يأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَنْ يَرْتَدَّ مِنْكُمْ عَنْ دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ- يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ (৫৪) إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ (৫৫) وَمَنْ يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ (৫৬)
সরল অনুবাদ : “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের মধ্য থেকে কেউ যদি দ্বীন থেকে ফিরে যায় (তাহলে ফিরে যাক, আল্লাহ এমনিতর বহু লোক সৃষ্টি করে দেবেন, যাদেরকে আল্লাহ ভালোবাসেন এবং তারা আল্লাহকে ভালোবাসবে, যারা মুমিনদের ব্যাপারে কোমল ও কাফেরদের ব্যাপারে কঠোর হবে, যারা আল্লাহর পথে প্রচেষ্টা ও সাধনা করে যাবে এবং কোনো নিন্দুকের নিন্দার ভয় করবে না। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ, যাকে চান তাকে দান করেন। আল্লাহ ব্যাপক উপায় উপকরণের অধিকারী এবং তিনি সবকিছু জানেন। আসলে তোমাদের বন্ধু হচ্ছেন একমাত্র আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং সেই ঈমানদাররা, যারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত দেয় অথচ তারা রুকু অবস্থায় থাকে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে, তাঁর রাসূলকে ও মুমিনদেরকে নিজের বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তার জেনে রাখা দরকার, আল্লাহর দলই বিজয়ী হবে।” (সূরা মায়েদাহ, আয়াত : ৫৪-৫৬)
নামকরণ: এ সূরার ১১২ ও ১১৪ নম্বর আয়াতে উল্লিখিত ‘মায়েদাহ’ শব্দ থেকে এ সূরার নামকরণ করা হয়েছে। মায়েদা শব্দের অর্থ খাবারপূর্ণ পাত্র।
সূরা নাজিলের প্রেক্ষাপট: সর্বসম্মতভাবে এটি মাদানি সূরা। মদিনায় অবতীর্ণ সূরাসমূহের মধ্যে এটি শেষের দিকের সূরা। আবদুল্লাহ ইবনে উমার রা. ও আসমা বিনতে ইয়াযিদ (রা) থেকে বর্ণিত আছে, সূরা মায়েদাহ নাজিলের সময় রাসূল (সা.) সফরে ‘আদবা’ নামীয় উটের পিঠে সাওয়ার ছিলেন। সাধারণত ওহি অবতরণের সময় যেরূপ অসাধারণ চাপ ও বোঝা অনুভূত হতো, তখনও তা যথারীতি অনুভূত হয়েছিল। এমনকি ওজনের চাপে উষ্ট্রী অক্ষম হয়ে পড়লে রাসূল (সা.) নিচে নেমে আসেন। (মুসনাদে আহমাদ-৬/৪৫৫) কোন কোন বর্ণনায় পাওয়া যায় এটি ছিল বিদায় হজের সময়। আবু হাইয়ান বলেন, সূরা মায়েদার কিয়দংশ হোদাইবিয়ার সফরে, কিয়দংশ মক্কা বিজয়ের সফরে এবং কিছু অংশ বিদায়হজের সফরে নাজিল হয়। এতে বোঝা যায় সূরাটি সর্বশেষ সূরা না হলেও শেষ পর্যায়ে নাজিল হয়। (বাহরে মুহিত) যুবায়ের ইবনে নুফায়ের (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি একবার হজের পর আয়েশা (রা)-এর নিকট উপস্থিত হলে, তিনি বললেন, যুবায়ের তুমি কি সূরা মায়েদা পাঠ কর? তিনি বললেন, জি হ্যাঁ, পাঠ করি। আয়েশা (রা) বলেন, এটি কুরআনুল কারীমের শেষ সূরা। এতে হালাল ও হারামের যেসব বিধি-বিধান বর্ণিত আছে, তা অটল। এগুলো রহিত হওয়ার নয়। কাজেই এগুলোর প্রতি বিশেষ যতœবান থেকো। (মুস্তাদরেকে হাকেম ২/৩১১)
إِذْ قَالَ الْحَوَارِيُّونَ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ هَلْ يَسْتَطِيعُ رَبُّكَ أَنْ يُنَزِّلَ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِنَ السَّمَاءِ قَالَ اتَّقُوا اللَّهَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ (১১২)قَالَ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا أَنْزِلْ عَلَيْنَا مَائِدَةً مِنَ السَّمَاءِ تَكُونُ لَنَا عِيدًا لِأَوَّلِنَا وَآخِرِنَا وَآيَةً مِنْكَ وَارْزُقْنَا وَأَنْتَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ (১১৪)
আয়াতগুলোর ব্যাখ্যা:
{ ياأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ }
মদিনা ও শ্যামবাসী পড়েন (يَرْتَدِدْ) । এ আয়াতে ঐ সমস্ত লোকদের কথা আলোচনা করা হয়েছে যারা ঈমানের ওপর টিকে থাকতে পারে না। ইবনে আব্বাস (রা) বলেন তারা হলো, বনু আসাদ, গাতফান ও কিন্দা গোত্রের কিছু লোক। রাসূল (সা.)-এর মৃত্যুর পরে আবু বকর (রা)-এর খিলাফতের সময় তারা মুরতাদ বা ধর্মত্যাগী হয়।
মুরতাদদের মধ্যে বনু হানিফা গোত্রের নেতা মুসাইলামাতুল কায্যাব রাসূল (সা.)-এর জীবদ্দশায় দশম হিজরির শেষ দিকে নবুয়ত দাবি করে এবং চিঠি নিয়ে তার দুইজন অনুসারী নাহশাল ও হাকাম ইবনে তুফাইলকে রাসূল (সা.)-এর নিকট প্রেরণ করে। চিঠির ভাষা ছিল নি¤œরূপ :
” مِنْ مُسَيْلَمَةَ رَسُولِ اللهِ إلَى مُحَمَّدٍ رَسُولِ اللهِ ؛ أمَّا بَعْدُ : فَإنَّ الأَرْضَ نَصْفُهَا لِي وَنِصْفُهَا لَكَ!
“আল্লাহর রাসূল মুসাইলামার পক্ষ থেকে মুহাম্মাদুর রাসূল (সা.)-এর প্রতি। অতঃপর কথা হলো, জমিনের অর্ধেক আমার এবং অর্ধেক আপনার।”
পত্র পড়ে রাসূল (সা.) দূতদ্বয়কে জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা কি সাক্ষ্য দিচ্ছ মুসাইলামা আল্লাহর রাসূল? তখন তারা বলল হ্যাঁ। রাসূল (সা.) বললেন, দূত হত্যা যদি অবৈধ না হতো তাহলে আমি তোমাদের ঘাড় বিচ্ছিন্ন করে দিতাম। এরপর রাসূল (সা.) মুসাইলামাতুল কায্যাবের নিকট পত্র লিখে বলেন,
” مِنْ مُحَمَّدٍ رَسُولِ اللهِ إلَى مُسَيْلَمَةَ الْكَذاب ؛ أمَّا بَعْدُ : فَإنَّ الأَرْضَ للهِ يُورثُهَا مَنْ يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ ، وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ “.
“আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সা.)-এর পক্ষ থেকে মুসাইলামাতুল কায্যাবের প্রতি: জমিনের মালিকানা আল্লাহর তিনি যাকে ইচ্ছা তার বান্দাদের থেকে এর উত্তরাধিকার বানান। আর শেষ পরিণতি মুত্তাকিদের পক্ষে।”
পত্র লেখার পরপর রাসূল (সা.) অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং কিছুদিন পরে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ফলে মুসাইলামাতুল কায্যাব দিন দিন তার কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে থাকে। আবু বকর (রা.) খিলাফত লাভের পর খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা.)-এর নেতৃত্বে তিনি বিশাল বাহিনী প্রেরণ করেন। বাহিনী তাদেরকে পরাজিত করে এবং রাসূল (সা.)-এর চাচা হামজা (রা)-এর হত্যাকারী ওয়াহশি (রা) মুসাইলামাতুল কায্যাবকে হত্যা করেন এবং এভাবে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন:
(قَتَلْتُ خَيْرَ النَّاسِ فِي الْجَاهِلِيَّةِ ، وَقَتَلْتُ شَرَّ النَّاسِ فِي الإسْلاَمِ).
“আমি জাহেলি যুগে সবচেয়ে ভালো মানুষকে হত্যা করেছি, আর ইসলাম গ্রহণ করে সবচেয়ে নিকৃষ্ট লোককে হত্যা করেছি।”
মিথ্যা নবুওয়াত দাবিদারদের মধ্যে আর একজন ছিলো বনু আসওয়াদ গোত্রের তালহা ইবনে খুওয়াইলিদ। সেও রাসূল (সা.) এর সময় মিথ্যা নবুওয়াত দাবি করে। আবু বকর (রা) খিলাফত লাভের পর খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা) এর নেতৃত্বে তিনি বাহিনী প্রেরণ করেন। বাহিনী তাদেরকে পরাজিত করে এবং তালহা ইবনে খুওয়াইলিদ শ্যামদেশে পলায়ন করে বনু হানিফা গোত্রে আশ্রয় নেয়। পরবর্তীতে তিনি ইসলাম গ্রহণ করে নিষ্ঠাবান মুসলমানে পরিণত হন।
রাসূল (সা.)-এর ওয়াফাতের পর আরব গোত্রগুলোর মধ্যে ইসলাম ত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়। বনু ফাজারা গোত্র উয়ায়না ইবনে হাসিনের নেতৃত্বে, বনু সুলাইম, বনু ইয়ারবু’ এবং বনু তামিমের একটি গ্রুপ একজন নারী সাজ্জাহ বিনতে মুনজিরের নেতৃত্বে ধর্মত্যাগ করেছিল এবং সে মিথ্যা নবুওয়াত দাবি করেছিল। সাজ্জাহ পরবর্তীতে মুসাইলামাতুল কায্যাবকে বিবাহ করে। বনু কিনদাহ গোত্র আসওয়াস ইবনে কায়েসের নেতৃত্বে ধর্মত্যাগ করেছিল। বনু বকর ইবনে ওয়ায়েল বাহরাইনে ধর্মত্যাগ করেছিল। আল্লাহ রব্বুল আলামিন স্বীয় অনুগ্রহে আবু বকর (রা)এর হাতে সকল ভ-, মিথ্যা নবুওয়াতের দাবিদার এবং ইসলামত্যাগীদের পরাজিত করেন। ইবনে ইসহাক বলেন: রাসূল (সা.) এর ওয়াফাতের পর তিনটি মসজিদ ব্যতীত সর্বত্রই ইসলাম ত্যাগের হিড়িক পড়ে যায়, প্রথমটি মদিনার মসজিদ, দ্বিতীয়টি মসজিদে মক্কা, তৃতীয়টি বাহরাইনের মসজিদে জাওয়াসি। উল্লেখ্য, মদিনার মসজিদের পর প্রথম জুমার নামাজ এখানেই হয়। ঐতিহাসিক হুসাইন হায়কল তাঁর রচিত বই ‘মহানবী (সা.)-এর জীবন-চরিতে’ বলেন: রাসূল (সা.)-এর ওফাতের পর মক্কার বাসিন্দারাও ধর্মত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এমনকি রাসূল (সা.) কর্তৃক নিযুক্ত মক্কার প্রশাসক আত্তাব ইবনে উসাইদ ধর্মত্যাগীদের ভয়ে আত্মগোপন করতে বাধ্য হন। এরূপ নাজুক পরিস্থিতিতে হযরত সুহাইল ইবনে আমর (রা) অত্যন্ত সাহসিকতার পরিচয় দেন এবং যুগান্তকারী এক ভাষণ প্রদান করেন। তিনি বলেন, “এই হৃদয়বিদারক অবস্থায় ইসলামের শক্তি বাড়বে বৈ কমবে না। যে ব্যক্তি ইসলাম সম্পর্কে সন্দেহ ও দ্বিধা-দ্বন্দ্ব প্রকাশ করবে, আমরা তার শির উড়িয়ে দিব।” এর পর তিনি বলেন, “হে মক্কাবাসী! তোমরা সবার শেষে ইসলাম গ্রহণ করেছো, আবার সবার আগে ধর্মত্যাগী হয়ো না। আল্লাহ তায়ালা তাঁর রাসূলকে প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবশ্যই ইসলামের বিজয় নিশ্চিত করবেন।” হযরত সুহাইল ইবনে আমর (রা.) এর তেজোদীপ্ত ভাষণের পর মক্কাবাসীদের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দূর হয়ে যায় এবং তারা ঈমানের ওপর অটল থাকেন।
রাসূল (সা.) এর ওফাতের পর আরব গোত্রগুলোর ধর্মত্যাগ দুই ধরনের ছিল, এক: শরিয়াতের সকল বিধানকে অস্বীকার করে ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়া, দুই: শরিয়াতের সকল বিধান মেনে শুধুমাত্র যাকাত দিতে অস্বীকার করা। আবু বকর (রা) দুই শ্রেণীর বিরুদ্ধেই জিহাদ ঘোষণা করেন এবং তাদেরকে দমন করেন। তিনি অত্যন্ত দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, “কেউ যদি যাকাত প্রদানের জন্য নির্ধারিত পশুর রশিটিও দিতে অস্বীকার করে তাহলে আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করব।”
ধর্মত্যাগীদের ব্যাপারে কুরআন-সুন্নাহর বক্তব্য : সূরা মায়েদাহ
يَا قَوْمِ ادْخُلُوا الْأَرْضَ الْمُقَدَّسَةَ الَّتِي كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ وَلَا تَرْتَدُّوا عَلَى أَدْبَارِكُمْ فَتَنْقَلِبُوا خَاسِرِينَ (২১)
(মূসা আ. বলেন) হে আমার সম্প্রদায়! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে পবিত্র ভূমি লিখে দিয়েছেন তাতে তোমরা প্রবেশ কর। এবং পশ্চাদপসরণ করো না, করলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রত্যাবর্তন করবে।
সূরা আলে-ইমরান
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنْ تُطِيعُوا الَّذِينَ كَفَرُوا يَرُدُّوكُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ فَتَنْقَلِبُوا خَاسِرِينَ (১৪৯)
হে মুমিণগণ! যদি তোমরা কাফেরদের আনুগত্য কর তবে তারা তোমাদেরকে বিপরীত দিকে ফিরিয়ে দেবে ফলে তোমরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে। (১৪৯ নং আয়াত)
. ا أَيُّهَا الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ آمِنُوا بِمَا نَزَّلْنَا مُصَدِّقًا لِمَا مَعَكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ نَطْمِسَ وُجُوهًا فَنَرُدَّهَا عَلَى أَدْبَارِهَا أَوْ نَلْعَنَهُمْ كَمَا لَعَنَّا أَصْحَابَ السَّبْتِ وَكَانَ أَمْرُ اللَّهِ مَفْعُولًا
“হে কিতাবপ্রাপ্তগণ! তোমাদের কাছে যা আছে তার সমার্থকরূপে আমরা যা নাযিল করেছি তাতে তোমরা ঈমান আন, আমরা মুখম-লগুলোকে বিকৃত করে তারপর সেগুলোকে পিছনে ফিরিয়ে দেয়ার আগে অথবা আসহাবুস সাবতকে যেরূপ লানত করেছিলাম সেরূপ তাদেরকে লানত করার আগে। আর আল্লাহর আদেশ কার্যকর হয়েই থাকে।” (আল-ইমরান : ৪৭)
وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَأُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ (১০৫) يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ فَأَمَّا الَّذِينَ اسْوَدَّتْ وُجُوهُهُمْ أَكَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُمْ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنْتُمْ تَكْفُرُونَ (১০৬)
তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসমূহ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মধ্যে মতান্তর সৃষ্টি করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি। (১০৫) সেদিন কিছু মুখ উজ্জ্বল হবে এবং কিছু মুখ কালো হবে; যাদের মুখ কালো হবে (তাদেরকে বলা হবে) তোমরা কি ঈমান আনার পর কুফরি করেছিলে? সুতরাং তোমরা শাস্তি ভোগ কর, যেহেতু তোমরা কুফরি করতে। (১০৬)
রাসূল (সা.) বলেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ أَنَّهُ كَانَ يُحَدِّثُ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ : يَرِدُ عَلَيَّ يَوْمَ الْقِيَامَةِ رَهْطٌ مِنْ أَصْحَابِي فَيُحَلَّؤُونَ ، عَنِ الْحَوْضِ فَأَقُولُ يَا رَبِّ أَصْحَابِي فَيَقُولُ إِنَّكَ لاَ عِلْمَ لَكَ بِمَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ إِنَّهُمُ ارْتَدُّوا عَلَى أَدْبَارِهِمُ الْقَهْقَرَى.
আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমার কতক সাহাবী হাউজে আমার কাছে উপস্থিত হবে। তারপর আমার কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। আমি বলবো, হে আমার রব! এরা তো আমার সাহাবী (উম্মত)। আমাকে বলা হবে আপনি জানেন না, আপনার অবর্তমানে এরা দ্বীনবহির্ভূত কত নতুন কাজ করেছে।
রাসূল (সা.) আরো বলেন,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ : خَطَبَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ إِنَّكُمْ مَحْشُورُونَ إِلَى اللهِ حُفَاةً عُرَاةً غُرْلاً {كَمَا بَدَأْنَا أَوَّلَ خَلْقٍ نُعِيدُهُ وَعْدًا عَلَيْنَا إِنَّا كُنَّا فَاعِلِينَ} ثُمَّ إِنَّ أَوَّلَ مَنْ يُكْسَى يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِبْرَاهِيمُ أَلاَ إِنَّهُ يُجَاءُ بِرِجَالٍ مِنْ أُمَّتِي فَيُؤْخَذُ بِهِمْ ذَاتَ الشِّمَالِ فَأَقُولُ يَا رَبِّ أَصْحَابِي فَيُقَالُ لاَ تَدْرِي مَا أَحْدَثُوا بَعْدَكَ فَأَقُولُ كَمَا قَالَ الْعَبْدُ الصَّالِحُ {وَكُنْتُ عَلَيْهِمْ شَهِيدًا مَا دُمْتُ} إِلَى قَوْلِهِ {شَهِيدٌ} فَيُقَالُ إِنَّ هَؤُلاَءِ لَمْ يَزَالُوا مُرْتَدِّينَ عَلَى أَعْقَابِهِمْ مُنْذُ فَارَقْتَهُمْ.
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: রাসূলুল্লাহ (সা.) একদিন খুতবা দিলেন। তিনি বললেন: হে লোকজন কিয়ামতের দিন তোমাদেরকে নগ্নপদে, নগ্নদেহে ও খাতনাবিহীন অবস্থায় উঠিয়ে আল্লাহর সামনে একত্রিত করা হবে। তারপর তিনি এ আয়াতটি পাঠ করলেন: আমি তোমাদেরকে পুনরায় ফিরিয়ে আনবো যেমন প্রথমবার সৃষ্টি করেছিলাম। এটা আমার প্রতিশ্রুতি, এটা আমি অবশ্যই পূরণ করবো। এ আয়াতটি পাঠ করার পর তিনি বললেন, গোটা সৃষ্টিকুলের মধ্যে যাকে কাপড় পরানো হবে তিনি হলেন হযরত ইবরাহিম (আ)। জেনে রাখ আমার উম্মতের কিছু লোককে আনা হবে। তাদেরকে পাকড়াও করে দোজখের দিকে নিতে শুরু করলে আমি বলবো, হে রব এ দেখছি আমার উম্মতের কিছু লোক। তখন বলা হবে, তুমি জানো না, তোমার বিদায় হয়ে আসার পর তারা কী কী কাজ করেছিলো। তখন আমি আল্লাহর নেক বান্দা (ঈসা (আ)-এর অনুরূপ কথা বলবো: আমি যতদিন তাদের মাঝে ছিলাম, ততদিনই তাদের খোঁজ-খবর নিয়েছি ও তত্ত্বাবধান করেছি। তারপর আপনি যখন আমাকে উঠিয়ে নিয়েছেন, তখন থেকে আপনিই তাদের রক্ষক ও তত্ত্বাবধায়ক। আপনি তো সবকিছুর রক্ষক ও তত্ত্বাবধায়ক। এরপর যখন আমাকে বলা হবে, যখন থেকে আপনি তাদেরকে রেখে বিচ্ছিন্ন হয়ে চলে এসেছেন তখন থেকেই তারা দীনকে পরিত্যাগ করেছে।
قَوْلُهُ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَى : { فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ }
ঈমানদারদের উদ্দেশ করে মহান রাব্বুল আলামিন বলেন, যদি তোমরা আল্লাহর দ্বীনকে সাহায্য করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও এবং শরিয়তের ওপর অবিচল না থাক তাহলে তোমাদের চেয়ে উত্তম লোকদেরকে আমি তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবো। যেমন সূরা মুহাম্মদে আল্লাহ বলেন,
وَإِن تَتَوَلَّوْاْ يَسْتَبْدِلْ قَوْماً غَيْرَكُمْ ثُمَّ لاَ يكونوا أَمْثَالَكُم
অর্থাৎ: “তোমরা যদি মুখ ফিরিয়ে নাও তাহলে আল্লাহ তোমাদের স্থানে অন্য কোন জাতিকে নিয়ে আসবেন। তারা তোমাদের মত হবে না।” (৩৮ নং আয়াত)
সূরা নিসাতে আল্লাহ বলেন,
{ إِن يَشَأْ يُذْهِبْكُمْ أَيُّهَا الناس وَيَأْتِ بِآخَرِينَ } [ النساء : ১৩৩ ]
অর্থাৎ: “তিনি চাইলে তোমাদেরকে সরিয়ে তোমাদের জায়গায় অন্যদেরকে নিয়ে আসবেন এবং তিনি এ ব্যাপারে পূর্ণ ক্ষমতা রাখেন।”
সূরা ইবরাহিমে আল্লাহ বলেন,
{ إِن يَشَأْ يُذْهِبْكُمْ وَيَأْتِ بِخَلْقٍ جَدِيدٍ وَمَا ذلك عَلَى الله بِعَزِيزٍ } [ إبراهيم : ১৯-২০ ]
অর্থাৎ: “তিনি চাইলে তোমাদের নিয়ে যান এবং একটি নতুন সৃষ্টি তোমাদের স্থলাভিষিক্ত হয়। এমনটি করা তাঁর জন্য মোটেও কঠিন নয়।”
উপরোক্ত আয়াতাংশে মুফাস্সিরিনদের ৬টি বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য: এক: আলী ইবনে আবি তালিব, হাসান, কাতদাহ এবং দাহ্হাক বলেন, এ আয়াত দ্বারা আবু বকর (রা) এবং যারা রিদ্দার যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তাদেরকে বুঝানো হয়েছে। দুই : হাসানের আরেকটি বর্ণনা হলো এর দ্বারা আবু বকর (রা) ও উমার (রা)কে বুঝানো হয়েছে। তিন : ইয়াদ আল-আশআ’রী বলেন, এর দ্বারা আবু মুসা আল-আশআ’রীর কওমকে বুঝানো হয়েছে। চার: দাহ্হাক, ইবনে আব্বাস এবং মুজাহিদ বলেন, এর দ্বারা ইয়েমেনবাসীদেরকে বুঝানো হয়েছে। পাঁচ: সুদ্দি বলেন, আনসারদেরকে বুঝানো হয়েছে। ছয়: আবু সুলাইমান আদ-দামেশকি বলেন, উনারা হলেন আনসার ও মুহাজির। ইবনে জারির বলেন তাঁরা উমার (রা) এর সময়ের লোক, তারা সুন্দরভাবে ইসলামের ওপর ছিলো কখনও মুরতাদ হয়নি।
আল্লাহ যাদেরকে পছন্দ করেন তাদের বৈশিষ্ট্য
১থ التوابون. তাওবাকারীগণ
২থ المتطهرون. পবিত্রতা অর্জনকারীগণ
৩থ المتقون. আল্লাহকে ভয়কারীগণ
৪থ المحسنون. মুহসিনগণ
৫থ الصابرون. ধৈর্যধারণকারীগণ
৬থ المتوكلون. ভরসাকারীগণ
৭থ المقسطون. ন্যায়বিচারকারীগণ
৮থ الذين يقاتلون في سبيله صفَّاً كأنهم بينان مرصوص. আল্লাহর রাস্তায় সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় জিহাদকারীগণ
৯থ الأذلة على المؤمنين. মুমিনগণের সাথে কোমল ব্যবহারকারীগণ
১০থ الأعزة على الكافرين. কাফেরদের ব্যাপারে রুঢ়
১১থ المجاهدون في سبيل الله. আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী
১২থ الذين لا يخافون لومة لائم. যারা সত্যের ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে পরোয়া করে না
১৩থ المتقربون بالنوافل بعد الفرائض. ফরজ আদায়ের পর যারা নফল আদায় করে
যে সমস্ত কাজ আল্লাহর ভালোবাসার বা নৈকট্যের কারণ হয়
১. কুরআন বুঝে পড়া এবং অনুধাবন করার চেষ্টা করা
২. ফরজ আদায়ের পর নফলের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের চেষ্টা করা
৩. সকল অবস্থায় কথা, কাজ ও অন্তরে আল্লাহর স্মরণ
৪. নফসের পছন্দের চেয়ে আল্লাহর পছন্দকে প্রাধান্য দেয়া
৫. আল্লাহর জাত, সিফাত তাঁর উপস্থিতি এবং তাঁকে চেনার মাধ্যমে সর্বদা অন্তরকে পরিচালিত করা
৬. আল্লাহর নিয়ামত, অনুগ্রহ, অনুকম্পা এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য নিয়ামতের সাক্ষ্য দেয়া
৭. আল্লাহর যাবতীয় অনুগ্রহের স্মরণে তাঁর সামনে অন্তর ভেঙে পড়া
৮. নির্জনে, মুনাজাতে, কুরআন তেলাওয়াতে, তাঁর সামনে দাঁড়ানোর সময়, ইবাদতে বিনয়ী হয়ে, বিশেষ করে তওবাহ ও ইসতিগফারের মাধ্যমে ভালোবাসা অর্জন
৯. সত্যবাদীদের সাথে ওঠা-বসা ও তাদের কাছে কল্যাণের কথা শুনা
১০. আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে এমন কাজ থেকে বিরত থাকা। এবং সর্বদা এই দোয়া করা
اللهم إنا نسألك حبك، وحبَّ من يحبك، وحبَّ العمل الذي يقربنا إلى حبِّك.
এর ব্যাখ্যা: أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ
এখানে যে কওমকে আল্লাহ ভালবাসেন এবং যারা আল্লাহকে ভালবাসেন তাদের বিশেষ বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে। তাঁরা মুমিনদের ব্যাপারে অত্যন্ত রহমদিল এবং কাফেরদের ব্যাপারে বজ্রকঠিন। সূরা ফাতাহ এর ২৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
:” أَشِدَّاءُ عَلَى الْكُفَّارِ رُحَماءُ بَيْنَهُمْ الفتح: ২৯].
তাঁরা মুমিনদের ব্যাপারে এতটাই কোমল হৃদয়ের অধিকারী যেটা শুধুমাত্র মানুষ আপনজনদের ব্যাপারে করে, আর কাফিরদের ব্যাপারে এতটাই কঠোর যদিও তারা আপনজন হয়। সূরা মুজাদালার ২২ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “আপনি পাবেন না আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমানদার এমন কোন সম্প্রদায়, যারা ভালোবাসে তাদেরকে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে.. হোক না এ বিরুদ্ধাচারীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই অথবা এদের জ্ঞাতি-গোত্র। এদের অন্তরে আল্লাহ লিখে দিয়েছেন ঈমান এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর পক্ষ থেকে রূহ দ্বারা। আর তিনি তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত; সেখানে তারা স্থায়ী হবে; আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর দলই সফলকাম।”
لَا تَجِدُ قَوْمًا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ يُوَادُّونَ مَنْ حَادَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَوْ كَانُوا آبَاءَهُمْ أَوْ أَبْنَاءَهُمْ أَوْ إِخْوَانَهُمْ أَوْ عَشِيرَتَهُمْ أُولَئِكَ كَتَبَ فِي قُلُوبِهِمُ الْإِيمَانَ وَأَيَّدَهُمْ بِرُوحٍ مِنْهُ وَيُدْخِلُهُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمْ وَرَضُوا عَنْهُ أُولَئِكَ حِزْبُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ (২২)
“আপনি পাবেন না আল্লাহ ও আখিরাতের উপর ঈমানদার এমন কোন সম্প্রদায়, যারা ভালোবাসে তাদেরকে যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করে.. হোক না এ বিরুদ্ধাচারীরা তাদের পিতা, পুত্র, ভাই অথবা এদের জ্ঞাতি-গোত্র। এদের অন্তরে আল্লাহ লিখে দিয়েছেন ঈমান এবং তাদেরকে শক্তিশালী করেছেন তাঁর পক্ষ থেকে রূহ দ্বারা। আর তিনি তাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদীসমূহ প্রবাহিত; সেখানে তারা স্থায়ী হবে; আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট। তারাই আল্লাহর দল। জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর দলই সফলকাম।” (সুরা মুজাদালাহ : ২২)
সূরা তওবার ২৩ ও ২৪ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الْإِيمَانِ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ (২৩) قُلْ إِنْ كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّى يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ (২৪)
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের পিতৃবর্গ ও ভ্রাতৃবৃন্দ যদি ঈমানের মোকাবিলায় কুফরিকে পছন্দ করে, তবে তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তারাই জালিম। (২৩) বলুন, তোমাদের নিকট যদি আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে বেশি প্রিয় হয় তোমাদের পিতৃবর্গ, তোমাদের সন্তানরা, তোমাদের ভ্রাতাগণ, তোমাদের স্ত্রীগণ, তোমাদের আপনগোষ্ঠী, তোমাদের অর্জিত সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দা পড়ার আশঙ্কা কর এবং তোমাদের বাসস্থান যা তোমরা ভালোবাস, তবে অপেক্ষা কর আল্লাহ তাঁর নির্দেশ নিয়ে আসা পর্যন্ত। আর আল্লাহ ফাসিক সম্প্রদায়কে হেদায়েত দেন না। (২৪)”
ঈমানদারদের জন্য নীতিকথা হলো : সত্য দ্বীনের প্রতি ঈমান ও দ্বীনের শত্রুদের সাথে ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব দুটি পরস্পরবিরোধী জিনিস। ঈমানের দাবিদাররা এরূপ করলে নিফাকি হবে। কোন অবস্থাতেই দুই নৌকায় পা দেয়া যাবে না।
রাসূল (সা.) বলেন,
وقال الإمام أحمد: حدثنا قتيبة بن سعيد، حدثنا ابن لهيعة، عن زهرة بن معبد، عن جده قال: كنا مع رسول الله صلى الله عليه وسلم، وهو آخذ بيد عمر بن الخطاب، فقال: والله لأنت يا رسول الله أحب إلي من كل شيء إلا من نفسي فقال رسول الله (৩) صلى الله عليه وسلم: “لا يؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من نفسه”. فقال عمر: فأنت الآن والله أحب إلي من نفسي. فقال رسول الله: “الآن يا عمر”
“যুহরা ইবনে মাবাদ তার দাদা থেকে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূল সা.-এর সাথে ছিলাম তিনি উমার ইবনুল খাত্তাব (রা)-এর হাত ধরলেন। উমার (রা) বললেন, আল্লাহর কসম! হে আল্লাহর রাসূল সা.! আমার জান ছাড়া এই পৃথিবীর সবকিছুর থেকে আপনি আমার কাছে প্রিয়। রাসূল (সা.) বললেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি ঈমানদার হতে পারবে না, যার জান থেকে আমি প্রিয় না হবো। উমার রা. বললেন, আল্লাহর কসম! এখন আপনিই আমার কাছে আমার জান অপেক্ষা প্রিয়। আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন, হ্যাঁ এখন ঠিক বলেছ হে উমার।” (মুসনাদে আহমাদ)
অন্য হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন,
وقد ثبت في الصحيح عنه رسول الله صلى الله عليه وسلم أنه قال: “والذي نفسي بيده، لا يؤمن أحدكم حتى أكون أحب إليه من والده وولده والناس أجمعين”
“সেই সত্তার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি ততক্ষণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ তার পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সকল মানুষ থেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল প্রিয় না হবে।” (বুখারি ও মুসলিম)
প্রকৃত ঘটনা হলো:
ক্স আবু উবাদাহ (রা) বদরের যুদ্ধের দিন তাঁর নিজের পিতা আবদুল্লাহ ইবনুল র্জারাহকে হত্যা করেছিলেন।
ক্স মুসআব ইবনে উমায়ের (রা) জিহাদের ময়দানে তাঁর আপন ভাই উবায়িদ ইবনে উমাইয়রকে হত্যা করেছিলেন।
ক্স উমার (রা) তাঁর মামা আস ইবনে হিশাম ইবনে মুগিরাহকে হত্যা করেছিলেন।
ক্স আবু বকর (রা) তাঁর পুত্র আবদুর রহমানের বিরুদ্ধে লড়তে প্রস্তুত হয়েছিলেন।
ক্স আলী (রা) নিকটাত্মীয় উতবা, হামজা (রা) নিকটাত্মীয় শায়বা, উবাইদা ইবনুল হারেস (রা) নিকটাত্মীয় ওয়ালিদ ইবনে উতবাহকে হত্যা করেছিলেন।
ক্স বদরের বন্দীদের ব্যাপারে উমার (রা) এর মতামত ছিল প্রত্যেকে তাঁর সবচেয়ে আপনজনকে হত্যা করবে।
ক্স বদরের যুদ্ধে এক আনসারী মুসআব উবনে উমায়েরের আপন ভাই আবু আযীয ইবনে উমায়েরকে পাকড়াও করে বাঁধছিলেন। এ অবস্থা দেখে মুসআব (রা) চিৎকার করে বলেন, শক্ত করে বাঁধো, এর মা অনেক সম্পদশালিনী সে অনেক মুক্তিপণ দিবে।
ক্স রাসূল (সা.) এর জামাতা আবুল আস বদরের যুদ্ধে বন্দী হয়ে আসেন।
এ কারণে রাসূল (সা.) এভাবে দোয়া করতেন: “হে আল্লাহ আমাকে কোন পাপী/ফাসিক লোক দ্বারা উপকৃত হতে দিয়ো না। তাহলে আমার মনে তার প্রতি ভালবাসা সৃষ্টি হবে। কেননা তোমার নাযিলকৃত ওহির মধ্যে একথা পেয়েছি যে, আল্লাহ ও আখেরাতের প্রতি ঈমান পোষণকারী লোকদেরকে তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের বিরোধীদের সাথে বন্ধুত্ব করতে দেখবে না।” দায়লামী মুয়াজ (রা) থেকে বর্ণিত।
يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ذَلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَنْ يَشَاءُ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
-এর ব্যাখ্যা
যে কওমকে আল্লাহ ভালবাসেন এবং যারা আল্লাহকে ভালবাসেন তাদের আরো একটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হয়েছে সেটি হলো, তাঁরা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে কিন্তু কোন নিন্দুকের নিন্দাকে পরোয়া করবে না। মুফাস্িসরিনগণ বলেন, এ আয়াত দ্বারা আবু বকর, উমার, উসমান ও আলী (রা)কে বুঝানো হয়েছে। কেননা তারা রাসূল (সা.)-এর জীবদ্দশায়ও জিহাদ করেছিলেন এবং নিজেদের খিলাফত আমলে মুরতাদদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে দ্বিধাবোধ করেননি। হাদিসে রাসূল (সা.) বলেন:
وفي الحديث الصحيح (إن الشيطان قعد لابن آدم ثلاث مقاعد قعد له في طريق الإسلام فقال لم تذر دينك ودين آبائك فخالفه وأسلم وقعد له في طريق الهجرة فقال له أتذر مالك وأهلك فخالفه وهاجر ثم قعد في طريق الجهاد فقال له تجاهد فتقتل فينكح أهلك ويقسم مالك فخالفه وجاهد فحق على الله أن يدخله الجنة
নিশ্চয়ই শয়তান বনি আদমকে পথভ্রষ্ট করার জন্য তিন সময় পথে বসে থাকে। এক : ইসলাম গ্রহণের সময় সে বলে তোমার এবং তোমার বাপ দাদার ধর্ম পরিত্যাগ করো না, কিন্তু প্রকৃত ঈমানদাররা সে ধোঁকা অতিক্রম করে এবং ইসলাম গ্রহণ করে। দুই : হিজরতের সময় শয়তান বলে তুমি কি তোমার মাল ও আহল ছেড়ে চলে যাবে? অতঃপর বনি আদম সে ধোঁকা অতিক্রম করে হিজরত করে। তিন: জিহাদের সময় শয়তান বলে তুমি যদি নিহত হও তাহলে তোমার স্ত্রীরা অন্যত্র বিবাহ করবে এবং তোমার সম্পদ অন্যদের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হবে। অতঃপর বনি আদম সে বাধা অতিক্রম করে জিহাদে যায় এরকম বনি আদমকে জান্নাত দেয়া আল্লাহর জন্য ওয়াজিব হয়ে যায়।
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আরো বলা হয়েছে যে, আল্লাহর আনুগত্য, দ্বীন প্রতিষ্ঠা, শরয়ী বিধান বাস্তবায়ন, শত্রুর সাথে কিতাল, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ থেকে হাজারও প্রতিকূল পরিবেশে তাকে কেউ ফিরিয়ে রাখতে পারে না। রাসূল (সা.) বলেন,
قال الإمام أحمد عن عبد الله بن الصامت عن أبي ذر قال : ্র أمرني خليلي صلى الله عليه وسلم بسبع : أمرني بحب المساكين والدنو منهم ، وأمرني أن أنظر إلى من هو دوني ، ولا أنظر إلى من هو فوقي ، وأمرني أن أصل الرحم وإن أدبرت ، وأمرني أن لا أسال أحداً شيئاً ، وأمرني أن أقول الحق وإن كان مراً ، وأمرني أن لا أخاف في الله لومة لائم ، وأمرني أن أكثر من قول : لا حول ولا قوة إلاّ بالله ، فإنهن من كنز تحت العرش গ্ধ
আবু যার (রা) বলেন, আমাকে আমার হাবিব রাসূল (সা.) সাতটি বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন: ১. আমাকে মিসকিনদেরকে ভালবাসতে এবং তাদের কাছাকাছি (সুখ-দুঃখ) দেখতে নির্দেশ দিয়েছেন ২. আমার উপরস্থ কারোর দিকে দৃষ্টি না দিয়ে নিচের দিকে কারোর দিকে তাকাতে বলেছেন ৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন যদি সেটা ছুটে যায় ৪. কারো নিকট কিছু না চাইতে নির্দেশ দিয়েছেন ৫. সর্বদা সত্য (হক) কথা বলতে নির্দেশ দিয়েছেন যদিও সেটা অন্যের নিকট তিক্ত হয় ৬. আল্লাহর (বিধানের) ব্যাপারে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে পরোয়া না করতে নির্দেশ দিয়েছেন ৭. রাসূল (সা.) আমাকে বেশি বেশি পড়তে বলেছেন
لا حول ولا قوة إلاّ بالله
কেননা এগুলো আরশের নিচের গুপ্তধন।
ذلك فَضْلُ الله يُؤْتِيهِ مَن يَشَآءُ والله وَاسِعٌ عَلِيمٌ
উপরিউক্ত গুণাবলীর অধিকারী হওয়াটা কোন ব্যক্তির নিজস্ব অর্জন বা সফলতা নয় বরং সবটুকু আল্লাহর অশেষ অনুগ্রহ যা তিনি তাঁর পছন্দনীয় বান্দাদেরকে দান করেন। আল্লাহর অনুগ্রহ সর্বব্যাপী এবং আর আল্লাহ ছাড়া সবকিছু কেউ জানতে পারে না।
قَوْلُهُ عَزَّ وَجَلَّ : إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُواْ الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلاَةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, এ আয়াতটি নাযিল হয়েছিল আহলে কিতাবদের মধ্য থেকে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিল আবদুল্লাহ ইবনে সালাম ও তাঁর সাথীদের এবং আলী ইবনে আবু তালিব (রা) এর ব্যাপারে নাযিল হয়। তাঁরা আল্লাহর রাসূল (সা.) কে বলেছিল হে রাসূল (সা.)! আমাদের বাড়িগুলো কিস্সা কাহিনীতে ভরপুর, মসজিদ ছাড়া কথাবার্তা বলার জন্য আমরা কোন জায়গা পাই না। আমাদের কওম বনু কুরাইজা এবং বনু নাযির যখন দেখল আমরা তাদের ধর্ম ছেড়ে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি তখন তারা আমাদের প্রকাশ্য বিরোধিতা শুরু করল এবং কসম করে বলল, কোন অবস্থাতেই তারা আমাদের সাথে বিবাহ-শাদি, ওঠা-বসা ও খাওয়া-দাওয়া করবে না। অন্যদিকে দূরত্বের কারণে আপনার সাথীদের সাথে ওঠা-বসা করতে পারছি না। লোকেরা যখন নামাজের রুকু- সিজদা করছিলো তখন তারা রাসূল (সা.)কে এসব অভিযোগ করছিল। একজন মিসকিন ঘুরে ঘুরে সাহায্য চাচ্ছিল, রাসূল (সা.) তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করলেন তোমাকে কি কেউ কিছু দিয়েছে? সে বলল হ্যাঁ। রাসূল (সা.) বললেন কি দিয়েছে? সে বলল রূপার আংটি। রাসূল (সা.) বললেন এটি কে তোমাকে দিয়েছে? সে ইশারা দিয়ে বলল ঐ ব্যক্তি। তিনি ছিলেন আলী (রা)। রাসূল (সা.) বললেন সে কোন অবস্থায় আংটিটি তোমাকে দিয়েছে? লোকটি বলল, তখন সে রুকু অবস্থায় ছিলো। অতঃপর রাসূল (সা.) আবদুল্লাহ ইবনে সালাম ও তার সাথীদের সামনে এ আয়াত তেলাওয়াত করলেন। রাসূল (সা.) এ আয়াত পড়ার সাথে সাথে আবদুল্লাহ ইবনে সালাম বললেন,
(رَضِينَا باللهِ وَبرَسُولِهِ وَبالْمُؤْمِنِينَ أوْلِيَاءً).
অর্থাৎ: আমরা আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মুমিনদেরকে অভিভাবক হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট।
এর ব্যাখ্যা: وَمَنْ يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ (৫৬)
অর্থাৎ যারা আল্লাহর আনুগত্য, তাঁর রাসূলের আনুগত্য ও মুমিনদের আনুগত্য ও ভালোবাসা থেকে অন্যদের আনুগত্য ও ভালোবাসাকে অধিক কল্যাণকর মনে করবে তাদের জন্য আল্লাহর সতর্কবাণী ‘নিশ্চয় আল্লাহর দলই বিজয়ী হবে।’ সূরা মুজাদালার ২১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন,
كَتَبَ الله لأَغْلِبَنَّ أَنَاْ ورسلي إِنَّ الله قَوِيٌّ عَزِيزٌ *
আল্লাহ লিখে দিয়েছেন যে, তিনি এবং তাঁর রাসূল অবশ্যই বিজয়ী হবেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ মহাশক্তিমান ও পরাক্রমশালী। হাসান বলেন, حزب الله অর্থ: جند الله আল্লাহর সৈন্য। আরবিতে حزب অর্থ: দল, গোষ্ঠী বা জামায়াত। বহুবচনে ‘আহযাব’ যার অথর্: সংঘবদ্ধ দলসমূহ। অন্যরা বলেন, حزب الله অর্থ: أنصار الله আল্লাহর সাহায্যকারী। অতএব একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, যারা আল্লাহ, তাঁর রাসূল এবং মুমিনদেরকে অভিভাবক হিসাবে গ্রহণ করবে তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে নিশ্চিত সাহায্য ও সফলতা। যে সব মুসলিম আল্লাহর নির্দেশ পালন করবে তারা আল্লাহর দল। আল্লাহর রাসূল ও পরবর্তীতে সাহাবায়েকেরাম রা. সর্বত্র বিজয়ী হয়েছেন। সূরা সাফ্ফাতে আল্লাহ বলেন,
إِنَّهُمْ لَهُمُ الْمَنْصُورُونَ (১৭২) وَإِنَّ جُنْدَنَا لَهُمُ الْغَالِبُونَ (১৭৩)
‘নিশ্চয় তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে। ১৭২ আর আমাদের বাহিনী অবশ্যই বিজয়ী হবে।’ ১৭৩
সূরা শামসে আল্লাহ বলেন,
قَدْ أَفْلَحَ مَنْ زَكَّاهَا (৯) وَقَدْ خَابَ مَنْ دَسَّاهَا (১০)
“সে-ই সফলকাম হয়েছে, যে নিজেকে পবিত্র করেছে। ৯ আর সে-ই ব্যর্থ হয়েছে, যে নিজেকে কলুষিত করেছে।” ১০
সূরা আলাতে আল্লাহ বলেন,
قَدْ أَفْلَحَ مَنْ تَزَكَّى (১৪)
‘অবশ্যই সাফল্য লাভ করবে সেই যে পরিশুদ্ধ হয়।’
সূরা মুমিনুনে আল্লাহ বলেন,
قَدْ أَفْلَحَ الْمُؤْمِنُونَ (১)
নিশ্চয় মুমিনরাই সফলকাম হয়েছে।
আয়াতগুলোর শিক্ষা:
১. আল্লাহর দ্বীন থেকে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী চলে গেলে তাতে আল্লাহর কোন ক্ষতি হয় না বরং তাদের পরিবর্তে আল্লাহ অন্যদের নিয়ে আসবেন।
২. মুমিনদের পারস্পরিক সম্পর্ক হবে অত্যন্ত কোমল।
৩. মুমিনরা কাফেরদের ব্যাপারে হবে খুবই কঠোর।
৪. আল্লাহর পথে জিহাদের পথে কোন নিন্দুকের নিন্দাকে পরোয়া করবে না।
৫. আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া কেউ দ্বীনের পথে টিকে থাকতে পারে না এবং সৎকাজ করতে পারে না।
৬. আল্লাহ-বিরোধীদের সাথে কোন বন্ধুত্ব হতে পারে না, তারা যতই আপনজন হোক।
৭. সকল পরীক্ষা ও বাধা মাড়িয়ে চূড়ান্তভাবে আল্লাহর দলই বিজয়ী হবে।
আল্লাহ আমৃত্যু আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের পথে কবুল করুন। আমিন!!!
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়