ক্রাইমর্বাতা রিপোট : বাঁচার জন্যি যাগো লড়তি হচ্ছে, তাগো ঈদ হবে কেম্মায়। আম্পানে ভেঙে যাওয়া ঘরবাড়ি মেরামত পর্যন্ত করতি পারিনি, আয় রোজগার না থাকায় ঠিকমতো খাওয়া পর্যন্ত জুটতেছে না। তাই এবার আর আমাগো কপালে ঈদনি।
ঈদ প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের গৃহবধূ মোছা. শরবানু বিবি।
পাশেই দাঁড়ানো প্রতিবেশী আমজাদ হোসেন বললেন, ‘গেল বছর স্বামী-স্ত্রী দুজনই কোরবানি দেলাম। এবার আম্পান আমাগো পথে বসিয়ে দিগেছে, এখন সরকার বনে যাওয়াও বন্ধ করে দে। তাই কোরবানি দূরে থাক, তিন বেলা খেয়ে বেঁচে থাকাই কষ্টকর হুয়ে দাঁড়িয়েছে।’
কেবল শরবানু বিবি, আমজাদ হোসেন নন, এই দুর্দশার চিত্র শ্যামনগরের সুন্দরবন–সংলগ্ন পুরো জনপদে। মাত্র এক দিন পরেই কোরবানির ঈদ। অথচ এ নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো উন্মাদনা বা উচ্ছ্বাস নেই।
হরিশখালী গ্রামের হুদা মালি ও নীলডুমুর গ্রামের আকবর হোসেন জানান, আম্পানের আঘাতে উপকূল রক্ষা বাঁধ ভেঙে আরও অনেকের মতো তাঁদের ঘরবাড়িও বিধ্বস্ত হয়। কোনোরকমে ভাঙনকবলিত অংশে রিং বাঁধ নির্মাণ করা হলেও অদ্যাবধি ভাঙাচোরা ঘরবাড়ি মেরামত করা যায়নি টাকার অভাবে। বিধ্বস্ত রাস্তাঘাট সংস্কার না হওয়ায় এখনো পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে অনেকে।
ঝাঁপালী গ্রামের রাশিদা বেগম বলেন, ‘আমাগো মতন কপাল পোড়া মানুষগো জন্যি ঈদ না। ছেলেপিলে তিনডের জন্যি এটটু সেমাই পায়েস করার মতো অবস্থায় আমরানি।’
বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের বৃদ্ধ আবদুল কুদ্দুস সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে মুরগির খামার করেছিলেন। আম্পান–তাণ্ডবে খামার ডুবে যাওয়ায় সব মুরগি মারা যায়। এক মাস আগে থেকে বন বিভাগ সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। উপার্জনের সব পথ বন্ধ হওয়ায় সমিতির কিস্তি আর মহাজনের তাগাদার কারণে এখন ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
প্রায় অভিন্ন গল্প নীলডুমুর গ্রামের আবদুল করিম, দুগাবটির শর্মিষ্ঠা মণ্ডল আর মুন্সিগঞ্জ জেলেপাড়ার দেবযানী মণ্ডলসহ শ্যামনগরের উপকূলবর্তী হাজার হাজার মানুষের। করোনার প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য সংকুচিত হওয়ায় আর্থিক অনটনে পড়েন তাঁরা। আর ২০ মের আম্পান তাঁদের সর্বস্বান্ত করে রীতিমতো পথে বসিয়ে দিয়েছে।
সুন্দরবন নির্ভরশীল পরিবারগুলোর দাবি, আম্পান তাদের পথে বসিয়ে দেওয়ার পর সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে এসেছে। কাঁকড়া শিকারের জন্য হলেও বনে প্রবেশের অনুমতি পাওয়া গেলে অন্তত পেটের জ্বালা দূর করা সম্ভব ছিল।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম বলেন, আম্পান ও সুন্দরবনে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞায় তাঁর ইউনিয়নের ৪৮ হাজার মানুষের সবাই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত। স্বল্পসংখ্যক মানুষ জেলে কার্ডের সুযোগে ৫৫ কেজি করে চাল পেলেও বেশির ভাগই সেই সুবিধা পর্যন্ত পাননি। তবে ঈদ উপলক্ষে সরকারি বরাদ্দ পাওয়ায় কিছু পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া গেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. শাহিনুল ইসলাম বলেন, ঈদুল আজহা উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে উপজেলার ৭৯ হাজার ৯৭টি পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।