বাংলাদেশে করোনা চিকিৎসার অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রথম থেকে কথা ও আপত্তি উঠলেও প্রতিবিধানের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়সহ সরকার কোনো ফলপ্রসূ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানা যায়নি। এ প্রসঙ্গে সর্বশেষ উপলক্ষে গভীর উদ্বেগ ও হতাশা প্রকাশ করে গেছেন চীন থেকে সংক্ষিপ্ত সফরে আসা বিশেষজ্ঞ দল। গত সোমবার হজরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে এক সংবাদ সম্মেলনে তারা উহানসহ চীনের অভিজ্ঞতার সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন, বাংলাদেশকে অবশ্যই নমুনা পরীক্ষা দ্রুত বাড়াতে হবে, যাতে রোগী শনাক্ত করার পাশাপাশি তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও দ্রুতই করা সম্ভব হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুরে ও ভাষায় চীনের বিশেষজ্ঞরাও করোনা পরীক্ষার ওপর বিশেষ জোর ও গুরুত্বারোপ করেছেন। পরীক্ষার ব্যাপারে বাংলাদেশ যে অত্যন্ত আশংকাজনক অবস্থার মধ্যে রয়েছে এবং এর ফলে যে বহু মানুষের মৃত্যুসহ ভয়ংকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারেÑ এ বিষয়েও সতর্ক করেছেন চীনা বিশেষজ্ঞরা। শুনতে খারাপ লাগলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে চীনের বিশেষজ্ঞরা আসলে সামান্যও বাড়িয়ে বলেননি। এর প্রমাণ মিলেছে মঙ্গলবারের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও প্রচারিত খবরে। ‘ঢাকার বাইরে মনোযোগ কম’ এবং ‘টেস্টের ব্যবস্থা নেই ৪৩ জেলায়’ ধরনের শিরোনামের মধ্য দিয়েও চীনা বিশেষজ্ঞদের বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের মোট ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৩ জেলাতেই পরীক্ষাকেন্দ্র না থাকার তথ্যটি শুধু আশংকাজনক নয়, যে কোনো বিচারে ভীতিকরও। প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্টে জানানো হয়েছে, ঢাকায় ৩২টি এবং ঢাকার বাইরে ৩০টিÑ মোট ৬২টি কেন্দ্রে পরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও চাহিদার তুলনায় অনেক কম হওয়ায় প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রেই নমুনার স্তুপ জমছে। কোনো নমুনা পরীক্ষার ফলই যথাসময়ে দেয়া যাচ্ছে না। একজনের রিপোর্ট চলে যাচ্ছে অন্যজনের নামে। বহু রিপোর্ট পৌঁছাচ্ছে এমনকি রোগী মারা যাওয়ার পর! এদিকে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশÑ টিআইবি ১৬ জুন যে গবেষণা রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তার মূলকথায়ও করোনা চিকিৎসায় সরকারের অবহেলা এবং অযোগ্যতার নানাদিকই প্রাধান্যে এসেছে। টিআইবি জানিয়েছে, করোনার প্রস্তুতি ও সুশাসনের ঘাটতির তথা সরকারের ব্যর্থতার কারণে দেশ ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। একই সঙ্গে উন্মোচিত হয়েছে স্বাস্থ্যখাতের সামগ্রিক এবং বিপদজনক দুর্বলতা। ক্ষমতাসীনদের পক্ষ থেকে কথায় কথায় সিঙ্গাপুরকে ছাড়িয়ে যাওয়ার গালগল্প শোনানো হলেও উদাহরণ দিতে গিয়ে টিআইবির গবেষণা রিপোর্টে জানানো হয়েছে, দেশের ৮৬ শতাংশ নার্সেরই করোনা ভাইরাস সংক্রমণের প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য অতি প্রয়োজনীয় আইসিপি ট্রেনিং নেই। কোনো পর্যায়ের হাসপাতালেই নেই স্ক্রিনিং ও ট্রায়াল ব্যবস্থাপনা। টেস্টের আয়োজন তো নেই-ই। পাশাপাশি নেই চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সুরক্ষা সামগ্রীর ব্যবস্থা। এ ছাড়া করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে ৭৪ দশমিক ৫০ শতাংশ জনবলের ঘাটতি তো রয়েছেই, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণের ঘাটতিও রয়েছে ৫৯ দশমিক ৬০ শতাংশ। নিরাপত্তার অভাবে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অনীহা ও পলায়নপর মনোভাবের কথাও উল্লেখ করেছে টিআইবি। এমন অবস্থার কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে টিআইবি জানিয়েছে, চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে করোনা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ পেয়েছেন মাত্র ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। সাধারণ প্রশিক্ষণ পেয়েছেন ৬ দশমিক ৭০ শতাংশ। মূলত স্বল্প প্রশিক্ষণ এবং সরঞ্জামের অভাবসহ বিভিন্ন কারণেই একদিকে করোনা রোগীরা চিকিৎসা পাচ্ছে না, অন্যদিকে প্রতিদিন মৃত্যু ঘটছে অসংখ্য মানুষের। তাদের জানাযাসহ সৎকারের ক্ষেত্রেও সরকার চরম ব্যর্থতা দেখিয়ে চলেছে। এমন কঠিন অবস্থা তথা সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্য টিআইবি কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছে। আমরা মনে করি, চীনা বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি টিআইবির পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশগুলোর ব্যাপারেও সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া। ৬৪ জেলার মধ্যে ৪৩টিতেই পরীক্ষাকেন্দ্র না থাকার তথ্য নিঃসন্দেহে নৈরাশ্যজনক। আমরা প্রতিটি জেলায় কয়েকটি করে পরীক্ষাকেন্দ্র স্থাপন ও চালু করার দাবি জানাই। নিরাপত্তা সরঞ্জামসহ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হলেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে, তারা যাতে রোগীদের সেবা দিতে পারেন। জরুরি ওষুধসহ অক্সিজেনের কালোবাজারি বন্ধের জন্যও সরকারকে অবিলম্বে তৎপর হতে হবে। সব মিলিয়ে আমরা আশা করি, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই সরকার প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা নেবে, বাংলাদেশকে যাতে লাশের মিছিল না দেখতে হয়।
Check Also
আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি
এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …