উচ্চাকাক্ষী ঋণ নির্ভর বাজেটে সাতক্ষীরায়সহ উপকূলীয় অঞ্চলের বেড়িবাঁধ নির্মানে আলাদা বরাদ্দ নেই: জেলাতে কর্মসংস্থান সৃণ্টিতে নেই কোন বরাদ্দ

আবু সাইদ বিশ্বাস: অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে ২০২০-২১ অর্থ বছরের জন্য ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকার যে উচ্চাকাক্ষী মোটা অংকের ঋণ নির্ভর বাজেট পেশ করেছেন সেখানে ঘুর্ণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থ উপকূলীয় অঞ্চল নিয়ে কোন বাজেট বরাদ্দ দেয়া হয়নি। বিশেষ করে সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি,শ্যামনগর ও খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার বান ভাসি মানুষের স্বান্তনা দেয়ার মোত কোন বাজেট বরাদ্দ নেই। ফলে লাখ বানভাসি মানুষ এ বাজেটে হতাশ হয়েছে। সংশোধনীয় বাজেট বরাদ্দে ঘুণিঝড় আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্থদের বিশেষ বরাদ্দের দাবী জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার দেয়া বিবৃতিতে তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী আ.হ.ম মোস্তফা কামাল জাতীয় সংসদে ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার ১৯০ কোটি টাকার ঋণ নির্ভর ঘাটতি বাজেট পেশ করেছেন। বাজেটের শিরোনাম করা হয়েছে ‘অর্থনৈতিক উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ পথ পরিক্রমা।’ বলা হয়েছে এটি হবে অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং মানুষের জীবন রক্ষার বাজেট।

তিনি বলেন, বাজেটে প্রবৃদ্ধির হার ধরা হয়েছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ, আর বাজেট ঘাটতি হচ্ছে জিডিপির প্রায় ৬ শতাংশ। মূল্যস্ফীতি ধরা হয়েছে ৫.৪ শতাংশ। প্রস্তাবিত বাজেট এবং প্রবৃদ্ধির হার বাস্তবতা বিবর্জিত ও কল্পনা নির্ভর বাজেটে আয় ও ব্যয়ের মধ্যে বড় ব্যবধান রয়েছে বলে সংশ্লিষ্টদের মতামত।

প্রস্তাবিত বাজেটে মোট এডিপি ধরা হয়েছে ২ লক্ষ ৫ হাজার ১শত ৪৫ কোটি টাকা, রাজস্ব খাতে আয় ধরা হয়েছে ৩ লক্ষ ৭৮ হাজার কোটি টাকা, বৈদেশিক ঋণ ধরা হয়েছে ৭৬ হাজার ৪ কোটি টাকা, ব্যাংক ঋণ ধরা হয়েছে ৮৪ হাজার ৯শত ৮০ কোটি টাকা- যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণ। ঘাটতি ধরা হয়েছে ১ লক্ষ ৯০ হাজার কোটি টাকা। বাজেটের প্রায় ৩ ভাগের ১ ভাগই ঋণ নির্ভর । এই ঋণের সুদ পরিশোধ করতেই সরকারের নাভিশ্বাস উঠে যাবে।

এ বাজেটের মাধ্যমে সরকারের ব্যাংক নির্ভরতা আরো বৃদ্ধি পাবে। চলতি অর্থ বছরের ১১ মাসে সরকার ব্যাংক থেকে প্রায় ১ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। করোনা ভাইরাসের কারণে সরকার ১৯টি প্যকেজে ১ লক্ষ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করেছে- যা সরবরাহের দায়িত্ব মূলত ব্যাংকগুলোর। ব্যংকের উপর এমনিতেই তারল্য সংকট রয়েছে; বাজেটে ব্যাংক থেকে ৮৪ হাজার ৯শ’ ৮০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ প্রস্তাবের মাধ্যমে ব্যাংকিং খাতকে আরো সংকটের দিকে ঠেলে দেয়া হবে। সরকারের প্রস্তাবিত এ বাজেটে দেশের আর্থিক শৃঙ্খলা আরো ভেংগে পড়বে বলে অনেকে মনে করেন।

জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৮.২ ; গত বছরও জিডিবি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৮.২। সেটা অর্জন করা সম্ভব না হওয়ায় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার সংশোধন করে তা ৫.২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। এটা নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। বিশ্বব্যাংক এবারের প্রবৃদ্ধি ১.৬ শতাংশ এবং আগামী অর্থ বছরে তা কমে ১ শতাংশে আসতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে-অর্থমন্ত্রী তা গোপন রেখে প্রবৃদ্ধি ৮.২ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে তা কাগুজে লক্ষ্যমাত্রায় পরিণত করেছেন ও জাতিকে মিথ্যা আশারবাণী শুনিয়েছেন বলে ক্বেু কেউ মন্তব্য রেন।। বাস্তবে ৮.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অসম্ভব।

দারিদ্র দূরীকরণ, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং সামাজিক নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার জন্য প্রস্তাবিত বাজেট বক্তৃতায় গুরুত্ব দিলেও এক্ষেত্রে যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে তা বস্তবায়নের কোন সুনির্দিষ্ট প্রস্তবনা তুলে ধরা হয়নি। বাজেটে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী সহ সকলের জন্য খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করার গতানুগতিক বক্তব্য ছাড়া নতুন কোন ব্যবস্থার কথা বলা হয়নি। বিশেষ করে সাতক্ষীরা জেলার জন্য বড়ধরনের কোন অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়নি। ফলে উপকূলীয় এ জেলায় নতুন করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি বাড়বে না।

কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি। কৃষকরা বরাবরই তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য পায়না। প্রস্তাবিত বাজেটে উৎপাদনের উপকরণের মূল্য হ্রাসের কোন কথা বলা হয়নি। বরং রাসায়নিক সারের গত বছরের মূল্যই বহাল রাখা হয়েছ। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতসহ কৃষিখাতকে যথাযথ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয়নি।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৯ হাজার ৮ শত ৩৬ কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় সুপার সাইক্লোন আমফানের কথা বললেও আমফানে ক্ষতিগ্রস্থ সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের ২৬টি জেলার রাস্তা-ঘাট-ব্রীজ-কালভার্ট-বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের পুনর্বাসনে কোন বরাদ্দের কথা বলেন নি।

করোনা ভাইরাসের কারণে বিপুল সংখ্যক লোক কর্মহীন হয়ে পড়েছে, সেই সাথে দেশের কর্মক্ষম বেকার লোকদের সংখ্যা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। করোনা ভাইরাসের কারণে ৯৫ শতাংশ মানুষের আয় কমেছে। কাজ হারিয়েছে ৬২ শতাংশ মানুষ। অথচ অর্থমন্ত্রী ১৪ লক্ষ মানুষ কর্মহীন হয়েছে বলে তার বক্তব্যে বিভ্রান্তিকর তথ্য পেশ করেছেন বলে অর্থনীতিবীতদরা জানান। এ বিপুল জনগোষ্ঠীর আয় ও কর্মসংস্থানের কোন দিক-নিদের্শনা প্রস্তাবিত বাজেটে নেই।

বাজেটে কালো টাকা সাদা করার যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা দুর্নীতিকে উৎসাহিত করবে। মূলত দলীয় এবং দলীয় পছন্দের লোকদের কালো টাকার পাহাড়কে সাদা করার সুযোগ দেয়ার জন্য বাজেটে এ প্রস্তাব রাখা হয়েছে। জনগণ মনে করে যারা অবৈধভাবে অর্থ উপার্জন করে কর ফাঁকি দিয়েছেন, তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া দরকার।

সর্বোপরি করোনা ভাইরাসে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য কার্যকর সুশাসন, সচ্ছতা নিশ্চিতকরণ এবং সকল স্তরে জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠার কোন বিকল্প নেই বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন।
আবু সাইদ বিশ্বাস:বিএ অর্থাস, এমএ (অর্থনীতি)

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।