ক্রাইমর্বাতা রিপোট:সাতক্ষীরা: প্রাণঘাতি করোনা ভাইরাস যখন দেশের অর্থনীতিকে গতিহীন করেছে, উৎপাদন আমদানী রপ্তানী সহ সামগ্রীক অর্থব্যবস্থাকে এক ধরনের অনিশ্চিত পথের যাত্রী বানিয়েছে। সেই সময়ে ভয়াবহ শক্তিশালী ঘুর্ণিঝড় আম্ফান উপকূলীয় জনপদকে তছনছ করেছে। আম নির্ভর অর্থনীতির গতিপথ ধ্বংস, বিবর্ণ, বিধ্বস্থ করেছে। শত সহস্র আমচাষী ও আমের সুফলভোগীদের রিক্ত, নিস্ব, হত দরিদ্র করে ছেড়েছে। দেশের অর্থনীতির গন্ডি পেরিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের ক্ষেত্রে আমের অবস্থান দিনে দিনে শক্তিশালী হয়ে উঠছিল। আমাদের অভ্যন্তরীন চাহিদা মিটিয়ে আম বিশ্ব বাজারে স্থান করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জনের ক্ষেত্র নিশ্চিত করে। সাতক্ষীরার বাস্তবতায় বানিজ্যিক ভাবে আম চাষ শুরু হয় সেই সাথে বিপুল পরিমান আম উৎপাদন হয়। ক্ষুদ্র, প্রান্তীক পাইকারী ব্যবসায়ীরা আম উৎপাদনে বিনিয়োগ শুরু করে। আমের আর্থিক সুগতি, সুখ্যাতি দেখে জনে জনে আম চাষে উদ্বুদ্ধ হয়। সাতক্ষীরার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আম গাছ রোপন শুরু হয়। বিশেষ করে গোবিন্দ ভোগ, হিমসাগর, ন্যাংড়া, আমরুপালীর চাষে মনোযোগী হতে দেখা যায়। উৎপাদিত আম স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী সহ অন্যান্য এলাকায় রপ্তানী করা হয়। রাজধানী ঢাকা কেন্দ্রীক পাইকার বাজার সৃষ্টি হয় সাতক্ষীরায়। স্থানীয় আম ব্যবসায়ীরা রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন অর্থাৎ হতে অগ্রীম (স্থানীয় ভাষায় যাকে দাদন বলে থাকে) গ্রহন করে আম গাছ ক্রয় করে। আম চাষীরা আম বাগানীরা কেউ কেউ গাছে বোইল, মুকুল আসার পূর্বে বিক্রি কের আবার কেউ কেউ বোইল পরবর্তি আম গুটি আসলে গাছ ক্রয় করে আম পরিচর্যা শেষে বিক্রি করে। এ ভাবেই চলমান সাতক্ষীরার আম ব্যবসা। আম চাষে, আম উৎপাদনে এবং আম ব্যবসায় কোটি কোটি টাকার বিনিয়োগ ব্যবসায়ীদের চাষীদের আর্থিক স্বচ্ছলতা, লাভ এক কথায় বলা যায় আম কেন্দ্রীক স্বপ্নের ডানা মেনেছিল। আম ব্যবসা পরবর্তি আর্থিকভাবে লাভবানের আশায় বুক বেধেছিল বিধি বাম। সর্বনাশা ঘুর্ণিঝড় আম উৎপাদনের, আম ব্যবসার আম অর্থনীতির স্বপ্ন নির্মূল করেছে। আমের ব্যবসায়ীক ভাবনায় ছন্দপতন ঘটিয়েছে। প্রকৃতির নিষ্ঠুরতার ছোয়া জেলার আম বাগান গুলোতে। আর কয়দিন পরেই আমপাড়া, ভাঙ্গা শুরু হবে। চাষীরা আম বাজারজাত করবে। কিন্তু সেই সুযোগ হাতছাড়া হলো আম্ফানের তীব্রতায়। আম্ফানের রুদ্ররোসে বিবর্ণ হয়েছে উঠতি আম, কেবলমাত্র গোবিন্দ ভোগ ভাঙ্গা এবং বাজারে উঠতে শুরু করেছিল। আর কয়দিন পরেই হিমসাগরের মহাউৎসব শুরু করেছিল। আর কয়দিন পরেই হিসাগরের মহাউৎসব হওয়ার কথা তার কিছুদিন পর ন্যাংড়া আর আমরুপালীর উজ্জ্বল আর আলোকিত উপস্থিতি হওয়ার কথা, ব্যবসায়ীরা লাভবান হবে। বিনিয়োগ কারীরা তাদের বিনিয়োগের লাভ পাবে। কিন্তু না আম্ফানের চোখ রাঙানিতে ধ্বংস হলো আম ধুলিস্যাত হলো আম চাষীদের স্বপ্ন। আশা, ইচ্ছা, সাতক্ষীরার বাস্তবতায় অন্যান্য মৌসুম অপেক্ষা এবারের মৌসুমে আমের উৎপাদন কিছুটা কম ছিল। তবে বিদেশে রপ্তানী, ঢাকা কেন্দ্রীক বাজার সৃষ্টিতে কোন ধরনের ঘাটতি ছিল না। বাগানে বাগানে চাষীদের প্রহরা, অস্থায়ী ঘর, পরিচর্যা আর রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বে নিয়োজিত শ্রমিকরাও আশায় বুক বাঁধিছিলো যে আর কয়েকদিন পরেই তারা মহাজনের নিকট হতে পাওনা টাকা পাবেন। পারিশ্রমিক পাবেন, সেই সাথে পাবেন বকশিস ও কিন্তু আম্ফানের তীব্রতায় তাদের ও স্বপ্ন ভেঙ্গে খান খান হয়েছে। সাতক্ষীরার গ্রামীন অর্থনীতি আম নির্ভর অর্থনীতিতে পরিনত হয়েছিল গত কয়েক বছর যাবৎ ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের নিষ্ঠুরতার ছোয়ায় আম নির্ভর অর্থনীতির কেবল ছন্দপতন ঘটেনি স্থানীয় পর্যায়ের আম চাহিদাও খর্ব এমন সময়ে হাট বাজারে সুস্বাদু আমের উপস্থিতি আর উৎসব থাকলেও ঘূর্ণিঝড় আম্ফান তা রদ করছে। আম ব্যবাসয়ীরা বর্তমানে চরম অস্বস্তিকর সময় অতিক্রম করছে। অধিকাংশ আম ব্যবসায়ী ব্যাংক, এনজিও এবং মহাজনের টাকায় বাগান ক্রয় করেছিল তারা বর্তমানে সর্বশান্ত। জেলার প্রায় শতভাগ গাছে আম নেই যা অর্থনীতিতে বিরুপ প্রভাবের সাথেই তুলনা চলে। আম ব্যবসায়ীদের জন্য প্রনোদনার পাশাপাশি ব্যাংক ঋন মাফ, এনজিও ঋণ মাফ সহ সরকারি ভাবে আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি ভূর্তকিই আগামী দিনের আম নির্ভল অর্থনীতি কে চাঙ্গা রাখতে পারে এবং আম চাষী ও আম ব্যবসায়ীরা ঘুরে দাঁড়াতে পারে।
Check Also
আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি
এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …