মধু মাসের বাজারে জনপ্রিয় তালের শাঁস

মাসুদ পারভেজ কালিগঞ্জ (সদর) থেকে॥ জ্যৈষ্ঠের মধু মাসের নানান রকম বাহারী সব ফলের পাশাপাশি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ছোট বড় বাজার গুলোতে উঠেছে কচি তাল। প্রথম অবস্থায় কচি তালের শাঁসের কদর বেশি থাকায় দাম কিছুটা বেশি হয়ে থাকে। প্রতি পিস তালের শাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫টাকায়। সে হিসাবে একটি আস্তো কচি তাল বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। এ অবস্থায় কচি এই মিষ্টি মধুর তালের শাঁসের স্বাদ নিতে পারছে না অনেকে। ঐ দেখা যায় তাল গাছ, ঐ আমাদের গাঁ, ঐ খানেতে বাস করে কানা বকের ছা’ তালগাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে সব গাছ ছাড়িয়ে উঁকি মারে আকাশে। এমন অনেক ছড়া কবিতা লিখেছেন কবি সাহিত্যিকরা। গাঁয়ে এখন বকের ছানা থাক বা না থাক , উপজেলার প্রতিটি এলাকার তালগাছ গুলোতে কচি তালে ভরে গেছে। মধু মাসের এ ফলকে কেউ বলে তালের শাঁস, কেউ বলে তালের কুই, কেউ বলে তালের আটি। গরমের মধ্যে তৈলাক্ত খাবারের চেয়ে তালের শাঁস অনেক উপকারী। এর রয়েছে অনেক গুনাগুন। তাই জ্যৈষ্ঠের এ মধু মাসে বাজারে নানা ফল উঠলেও সব জায়গায় জনপ্রিয় এই তালের শাঁস। গ্রীস্মের এই দিনে তালের শাঁস খুবই জনপ্রিয় একটি খাবার। বর্তমানে এর চাহিদা অনেক বেড়েছে। একজন বিক্রেতা শাঁস কেটে তুলতে তুলতে আরো অনেক ক্রেতারা দড়িয়ে থাকে শাঁস নেবার জন্য। উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামেই তাল গাছ রয়েছে। তালের শাঁস অতি সু স্বাদু হওয়ায় সকল শ্রেণীর মানুষের মাঝে তালের শাঁস একটি জনপ্রিয় ফল। উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজার, বাসস্ট্যান্ড গুলোত এবং অলিতে গলিতে তালের শাঁস বিক্রি করে এই মৌসুমে অনেক হত দরিদ্র মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। তালের শাঁস বিক্রেতা আব্দুল কাদের জানান, তিনি প্রতিবছরই এ সময়ে তালের শাঁস বিক্রি করে সংসার চালান। গ্রাম অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে তাল ক্রয় করে গাছ থেকে পেড়ে এনে শাঁস বিক্রি করেন। বৈশাখ মাস থেকে জ্যৈষ্ঠের অর্ধেক পর্যন্ত এ দেড় মাস চলবে তালের শাঁস বিক্রির কাজ। তবে এবার একটু দেরি করেই চলছে তালের শাঁসের ব্যবসা। প্রতিদিন প্রায় ২শ থেকে ৪শ শাঁস বিক্রি করা যায়। একটি শাঁস আকার ভেদে ৫ থেকে ১০টাকা দরে বিক্রি করা হয়ে থাকে। এতে তার প্রায় ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা লাভ হয়। তালের শাঁস বিক্রি করে চার জনের সংসার ভালই চলে তার। উপজেলার মৌতলা ইউনিয়নের পানিয়া গ্রামের ক্রেতা আবু রায়হান জানান, তালের শাস একটি সুস্বাদু ফল। গরম থেকে এসে তালের শাস খেতে ভালই লাগে। ফলে এর চাহিদা অনেক। তবে তাল গাছ এক পায়ে দাড়িয়ে, সব গাছ ছাড়িয়ে উকি মারে আকাশে, কবির সে কবিতার মতো সারি সারি তাল গাছ রাস্তার দুধারে এমন দৃশ্য আর চোখে পড়েনা। কালের বিবর্তনে এই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার তাল গাছ দিন দিন হারিয়ে যাচ্ছে। এক সময় মানুষ সখ করে বাড়ির পাশে কিংবা রাস্তার ধারে তালের বীজ বোপন করতো কিন্তু এখন আর তা চোখে পড়ে না। তালের শাঁসের পুষ্টি গুনাগুণ সম্পর্কে ডা. মোস্তাক আহমেদ বাবু বলেন, তালের শাঁস শরীরের জন্য খুবই উপকারী একটি ফল। গরমের দিনে তালের শাঁসে থাকা জলীয় অংশ পানি শূন্যতা দুর করে। এছাড়া ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, এ, বিকমপ্লেক্স সহ নানা ধরনের ভিটামিন রয়েছে। তালে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। কচি তালের শাঁস রক্তশূন্যতা দুর করে। চোখের দৃষ্টি শক্তি ও মুখের রুচি বাড়াতে সাহায্য করে।

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।