বাংলাদেশে পরীক্ষা ছাড়াই করোনার মনগড়া রিপোর্ট

ক্রাইমর্বাতা রিপোট :  করোনা ভাইরাসের উপসর্গ থাকা রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে কোনো ধরনের পরীক্ষা ছাড়াই মনগড়া রিপোর্ট সরবরাহ করতেন তারা। এ অভিযোগে গ্রেফতার ছয় জনের মধ্যে গতকাল বুধবার দায় স্বীকার করে জবানবন্দী দিয়েছেন দু’জন। তারা হলেন- হুমায়ুন কবির ও তার স্ত্রী তানজীনা পাটোয়ারী। ঢাকা মহানগর হাকিম আতিকুল ইসলামের আদালতে তারা ফৌজদারি কার্যবিধি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন। অপরদিকে একই কারণে গ্রেফতার- সাঈদ চৌধুরী (৪৭), বিপ্লব দাস (২৫), মামুনুর রশীদ (১৯) এবং আরিফুল চৌধুরীর (৪০) দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।
দুপুরে তাদের ছয় জনকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। এ সময় আসামী হুমায়ুন কবির ও তার স্ত্রী তানজীনার জবানবন্দী রেকর্ড করার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক তাদের জবানবন্দী রেকর্ড করেন। এরপর তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। অপরদিকে, সাঈদ চৌধুরী, বিপ্লব দাস, মামুনুর রশীদ এবং আরিফুল চৌধুরীকে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। শুনানি শেষে বিচারক দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে, মঙ্গলবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রাজধানীর বিমানবন্দর, আশকোনা বাড়ি ও গুলশান-২ এর কনফিডেন্স টাওয়ারে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে তেজগাঁও থানা পুলিশ। পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেফতার হুমায়ুন কবির এ চক্রের মূলহোতা। তানজীনা পাটোয়ারী তার স্ত্রী। তাদের নেতৃত্বে চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে করোনার পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করতেন এবং ভুয়া রিপোর্ট দিতেন। চক্রটি জনপ্রতি ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিতেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, আটকরা করোনার উপসর্গ থাকা রোগীদের বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার ফলাফল জানিয়ে দেয়। তবে নমুনা সংগ্রহ করার পর তা আর পরীক্ষা করা হয় না। তাদের নেই কোনো ল্যাব। কম্পিউটারে ফলাফল লিখে ই-মেইলে তা রোগীর কাছে পাঠিয়ে দেয়। এভাবেই ইতিমধ্যে ৩৭ জনের ভুয়া কোভিড-১৯ টেস্ট রিপোর্ট জানিয়ে দিয়েছে তারা। নমুনা সংগ্রহের সময় রোগীর বাহ্যিক উপসর্গ দেখে একটা ধারণা থেকে ফলাফল তৈরি করে। করোনার বাহ্যিক উপসর্গ দেখা দিলে, সেক্ষেত্রে তার পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ উল্লেখ করা হয়। কোনো উপসর্গ না দেখা দিলে তার রিপোর্টে নেগেটিভ উল্লেখ করা হয়।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সহকারী কমিশনার মাহমুদ খান বলেন, ‘গুলশানের কনফিডেন্স টাওয়ারের অফিসে অভিযান চালিয়ে জব্দ করা কম্পিউটারে জাল রিপোর্ট পাওয়া গেছে।’ জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত তারা ৩৭ জনের করোনা নমুনা সংগ্রহ করে মনগড়া রিপোর্ট দিয়েছেন। বাসায় গিয়ে স্যাম্পল সংগ্রহ করতে জনপ্রতি ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা তারা নিয়েছেন। তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) হারুন উর রশিদ বলেন, ‘এই চক্রটি আগে জোবেদা খাতুন সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নামের প্রতিষ্ঠানে বুথের মাধ্যমে করোনার উপসর্গ রয়েছে এমন লোকের নমুনা সংগ্রহের চাকরি করতেন। প্রতিষ্ঠানটি আইইডিসিআর থেকে করোনা রোগীর নমুনা সংগ্রহের জন্য অনুমোদিত।’

Check Also

যশোর বেনাপোল দিয়ে ভারতে প্রবেশের সময় কলারোয়ার আ’লীগ কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

নিজস্ব প্রতিনিধি :- সাতক্ষীরা: যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার সময় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভার …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।