ঘরে ঘরে করোনা: কেউ বলছে ॥ কেউ চুপ ॥ বাসাসেও করোনা ছড়াচ্ছে

জি এম শাহনেওয়াজ, ঢাকা থেকে ॥ বিশ্বের মতো বাংলাদেশও করোনা সংক্রমণের হার বলা যায় উধর্বমুখী। নমুনা পরীক্ষায় গত কয়েকদিন রোগী সনাক্তের হার নিম্নমুখী দেখা গেলে মৃত্যুহারে পিছিয়ে নেই মাতৃভূমি বাংলাদেশ। করোনাতে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে উপসর্গ কি এ নিয়ে চিকিৎসা গবেষক ও বিশ্বসংস্হা একটা জায়গাতে এখনো থিতূ হতে পারেনি। এ কারনে অনেক নাগরিক করোনার উপসর্গ নিয়ে পরীক্ষার দিকে ঝুঁকছেন না। অনেক রোগীর বদ্ধমূল ধারণা এই করোনার কোন ওষুধ আবিস্কার হয়নি, -এ রোগ নিয়ে চিকিৎসের পরামর্শের দরকার নেই। এমনি একজন শাহ আলম। তার অভিমত করোনার উপসর্গ নিয়ে পরীক্ষা করানোর পর আমার পজিটিভ এলো কিন্তু চিকিৎসা নেই তাহলে পরীক্ষা করানোর পেছনে না ছুটে ন্যাচারাল পদ্ধতি অনুসরণ করে নিজেকে সুস্থ করে তোলায় শ্রেয়। আর কালশীর সাবিনা সুলতানা বলেন, প্রথম দিকে যাদের করোনা হয়েছে বলে শুনেছি তাদের মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা, মুখে তিতভাব খেতে না পারা এবং তীব্র শ্বাসকষ্ট। বর্তমানে আমার গলায় ব্যাথা ও হালকা সর্দি-জ্বর। তিনি বলেন,আমার আত্মীয়-স্বজন অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানছি এ ধরনের উপসর্গ তাদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে। সেই অর্থে বলা যায়, ঘরে ঘরে করোনার উপসর্গ নিয়ে অনেকেই বসবাস করছেন। কেউ চিকিৎসের পরামর্শ নিচ্ছেন। কেউ থাকছেন চুপ। তবে শহরের অনুপাতে গ্রামে করোনার প্রাদুভাব বেশি দেখা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার সাতক্ষীরার শ্যামনগরে একজন করোনা আক্রান্ত হয়ে গতকাল মারা গিয়েছেন। তার হ্যার্ট ও ডায়াবেটিসের সমস্যার সঙ্গে তীব্র শ্বাসকষ্ট ছিল। সদ্য প্রয়াত এই ব্যক্তির করোনা পজিটিভ ছিল। বর্তমানে তার মতো এতো জটিলতার উপসর্গ কম রোগীর মধ্যে দেখা যাচ্ছ। তবে চিকিৎসকরাও এসব রোগীদের মত করোনার উপসর্গ নিয়ে উৎবিগ্নতা আগের মতো ততটা দেখাচ্ছেন না। করোনা প্রথমদিকে যতটা শক্তিশালী ছিল বর্তমানে সংক্রমণের হার বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকটা দুর্বল হয়ে আসছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, করোনা মানুষের মধ্যে যত সংক্রমিত হবে ততই এর কার্যক্ষমতা কমবে। তবে এটা নিয়ে চিন্তা না করে সাধারন ফ্লু হিসেবে মেনে দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যেতে হবে। একজন বিশেষজ্ঞ বললেন, জ্বর নামক এই ফ্লুটি গত কয়েকবছর আগে ছিল তখন এটার স্হায়ী ছিল একসপ্তাহ। বর্তমানে করোনার এই উপসর্গ স্হায়ী হচ্ছে দুই সপ্তাহ। এতোটুকু পার্থক্য। করোনার উপসর্গ কি এখন বেশী পরিলক্ষিত হচ্ছে জানতে চাইলে সাবেক পিজির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা.সাবরিনা সুলতানা বলেন, মাত্রাতিরিক্ত জ্বরের পরিবর্তে বেশীর ভাগ রোগীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে গলায় ব্যথা ও হালকা কাশি। এসব উপসর্গ নিয়ে যারা নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন তাদের দেখা যাচ্ছে পজিটিভ আসছে। আবার অনেকে পরীক্ষা করানো থেকে বিরত থেকে ঘরোয়া চিকিৎসা নিচ্ছেন। চৌদ্দ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখছেন ধীরে ধীরে সুস্হ হয়ে উঠছেন। তিনি যে পজিটিভ ছিলেন কি ছিলেন না নিজেও জানেন না। আর হ্নদরোগ ইনস্টিটিউটের সাবেক সহযোগী আধ্যাপক ডা.শহীদুল আলম বলেন, করোনার বতর্মানে যে উপসর্গ তাতে সংশ্লিষ্ট রোগীকে চারটি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে; যারমধ্েয চিকিৎসকের কাছে এই রোগ নিয়ে না যাওয়া, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া থেকে বিরত থাকা, করোনা ভালো হয় কারো প্রচারণায় -এমন কোন ওষুধ না খাওয়া এবং গত পাচ বছর ধরে যে অম্ভাস নেই আপনার তা চালু করা থেকে বিরত থাকা। তিনি বলেন, যে চারটি কারণের কথা বলছি এর অর্থ এই নই যে; চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে যে রোগীর ডায়বেটিস রয়েছে অথবা হ্যার্টের সমস্যা কিংবা লিভারের সমস্যা রয়েছে এ সময়ে (করোনা প্রাদুভাব) ওই রোগীকে বিরাজমান রোগের ওষুধের প্রতি বেশি যতœশীল হওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শে সেগুলো নিয়মমাফিক সেবন করা। আর পিজির মেডিকেল অফিসার ডা. সাদিউল ইসলাম বলেন, করোনার সংক্রমণ এড়াতে প্রত্েযককে আবশ্যই মাস্কস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে বার বার হাত পরিস্কার করা, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা এবং সম্ভব হলে সার্জিক্যাল ক্যাপ মাথায় পরে বাসা থেকে বের হওয়া। এগুলো মানলে কিছুটা হলেও গন সংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা যেতে পারে। এর জন্য জনসচেতনতা অনেক বেশি প্রয়োজন বলে মত দেন এই চিকিৎসক। গত বছর থেকে শুরু হওয়া করোনায় বিশ্বস্বাস্হ্েযর তথ্যমতে।, আক্রান্ত হয়েছেন কোটির বেশি মনুষ, মারা গেছেন পাচলাখের বেশী এবং সুস্হতার হারও কম নয়। গত মঙ্গলবার দেশে মারা গেছে চুয়ান্ন জন। তবে বিশ্বে এ রোগে মারা গেছেন সবচেয়ে বেশী যুক্তরাষ্ট্রে। এই দেশে মারা গেছে লক্ষাধিক। ভারতের একজন চিকিৎসক নাম ব্যবহার না করার শর্তে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনা রোগীর উপরে অযাচিত ওষুধ প্রয়োগের কারণে মৃত্যু হার বেশি, যা ভারতীয় চিকিৎসা গবেষকদের গবেষণায় বের হয়েছে। এমনি একটি ওষুধ অক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ। পরে বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা ওষুধটি নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।