ক্রাইমবার্তাি রিপোট:’ দেশের বিভিন্নস্থানে বন্যার তৃতীয় ধাক্কায় আরো বিপর্যয়কর অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। নদনদীতে বাড়ছে পানি। ভাঙছে নদী তীর, রাস্তাঘাট। তলিয়ে যাচ্ছে ফসলের ক্ষেত, ভেসে যাচ্ছে পুকুরের মাছ। বন্যা রূপ নিচ্ছে ভয়াবহ। গবাদিপশু নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন গৃহীরা। এদিকে বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া ঘরবাড়ির চিন্তার সাথে বিভিন্নস্থানে আশ্রয় নেয়া বানভাসীরা খাবার বিশুদ্ধ পানি, নিজেদের খাবার ও পশুর খাদ্য নিয়ে পড়েছেন চরম সংকটে। এবার বন্যার পানিতে কয়েক জেলায় গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাওয়ায় বসত বাড়িঘর ভেঙে পড়ছে। হয়ে পড়েছেন বানভাসীরা অসহায়। গ্রামের পানিবন্দী মানুষের ঘরে নেই খাবার, হাতে নেই টাকা, মাঠে নেই কাজ। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন চর ও নিম্নাঞ্চলের বানভাসীদের অবস্থা আরো খারাপ। তাদের কাছে যাচ্ছেন না কেউ। হয়ে পড়েছে তারা ত্রাণ সাহায্য থেকেও বঞ্চিত। অসহায় বানভাসীদের জন্য ত্রাণসামগ্রী জরুরি ভিত্তিতে পৌঁছানো দরকার। আমাদের সংবাদদাতারা এসব খবর জানান।
তিস্তা এবং ঘাঘট নদীর ভাঙন
রংপুরের ৪ উপজেলার কয়েক শত ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন : তিস্তা বাঁধ হুমকির মুখে
রংপুর অফিস : রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করায় শুরু হয়েছে নদী ভাঙনের নতুন বিড়ম্বনা। ফলে নদী তীরবর্তী মানুষরা অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
জেলার গঙ্গাচড়া, তারাগঞ্জ, কাউনিয়া এবং পীরগাছা উপজেলায় তিস্তা এবং ঘাঘটের উপচে পড়া বন্যার পানি ইতোমধ্যে বিভিন্ন সড়ক এবং সেতু ও কালভার্ট ভেঙে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছে। পানি কমে যাওয়ায় নতুন করে বসত ভিটা এবং গাছপালাসহ ফসলী জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভাঙনের শিকার মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে ইতোমধ্যে গঙ্গাচড়া উপজেলার আলমবিদিতর ইউনিয়নের তিস্তা প্রতিরক্ষা বাঁধের ১৩০ মিটার অংশ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
উপজেলার লক্ষীটারী ইউনিয়নের ৫ শতাধিক ঘর-বাড়ি ও ফসলী জমি ইতোমধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে হুমকির মুখে পড়েছে একটি মাদরাসা। পানির তোড়ে গঙ্গাচড়া উপজেলার ২ ইউনিয়নের বহু ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। গত এক সপ্তাহে এই গ্রামের প্রায় ৬শ’ টি ঘর-বাড়ি, ফসলী জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনে হুমকির মুখে পড়েছে শংকরদহ হাফিজিয়া মাদরাসা। ঘরবাড়ি ও মাদরাসা বাঁচাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ্য থেকে জিও ব্যাগ নিক্ষেপ করে ভাঙন রোধের চেষ্টা করা হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল বলছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। লহ্মীটারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, তিস্তা নদীর পানি ক্রমাগত বাড়ছে। নদীর তীব্র স্রোতে শংকরদহ এলাকায় গত কয়েক দিনে প্রায় ৫শ’ ঘর-বাড়ি ভেঙে গেছে। তীব্র স্রোতে পানি বাড়তে থাকলে শেখ হাসিনা সেতু সংলগ্ন রংপুর-লালমনিরহাট সড়কটি ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশংঙ্কা রয়েছে। কাউনিয়া উপজেলার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের অসংখ্য স্থানে ফাটল দেখা দেয়ায় বাঁধের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। উপজেলার বাংলা বাজার, ঠাকুরদাস, নাজিরদহ, বকুলতলা, মেনাজবাজারসহ ঐ এলাকার বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের অসংখ্য স্থানে ফাটল দেখা দেয়ায় পার্শ্ববর্তী ১৫ টি গ্রামের মানুষ এখন তিস্তা নদীর ভাঙন আতংকে দিনাতিপাত করছে।
রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, নদী ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় তিস্তা সহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিরোধমূলক কাজ করা হচ্ছে। সেই সাথে ঘর-বাড়িসহ অবকাঠামোগুলো রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে।
গাইবান্ধায় নতুন করে ৩০ গ্রাম প্লাবিত, হুমকিতে বাঁধ
গাইবান্ধা সংবাদদাতা : টানা বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আশা ঢলে গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বাড়তে থাকায় জেলার ৭ উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন করে আরও ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।বন্যায় জেলার ৭ উপজেলার ৩০টি ইউনিয়নের প্রায় দুই লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বানভাসিদের মাঝে তীব্র খাবার সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বৃষ্টির কারণে বাঁধে আশ্রয় নেয়া মানুষের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। হুমকিতে পড়েছে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ।
পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়ি পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদীর বিপৎসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। করতোয়া নদীর পানি বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা নদীর পানি অপরিবর্তিত অবস্থায় আছে।
জানা গেছে, করতোয়া নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে শুরু করেছে। গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী ও সাঘাটা উপজেলার ৩০টি গ্রাম নতুন করে পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। হুমকিতে রয়েছে গোবিন্দগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ। গোবিন্দগঞ্জের ফুলবাড়ী ইউনিয়নের শ্যামপুর ও পার্বতীপুর গ্রামের কয়েকটি পারিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। সাদুল্লাপুর উপজেলা ও পলাশবাড়ী উপজেলার বেশ কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে নষ্ট হয়েছে শত শত হেক্টর ফসলি জমি।অপরদিকে ব্রহ্মপুত্র নদের অপ্রতিরোধ্য ভাঙনের ফলে গাইবান্ধা সদর উপজেলার কামারজানী ইউনিয়নের গো-ঘাট গ্রামের সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরটি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের তীব্রতা এত বেশি যে, মন্দিরটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ারও সময় পাওয়া যায়নি। ফলে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে গ্রামের প্রাচীন দুর্গা মন্দিরটিও। গত সাতদিনের ভাঙনে গ্রামটির প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবারের বসতবাড়ি ও আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দফায় দফায় বৃষ্টির কারণে নদীর পানি বাড়ছে। আর এ কারণে এবার বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে।তিনি বলেন, সদর উপজেলার কামারজানির গো-ঘাট গ্রাম নদী ভাঙন কবলিত এলাকা। এই এলাকার ভাঙনরোধে পাউবো প্রতিরক্ষামূলক কাজ করলেও তাতে ভাঙন ঠেকানো সম্ভব হয়নি। শুকনো মৌসুমে আবার কাজ শুরু করা হবে। গাইবান্ধায় শনিবার দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় বিভিন্ন নদ-নদীর পানি সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। দফায় দফায় বর্ষণ ও উজানের ঢলে এই পানি বেড়েছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। প্লাবিত হয়ে আছে নদীতীরবর্তী গাইবান্ধার পাঁচটি উপজেলার ২৯টি ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নের ১ লাখ ৩৫ হাজার ৬৩৬ জন এখনো পানিবন্দী।
গত শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে শনিবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি আরও ১ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদের পানি ১০ সেন্টিমিটার বেড়েছে। তবে গতকাল দুপুর ১২টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ফুলছড়িঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৯৮ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট নদের পানি জেলা শহরের নতুন ব্রিজ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। ২৪ ঘণ্টায় করতোয়ার পানি ৫ সেন্টিমিটার কমেছে। তবে দুপুর ১২টায় করতোয়ার পানি গোবিন্দগঞ্জের কাটাখালী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। দুপুর ১২টায় তিস্তার পানি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি ৫ সেন্টিমিটার কমেছে।
দুপুরে গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোখলেছুর রহমান বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দফায় দফায় বৃষ্টির কারণে সামান্য করে পানি বাড়ছে। এ ছাড়া যমুনা ও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি পদ্মা ও মেঘনা নদীতে গিয়ে পড়ে। কিন্তু পদ্মা ও মেঘনায় পানি বেশি। এ কারণে পানি খুব ধীরগতিতে নামছে। ফলে এবার বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হবে।
কুড়িগ্রামে দীর্ঘায়িত বন্যায় চরম কষ্টে বানভাসীরা
১ মাসে পানিতে ডুবে ১৭ শিশুসহ ১৯ জনের মৃত্যু
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা : অনেকের বসবাস নৌকায় উচু স্থানে বড় রাস্তার ধারে এবং বসত-বাড়ী ছেড়ে আশ্রয় কেন্দ্রে। কুড়িগ্রামে টানা ১ মাসের দীর্ঘ বন্যায় চরম কষ্টে দিন পাড় করছে প্রায় ৫ লাখ বানভাসী মানুষ। হাতে কাজ ও জমানো খাদ্য না থাকায় বন্যা কবলিত হতদরিদ্র পরিবারগুলো খেয়ে না খেয়ে দিন পাড় করছে। চরম দুর্ভোগে থাকলেও ত্রাণ না পাওয়ার অভিযোগ বন্যা দুর্গত মানুষজনের। শতশত পরিবার ঘর-বাড়ি ছেড়ে উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিলেও দুর্ভোগ বেড়েছে তাদেরও। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে বেশির ভাগ মানুষ পানিতে তলিয়ে থাকা ঘর-বাড়িতে বসবাস করে প্রয়োজনীয় খাদ্য ও বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে স্বাস্থ্য ঝুকিতে পড়েছেন। এসব এলাকায় মানুষের পাশাপাশি গবাদি পশুর কষ্ট দ্বিগুন বেড়েছে।
সদরের যাত্রাপুর ইউনিয়নের পোড়ার চরের মনছের আলী জানান, টানা ১ মাসেরও বেশি সময় ধরে বন্যার মধ্যে পড়ে আছি। কাজ-কাম নাই। ঘরে খাবার নাই। মেম্বার চেয়ারম্যানও কিছু দেয় না। বন্যার আগে ভাইরাসের কারনে তো কোথাও যেতেও পারি না। এক কথায় খুব কষ্টে আছি।
কুড়িগ্রাম-যাত্রাপুর সড়কে আশ্রয় নেয়া এনতাজ আলী জানান, ১৫ দিন ধরে এই সড়কে গরু, ছাগল নিয়ে অবস্থান করছি। নিজের খাবারের কষ্ট। তার উপর গরু, ছাগলের খাবার। সবমিলে খুব কষ্টে দিন পাড় করছি।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, বন্যা কবলিত এলাকায় পানিতে তলিয়ে আছে প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি নলকুপ।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. মো. হাবিবুর রহমান জানান, গত ১ মাসে পানিতে ডুবে ১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এরমধ্যে ১৭ জনই শিশু।
কুড়িগ্রাম জেলা মৎস্য কর্মকর্তা কালিপদ রায় জানান, জেলার ৯ উপজেলায় ২ হাজারেরও বেশি পুকুরের সাড়ে ৭ কোটি টাকার মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. মোস্তাফিজার রহমান প্রধান জানান, জেলার ৯ উপজেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমির বিভিন্ন ফসল সম্পূর্ণ রূপে নষ্ট হয়ে গেছে।
কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মো: রেজাউল করিম জানান, এ পর্যন্ত জেলায় বন্যার্তদের জন্য ১৯০ মেট্রিক টন চাল, জিআর ক্যাশ ৯ লাখ, শিশু খাদ্যের জন্য ২ লাখ ও গো-খাদ্যের জন্য ৪ লাখ টাকা এবং ৬ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী সেতু পয়েন্টে ধরলার পানি বিপদসীমার ৭২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপদসীমার ৭৫ সেন্টিমিটার, নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মুন্সীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ॥ ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দী
লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) সংবাদদাতা : মুন্সীগঞ্জের যেদিকে চোখ যায় সে দিকেই পানি আর পানি। প্রতিনিনিই এসব এলাকার নতুন নতুন গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে। বন্যার পানিতে ভাসছে লৌহজং ও শ্রীনগর,টঙ্গীবাড়ী,সিরাজদিখান ও গজারিয়া উপজেলার গ্রামের পর গ্রাম। পানিতে তলিয়ে গেছে অসংখ্য মাছের ঘের। আর এতে করে পানি বন্ধী হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় ৫০ হাজারেরও বেশি পরিবার। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ব পানি ও খাদ্য সংকটের। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের কারণে তলিয়ে যাচ্ছে হাজার হাজার ঘরবাড়ী ও ফসলী জমি। দিন দিন বন্যার পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। গত ২৪ ঘন্টায় পদ্মার পানি ৬ সেন্টিমিটার বেড়ে ৭.৩ সেন্টিমিটার বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এভাবে আরো দু’একদিন পানি বাড়তে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা ধারনা করছে। এদিকে এক দিকে যেমন নদীতে হু হু করে বাড়ছে পানি। অন্যদিকে কয়েকদিন ধরে থেমে থেমে ঝড়ছে বৃষ্টি। ফলে পানিবন্দী পরিবারগুলোর দুর্ভোগের মাত্রা আরো বেড়েছে। প্রতিদিনিই জেলার উপজেলাগুলোর অসংখ্য গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। এতে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বানের তোরে ভেঙে গেছে পদ্মা পাড়ের ভিটেবাড়ি ও ফসলি জমি। রাতের আঁধারেই ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে হচ্ছে শত শত পরিবারকে। জেলা প্রশাসনের সূত্র মতে মুন্সীগঞ্জের ৬ টি উপজেলার ১৬ টি ইউনিয়নের একশোরো বেশি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে ।তবে প্রতিনিয়তই বাড়ছে এর সংখ্যা।
এদিকে মুন্সীগঞ্জ-লৌহজং-মাওয়া-বালিগাও প্রধান সড়ক ও শ্রীনগর-দোহার সড়ক বন্যার পানিতে প্লাবিত হওয়ায় যানবাহন চলাচল হুমকীর মুখে পড়েছে।
সিরাজগঞ্জে আরো অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি নদীতে বিলীন
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি : যমুনার তীব্র স্রোতে গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার ছোনগাছা ইউনিয়নের সিমলা এলাকায় আরো অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি, মসজিদ, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে আশপাশের আরো দু-তিনটি গ্রাম।
ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ জীবন বাঁচাতে সবকিছু ফেলে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে আসতে বাধ্য হচ্ছে। গত দু’দিনের নদীভাঙনে দুই শতাধিক মানুষ গৃহহীন ও নিঃস্ব হয়ে গেছে। এলাকাবাসীর মধ্যে নদীভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৫ সেন্টিমিটার বেড়ে ৮৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির কারণে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। এ পর্যন্ত জেলার কাজীপুর, সদর, উল্লাপাড়া, বেলকুচি, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার প্রায় সাড়ে তিন লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিবন্দী ও নদীভাঙনের কবলে পড়া অসংখ্য মানুষ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষের মাঝে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
ছোনগাছা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শহিদুল আলম জানিয়েছেন, সিমলা এলাকায় ব্যাপক নদীভাঙন শুরু হয়েছে। গত দুদিনে দুই শতাধিক ঘরবাড়ি, মসজিদ, ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, সিমলা স্পার বাঁধটি নদীতে বিলীন হওয়ায় যমুনার স্রোত গতি পরিবর্তন করে সরাসরি বাঁধে আঘাত করছে। এ কারণে হঠাৎ করেই ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন ঠেকাতে দ্রুত বালুভর্তি জিও ব্যাগ ডাম্পিংয়ের কাজ শুরু করা হবে।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরকার অসীম কুমার জানান, ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের আপাতত বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রাখা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।
জামালপুরে যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত
জামালপুর সংবাদদাতা : জামালপুরে তৃতীয় দফা বন্যায় যমুনার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। মাদারগঞ্জ উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধ ভেঙ্গে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। গত ২৪ ঘন্টায় যমুনা নদীর পানি বাহাদুরাবাদ ঘাট পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১০৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপরদিকে পুরাতন ব্রক্ষ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ ও পানি মাপক গেজ পাঠক আব্দুল মান্নান। এদিকে জেলার প্রায় দশ লক্ষাধিক মানুষ পানি বন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।
শক্রবার সকালে বিকট শব্দে মাদারগঞ্জ উপজেলায় বন্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের প্রায় ৫০ মিটার ধসে যায়। মুহুর্তের মধ্যেই প্রবল পানির স্রোতে ঐ এলাকার ৫০টিরও বেশি কাঁচা-পাকা বাড়িঘর ভেঙ্গে নিয়ে যায় যমুনা। এ দৃশ্য তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিল না অসহায় মানুষদের। আশপাশের প্রায় ১০ থেকে ১৫টি গ্রাম আবারও নতুন করে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এতে করে পানি বন্দী হয়ে পড়েন প্রায় বিশ হাজার মানুষ। জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে গেছে ১০টি গ্রামের মানুষের।
শেরপুরে বন্যা কবলিত মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে
শেরপুর সংবাদদাতা : পুরনো ব্রহ্মপুত্র নদের পানি অতি বর্ষন ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের কারণে আবার সামান্য বেড়েছে। শেরপুর-জামালপুর সড়কের ব্রহ্মপুত্র বীজ পয়েন্টে পানি বিপদ সীমার দশমিক ০২ সেন্টিমিটার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে শেরপুর জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। পানিবন্দী মানুষের সীমাহীন দুর্ভোগ বেড়েছে।
এদিকে শেরপুর-জামালপুর সড়কের পোড়ার দোকান ও শিমুলতলী এলাকার কজওয়ে দুটি পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় নয়দিন থেকে শেরপুর-ঢাকা এবং উত্তরবঙ্গের সঙ্গে এ পথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। দুর্গত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। সেই সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে পানিবাহিত রোগের। জেলায় ত্রাণ তৎপরতা অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষ।
সিংড়ায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি॥ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী
সিংড়া (নাটোর) সংবাদদাতা : নাটোরের সিংড়া পৌর শহরে বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে ডুবে গেছে সিংড়া বাজারের রাস্তাঘাট। আগামী এক সপ্তাহে পানি আরও বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে নাটোর পাউবো কার্যালয়। উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী।
গতকাল শনিবার সিংড়া পয়েন্টে আত্রাই নদীর পানি বিপদসীমার ৮৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সিংড়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ১৫–২০ দিন ধরে বন্যার পানিতে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। বন্যার্ত মানুষ ও গবাদিপশু খাদ্যসংকটে ভুগছে। শহরের দমদমা, সরকারপাড়া ও কলেজপাড়ার সব নলকূপ ডুবে যাওয়ায় সেখানকার মানুষ বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছে। এক কিলোমিটার দূর থেকে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।
সিংড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসরিন বানু জানান, এ পর্যন্ত ১২টির মধ্যে ৮ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে পানি প্রবেশ করেছে। নতুন ২টিসহ মোট ৫২টির মধ্যে ২০টি আশ্রয়কেন্দ্রে ৪শ’ ৮২টি পরিবার এসেছে। এ পর্যন্ত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে ২৬ টন চাল ও ১ লাখ টাকার শুকনো খাবারের পাশাপাশি স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
মানিকগঞ্জে পানিবন্দী মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে চলেছে
মানিকগঞ্জ সংবাদদাতা: উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে মানিকগঞ্জ সাত উপজেলার নিম্নাঞ্চলের নুতন নুতন এলাকা প্লাবিত হয় পড়ছে। প্রতি দিন বাড়ছে পানি বন্দী পরিবারের সংখ্যা।
পানির তোড়ে রাস্তাঘাট ভেঙ্গে যাওয়ায় গত কয়েক দিন ধরে হরিরামপুর উপজেলার সাথে জেলা সদরে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
জেলার সাতটি উপজেলার মধ্যে হরিরামপুর,শিবালয় ও দৌলতপুর উপজেলার চরাঞ্চালের মানুষ বেশী দূর্ভোগের পড়েছে। বন্যার শুরু থেকেই এ সব এলাকার মানুষ পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।মানুষের পাশাপাশি গরু ছাগলের খাবারও সংকট দেখা দিয়েছে। সরকারি ত্রাণ ও বিজিএফ এর চালই হচ্ছে পানি বন্ধি মানুষের প্রধান সহায়ক।
জানা গেছে,গত ২৪ ঘণ্টায় পদ্মার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হরিরামপুর উপজেলায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে অন্যদিকে শিবালয় উপজেলায় যমুনা নদীর আরিচা পয়েন্টের পানি ১৪ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নষ্ট হয়ে গেছে ১৯ হাজার হেক্টর জমির ফসল
মানিকগঞ্জে বন্যার পানিতে রোপা আমন সবজিসহ ১৯ হাজার ১শ ৯০ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে।এতে হাজার হাজার কৃষক দিশেহারা হয়ে পড়েছে।সবজির বাজারে বেড়েছে দাম।
মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় জেলার সাত উপজেলার আবাদকৃত ফসলের মধ্যে রোপা আমন ৩শ ২০ হেক্টর, সবজি ৩শ১০ হেক্টর, বোনা আমন ১৭ হাজার ৯শ’ ৫০ হেক্টর,আউশ ৫শ’ ৬৫ হেক্টর ও রোপা আমনের বীজতলা ৪৫ হেক্টর পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে গেছে।
দেখা গেছে, জেলা সদরসহ ৭ উপজেলাতেই ইরিবোরো ধান কাটার পরই উচু জমিতে কৃষকরা সাধারন রোপা আমন চাষ করে থাকে। এতে প্রতি বছর চাষাবাদ করে ভাল সফলতা পেয়েছে কিন্ত এবছর বন্যার পনিতে তা তলিয়ে যায়।ফলে ক্ষতি মূখে পড়েছে হাজারো কৃষক।
সাধারনত সিংগাইর উপজেলার ব্যাপক সবজি চাষ হয়,এ সব সবজি জেলার চহিদা মিটিয়ে ঢাকা রাজধানীতে পাঠানো হয়। এ সব জমিতে পানি উঠে সবজি পচে নষ্ট হেয়ে গেছে।
সিংগাইর কৃষি অফিস সূত্রে ২৫শ বোনা আমন ,৫০ আউশ আমন , ৭শ রোপা আমন ও ৫শ হেক্টর সবজির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
গোবিন্দগঞ্জের ৭টি ইউনিয়নের অর্ধ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত
গোবিন্দগঞ্জ (গাইবান্ধা) সংবাদদাতা : গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে ওপার থেকে নেমে আসা পানি ও ভারী বর্ষণের কারণে করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। করতোয়া নদীর পানি কাটাখালী পয়েন্টে ৪৩ সেঃ মিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে করে করতোয়া নদীর পানি উপচে নদী তীরবর্তী ৭টি ইউনিয়নের অর্ধ শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ সূত্রে জানা গেছে, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত করতোয়া নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। গত শুক্রবার পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, করতোয়া নদীর পানি কাটাখালী পয়েন্টে বিপদসীমার ৪৩ সেঃ মিঃ উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এতে করে উপজেলার নদী তীরবর্তী রাখালবুরুজ, হরিরামপুর, মহিমাগঞ্জ, শিবপুর, ফুলবাড়ি, দরবস্ত, শালমারা ও পৌরসভার কিছু অংশসহ অর্ধশতাধিক গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। প্রায় ১ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। উপজেলা পরিষদের পশ্চিম পার্শ্বের বিআরডিবি, পাবলিক হেলথ, প্রাণিসম্পদ, পল্লী উন্নয়ন অফিসসহ একটি আবাসিক কোয়ার্টার বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। বন্যা দুর্গত এলাকার বাড়িঘর, ফসলী জমি ও পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া আমন ধানের বীজতলাও বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলা পরিষদ এলাকায় গোলাপবাগ মাদ্রাসা ও কুঠিবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া প্রায় ৫০টি পরিবার তাদের গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি নিয়ে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আশ্রিত এসব পরিবারের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
মাদারীপুরের বন্যা ৯৮ এর চেয়ে ভয়ঙ্করের আশংকা
মাদারীপুর সংবাদদাতা : গত ৪দিনের লাগাতার প্রবল বর্ষন ও অব্যাহত নদীর পানি বৃদ্ধিতে ক্রমশ মাদারীপুরের ৪টি উপজেলার নিচু এলাকাগুলো প্লাবিত হয়েছে। বিশেষ করে গত এক সপ্তাহ ধরে বন্যার পানির স্্েরাতের তীব্রতায় হু হু করে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত শিবচর উপজেলার পদ্মা নদীর মধ্যে চর ও সংলগ্ন ইউনিয়নগুলো। ইতিমধ্যেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বসত বাড়ী ফসলী জমি দ্রুত তলিয়ে গেছে। এতে নিম্নাঞ্চর এলাকার গরিব মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। ক্রমেই নতুন করে বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে জেলার বাকি ৩টি উপজেলা রাজৈর কালকিনি ও মাদারীপুর সদর উপজেলা। শিবচরের পদ্মা ও আড়িয়াল খা নদীতে গত ২৪ ঘন্টায় বন্যার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ৬০ সে:মি উপর দিয়ে এবং মাদারীপুর শহর আড়িয়াল খা নদীতে সে:মি: বৃদ্ধি পেয়ে ৬ সে:মি: বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতীম সাহা জানান।
গত দু’দিনে বিভিন্ন স্থানে সড়ক ও সড়ক বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে সদর উপজেলার শিরখাড়া, ধুরাইল, বাহাদুরপুর, কালিকাপুরসহ ৫টি ইউনিয়নে। এছাড়া বন্যার পানির তোড়ে নদী ভাঙন বেড়েছে রাজৈর ও কালকিনি উপজেলায়। এসব এলাকার অনেক মানুষ এখন পানিবন্দী।
মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুদ্দিন গিয়াস বলেন, বিগত বছরগুলোতে শুধুমাত্র পদ্মার পানি বৃদ্ধি পেয়ে শিবচরের চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। কিন্তু ৯৮ সালের পর এই প্রথম সদর উপজেলায় বন্যার উপচে পড়া পানি প্রবেশ করেছে। বিভিন্ন এলাকায় মাঠ-ঘাট ও বসতবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। অনেকগুলো স্থানে নদী বাঁধ ও সড়ক ভেঙে স্থানীয় সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত ও সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।
জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, মাদারীপুরে এ পর্যন্ত বন্যা কবলিত ইউনিয়নের সংখ্যা ২৭টি। পানিবন্দী পরিবারের সংখ্যা ১০ হাজার ১৪১টি এবং নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ৭৬৪টি।
জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন জানান, মাদারীপুরে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ৮৬ হাজার ৮৪৫ জন মানুষ। সরকারি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ১৮টি। জেলায় বরাদ্দকৃত খাদ্যের পরিমাণ ৪০০ মেট্রিক টন। এ পর্যন্ত বিতরণ করা হয়েছে ৩০২ মেট্রিক টন। উপকারভোগী পরিবারের সংখ্যা ২৬০০টি। ত্রাণ মজুদ আছে ৯২ মেট্রিক টন। জিআর সহায়তা নগদ ১২ লাখ টাকা, শিশুখাদ্যের ২ লাখ এবং গো-খাদ্যের ২ লাখ টাকা জেলা প্রশাসনের তহবিলে রয়েছে। তালিকা অনুযায়ী ক্ষতিগ্রস্তদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা হবে।