সারাদেশে বন্যার অবনতি ॥ লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী

ক্রাইমর্বাতা ডেস্করিপোট:  নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় সিলেট, সুনামগঞ্জ, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা ও নাটোরের সিংড়ার বন্যা পরিস্থিতির আরো  অবনতি হয়েছে। এরফলে লাখ লাখ লোক হয়ে পড়েছে পানিবন্দী। সেই সাথে রয়েছে নদী ভাঙন। সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।  বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে সুরমাসহ সব শাখা নদীর পানি। গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোয় পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন জেলার ১১ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ৪ লাখেরও বেশি মানুষ। পানিবন্দী লাখো মানুষ। দফায় দফায় বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নদী পাড়ের মানুষ। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তাসহ কুড়িগ্রামের সবকটি নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বন্যার পানি নামতে না নামতেই আবারও পানি বাড়ায় দুশ্চিন্তায় বানভাসী মানুষ।  নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় গাইবান্ধায়ও বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। নদী তীরবর্তী চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। সেই সাথে ভাঙছে নদী। দফায় দফায় বন্যায় খাবার, সুপেয় পানিসহ নানা সংকটে বানভাসী মানুষ।
সিলেট-সুনামগঞ্জে ফের বন্যায় লাখো মানুষ পানিবন্দি
সিলেট ব্যুরো : গত তিনদিনের প্রবল বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সুরমা, কুশিয়ারা, সারীনদীসহ বিভিন্ন নদনদীর পানি বিপদসীমার উপরে থাকায় সিলেট ও সুনামগঞ্জে ফের বন্যা দেখা দিয়েছে। ডুবছে ঘর বাড়ি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাড়িঘর রাস্তাঘাট বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ স্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। জরুরিভিত্তিতে ত্রাণ সহায়তা বাড়ানোর দাবি উঠছে। এদিকে, সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর এলাকাসহ সুরমার তীর ঘেঁষা ওয়ার্ডগুলোতে বন্যার পানি ঢুকে পড়ছে। এখনো অনেক জায়গায় পানি রয়েছে। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে বিভিন্ন বাসা বাড়ির নিচতলার বাসিন্দাদের। সিলেট শহরতলীর সদর উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নের অন্ততঃ ৭টি ইউনিয়নই বন্যা কবলিত। হাটখোলা, জালালাবাদ, মোগলগাঁও, খাদিমনগর, কান্দিগাঁও, টুকেরবাজারের একাংশসহ প্রায় এলাকার মানুষ পানি বন্দি রয়েছেন। এছাড়া, গতকাল রোববার সিলেট সদর উপজেলার হাটখোলা ইউনিয়ন পরিষদের গুদামে বন্যার পানি ঢুকে যায়। এতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া চাল পানিতে ভিজে যায়। সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানা যায়, গতকাল রোববার সিলেটে সুরমা ও কুশিয়ারার পানি ৩টি পয়েন্টে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এর মধ্যে সুরমা কানাইঘাট পয়েন্টে বিপদসীমা হচ্ছে ১২.৭৫ সেন্টিমিটার সন্ধ্যা ৬টায় এ পয়েন্টে সুরমার পানি ১৩.৪৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সারি নদী সারিঘাট পয়েন্টে বিপদসীমা হচ্ছে ১২.৩৫ সেন্টিমিটার, সন্ধ্যা ৬টায় এই পয়েন্টে ১২.৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে নদীর পানি প্রবাহিত হয়েছে। কুশিয়ারা নদীর পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপদসীমা হচ্ছে ৯.৪৫ সেন্টিমিটার। সন্ধ্যা ৬টায় এই পয়েন্টে নদীর পানি ৯.৫৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সিলেট-কোম্পানীগঞ্জ – ভোলাগঞ্জ বঙ্গবন্ধু মহাসড়ক ব্যতিত উপজেলার সকল কাঁচা-পাকা সড়ক তলিয়ে গেছে। উপজেলা পরিষদের মাঠ, সরকারি কোয়ার্টার, থানা কম্পাউন্ডার পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। থানা বাজারে লোকজন চলাচল করছে নৌকায়। গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। গৃহপালিত পশু-পাখি নিয়ে মানুষ বিপাকে পড়েছেন। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন জনগণ। আশ্রয়কেন্দ্রে লোকজন অবস্থান করছেন।
এ বছর তৃতীয়বারের মতো বন্যার কবলে পড়লেন কোম্পানীগঞ্জের মানুষ। করোনাকালে আকস্মিক বন্যায় তাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। গত মাসের শেষ সপ্তাহের বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে ওঠার আগেই আবারও বন্যা হয়। এর আগে গত ২৭ মে প্রথম দফায় ও ২৬ জুন দ্বিতীয় দফায় কোম্পানীগঞ্জে বন্যা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুমন আচার্য জানান, তার বাসার নিচ তলার রুমগুলোতে হাঁটু পরিমাণ পানি। বন্যাদুর্গতদের জন্য ৩৫ টি স্কুল-কলেজকে আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে। কানাইঘাটে গত কয়েকদিন থেকে ভারি বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে কানাইঘাটে বন্যা দেখা দিয়েছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল বানের পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে করে অনেক আমন ধানের বীজতলার ক্ষতিসাধন হয়। গতকাল রোববার কানাইঘাট সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কানাইঘাট পূর্ব বাজার দক্ষিণ বাজার, খেয়াঘাট, উত্তর বাজার ও কামার পট্টিতে সুরমা নদীর পানি অনেকটা ঢুকে পড়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক পানিবদ্ধতার পাশাপাশি তীরবর্তী এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভারি বৃষ্টিপাত, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল অব্যাহত থাকলে কানাইঘাটে বড় ধরনের বন্যা দেখা দিতে পারে। এ ব্যাপারে কানাইঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ বারিউল করিম এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন বন্যা পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে আছে আমরা মনিটরিং করছি। গোয়াইনঘাটে ফের গোয়াইনঘাট বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। শত কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির আশংকা। গত দুইদিনের পাহাড়ি ঢলে সারী ও পিয়াইন নদী দিয়ে নেমে আসা পানিতে উপজেলার সবকটি ইউনিয়ন বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে সহস্রধিক ফিসারীর মাছ পানিতে পুনরায় ভেসে গেছে, অনেক ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। এছাড়া, সারী-গোয়াইনঘাট সড়ক ও গোয়াইনঘাট জাফলং সড়কে, গোয়াইনঘাট-সালুটিকর সড়কের বিভিন্ন স্থানে পানি উঠেছে। এতে উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। জাফলং ইউনিয়নের জাফলং চা বাগান, বাউরবাগ হাইর, আসামপাড়া হাওর, পূর্ব আলীরগাঁও ইউনিয়নের নাইন্দা, তীতকুল্লি, বুধিগাঁও, খাষ, দাড়াইল, বাংলাইন ও লাতু হাওর, পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়নের সাতাইন, পাঁচপাড়া, পুকাশহাওরসহ উপজেলার বিভিন্ন হাওর ও গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গ্রামীণ ছোট বড় ও নীচু কাঁচা এবং পাকা সকল রাস্তাঘাট পানিতে তলিয়ে গেছে। শুক্রবার ভোর থেকে সারী ও পিয়াইন নদীতে বিপদসীমার উপরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে, বন্যার পানিতে আবারও ভাসছে সুনামগঞ্জ শহর। শহরের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্লাবিত হয়ে এলাকায় চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। গতকাল শনিবার বিকেল ৩ টা থেকে সুরমা নদীর পানি সুনামগঞ্জ ষোলঘর পয়েন্টে ৮ দশমিক ২৯ সেন্টিমিটার রেকর্ড করা হয়েছে। যা বিপদ সীমার ৪৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল ৯ টায় সুনামগঞ্জে ১৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারি প্রকৌশলী প্রিতম পাল এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ভরতে চেরাপুঞ্জিতে গত ২৪ ঘন্টায় ৫২৩মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে তা সুরমা নদীতে পড়লে পানি আরও বৃদ্ধি পাবে। সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ১৫ মে পর্যন্ত হাওরের ফসল রক্ষার জন্য সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমা ছিল ৬ দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার এবং ১৫ মে-এর পরে বিপদ সীমা হল ৭ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার। ৭ দশমিক ৮০ সেন্টিমিটার অতিক্রম করলেই বর্ষাকালে সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমা ধরা হয়। এদিকে, সীমান্তবর্তী উপজেলা তাহিরপুর, বিশ^ম্ভরপুর ও দোয়ারাবাজারের গ্রামীণ সড়ক ডুবে গিয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও বিশ^ম্ভরপুর উপজেলা সদরের সবক’টি রাস্তা ডুবে গিয়ে উপজেলা সদরে বাসাবাড়িতে বন্যার পানি প্রবেশ করেছে। একই অবস্থা তাহিরপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার উপজেলায়ও।
গাইবান্ধায় দ্বিতীয় দফায় আবারও বন্যাঃ সবকটি নদীর পানি বৃদ্ধি 
গাইবান্ধা থেকে জোবায়ের আলীঃ গত তিনদিনের ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গাইবান্ধায় সবকটি নদীর পানি দ্বিতীয় দফায় আবারও বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। ফলে ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, তিস্তা ও করতোয়া নদীর পানি অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে এবং জেলার সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা, ফুলছড়ি ও গাইবান্ধা সদর উপজেলার চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলোতে আবারও পানি উঠতে শুরু করেছে।
বিশেষ করে করতোয়া নদীর পানি গোবিন্দগঞ্জ ও পলাশবাড়ি উপজেলায় অনেকটা বৃদ্ধি পেয়ে নিচু এলাকায় পানি উঠেছে। প্রথম দফার বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই বসতবাড়ি ও সড়ক গুলোতে আবার বন্যার পানি উঠতে শুরু করায় বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এদিকে বন্যার পানিতে আমনের বীজতলা তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকরা বিপাকে পড়েছে। এতে আমন বীজের অভাবে বন্যা পরবর্তী আমন চাষ বিঘ্নিত হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। অবিরাম বর্ষন এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তা নদীর পানি ফের বৃদ্ধি পেয়েছে । সেই সাথে পাল্লাদিয়ে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বন্যার পানি অনেকটা কমে যাওয়ায় আশ্রয়ন কেন্দ্র, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং বাঁধে আশ্রয় নেয়া পরিবারগুলো বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছিল।  টানা অবিরাম বর্ষন এবং উজানের ঢলে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তার নদীর পানি অনেকটা বৃদ্ধি পাওয়ায় ফের পানিবন্ধি হয়ে পড়েছে চরবাসি। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে পানি বিপদসীমা ছুইছুই করছে। বেলকা চরের কৃষক লাল মিয়া জানান তার উঠানে হাটু পানি উঠছে। কথা হয় লালচামার গ্রামের ডাঃ শরিফুল ইসলামের সঙ্গে টানা অবিরাম বর্ষন কয়েকদিন থেকে ব্যাপকহারে নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে । ঘরে বন্যার পানি উঠায় অতি কষ্টে জীবন যাপন করতেছি। কাপাশিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন জানান পানি বাড়তে থাকায় চরাঞ্চলের পরিবারগুলো ফের পানিবন্ধি হয়ে পড়ছে।
সাঘাটায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গাইবান্ধার ব্রক্ষ্মপুত্র ও যমুনা নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমা অতিক্রম করছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে গত ২৪ ঘন্টায় ১৭ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে উপজেলায় নতুন করে বন্যা দেখা দিয়েছে। এছাড়াও বাঙ্গালী, আলাই, কাটাখালী ও যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
উপজেলার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে নদী ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। নদ-নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে স্রোতের তীব্রতাও। এতে ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে নদী ভাঙন।জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা একেএম ইদ্রিস আলী জানান, পর্যাপ্ত পরিমাণ ত্রাণসামগ্রী মজুদ আছে এবং বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমাদের যথেষ্ট প্রস্তুতি রয়েছে।উলেখ্য, গত সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার ৮২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে সাঘাটা উপজেলার ৫টি ও ফুলছড়ি উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ৩৫টি গ্রামের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। গত ৬ জুলাই বন্যার পানি বিপদসীমার নিচে নামার ৩ দিনের মাথায় আবার বন্যা দেখা দেয়।
দ্বিতীয় দফায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়ে ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে বন্যা পরিস্থিতি। ডুবে যাওয়া বাড়িঘর ছেড়ে গবাদি পশু নিয়ে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে। পানির চাপে হুমকিতে পড়েছে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ। জানা গেছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমা অতিক্রমের ফলে নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। ব্রহ্মপুত্র নদবেষ্টিত নিম্নাঞ্চল ফুলছড়ি উপজেলা ও যমুনা নদীবেষ্টিত সাঘাটা উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার চণ্ডিপুর, কাপাসিয়া, তারাপুর, বেলকা, হরিপুর ও শ্রীপুর গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করেছে। জেলার সুন্দরগঞ্জ সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ফজলুপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন জালাল বলেন, পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে বন্যা আতঙ্ক বেড়েছে। মানুষ প্রতিনিয়ত ডাকাতের আতঙ্কে ভুগছে। তিনি পুলিশের নৌ-টহল জোরদারের দাবি জানান।ফুলছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাওছার আলী বলেন, পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীতে নৌ-টহল জোরদার করেছি।ফুলছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রায়হান দোলন বলেন, বন্যা কবলিতদের সহযোগিতা করার জন্য উপজেলা প্রশাসন সবসময প্রস্তুত আছে। এছাডা বিশুদ্ধ পানি ও পযঃনিষ্কাশন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান জানান, নতুন করে পানি বৃদ্ধির ফলে ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে। তবে বাঁধ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বিপদসীমার ৮২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে ও ঘাঘট নদীর পানি গাইবান্ধা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে বিপদসীমার ৫৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ফলে গাইবান্ধা সদর, সাঘাটা, সুন্দরগঞ্জ ও ফুলছড়ি উপজেলার ২৬টি ইউনিয়নের ৫০টি গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েন। গত ৬ জুলাই বন্যার পানি বিপৎসীমার নিচে নামার তিনদিনের মাথায় আবার বন্যা দেখা দিয়েছে।
নীলফামারীর ১০ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত
নীলফামারী সংবাদদাতা: তিস্তা নদীর পানি গত তিন দিন ধরে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে  জেলার ডিমলা ও জলঢাকা উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছেন। নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পুর্বাভাস সর্তকীকরন কেন্দ্র  জানায়, শুক্রবার  রাতে তিস্তা নদীর পানি তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শনিবার সকালে ৪ সেন্টিমিটার কমে ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। শনিবার রাতে আবারও পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৩৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। গতকাল রোববার সকাল ৯টা থেকে তিস্তা নদীর পানি আবারও কমে ১৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। পুর্বাভাস সর্তকীকরন কেন্দ্র  জানায় গত তিন দিন ধরে তিস্তার পানি এভাবে উঠা-নামা করছে।
তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদী সংলগ্ন ৫টি ও জলঢাকা উপজেলার ৩ টি ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ওইসব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা। ৮টি ইউনিয়নে ব্যাপক আমনের বীজতলা ও রোপিত আমন চারা পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ভেসে গেছে অসংখ্যক পুকুরের মাছ। কোন কোন এলাকায় কোমর পরিমান পানি উঠেছে। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েছে ওইসব এলাকার মানুষজন। পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট  খুলে রাখা হয়েছে। পরিস্থিত খারাপ হলে লাল সংকেত ঘোষনা করা হবে বলে তিনি জানান। ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় জানান  পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে আমরা সার্বক্ষনিক বন্যা কবলিত এলাকাগুলো মনিটরিং করছি।
সিংড়ায় আত্রাই নদী পানিতে বিপদসীমার ২০ সে.মি. উপরে
সিংড়া সংবাদদাতা: নাটোরের সিংড়ায় অতি বৃষ্টিপাতের কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে নদী ও বিলের পানি। বর্তমানে আত্রাই নদীতে বিপদসীমার ২০ সে.মি. উপর দিয়ে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে সিংড়া উপজেলার নদীর তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। উপজেলার আনন্দনগর, বিলদহর, নুরপুর, ভুলবাড়িয়া, একলাসপুর গ্রামের বেশ কিছু বাড়ি-ঘর, রাস্তা, দোকান ডুবে গেছে।
গতকাল রোববার দুপুরে উপজেলার বন্যা কবলিত এলাকা আনন্দনগর পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাসরিন বানু। এসময় তিনি ৩০টি পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। এদিকে নদী ও বিলের পানি বৃদ্ধি হওয়ায় ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে জানিয়েছেন কৃষি অফিস। বিশেষ করে রোপা আমনের ক্ষতির সম্ভাবনা বেশি। এছাড়াও সিংড়া-কলম সড়কের বলিয়াবাড়ী রাস্তা যেকোন সময় ধসে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. সাজ্জাদ হোসেন জানান,  গত কয়েকদিন প্রবল বর্ষণে নিচু এলাকা ডুবে গেছে। বন্যার পানি দীর্ঘস্থায়ী হলে রোপা আমনের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরো বলেন, এ বছর ৪ হাজার হেক্টর জমিতে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) নাসরিন বানু জানান, খবর পেয়ে বন্যা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি, সরকারি ত্রাণ বিতরণ করেছি। বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হলে প্রস্তুত রয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
জামালপুরে যমুনা ও ব্রক্ষ্মপুত্রের পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত
জামালপুর সংবাদদাতাঃ জামালপুরে দ্বিতীয় দফা বন্যা দেখা দিয়েছে। দুই সপ্তাহ পানি বন্দি থাকার পর কিছুটা উন্নতির পর রোববার থেকে আবারও বন্যা পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ২৪ ঘন্টায় যমুনার পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে বৃদ্ধি পেয়ে বিকাল ৩টা নাগাদ বিপদ সীমার ৩২ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হইতে ছিল। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড জামালপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সাইদ এবং পানি মাপক গেজ পাঠক আব্দুল মান্নান। এতে করে জেলার দেওয়ানগঞ্জ, ইসলামপুর,মেলান্দহ, মাদারগঞ্জহ, সরিষাবাড়ী, উপজেলার যমুনা ও ব্রক্ষ্মপুত্রের বিস্তৃর্ণ নতুন করে প্লাবিত হয়ে আবারও হাজারও মানুষ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যা কবলিত এলাকার মানুষ উঁচু বাঁধে, আবার অনেকেই বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ও আশ্রয়  কেন্দ্রে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। বন্যা উপদ্রুব এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।