ক্রাইমবার্তা রিপোট: ঠাকুরগাঁওয়ে চুরির অপবাদ দিয়ে দুই কিশোরকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউপি সদস্য ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
নির্যাতনের শিকার দুই কিশোর হলো- সুমন ও তার মামাতো ভাই কামরুল।
গত ২২ মে জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার সেনগাঁও ইউনিয়নের দেওধা গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। এরপর পরিবারটিকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। সুযোগ পেয়ে গত শুক্রবার (৫ জুন) পীরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন নির্যাতনের শিকার সুমনের মা ও কামরুলের ফুফু সরিফা খাতুন। এরপর ঘটনাটি জানাজানি হয়।
পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার রায় বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, মামলায় সেনগাঁও ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম, মোতালেব আলীসহ আরও সাত জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে মোতালেব আলী তার প্রতিবেশী গৃহবধূ সরিফা খাতুনকে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিল। এতে সাড়া না দেওয়ায় চুরির অপবাদ দিয়ে গত ২২ মে স্থানীয় ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলাম, মোতালেব আলীসহ আরও সাত জন মিলে সরিফা খাতুনের ছেলে সুমন ও তার ভাতিজা কামরুল ইসলামকে আটক করে।
এরপর তারা একটি শালিস বৈঠকের আয়োজন করে। শালিস বৈঠকে হাত-পা বেঁধে ওই দুই কিশোরকে ব্যাপক মারধর করে ইউপি সদস্যসহ তার সহযোগীরা। সেই ঘটনা মোবাইলেও ধারণ করে রাখে তারা। পরে ভিডিওটি গৃহবধূ সরিফা খাতুনকে দেখিয়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে।
চাঁদা না পেয়ে ইউপি সদস্য ও তার সহযোগীরা গৃহবধূকেও মারধর করে ও শ্লীলতাহানীর চেষ্টা চালায়। সেসময় তারা গৃহবধূর বাড়ি থেকে একটি গরু নিয়ে যায়। এরপর তারা ওই পরিবারটিকে অবরুদ্ধ করে রাখে।
এ বিষয়ে জানতে ইউপি সদস্য সদস্য জহিরুল ইসলামের মোবাইলে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। এক পর্যায়ে তিনি ফোনটি বন্ধ করে রাখেন।
সেনগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি ঘটনাটি শুনেছি। এটি খুবই নিন্দনীয় কাজ। এর বিচার হওয়া দরকার। তবে আমার কাছে কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। আমি নিজ উদ্যোগে ইউপি সদস্য জহিরুল ইসলামকে কয়েকবার ফোন দিয়েছি। তবে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। লোক পাঠিয়ে তাকে যোগাযোগ করতে বলেছি, এরপরও তিনি যোগাযোগ করেননি বা ফোন ব্যাক করেননি।’
নির্যাতিত পরিবারটির সাথে যোগাযোগ করেছিলেন কি না জানতে চাইলে চেয়ারম্যান মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি তাদের সাথে যোগাযোগ করার আগেই একটি মামলা হয়েছে। সে সেক্ষেত্রে পরিবারটির সাথে যোগাযোগের আর কোনো প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করিনি।’
এদিকে মামলা দায়েরে সাত দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি।
পীরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার রায় বলেন, ‘মামলার তদন্ত চলছে। আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।’