ক্রাইমর্বাতা রিপোট: টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ২০ বছর পূর্ণ হয়েছে বাংলাদেশের। ২০০০ সালের ২৬শে জুন নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম টেস্ট খেলতে মাঠে নামে টাইগাররা। গত ২০ বছরে বাংলাদেশ টেস্ট খেলেছে ১১৯টি। জয় এসেছে মাত্র ১৪টি ম্যাচে। বিপরীতে হার ৮৯টি ম্যাচে। ড্র ১৬টিতে, যার পেছনে বেশির ভাগ অবদান বৈরি আবহাওয়ার। দুই দশকের পথচলায় অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ডের মতো দলের বিপক্ষে জয়ের সুখস্মৃতি থাকলেও ক্রিকেটের নবীনতম দেশ আফগানিস্তানের বিপক্ষে হেরেছে বাংলাদেশ। ওয়ানডে ফরম্যাটে নিয়মিত উড়ন্ত পারফরম্যান্সে এশিয়ার উঠতি শক্তি হিসেবে আখ্যা পেলেও কখনো কখনো সাদা পোশাকের পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক।
২০ বছর আগে ৯টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের ভোটে ক্রিকেটের অভিজাত ক্লাবে দশম সদস্য হিসেবে যোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ।
ইংল্যান্ডের লর্ডসে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) বোর্ড সভায় তৎকালীন সভাপতি ম্যালকম গ্রে বাংলাদেশকে পূর্ণ মর্যাদার টেস্ট খেলুড়ে দেশের খেতাব দেন। তবে বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তির মিশনে কেবল মাঠের পারফরম্যান্সই ভূমিকা রাখেনি, এর পেছনে ছিল অনেক কূটনৈতিক যুদ্ধও। তখনকার বিসিবি সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী দায়িত্বে বসেছিলেন ১৯৯৬ সালে। তার দায়িত্ব নেয়ার পর মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে টেস্ট স্ট্যাটাস অর্জনের লক্ষ্য স্থির করেছিল বোর্ড। সেই লক্ষ্য যথাসময়েই বাস্তবায়ন করেন সাবের হোসেন। ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকইনফোকে সাবেক বিসিবি প্রধান বলেছেন, ‘আমাদের অবিশ্বাস্য কিছু করতে হতো। আমরা পাঁচ বছরের পরিকল্পনা নিয়েছিলাম। সহযোগী দেশ হলেও শীর্ষে পৌঁছানোর স্বপ্ন ছিল আমার। জিম্বাবুয়ে টেস্ট স্ট্যাটাস চাওয়ার আগে তিনবার আইসিসি ট্রফি জিতেছিল। টেস্ট স্ট্যাটাস না পেলে জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট মারা যেত। যে মুহূর্তে আমরা আইসিসি ট্রফি জয় করেছিলাম, ঠিক তখনই ডেভিড রিচার্ডকে (আইসিসি’র প্রধান নির্বাহী) আমি বলেছিলাম, আমরা টেস্ট স্ট্যাটাস নিয়ে কথা বলতে চাই। তিনিও আমাদের কথা শুনেছেন এবং আমাদের সাহায্য করেছেন।’ বাংলাদেশের টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় লড়াই করেছেন ক্রিকেটাররা। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে স্কটল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় টেস্ট মর্যাদা প্রাপ্তিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। সাবের হোসেন আইসিসি সভার ভোটাভুটিতে জয় নিশ্চিত করতে তৎকালীন ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সভাপতি জাগমোহন ডালমিয়ার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। এশিয়ার মধ্যে ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানের ভোটের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন তিনি। হাঁটি হাঁটি করে টেস্টে দুই দশক পেরিয়ে গেছে বাংলাদেশের।
একথা অনস্বীকার্য যে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার শুরুর দিকে বাংলাদেশ কোনো রকম উইকেটে টিকে থাকার প্রত্যয়েই নামতো। জয় নয়, ম্যাচ ড্র কিংবা বিব্রতকর হার এড়ানোই ছিল তখনকার লক্ষ্য। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় আজ তাদের মানসিকতা বদলেছে। উইকেটে টিকে থাকা, ড্র কিংবা লজ্জার হার এড়ানো নয় বরং এই বাংলাদেশ লাল বলের লড়াইয়ে নামে জয়ের লক্ষ্য নিয়েই। মাঠের খেলায়ও তার প্রতিফলন দেখা গেছে। দেশের মাটিতে পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছে প্রবল বিক্রমে। বাদ যায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজও। বছর তিনেক আগে বিদেশের মাটিতেও নৈপুণ্য দেখিয়েছে লাল সবুজের দল। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কা সফরে নিজেদের শততম টেস্টে জয় কুড়ায় বাংলাদেশ। কিন্তু হালের বাংলাদেশ টেস্ট দল কেমন যেন অচেনা! সাফল্যের বিচারে খুব বেশি প্রাপ্তি নেই বাংলাদেশের। বিশেষ করে দেশের বাইরে বাংলাদেশ ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে পারিনি।
গত ২০ বছরে আয়ারল্যান্ড বাদে সব দেশের বিপক্ষেই টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। সবচেয়ে বেশি ২০ টেস্ট খেলেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। এরপর জিম্বাবুয়ে ১৭, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৬ ও নিউজিল্যান্ড ১৫ টেস্টের প্রতিপক্ষ। ১২টি দক্ষিণ আফ্রিকা, ১১টি করে ভারত ও পাকিস্তান, ১০টি ইংল্যান্ড, ৬টি অস্ট্রেলিয়া ও একটি ম্যাচের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। সবচেয়ে বেশি ৭ জয় জিম্বাবুয়ে, ৪টি ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং একটি করে শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।