ক্রাইমবার্তাি রিপোট: করোনার রিপোর্টের হার্ডকপিতে নেগেটিভ দেখালেও অনলাইনে পজিটিভ থাকায় সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খানের মেয়ে ঐশী খানকে ফিরিয়ে দেয়া হয় বিমানবন্দর থেকে। এ ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন শাজাহান খান।
তবে পজিটিভ-নেগেটিভ রিপোর্টে স্বাক্ষরকারী ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারাল সেন্টারের দুই কর্মকর্তা হলেও এ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও ওই সংস্থার কেউই স্পষ্ট কিছু বলতে পারছে না।
রোববার (২৬ জুলাই) দুপুরে জাল সনদের নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনে অনলাইন চেকে তার করোনা পজিটিভ রিপোর্ট পাওয়া যায়। বিমানবন্দর সূত্র জানায়, রোববার সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-০০১ ফ্লাইটে লন্ডন যাওয়ার জন্য হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যান ঐশী। ইমিগ্রেশনে তার সঙ্গে থাকা করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট চেক করেন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তা। ইমিগ্রেশন পুলিশ ওই সার্টিফিকেট অনলাইনে চেক করলে সেটি পজেটিভ দেখায়। এরপর বিমানবন্দর থেকে তাকে ফেরত পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার জানিয়েছেন, ইমিগ্রেশনে করোনা পজেটিভ ধরা পড়ায় বিমানের লন্ডন ফ্লাইটে একজন যাত্রীকে যেতে দেয়া হয়নি।
তবে তার পরিচয় প্রকাশ করেননি তাহেরা খন্দকার। তিনি একজন সাবেক মন্ত্রীর মেয়ে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তার পরিচয় কী, সেটা আমরা জানি না। তিনি বিমানের যাত্রী ছিলেন, ইমিগ্রেশনে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে গেছেন, কিন্তু অনলাইনে চেক করলে সেটা পজিটিভ আসে। সেজন্য ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ তাকে লন্ডন যেতে দেয়নি।
শিডিউল ফ্লাইটটি রোববার দুপুর ১২টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্য ছেড়ে গেছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা। তবে এ বিষয়ে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ উল আহসানের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ঐশী খানের করোনা সনদ চেক করে দেখা গছে, পজিটিভ ও নেগেটিভ রিপোর্টে স্বাক্ষরকারী ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারাল সেন্টারের দুই কর্মকর্তা। পজিটিভ রিপোর্টে স্বাক্ষর করেছেন ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারাল সেন্টারের পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান। নেগেটিভ রিপোর্টে স্বাক্ষর করেছেন একই প্রতিষ্ঠানের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) বায়েজিদ বিন মনির।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র জানিয়েছে, অধ্যাপক ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামসুজ্জামান স্বাক্ষরকৃত রিপোর্টটি আসল। সেই রিপোর্টে ঐশী খানের করোনা পজিটিভ রেজাল্ট আসে। আর এয়ারপোর্টে ঐশী খান যে করোনা নেগেটিভ রিপোর্টের হার্ডকপি নিয়ে যান সেখানে স্বাক্ষর ছিল বায়েজিদ বিন মনিরের। সেটি নকল রিপোর্ট।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ডা. আয়েশা আক্তার বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সংশ্লিষ্ট ল্যাবের পরিচালকের সঙ্গে কথা বলে রিপোর্ট যাচাই করা হয়েছে। ওই রেজাল্ট পজিটিভ। উনি এই নেগেটিভ সার্টিফিকেট কোথা থেকে পেয়েছেন, সেটা আমাদের জানা নেই।
এ বিষয়ে বায়েজিদ বিন মনির বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। সোমবার (২৭ জুলাই) সকালে বিস্তারিত জেনে বলতে পারবো।
এদিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শাজাহান খান জানান, গতকাল শনিবার (২৫ জুলাই) মহাখালি থেকে নেগেটিভ রিপোর্টের হার্ডকপি নিয়ে আসেন তার বিশেষ সহকারী। কিন্তু ইমিগ্রেশন যখন অনলাইনে চেক করে তখন সেটি পজিটিভ দেখায়। বিমানবন্দরে দেখানো নেগেটিভ রিপোর্টটিতে স্বাক্ষর করেছেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন অ্যান্ড রেফারাল সেন্টারের আবাসিক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (আরএমও) বায়েজিদ বিন মনির। তার রিপোর্ট অনলাইনে এবং হার্ডকপিতে কীভাবে ভিন্ন হলো তা নিয়ে তিনি সোমবার (২৭ জুলাই) স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর অভিযোগ করবেন।
তিনি বলেন, আমার মেয়ে লন্ডনে পড়ালেখা করে। ও ফেব্রয়ারিতে এসেছে। করোনার কারণে যেতে পারেনি। এখন লন্ডনে যাবে, বিমান চালু হয়েছে। যেহেতু করোনা রিপোর্ট লাগে সেহেতু মহাখালিতে গিয়ে স্যাম্পল দিয়ে আসে। গতকালকে চারটার পরে অনলাইনে জানানো হয় তার রিপোর্ট নেগেটিভ। পরবর্তীতে আমার এপিএসকে হার্ডকপিটা আনতে বলি। ডাক্তার বায়জিদ বিন মনির স্বাক্ষরিত নেগেটিভ রিপোর্টটি সে নিয়ে আসে।
এর আগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দায়িত্বপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা বলেন, সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-০০১ ফ্লাইটটি লন্ডনের উদ্দেশে যাওয়ার কথা ছিল। ঐশী ওই ফ্লাইটের যাত্রী ছিলেন। তিনি ভিআইপি কাউন্টার দিয়ে ইমিগ্রেশন পার হওয়ার সময় তার করোনা সার্টিফিকেট নিয়ে কোনো একটা ঝামেলা হয়েছিল। আমাদের ইমিগ্রেশন পুলিশ থেকে জানানো হলো যে, একজন যাত্রী করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিয়ে এসেছেন। কিন্তু আইইডিসিআরের সার্ভারে তার রিপোর্ট করোনা পজিটিভ। আমরা তাকে নিয়ে দ্রুত হেলথ ডেস্কে পাঠাতে বলি।
তিনি বলেন, কিছুক্ষণ পর ঐশী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডেস্কে আসেন। আমরা তার হাতে একটি করোনা ‘পজিটিভ’ সার্টিফিকেট দেখতে পাই। তার সার্টিফিকেট সার্ভারে সার্চ দিয়ে দেখতে পাই, তিনি সত্যিই করোনা পজিটিভ। এরপর অধিদপ্তর থেকে তাকে আর প্লেনে ওঠার অনুমতি দেয়া হয়নি।
বিমানবন্দরে সকালে দায়িত্বপালনকারী এয়ারপোর্ট এপিবিএনের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিদেশে যাওয়ার জন্য করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক। করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট না থাকায় ঐশী নামের এক যাত্রীকে লন্ডনে যেতে দেয়া হয়নি। সূত্র: পূর্বপশ্চিমবিডি