সাতক্ষীরায় সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রায় নেয়া হাজারো মানুষ খাদ্য ও স্বাস্থ্য ঝুকিতে

আবু সাইদ বিশ্বাস: ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ শ্যামনগর থেকে ফিরে: ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে সবকিছু হারিয়ে সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রায় নেয়া শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ি ইউনিয়নের দুইশটি পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছেন। বসত বাড়ি পানিতে তলিয়ে থাকায় তারা ২৫ দিন আশ্রায় কেন্দ্রে অবস্থান করছে। সহসায় নিজ ঘরে ফেরার সম্ভবনাও দেখছে না তারা। ৮টি সাইক্লোন সেন্টারে আশ্রায় নেয়া আটশ মানুষ চরম দুর্ভোগে রয়েছে। পাচ্ছেন না কোনো রকমের সহযোগিতা, খাবার সংকটে রয়েছেন তারা। তাছাড়া বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে পানিবাহিত রোগে ভুগছেন তারা। অন্যদিকে মরার ওপর খাড়ার ঘা হয়ে দাড়িয়েছে বেড়িবাঁধ সংস্কারের কোন ব্যবস্থা না নেয়ায়।
জেলা প্রশানের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কন্ট্রোল রুম থেকে জানা তথ্য মতে জেলাতে ১৪৫টি সাইক্লোন সেল্টার ও ১ হাজার ৭০০ টি স্কুল কলেজসহ আশ্রয় কেন্দ্রে এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ আশ্রয় নেয়। জেলায় ১২ হাজার সেচ্ছাসেবকের পাশাপাশি ১০৩ জনের মেডিকেল টিম স্বাস্থ্য সেবায় নিয়োজিত ছিল। আশ্রায় নেয়া অনেকেই এখনো তাদের ঘরে ফিরে ফিরে যেতে পারিনি।
সরেজমিনে দেখা গেছে,ইউনিয়ন পরিষদের পাশে ৫৭ নং জয়নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রায় নিয়েছে
১২টি পরিবারে ৫০ জন সদস্য। গত ২০ মে সাতক্ষীরার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে তারা বাড়িঘর ছেড়ে সেখানে আশ্রায় নেয়। ঝড় শেষ হলে পরের দিন নিজ গৃহে যেয়ে দেখে তাদের বসতবাড়ি পানির তলে। সেই থেকে তারা আশ্রায় কেন্দ্রে। সরকারের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটা আশ্রয় কেন্দ্রে শুকনা খাবার ও তিন বেলা খিচুড়ি রান্না করে খাওয়ানোর কথা হলেও এখানে ভিন্ন চিত্র। কোনো রকমের সহযোগিতাতো পান নাই তার ওপর খিচুড়িও রান্না করে দেয়া হচ্ছে না। নিজেই চুলা বানিয়ে যা পাচ্ছেন তাই রান্না করে খাচ্ছেন। তাছাড়া আশ্রয় কেন্দ্রে অনেক শিশু ও বৃদ্ধ রয়েছেন যারা পানিবাহিত রোগে ভুগছেন। এখনো আসেনি কোনো মেডিকেল টিম। চেয়ারম্যান মেম্বর কেউ তাদের খোজ নেয়নি বলে অভিযোগ।
মোহাম্মদ আলী তার পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৬ জন। কাজ নেই কাম নেই খাব। সরকারী কোন ত্রান সহযোগীতা তারা পায়নি। জয়নগর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রায় নেয়া তার সাথে নূরুল হক, আব্দুর রহমান,শহিদুল, মফিদুল,রেহানা,রউফ মোল্লাসহ সকলেই হাস মুরগি,গরু বাছুর তাদের যা কিছু অবশিষ্ট আছে তা নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। তাদের দুখের কথা শোনারও কেউ নেই।
মাদানী ফাউন্ডেশনে আশ্রয় নিয়েছে ১০টি পরিবার। সেখানে আশ্রয় বীর মুক্তি যোদ্ধা মোহোর আলী বলেন, আমরা ২৫ দিন হল আশ্রয় কেন্দ্রে এসেছি। এখন পর্যন্ত একটা মানুষও আমাদের আইসা দেখে যায়নি। না কোনো চেয়ারম্যান না মেম্বর। আমরা খুব কষ্টে জীবনযাপন করছি। যার গেজেট নং ১৮৯৩।
মাজিদা বেগম বলেন, এখন পর্যন্ত্র কেউ ত্রাণ নিয়ে আসে নাই। ত্রাণতো দূরের কথা আমরা যে এই ২০-২৫ দিন ধরে এই খানে আছি কেউ দেখেও গেলো না। ঠিকমতো খাবার দিতে পারি না বাচ্চাটারে। বাচ্চাটাও আজকে অসুস্থ।
৭০ বছর বয়সী নুলুল আমিন বলেন, আশ্রয় কেন্দ্রে আছি খাওন নাই। কেউ যদি খাবার নিয়া আইতো তাইলে কষ্ট করা লাগতো না। এখন অসুস্থ হইয়া রইছি শরীরেও শক্তি নাই। উপকূলীয় এখানে আমাদের দেখারও কেউ নায়।

আবুল হোসেন বলেন, বাজারে যাইতে পারি না কিছু যে কিনে আনমু তার জন্য টাকাও নাই। আমরা ভাই রোজ কাজ করি। দৈনিক কাজ করলে টাকা পাই। পানি আসার পর থাইক্কা কাজও নাই টাকাও নাই। এই আশে পাশে যা পাই লতাপাতা তাই দিয়া রান্না করে খাই।

সুনামগঞ্জ পৌরসভার মেয়র নাদের বখত বলেন, আমাকে প্রশাসন থেকে জানানো হয়েছে সুনামগঞ্জ পৌর শহরের নাকি ৪ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। কিন্তু আমি এ ব্যপারে কিছু জানি না। কে চাল পেলো বা কার মাধ্যমে চাল দেয়া হল তার কোনো তথ্যই আমাকে জানানো হয়নি।
একই অবস্থা জেলার আশাশুনি ও শ্যামনগর অঞ্চলে ঘুণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের।

কাশিমাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসএম আব্দুর রউফ জানান,তার ইউনিয়নে ৮ টি আশ্রায় কেন্দ্রে এখনো ৮শ মানুষ রয়েছে। আশ্রায় কেন্দ্রে খাদ্য সমস্যা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সরকারী ভাবে যে অর্থ ও খাদ্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল তার বেশিরভাগ অংশ ভাঙ্গন কবলিত বেড়িবাঁধ মেরামতে খরচ হয়েছে। যারা বাঁধ মেরামতে কাজ করেছে তাদেরকে ত্রাপন দিয়েছি। আশ্রয় কেন্দ্রে কম খাদ্য দিতে পেরেছি।

আশাশুনি প্রতাপনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জানান, তার ইউনিয়ন এখনো পানিতে তলানো। সকলেরই সমস্যা। কাকে দেখবো আর কার অভিযোগ শুনবো। এরপরও আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে সমস্যা অনেক। সরকারী সহযোগীতা পেলে আশ্রয় কেন্দ্রে পৌছিয়ে দেয়া হবে।

এদিকে শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ.ন.ম আবুজর গিফারী জানান, আম্পনের কারনে তার উপজেলাতে অনেক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে সরকারী ত্রান সহয়াতা পাওয়া মাত্রয় পৌছিয়ে দেয়া হবে।

 

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।