ক্রাইমবার্তা রিপোটঃ যুদ্ধাপরাধের দায়ে বাংলাদেশে মৃত্যুদণ্ড পাওয়া বাংলাদেশি-বৃটিশ চৌধুরী মঈন উদ্দিন (৭১) এবার ক্ষতিপূরণ চেয়ে মামলা করছেন বৃটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেলের বিরুদ্ধে। তাকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে আখ্যায়িত করে একটি রিপোর্ট টুইটারে শেয়ার করার জন্য এই মামলায় ৬০ হাজার পাউন্ড দাবি করা হচ্ছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ডেইলি মেইল। এতে আরো বলা হয়, গত বছর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি রিপোর্টে মঈন উদ্দিনের মানহানি করা হয়েছে বলে তার দাবি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে হত্যাকাণ্ডে তিনি জড়িত ছিলেন বলে আদালতে প্রমাণিত। কিন্তু অব্যাহতভাবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেন চৌধুরী মঈন উদ্দিন। ফলে তিনি যে মামলা করছেন তাতে বলা হচ্ছে, কমিশন ফর কাউন্টারিং এক্সট্রিমিজমের ডকুমেন্ট ‘চ্যালেঞ্জিং হেটফুল এক্সট্রিমিজম’ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের টুইটার একাউন্টে শেয়ার করা হয়েছে। এই একাউন্টের অনুসারী প্রায় ১০ লাখ।
এই টুইটে রিটুইট করেছেন বৃটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রীতি প্যাটেল, বিবিসির সাংবাদিক মিশাল হুসেইন, মানবাধিকার বিষয়ক ক্যাম্পেইনার পিটার ট্যাটচেল। ওই রিপোর্টে চৌধুরী মঈন উদ্দিনকে অভিহিত করা হয়েছে ভয়াবহ সহিংস অপরাধের জন্য দায়ী হিসেবে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ।
মুসলিম কাউন্সিল অব গ্রেট বৃটেন প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করেছিলেন চৌধুরী মঈন উদ্দিন। তিনি ইস্ট লন্ডন মসজিদের ভাইস চেয়ারম্যান থাকাকালে ২০০৩ সালে বৃটেনে প্রভাবশালী এক ব্যক্তির সঙ্গে ক্যামেরাবন্দি হয়েছেন। নর্থ লন্ডনে বসবাসকারী মঈন উদ্দিন চার সন্তানের জনক। তার দাবি, তিনি কোনো যুদ্ধাপরাধ করেন নি। এছাড়া ১৯৭১ সালের সহিংসতায় জড়িতদের সঙ্গে তার কোনো যোগসূত্র নেই। তিনি আরো দাবি করেন, জামায়াতে ইসলামির বৃটিশ শাখার কোনো নেতৃত্বের সঙ্গেও তার কোন যোগসূত্র নেই। তিনি আরো দাবি করেন, জামায়াতে ইসলামীর কোনো সিনিয়র নেতা তিনি কখনও ছিলেন না।
সাত বছর আগে অনুপস্থিতিতে চৌধুরী মঈন উদ্দিনকে মানবতা বিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়। বলা হয়, স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি একটি মিলিশিয়ার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন ১৮ বুদ্ধিজীবী হত্যায়। এ অপরাধে তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত ফাঁসি ঘোষণা করেন।
তবে চৌধুরী মঈন উদ্দিন এই আদালত সম্পর্কে ব্যাপক সমালোচনা, নিন্দা আছে বলে উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রে তিনি লিবারেল ডেমোক্রেট দলের লর্ড কার্লিলের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। কার্লিল এই আদালতকে উদ্দেশ্য সম্পর্কে যোগ্য নয় বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি মঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে এই মামলাকে প্রহসন ছাড়া কিছু নয় বলে বর্ণনা করেছেন।
মেইল অন সানডে রিপোর্ট করে যে, ২০১২ সালে চৌধুরী মঈন উদ্দিন বৃটেনের জাতীয় স্বাস্থ্যসেবায় একজন সিনিয়র হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাভিত্তিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি।
চৌধুরী মঈন উদ্দিনের রিট গত মাসে হাইকোর্টে জমা দেয়া হয়েছে। দাবি করা হয়েছে, চ্যালেঞ্জিং হেটফুল এক্সট্রিমিজম রিপোর্ট ইউরোপীয়ান প্রটেকশন রেগুলেশন লঙ্ঘন করেছে। একই সঙ্গে তার ব্যক্তিগত তথ্য বেআইনিভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।
ওই রিপোর্টটি প্রকৃতপক্ষে প্রকাশিত হয় গত বছর অক্টোবরে। কমিশন প্রাথমিকভাবে মঈন উদ্দিনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করার পর ২০ শে মার্চ পর্যন্ত তা সরকারের ওয়েবসাইটে ছিল। পরে এ থেকে তার রেফারেন্স সরিয়ে দেয়া হয়। মুছে ফেলা হয় তার ব্যক্তিগত তথ্য।
ডেইলি মেইল আরো লিখেছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর দেশ ছাড়েন মঈন উদ্দিন এবং বৃটেনে এসে বৃটিশ নাগরিকত্ব পান। তিনি দাবি করেছেন, প্রকাশিত ওই রিপোর্ট তাকে মারাত্মক হতাশাগ্রস্ত করেছে। বিব্রত করেছে। এই অভিযোগ প্রকাশের আগে তার সঙ্গে কমিশন যোগাযোগ করতে ব্যর্থ হয়েছে বলে তার দাবি। তিনি আরো বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর আইনজীবীরা যখন তাকে লিখেছেন, তখন তিনি আরেক দফা দুর্ভোগে পড়েছেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইন্ডিপেন্ডেন্ট কমিশন ফর কাউন্টার এক্সট্রিমিজম প্রকাশিত একটি রিপোর্টের সঙ্গে এসব বিষয় সংশ্লিষ্ট। কমিশনের স্পন্সর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হলেও, আমরা এখন মন্তব্য করতে পারছি না যে, আইনি প্রক্রিয়া চলমান কিনা।