মোস্তাফিজুর রহমান, কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামের সকল নদ-নদীর পানি সামান্য কমে আসলেও এখনো বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি। জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ঘর-বাড়ি ও নলকুপ তলিয়ে থাকায় নদ-নদীর অববাহিকার আড়াই শতাধিক চর ও নিন্মাঞ্চলে প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ বিশুদ্ধ খাবার পানি ও চরম খাদ্য সংকটে পড়েছে। তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে গবাদি পশু ও শিশু খাদ্যের। এ অবস্থায় সরকারীভাবে সামান্য ত্রাণ তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও তা সবার ভাগ্যে জুটছে না। জানা যাচ্ছে না কোন বেসরকারী ত্রাণ তৎপরতার খবর।
এদিকে বানভাসীদের একটি অংশ বড় রাস্তার দু’ধারে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এবং উচু স্থানে আ¯্রতিরা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সীমাহীন কষ্টে দিনাতিপাত করছে। কর্মক্ষম মানুষজন বেকার হয়ে পড়ায় এবং দীর্ঘমেয়াদি বন্যার কারণে সবধরণের সংকটে রয়েছে তাদের পরিবারের লোকজন।
ওদিকে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা ও তিস্তাসহ সকল নদ-নদীর অববাহিকার উলিপুর, চিলমারী, রাজিবপুর, রৌমারী, নাগেশ্বরী ফুলবাড়ী ও রাজারহাট উপজেলার প্রায় ৬০টি ইউনিয়নের ৪৭৫ গ্রামের দুর্গম চরাঞ্চলগুলোতে খোজ নিয়ে জানা গেছে সেখানকার মানুষজনের জীবন-যাপনের একমাত্র অবলম্বন হয়ে উঠেছে নৌকা। এসব এলাকার নলকুপ তলিয়ে থাকায় তারা বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকটে পড়েছে। ঘরে পর্যাপ্ত শুকনো খাবার না থাকায় তারা অনেকেই সামান্য খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। অনেকের ঘরে তাও নেই বলে জানিয়েছেন।
অপরদিকে কুড়িগ্রাম সিভিল সার্জন ডা: মো: হাবিবুর রহমান বন্যা কবলিতদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে কুড়িগ্রামের ৯ উপজেলায় ৮৫টি মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে দাবী করলেও বন্যাকবলিতরা জানেন না ঐসব মেডিকেল টিমের লোকজন কোথায় কাজ করছেন। দীর্ঘদিন পানিবন্দি এলাকায় দেখাদিয়েছে পানি বাহিত নানারোগ। পানি বন্দি থাকায় এবং করোনা পরিস্থিতির কারণে ওরা জেলা উপজেলা হাসপাতালগুলোতে যেতে পারছেন না। ফলে গ্রাম্য হাতুড়ে চিকিৎসকরাই তাদের একমাত্র ভরসা।
অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ্য থেকে সরকারীভাবে ত্রাণ ততপরতা অব্যাহত থাকার কথা জানালেও প্রয়োজনের তুলুনায় তা একেবারেই অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন, বানভাসীরা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিগণ।
ভিন্নদিকে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, কুড়িগ্রামের ওপরদিয়ে বয়ে যাওয়া, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৩ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার-৫৮, তিস্তার পানি বিপদসীমার-৫৫ সেন্টিমিটার ও ধরলার পানি সেতু পয়েন্টে বিপদসীমার-৪৭ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।