ক্রাইমবার্তাি রিপোট:’হ্যালো, আমি কাস্টমস কর্মকর্তা ফারজানা মহিউদ্দিন বলছি। বিদেশ থেকে আপনার নামে একটি পার্সেল এসেছে।’ এভাবেই শুরু হয় তার বক্তব্য। তবে ধীরে ধীরে আসে নানা জটিলতার কথা। তিনি জানান, পার্সেলটির জন্য ‘কাস্টমস ফি’ হিসেবে প্রাপককে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হবে। একটু পর আবারও ফোন করে বলেন, ‘পার্সেলে অবৈধ স্বর্ণ ও বৈদেশিক মুদ্রা রয়েছে। এগুলো বৈধ করার জন্য ফি দিতে হবে, নইলে মানি লন্ডারিং আইনে মামলায় পড়বেন।’ এভাবে উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে টার্গেট ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট ব্যাংক হিসাব নম্বরে টাকা পাঠাতে বলা পর্যন্তই ছিল তার দায়িত্ব।
অবশ্য বাস্তবে তিনি কাস্টমস কর্মকর্তা নন, আর যাকে কল দেওয়া হয়েছে তার নামেও কোনো পার্সেল আসেনি। আসলে মিথ্যা পরিচয়ে লোকজনকে কল দেওয়াই ছিল তার চাকরি। এজন্য বেতন হিসেবে তিনি পেতেন প্রতারণার অর্থের পাঁচ শতাংশ। এতে মাসে গড়ে দুই লাখ টাকা আয় হতো তার। তবে এমন লোভনীয় চাকরি বেশি দিন করতে পারেননি ভুয়া কাস্টমস কর্মকর্তা রাহাত আরা খানম ওরফে ফারজানা মহিউদ্দিন। ফেসবুকে বন্ধুত্ব গড়ে তোলার পর উপহার পাঠানোর নামে ফাঁদে ফেলে প্রতারণায় জড়িত নাইজেরীয় চক্রের সহযোগী হিসেবে তাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
সিআইডির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসাইন বলেন, দেড় বছর আগে রাহাত আরা খানমকে নিয়োগ দেয় বিদেশি প্রতারক চক্র। তবে তখন তাকে বলা হয়েছিল মার্চেন্ডাইজার হিসেবে কাজ করার কথা। বাস্তবে তাকে প্রতারণার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ব্যবহার করেছে চক্রটি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, দুই মাসে শতাধিক মানুষের কাছ থেকে পাঁচ-ছয় কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারকরা। রাজধানীর পল্লবীতে তাদের অফিস রয়েছে। সেখানেই কাজ করতেন উচ্চশিক্ষিত এই তরুণী।
সিআইডি সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করেছেন গ্রেপ্তারকৃত রাহাত আরা খানম। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। অল্প কথায় ভালো পরিবারের মেয়ে তিনি। তবে প্রতারকদের খপ্পরে পড়ে তিনি বিপথগামী হয়ে যান। অনেক টাকা আয়ের লোভে তিনি জেনেশুনেই এমন কাজ চালিয়ে গেছেন বলে ধারণা অভিযান সংশ্লিষ্টদের।
সিআইডি কর্মকর্তারা জানান, প্রতি সপ্তাহে ১০ জনকে উপহারের ফাঁদে ফেলার টার্গেট নিয়ে কাজ করত নাইজেরীয় চক্রটি। তারা ফেসবুকে বন্ধুত্ব গড়ে একপর্যায়ে মূল্যবান উপহারসামগ্রী পাঠানোর কথা জানাত। এরপর কাস্টমস কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন করতেন রাহাত আরা খানম। প্রত্যেক ভুক্তভোগীর কাছ থেকে অন্তত দুই লাখ টাকা আদায়ের চেষ্টা করত তারা। সর্বোচ্চ একজনের কাছে ২১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। এই হিসাবে সপ্তাহে পাঁচজনকে ফাঁদে ফেলে প্রত্যেকের কাছ থেকে গড়ে দুই লাখ টাকা আদায় করলেও তা মাসে ৪০ লাখ টাকা হয়। পাঁচ শতাংশ হারে এই টাকার মধ্যে দুই লাখ পেতেন রাহাত আরা খানম। অবশ্য সবসময় হিসাব এমনই থাকত তা নয়। টাকার পরিমাণ যেমন কখনও কমে যেত, তেমনি আবার বেড়েও যেত।
এর আগে এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে মঙ্গলবার রাজধানীর পল্লবী থেকে প্রতারক চক্রের নাইজেরিয়ান ১২ সদস্য ও তাদের সহযোগী রাহাত আরাকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। এ সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি ল্যাপটপ, ১৪টি মোবাইল ফোন ও বিপুল পরিমাণ সিমকার্ড উদ্ধার করা হয়। ওই ভুক্তভোগী তিন লাখ ৭৩ হাজার টাকা খুইয়েছিলেন।