,তারা জানান, তালিকার বিষয়ে তারা কিছুই জানেনা। তাদের নাম ও ভোটার আইডি ব্যবহার করে এসব তালিকা করে ত্রান তুলে নেয়ার একটা প্রক্রিয়া বলেও অভিযোগ করেন।
স্থানীয় সমাজ কল্যান ফোরামের পরিচালল তারিকুল ইসলাম জানান,তার কাছ থেকে একশ কেজি চাউল ধার চায় স্থানীয় চেয়ারম্যান সমর্থক কয়েকজন। পরে সেগুলা বিতরণ করে ছবি তুলা হয়। বিতরণ শেষে সেই চাউল আবার ফেরত দিয়ে যায়।

ত্রাণ বিতণের এমন চিত্র যখন গোটা জেলাতে সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে তখন ২৭ মে বিবেলে সেই ১০ ব্যক্তি ত্রাণ বিতরণ করা হয়। চাল,ডাল,তেল,সহ বিভি খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ রেজা ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকির হোসেন।

একই এলাকার ২ নং ওয়ার্ড মেম্বর আসলাপম গাজী জানান,তার এলাকাতে বুধবার দুপুর পর্যন্ত কোন ত্রাণ বিতরণ করা হয়নি। এমনকি করোনায় ক্ষতিগ্রস্থদেরও কোন ত্রাণ দেয়া হয়নি। বুধবার বিকেলে তার ওয়ার্ডে ৪০ জনকে সামান্য ত্রাণ বিতরণ করা হয়। তার অভিযোগ ত্রাণ বিতারনে তারমত অনেক মেম্বরকে সাথে রাখা হচ্ছে না।

এদিকে গতকাল দুপুরে ক্ষতিগ্রস্থ অঞ্চলে যান আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তার কাছে এলাকা বাসী ত্রান বিতরণে অনিয়মের চিত্র তুলে ধরেন।

স্থানীয় চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, ত্রাণ বিতরণে কোন অনিয়ম হচ্ছে না। তার কাছে ত্রাণ আসা মাত্রই ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে তা বিতরণ করা হচ্ছে। একই সাথে তিনি ৩৫ লক্ষ ৩ হাজার টাকার অর্থবরাদ্ধের দাবী জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন।

 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মীর আলিফ জানান, জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামালের নির্দেশে ২৬ মে চাকলা অঞ্চলে ১০ জনের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করা হয়। অল্প সময়ের মধ্যে ত্রান নিয়ে ঘটনা স্থলে যাওয়া কঠিন বিধায় স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাকির হোসেন স্থানীয় ভাবে চাইলের ব্যবস্থা করেন। সেইসব চাল বিতরণ করা হয়। তালিকায় যাদের নাম আসলো তারা কিছুই জানেনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তালিকা তাঁকে জেলা প্রশাসক সরবরাহ করে ছিল। এছাড়া ত্রাণ বিতরণের এসব ছবি তিনি তার ফেসবুকে পোষ্ট করেন। তবে ত্রাণ বিতণের পর সেই চাল ফের নেয়া হয়ে ছিল কিনা তার জানান নেই। তিনি আরো জানান, আশাশুনির প্রতাপনগরে পর্যাপ্ত ত্রাণ সরবরাহের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।