সাতক্ষীরায় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় খাবার আর পানির তীব্র সংকট

ক্রাইমর্বাতা রিপোট:সাতক্ষীরা: ‘সবার চিন্তা এখন বাঁধ নে, কিন্ত আমরা আয়রোজহীন মানুষগুলো যে দু’তিন ধরে না খেয়ে থাকতিছি তার খোঁজও কেউ নেচ্ছে না। তোমরা তো সংবাদিক, তাই তোমরা পেপারে লিখে আর না হয় স্যার গো বলে আমাগো দু’মুঠো খাবারের ব্যবস্থা করে দেও না। ক্ষিধের জ¦ালায় বাচ্চাগো কান্না আর সহ্য করতি পারতিছি নে’। নেবুবুনিযা গ্রামের নাজমা খাতুনের কথা শেষ না হতেই তার পাশে দাড়ানো রোকেয়া বেগম বলেন, আম্ফান এর পর দিন ১০ কেজি চাল, আলু আর চিঁড়ে পাইলাম। আট জনের সংসারে ঐ চাল আলুতে ক’দিন যায় তোমরা একটু হিসেবে করে দেও। আম্ফান সব ভাসিয়ে নেয়ায় বাজার ঘাট করার সামর্থ্য পর্যন্ত নি। খাবার পানির জন্য এ পাড়া ও পাড়া ঘুরেও তেষ্টা মেটানোর সুযোগও পাচ্ছিনে-বলেও যোগ করেন তিনি।
আম্ফান আঘাতে ক্ষতিগ্রস্থদের সাথে কথা বলে জানা গেছে উপকূল রক্ষা বাঁধ ভাঙার কারনেই মুলত এমন দুরাবস্থা। কিন্তু বাঁধ ভাঙার পর সাত দিন পার হলেও সবাই বাঁধ নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করলেও সর্বস্ব হারানো পরিবারগুলো কোন অবস্থায় রয়েছে, কিভাবে দিনাতিপাত করছে তা দেখার কেউ নেই। তার উপর গত দু’দিনের টানা বৃষ্টিতে আম্ফান এর আঘাতে বসতভিটা ছাড়তে হওয়ায় পরিবারগুলো রৌদ বৃষ্টির মধ্যে দিন কাটালেও জনপ্রতিনিধি থেকে প্রশাসনের কেউ তা আমলে নিচ্ছে না বলেও বানভাসী এসব পরিবারগুলোর অভিযোগ।
এদিকে বিশুদ্ধ পানির অভাবে গাবুরা এবং দাতিনাখালীর কয়েকটি এলাকায় যায়ারিয়া দেখা দিয়েছে বলেও জানা গেছে। স্থানীয় সুত্রগুলো নিশ্চিত করেছে যে খাবার উপযোগী পানির অভাবে নেবুবুনিয়ার ফয়সাল হোসেন, আত্তাবুর ও আব্দুর রহিমসহ বেশ কয়েকজন ইতিমধ্যে যায়ারিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
আম্পান যাতি না যাতি ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছে-উল্লেখ করে দাতিনখালী গ্রামের সত্তোরোর্ধ্ব আব্দুল জলিল গাজী বলেন, বাপু প্রধানমন্ত্রীর কছে একটু লিখে দেওনা, যাতে উনি আমাগো মত অসহায় মানুষগুলোর জন্য অনন্ত দু’বেলা দু’মঠো ভাতের ব্যবস্থা করে দেয়। চেয়ারম্যান মেম্ব^ররা ভোটের হিসেবে করার কারনে আমাগো মত অনেক মানুষ সরকারের পাঠানো অনুদান পাচ্ছে না। তার চেয়ে মিলিটারী দে যদি আমাগো ত্রাণটা পৌছে দিত তবে হয়তো সবাই কমবেশী পাতাম।
আক্ষেপভরা অসহায় এমন আকৃতি কেবলমাত্র বুড়িগোয়ালীনির দাতিনাখালী ও দ্বীপ ইউনিয়ন গাবুরার নেবুবুনিয়া এলাকাবাসীর না। আম্ফান এর স্মৃতিচিহ্ন বয়ে বেড়ানো শ্যামনগর উপজেলার প্রতিটি দুর্গত জনপদের হাজারও পরিবারেরই চলছে এমন আহাজারী।
সরেজমিনে বুড়িগোয়ালীনি, দাতিখালী ও নেনুবুনিয়া গ্রামে পৌছে দেখা গেছে খাবারের জন্য রীতিমত হা-হা-কা-র করছে অনেক অসহায় পরিবার। সংবাদ সংগ্রহের জন্য সংবাদকর্মীদের দুর্গত এলাকার দুরাবস্থা স্বচক্ষে দেখার জন্য গেলে স্থানীয়রা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে ত্রাণ পাওয়ার আসায়। এসব গ্রামের ভিতরে প্রবেশ করে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায় পরিবারের প্রধান (পুরুষ) বাঁধের ভাঙন মেরামতে যাওয়ায় গৃহবধু ভাঙাচোরা ঘর পাহারার দায়িত্ব সামলাচ্ছেন। খাবারের বিষয়ে খোঁজ নিতেই জানালেন, বাঁধ মেরমাতের কাজ থেকে ফিরে যদি কিছু পায় তা দিয়ে কোন রকমে চাল ডাল মিলিয়ে বাচ্চাগো জন্যি কিছু রানবো। তিনি আরও জানান সাতদিন ধরে নদীর সাথে সমানতালে জোয়ারভাটা খেলতে থাকায় বসতবাড়িতে রান্নারও কোন সুযোগ নি। তাই সাইক্লোন শেল্টারে যেয়ে যখন যা জুটতেছে তা রান্না করতি হচ্ছে। অনেক সময় চাল ডাল না মেলায় শাক পাতা সেদ্ধ করে নুন দিয়ে বাচ্চাগো খাতি দিতি হচ্ছে বলেও জানান দাতিনখালীর মরিয়ার খাতুন আর নেবুবুনিয়া গ্রামের হামিদা বেগমের মত আরও অনেকে।
তবে খাবারের পাশাপাশি আম্পান আঘাতে সর্বশান্ত হওয়া পরিবারগুলো নুতন করে খাবার পানির সংকটের মধ্যে পড়েছে বলে জানিয়েছে। নদীর লবন পানি লোকালয়ে প্রবেশ করায় যাবতীয় মিষ্টি পানির আঁধার ও টিউবওয়েল লবনাক্ত হয়ে যাওয়ায় তারা মারাত্বক খাবার পানির সংকটে ভুগছে বলে জানান। দুটি একটি বেসরকারি সংস্থা মাঝেমধ্যে খাবার পানি দিয়ে গেলেও গ্রামের ভিতরে বা ভাঙন কবলিত অংশে পানি পৌছানোর ব্যবস্থা না করায় খাবার পানির কষ্ট অসহনীয় পর্যায়ে পৌছেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
দুর্গতদের মধ্যে খাবার ও পানির তীব্র সংকটের বিষয়ে কথা বলার জন্য বুড়িগোয়ালীনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের মুটোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের জিএম মাসুদুল আলম জানান, যে পরিমান ত্রাণ পাওযা যাচ্ছে তা প্রয়োজেনর তুলনায় অপ্রতুল। তাই যা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে তা ক্ষতিগ্রস্থদের চাহিদার তুলনায় কম হয়ে যাচ্ছে।
উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন উপজেলা প্রশাসনের নিদের্শনা মেনে আপাতত উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নে জনস্বাস্থ্য বিভাগ থেকে পানি সরবরাহ করা হচ্ছে ইঞ্জিনভ্যানযেগে। এছাড়া শুধু দাতিনাখালীতে দিনে ১৫হাজার লিটার পানি সরবরাহের পাশাপাশি দুর্গত এলাকায় পানি বিশদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে বলও তিনি জানান।

Check Also

নকশা না মানায় রাজধানীতে ভাঙা হবে নির্মানাধীন ৩৩৮২ ভবন

নকশা না মানায় ঢাকায় নির্মাণাধীন ৩ হাজার ৩৮২টি ভবনের অবৈধ অংশ চিহ্নিত করে ভেঙে সঠিক …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।