আরিফুল ইসলাম ইতিহাস: করোনা সংকটে বর্তমান বিশ্ব প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। গত ১৮ই মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। যার কারণে শিক্ষার্থীরা বাড়ি বসে অলস সময় কাটাচ্ছে। বিশেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বই পড়া প্রায় ভুলেই গেছে। প্রাতিষ্ঠানিক চাপ থাকার কারণে অনেক সময় নিজেদের অতিরিক্ত যোগ্যতা বাড়ানোর সময় পাওয়া যায় না। বর্তমানে করোনা অনেক কিছু এলোমেলো করে দিলেও শিক্ষার্থীদের কে দিয়েছে অনেক বাড়তি সময়। সুতরাং এই বিশাল সময়টা নষ্ট না করে ঘরে বসেই অনায়াসে নিজেদের যোগ্যতা কে আরো বাড়িয়ে নিতে পারি আমরা। কি করা যেতে পারে এই অফুরন্ত সময়ে? আসুন জেনে নেওয়া যাক দশটি করণীয় বিষয়। ১.আত্ম উন্নয়নঃ আত্মউন্নয়ন কে না চায়। বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের আত্মউন্নয়নের এটা একটা বড় সুযোগ। আর এর প্রধান হাতিয়ার হল বই। বন্ধের এই সময়ে প্রচুর বই পড়ুন। মনে রাখবেন বই মানুষকে কখনো খালি হাতে ফেরায় না। হুমায়ূন আহমেদ যখন দশম শ্রেণীতে পড়তেন তখন তার হাজারের ওপরে বই পড়া হয়ে গিয়েছিল। অনলাইনে প্রচুর বইয়ের পিডিএফ ভার্সন আছে। ২.ভাষা শিক্ষাঃ আজকাল আমরা সবাই জানি বাংলার পাশাপাশি অন্য ২/১টি ভাষায় দক্ষতা অর্জন করা আমাদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য কতটা জরুরী। বিশেষ করে ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা ছাড়া ভালো কিছু করা প্রায় অসম্ভব। ইউটিউব এ গুগোল এ সার্চ করলে প্রচুর বাংলা বা ইংরেজি টিউটোরিয়াল ও লেসন্স্ পাওয়া যায়। তাই ইন্টারনেটের অপব্যবহার না করে একটু কৌশলী হলে ঘরে বসেই নিজেকে আরও যোগ্যতা সম্পন্ন করা সম্ভব। ৩.কম্পিউটারে দক্ষতা বাড়ানোঃ কম্পিউটারের অন অফ করা ও স্বল্প পরিসরে খুঁটিনাটি কাজ অনেকেই পারে। কিন্তু অনেকেই জানেনা কম্পিউটারে কত ধরনের কাজ রয়েছে। ওয়েব ডেভলপমেন্ট, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ফটোশপ, ভিডিও এডিটিং, ডিজিটাল মার্কেটিং এর মত অনেক ধরনের কাজ রয়েছে কম্পিউটারে। যা জানা থাকলে নিজেকে অন্যদের থেকে সেরা প্রমাণ করা খুবই সহজ হবে। ইউটিউবে এই বিষয়ে বিস্তারিত ভিডিও টিউটোরিয়াল রয়েছে। ৪.প্রচুর বই পড়াঃ বই পড়ে কেউ দেউলিয়া হয় না। একাডেমিক বইয়ের বাইরে প্রচুর পরিমাণে ভিন্ন ভিন্ন জ্ঞানের বই রয়েছে । বিজ্ঞান বিষয়ক, মনন গঠনের সহায়ক, গল্পগ্রন্থ ,জীবনী বিষয়ক গ্রন্থ, ইত্যাদি বই পড়লে আশা করি পড়ার অভ্যাসটা হারিয়ে যাবে না। এতে নিজের জ্ঞান ভান্ডার সমৃদ্ধ হবে। ৫.পরিবারকে সময় দেওয়াঃ করানো কালীন এই সময়ে সারাদিন অহেতুক সময় কাটানোর থেকে পরিবারকে সময় দেওয়া ভীষণ দরকারি। এইসময় পিতামাতাকে তাদের কাজে সাহায্য করতে পারি। ছোট ভাইবোনদের নতুন নতুন বিষয়ে শিক্ষা দিতে পারি ও আগ্রহ তৈরি করে দিতে পারি। ৬.লেখালেখি করাঃ যারা নিজেদের জ্ঞানকে সীমাবদ্ধ রাখতে চান না তারা লেখালেখি করে অপরকে আলো দান করতে পারেন। লেখালেখি করলে নিজের সৃজনশীলতা বাড়ে ও জানার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয়। ৭. সব সময় সচেতন থাকাঃ মহামারীর এই সময়ে সবচেয়ে জরুরি হলো নিজেকে সচেতন রাখা। সব সময় চোখ কান খোলা রাখতে হবে ও পত্রপত্রিকা পড়ে আপডেট থাকতে হবে। পরিবার ও সমাজকে সচেতন করতে হবে। কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তার থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে। আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারকে সহযোগিতা করবে। ৮.শিক্ষামূলক মুভি দেখাঃ অধিকাংশ শিক্ষার্থীরাই মুভি দেখতে পছন্দ করে ও প্রচুর সময় ব্যয় করে। এক্ষেত্রে সাধারণ মুভি না দেখে বরং শিক্ষামূলক ও আত্ম গঠনমূলক মুভি দেখা যেতে পারে। অনেকে মুভি দেখে নিজের জীবন পরিবর্তনের দীক্ষা পেয়েছে। ৯.ছোট্ট পরিসরে কৃষি কাজ করাঃ এই অলস সময়ে বাড়ির আঙিনায় যতটুকু জায়গা আছে সেখানে কৃষি কাজ ও বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষ করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে নিজে কিছু সৃষ্টি করার মধ্যে অনেক আত্মতৃপ্তি রয়েছে যা না করলে বোঝা যায় না। ১০.পাঠ্যবই পড়াঃ নিজেদের পাঠ্য বই গুলো এই সুযোগে ভালোমতো অধ্যায়ন করা যায়। যাতে প্রতিষ্ঠান খুললে নিজের উপর পড়াশোনার কোনো চাপ তৈরি হবে না। এটা করলে অন্যদের থেকে এগিয়ে থাকা যাবে। সুতরাং নিজের যোগ্যতাকে উন্নত করার জন্য এর থেকে ভালো সময় আর কখনো আসবে বলে মনে হয় না। তাই ইন্টারনেটের যাচ্ছেতাই ব্যবহার না করে বরং এর সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ঘরে বসেই নিজেকে কয়েক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার এই তো সময়।
লেখকঃ আরিফুল ইসলাম ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়।