বাজারমূল্য ও সরকারি মূল্য প্রায় সমান হওয়াসহ সাতক্ষীরায় কৃষকেরা সরকারি গুদামে ধান বিক্রির ব্যাপারে অনীহা

ক্রাইমর্বাতা রিপোট: সাতক্ষীরা:  সাতক্ষীরা জেলায় সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ শুরু হয়েছে দেড় মাস হয়েছে। কিন্তু এত দিনে মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১৩ শতাংশ ধান সংগৃহীত হয়েছে। বাজারমূল্য ও সরকারি মূল্য প্রায় সমান হওয়াসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে কৃষকেরা সরকারি গুদামে ধান বিক্রির ব্যাপারে অনীহা দেখাচ্ছেন। ফলে জেলায় ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

সাতক্ষীরা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলা থেকে ৯ হাজার ২৮ মেট্রিক টন ধান সরকারিভাবে কেনা হবে। প্রতি কেজি ধান কেনা হচ্ছে ২৬ টাকা দরে। প্রতি বস্তায় ৬০ কেজি করে এক বস্তার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৫৬০ টাকা। ১২ মে থেকে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু হলেও গতকাল শুক্রবার (২৬ জুন) পর্যন্ত জেলায় ধান কেনা সম্ভব হয়েছে ১ হাজার ১৮৪ মেট্রিক টন। সরকারের ধান কেনা চলবে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত।

সাতক্ষীরা জেলা খামারবাড়ি সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলার সাতটি উপজেলায় ধান উৎপাদিত হয়েছে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯২ মেট্রিক টন। কৃষকেরা জানান, সাতক্ষীরার হাটগুলোয় এক বস্তা (৬০ কেজি) ২৮ জাতের ধান বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকায়। মোটা ধান এক বস্তা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকায়। সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে হলে ধান সামান্য ভিজে থাকলে নানা ধরনের হয়রানি করা হয়। অনেক সময় গুদামের শ্রমিকদের টাকা দেওয়ার পাশাপাশি বস্তায় দুই কেজি ধান বেশি দিতে হয়। এ ছাড়া ব্যাংক হিসাব খোলা, ধানের মূল্য নেওয়া ও টাকা উত্তোলন করতে তিন দিন চলে যায়। এ ছাড়া এক মেট্রিক টন ধান গুদামে নিয়ে যেতে খরচ ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা। আর হাটে ওই সব ঝামেলা তো নেই। সব মিলিয়ে মূল্য বেশি পাওয়া যাচ্ছে। ফলে কৃষকেরা গুদামে ধান বিক্রি করছেন না।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা তুজুলপুর গ্রামের কৃষক আবু সিদ্দিক বলেন, ব্যাংক হিসাব খুলতে এক দিন সময় ব্যয় করতে হয়। বর্তমানে ব্যাংকে এক হাজার টাকার নিচে হিসাব খুলতে চায় না। আবার বিক্রি করা ধানের টাকা গুদাম কর্মকর্তার কাছ থেকে বিল করে নিয়ে ব্যাংকে তুলতে যেতে হয়। এতে একজন কৃষকের দুই দিন নষ্ট হয়। এ ছাড়া ধান যদি ভেজা হয়, ওই ধান নেওয়া হয় না। এত সবের পর গুদামে গেলে যেন কৃষক ধান বিক্রি করতে নয়, ভিক্ষা নিতে এসেছে—এমন আচরণ করা হয়। এ ছাড়া সরকারি মূল্য আর বাইরের মূল্য প্রায় একই রকম। ফলে দুই বিঘায় ২৪ বস্তা ধান উৎপাদন করে তিনি বাইরে বিক্রি করেছেন ১ হাজার ৫০০ টাকা করে প্রতি বস্তা।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা ঝাউডাঙা গ্রামের কৃষক সুবীর ঘোষ বলেন, তিনি চার বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করে ৪৮ বস্তা ধান পেয়েছেন। তিনি এসব ধান বিক্রি করেছেন কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই ১ হাজার ৪৬০ টাকা করে বস্তা। সরকারি খাদ্যগুদামে এসব ধান বিক্রি করতে গেলে খরচ বাদ দিয়ে ১ হাজার ৩০০ টাকা পাওয়া যেত না। তারপর ধান নিয়ে গেলে নানা ধরনের হয়রানিসহ সময় ব্যয় হয় অনেক।

সাতক্ষীরা জেলা জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জাকির হোসেন জানান, সরকারি মূল্য ও বাজারমূল্য প্রায় এক হওয়া ছাড়াও কৃষক ধান বিক্রি করতে এলে তাঁদের কমপক্ষে এক দিন ব্যয় হয়। এ ছাড়া ধান খাদ্যগুদামে নিয়ে আসতে খরচ রয়েছে। সব মিলিয়ে সরকারি খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করে লাভবান না হওয়ায় কৃষকেরা এখানে আসছেন না। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।