ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ সাতক্ষীরা জজ কোর্ট সহ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে গত ৩০ জুন পর্যন্ত ২৯ কার্যদিবসে ৩৯৯টি মামলায় ৫২৮ আসামীর জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন আদালতে ৮৮৮টি মামলায় আবেদন করা হলেও ৮৪২টি মামলায় শুনানী গ্রহন করা হয়। দেশব্যাপী করোনা ভাইরাস রোগ (কোভিড-১৯) এর সংক্রমণ মোকাবেলা এবং এর ব্যাপক বিস্তার রোধকল্পে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে এবং শারীরিক উপস্থিতি ব্যতিরেকে বিচারকার্য পরিচালনার লক্ষে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল শুনানীর মাধ্যমে এসব মামলায় আদেশ প্রদান করা হয়।
নির্ভরযোগ্য সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, গত ১১ মে হতে দেশের উচ্চ এবং নিন্ম আদালত সমূহে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল শুনানীর মাধ্যমে জামিন শুনানী অনুষ্ঠিত হলেও সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতি ওই সময় ভর্চুয়াল কোর্ট না করার সিদ্ধান্ত নেয়। এক পর্যয়ে জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান এর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সমিতি সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। ফলে ১৭ মে হতে সাতক্ষীরায় ভার্চুয়াল শুনানীর মাধ্যমে শুরু হয় আদালতের কার্যক্রম। করোনা পরিস্থিতির চরম উৎকণ্ঠার মধ্যে ২/৩ মাস যাবৎ জেল হাজতে থাকা আসামী ও তাদের পরিবারের লোকজন আশায় বুক বাঁধতে শুরু করে। একের পর এক মামলায় জামিন পেতে থাকে আসামীরা। জেলা কারাগারে থাকা ধারণ ক্ষমাতার ২/৩ গুন আসামী আস্তে আস্তে কমতে শুরু করে। এমনিভাবে গত ২৯টি কার্যদিবসে জামিনপ্রাপ্ত হয় ৫২৮ জন আসামী।
সাতক্ষীরার জেলা ও দায়রা জজ আদালত সহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, শিশু আদালত এবং সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিচারক হিসেবে সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান ২৯ কার্যদিবসে মোট ৩৬৭টি মামলায় শুনানী গ্রহন করেন। এ সময় আইনজীবীগন ৩৯১টি মামলায় আবেদন করেন ওই সব আদালতে। এর মধ্যে ১৯৪টি মামলায় ২৩৮ জন আসামীর জামিন আবেদন মঞ্জুর করা হয়। এছাড়া বেশকিছু দেওয়ানী মামলায়ও শুনানী গ্রহন করেন তিনি।
অপরদিকে বেশ কিছুদিন যাবৎ সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে বিচারক পোস্টিং না থাকার কারনে ওই আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক হিসেবে জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান গত ১৭ মে হতে ২৮ মে পর্যন্ত ৭টি মামলায় ভার্চুয়াল শুনানী গ্রহন করেন। পরবর্তীতে গত ৩১ মে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতে এস, এম নূরুল ইসলাম বিচারক হিসেবে যোগদানের পর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত তিনি ১০টি মামলায় ভার্চুয়াল শুনানী গ্রহন করেন। এছাড়া সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ প্রথম আদালত এবং যুগ্ম-জেলা ও দায়রা জজ প্রথম ও দ্বিতীয় আদালত সহ সকল সহকারী জজ আদালতেও বেশ কিছু মামলায় ভার্চুয়াল শুনানী গ্রহন করেন বিচারকগন।
অপরদিকে সাতক্ষীরার চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন জেলার সর্বোচ্চ সরকারী ভবন হিসেবে সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতি পেলেও এখনকার সর্বোচ্চ পদে অর্থাৎ চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যিনি অত্যান্ত নিষ্ঠার সাথে সকল সহকর্মীদের নিয়ে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন তিনি হচ্ছেন, মোঃ হুমায়ুন কবীর। এছাড়াও রয়েছেন, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ রেজওয়ানুজ্জামান, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজীব কুমার রায়, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিলাস মন্ডল, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ইয়াসমিন নাহার, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাকিবুল ইসলাম ও জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মেহেদী হাসান মোবারক মুনিম। বর্তমান করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও জীবনের ঝুকি নিয়ে সাতক্ষীরার বিচারাঙ্গনে বিচারপ্রার্থীদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে ভার্চুয়াল শুনানী করে চলেছেন সকলেই।
সাতক্ষীরা চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত সহ অধীনস্থ সকল আদালতে গত ২৯ কার্যদিবসে আইনজীবীগন ৪৯৭ টি মামলায় আবেদন করলেও ৪৭৫ টি মামলায় শুনানী গ্রহন করেন আদালত। এর মধ্যে ২০৫ টি মামলায় ২৯০ জন আসামী জামিন প্রাপ্ত হন। এছাড়া সকল আদালতে রিমান্ড ও জিম্মার আবেদন সহ বিভিন্ন মামলায় ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬১ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি গ্রহন, ভিকটিমের ২২ ধারায় জবাবন্দি গ্রহন, মেডিকেল সনদ তলব সহ চেকের মামলায় ফাইলিং গ্রহন করা হয়।
ভার্চুয়াল শুনানী সম্পর্কে এক প্রতিক্রীয়ায় সাতক্ষীরা জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. এম শাহ-আলম জানান, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে দেশের বিচার বিভাগে ভার্চুয়াল সিস্টেমে বিচারিক কার্যক্রম পরিচালনা সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে, তিনি বিশেষ জরুরী বিষয় সমূহের পাশাপাশি সকল প্রকার মামলার ফাইলিং গ্রহন সহ বিভিন্ন মামলায় পলাতক আসামীদের স্বেচ্ছায় আদালতে হাজির হওয়ার সুযোগ সৃষ্টিকরা এবং দেওয়ানী আদালতের কার্যক্রমের এখতিয়ার বাড়ানোর ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
অপরদিকে সাতক্ষীরা জজ কোর্টের পিপি এড. আব্দুল লতিফ জানান, প্রাদুর্ভূত মহামারী কোভিড-১৯ রোধকল্পে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিশ্চিতকরণ ও শারীরিক উপস্থিতি ব্যতিরেকে বিচারকার্য পরিচালনার লক্ষে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভার্চুয়াল শুনানীর মাধ্যমে আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত সরকারের একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তিনি এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানান