আবু সাইদ বিশ্বাস: শ্যামনগরের কাশিমাড়ি ফিরে: ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ সাতক্ষীরা: ঘুণিঝড় আম্ফানে ভাঙ্গনকৃত বেড়িবাঁধ মেরামত করতে না পারায় উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ি ইউনিয়ন এখনো ও পানির তলে। প্রবল জোয়ারে প্রতিদিন নুতন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ২০ হাজার মানুষ অসহায় ভাবে ২০ দিন পানিবন্ধি হয়ে রয়েছে। স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে মেরামতকৃত রিংবাঁধ ভেঙ্গে হাজারো মানুষের স্বপ্ন ম্লান হয়ে গেছে। নিজেদের সবকিছু হারিয়ে এসব মানুষ বেড়িবাঁধ মেরামতে সরকারের সহযোগীতার দিকে চেয়ে আছে। সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, পানিউন্নয়ন বোর্ড ও সেনাবাহিনী দ্রুত সময়ের মধ্যে আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করবেন।
গত ২০ মে উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রলয়ংকারী ঘুর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষুতিগ্রস্থ শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ি ইউনিয়ন। ৮২৪৭ একর ভৃমি দ্বারা বেষ্টিত ৪৩ হাজার মানুষের বসবাস ইউনিয়নটিতে। আম্ফানে ইউনিয়নটিতে ২৮ হাজার ৩৫০ জন ব্যক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। সাড়ে সাত হাজার পরিবারের মধ্যে ৩১শ পরিবার চরম ক্ষতিগ্রস্থ। ৭৪০টি বাড়ি পানির তলে এবং ৮৩০টি বসতবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ঝড়ে নদী বেষ্টিত ইউনিয়নটির ৭ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ইউনিয়নটির দুইতৃতীয়াংশ প্লাবিত হয়। খোলপেটুয়া নদীর চিংড়িখালি নামক স্থানে বেড়িবাঁধের সবচেয়ে বড় ভাঙ্গন সৃষ্ট হয়। এতে নদী সংলগ্ন ঘাপালি গ্রামের প্রধানসড়ক ভেঙ্গে ৪-৫ ফুট উচ্চে পানির প্রবাহ সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিদিন জোয়ারের পানিতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র এমন তথ্য জানায়।
স্থানীয় ৮১ বয়োবৃদ্ধ আব্দুল বারী সানা কান্না জড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদক কে জানান, জীবনে এত বড় ভাঙ্গন দেখিনি। আমার পাকা ঘরবাড়ি পানির তলে। বসত বাড়ি কিছুই নেই। ২০ দিন ধরে খেয়ে না পরে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। আর পারছি না। কিছু করার থাকলে বাবা তোমরা কর।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (৭,৮,৯) নং -মহিলা মেম্বর রওশন আরা বিথী জানান,তার ওয়ার্ডে ৫৫টি সুপেয় পানির উৎস নষ্ট হয়ে গেছে। স্বাস্থ্য সেবা ভেঙ্গে পড়েছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ সূত্র আরো জানায়, ঝড়ে ইউনিয়নটিতে ৫৫ কিলোমিটার বিদ্যুৎ বিচ্ছন্ন হয়ে যায়,৪৫টি মসজিদ,২১টি মন্দির ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ২১ কিলোমিটার পাকা রাস্তা, ৫৫ কিলোমিটার আধা পাকা রাস্তা,৩টি ব্রিজ,১৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,৫৪৪টি নলক’প,৭হাজার স্বাস্থ্য সম্মত পায়খানা,সাড়ে ৫শ মিঠা পানির পুকুরের মধ্যে ১০ পুকুর,৪৫টি গভীর নলকূফসহ বিভিন্ন উন্নয়ন ও প্রকল্প নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সচিব আব্দুস সবুর জানান,তার ইউনিয়নের ঘুর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতির পরিমাণ আনুমানিক ২১ কোটি ৭৬ লক্ষ ৯ হাজার টাকারমত। এছাড়া মৎস্য,প্রাণী,ও কৃুিষ বিভাগের ক্ষতির পরিমানও অনেক। প্রায় চারশতাধীক মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে।
স্থানীয় ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আজিজুল হক সরদার জানান, আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থেরপর সরকারী ভাবে আশ্বাস দিলেও এখনো পর্যন্ত বেড়িবাঁধ নির্মান করা সম্ভব হয়নি। ফলে এখানকার মানুষ গুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে।
স্থানীয় আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক এসএম আবুল হোসেন জানান, ঘুর্ণিঝড় আম্ফানের পর তার দল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে নিয়ে, উপজেলা চেয়ারম্যান,জেলা প্রশাসক, সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি, মাননীয় সংসদ,পানিউন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে গিয়েছিলাম। এলাকার সমস্যার কথা তাদেরকে বলেছি। তারা আমাদেরকে আম্বস্থ্য করেছে। কিন্তু আম্ফানের ২০ দিন দিন পারও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষ গুলো এখনো দৃশ্যায়ন কোজ কাজ দেখতে পারিনি।
সাতক্ষীরা ও খুলনার ভাঙনকবলিত ১৩টি পয়েন্টে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কাজ করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। এর মধ্যে সাতক্ষীরার আশাশুনি ও শ্যামনগরের ১১টি এবং খুলনার কয়রার দুটি পয়েন্টে কাজ করবে সেনাবাহিনী।
৯ জুন মঙ্গলবার আশাশুনির কাশিমাড়ীর বেড়িবাঁধ সংস্কার কাজ পরিদর্শন করেছেন যশোর ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল হুমায়ুন কবির।
কাশিমাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম আব্দুর রউফ জানান, তার ইউনিয়নে সরকার সড়ক নির্মান ,সংস্কারসহ বিভিন্ন পর্যায়ে একশ কোটি টাকার কাজ করেছে। কিন্তু টেকশই বেড়িবাঁধ নির্মান না করার কারণে সেই উন্নয়ন কার্যক্রম চরম ক্ষতি গ্রস্থ হয়েছে। তার দাবী যদি সিমীত টাকা ব্যয়ে স্থায়ী টেকশই বেড়িবাঁধ নির্মান করা যেত তাহলে শত কোটি টাকার ক্ষতি হত না।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল জানান, পানিউন্নয়ন বোর্ড ও সেনাবাহিনী দ্রুত সময়ের মধ্যে আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থ বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করবেন।
আবু সসাইদ বিশ্বাস:সাতক্ষীরা: ০৯/০৬/২০২০
Check Also
আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি
এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …