করোনায় মৃত্যু ডাঃ মুজিবুর রহমান ছিলেন এদেশের গর্ব সাতক্ষীরার অহংকার

হাফিজুর রহমান শিমুলঃআলহাজ্ব ডাঃ একেএম মুজিবুর রহমান ছিলেন এদেশের গর্ব আর সাতক্ষীরার অহঙ্কার। সৎজন, নির্লোভ, নিরাহঙ্কারী, মেধাবী, পরোপকারী, সমাজসেবক ও আদর্শ চিকিৎসক আজ আর আমাদের মাঝে নেই। তিনি মঙ্গলবার (১৬ জুন) ভোর সাড়ে ৬ টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় সকলকে কাঁদিয়ে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেণ। তিনি মহামারী করোনা ভাইরাস রোগে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেলেন। এদিন সড়ক পথে মরহুমের লাশ কালিগঞ্জের গনপতি গ্রামের নিজের নির্মিত জামে মসজিদের পাশেই নিজের তৈরী করা গোরোস্থানে(তার ওছিয়ত মোতাবেক) চির নিদ্রায় শায়িত হয়েছেন। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে প্রশাসনের তদারকীতে রাত ৯ টা ১৫ মিনিটে দাফনকার্য সম্পন্ন করা হয়। জানাজা নামাজ পরিচালনা করেন হাফেজ মাওঃ সালাহউদ্দীন আহমেদ। অংশগ্রহন করেন কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ দেলোয়ার হুসেন, চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান গাইন, জামাই ও ভাগ্নেসহ ২০/২০ জন।
বর্ণার্ঢ্য জীবনের অধিকারী কালিগঞ্জের কৃতি সন্তান আলহাজ্ব ডাঃ একেএম মুজিবুর রহমান এমবিবিএস শেষ করে তিনি ইরানে চলে যান, সেখানে দশ বছর চাকুরী করে দেশে ফিরে শুরু করেন পোস্ট গ্রাজুয়েশন। কার্ডিওলজিতে এমডি শেষ করে একবারেই এফসিপিএস, এমসিপিএম (মেডিসিন) শেষ করেন।
কর্মজীবনে তিনি কালিগঞ্জ হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার, শহীদ সোহারাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরিচালক ও অধ্যাপক (মেডিসিন) হিসাবে ছিলেন,ওখান থেকে অবসরে যাওয়ার পর এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অধ্যক্ষ হিসাবে কিছুদিন কর্মরত ছিলেন, তারপর রাজধানীর নর্দান মেডিকেল কলেজে অধ্যাপক হিসাবে জয়েন করেন, পরবর্তীতে কেয়ার মেডিকেল কলেজে অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান(মেডিসিন) হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ব্যক্তিজীবনে একজন শিক্ষানুরাগী, পরোপকারী, দানবীর,সৎ এবং মহৎ মানুষ হিসাবে সবার কাছে সু-পরিচিত ছিলেন। তিনি প্রায় ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মান করেন ডাঃ মুজিব-রুবি মডেল হাইস্কুল। একটানা দশ বছর শিক্ষকদের বেতন ও স্কুলের যাবতীয় খরচ তিনি নিজেই বহন করেছিলেন।কিছুদিন আগে বিদ্যালয়টি এমপিও ভুক্ত হয়।
এছাড়া তিনি নিজ খরচে একটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা, একটি এতিমখানা, একটি বৃদ্ধাশ্রম ও একটি সুপেয় পানির প্রকল্প তিনি প্রতিষ্টা করে গেছেন।
এখানে প্রায় ১০ কোটি টাকার মত উনি ব্যয় করে গেছেন এবং ওনার মৃত্যুর পর যাতে মসজিদ মাদ্রাসা সুন্দর ভাবে চলমান থাকে তার জন্যও উনি একটা মোটা অংকের অর্থ ফিক্সড ডিপোজিট করে গেছেন।
উনার সুপারিশে এলজিইডির সহায়তায় কালিগঞ্জের এলাকায় বহু রাস্তার কাজ সম্পূর্ন হয়েছে এবং এলাকায় হাতে গোনা দু’একটা মসজিদ পাওয়া যেতে পারে যেখানে উনি দান করেন নি। তিনি কৃতিত্ব অর্জনে সন্মাননা পেয়েছেন অসংখ্য যায়গা থেকে। কালিগঞ্জ প্রেসক্লাবের রজতজয়ন্তীতে গুনীজন সন্মাননা পেয়েছিলেন তিনি। এই মহামারীতে মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়েছে,আল্লাহ পাক কার হায়াত কতদিন রেখেছেন শুধু তিনিই জানেন। কোভিডে আক্রান্ত হয়ে শেষ পর্যন্ত সকলের প্রিয় ব্যাক্তিটি ইন্তেকাল করেছেন। তিনি স্ত্রী ডাঃ ফেরদৌসী রুবী ও বড় মেয়ে মেজর ডাঃ শাবনাম, ছোট মেয়ে ও দুই জামাইসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। মহান আল্লাহ পাকের ডাকে সবাইকেই একদিন সাড়া দিতে হবে,মানুষ মরনশীল! শুধু আল্লাহর কাছে একটায় চাওয়া ‘উনাকে জান্নাত নসিব করুন,,আমিন।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।