চামড়ার দাম না পেয়ে কওমিয়া মাদ্রাসা গুলো হুমকীর মুখে: সাতক্ষীরার সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচারের শঙ্কা

ক্রাইম,বার্তা রিপোট সাতক্ষীরা: ক্রেতা না থাকায় সাতক্ষীরায় কুরবানির পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছে কুরবানি দাতা ও মৌসুমি ব্যবসায়ীরা । মৌসুমি ব্যবসায়ীরা দাম না পেয়ে পাইকারী ব্যবসায়ীদের কারসাজি বলছেন আর পাইকারী ব্যবসায়ীরা বলছেন দেশের বাজারে চামড়ার চাহিদা নেই। এভাবে একে অপরকে দায়ী করছেন। কেউ আবার চামড়া ফেলে দিয়েছে। কেউ আবার ফ্রি দিয়েছে। যেসব চামড়া বিক্রি হয়েছে তাও আবার নামকা ওয়াস্তে। ফলে মসজিদ,মাদ্রাসা হেফজোখানা গুলো পড়েছে মহা বিপদে। কওমিয়া মাদ্রাসা গুলো পরিচালনার একটা বড় আয় আসতো কুরবাণির পশুর চামড়া বিক্রি করে। এবার তা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে তারা। ফলে আগামিতে দানের উপর নির্ভরশীল এসব প্রতিষ্ঠান গুলো টিকে থাকা কঠিন হবে বলে মনে করছেন সংশ্রিষ্টরা।

পার্শবর্তি দেশে কুরবাণির চামড়ার গুরুত্ব ও মূল্য বেশি থাকায় সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে চামড়া পাচারের আশঙ্কা করা হচ্ছে। জেলা শহর থেকে চামড়া সংগ্রহ করে সীমান্ত গ্রাম গুলোতে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। স্থানীয়রা জানান, এসব চামড়া লবণ জাত করে রাতের আঁধারে ভারতে পাচার হয়ে থাবে। তবে ভারতে চামড়া পাচার প্রতিরোধে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বিজিবি ও পুলিশ সাতক্ষীরা সীমান্তে সতর্কতা জারি করেছে।
জানা যায়, করোনার কারণে দেশে এবার চামড়ার বাজার মূল্য খুব নাজুক। কেনা দামেও ব্যবসায়ীরা চামড়া বিক্রি করতে পারছেন না। সরকারি দামে ক্রয়-বিক্রয়ে সাড়া নেই কারো। ফলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন ভারতে বেশি দাম থাকায় অবিক্রিত চামড়া পাচার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সরকারি নীতিগত সহায়তা এবং ভুল পদক্ষেপের কারণে সম্ভাবনাময় হাজার কোটি টাকার চামড়াশিল্পটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পানির দামে পাচার হয়ে যাচ্ছে কোটি কোটি টাকার মূল্যবান পশুর চামড়া। আর সেই সুযোগে ফুলেফেঁপে উঠছে ভারতীয় চামড়াশিল্প বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
চামড়ার বাজার ঘুরে দেখা যায়, সাতক্ষীরা শহর এলাকায় ৫ মণ ওজনের গরুর চামড়া সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ এবং ১০ মণ গরুর চামড়া ৬শ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২ থেকে ৩ মণ ওজনের গরুর চামড়া একশ থেকে দেড়শ টাকায় বিক্রি হয়েছে।ক্রেতা না থাকায় ছাগলের চামড়া বেশির ভাগ ফেঁলে দিয়েছে।
অপরদিকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ৫ মণ ওজনের কোরবানি গররুর চামড়া ৬শ থেকে ৮রুপি ও ১০ মণ ওজনের গরুর চামড়া প্রতি পিস ৯শ’ থেকে হাজার রুপি পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে বলে বিশেষ একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, এবছর ঢাকার বাইরে চামড়ার দাম বর্গফুট প্রতি ২৮ থেকে ৩২ টাকা। অপরদিকে ছাগলের চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ -১৫ টাকা প্রতি বর্গফুট। গতবছর চামড়ার দাম আরো বেশি ছিল। ভারতে চামড়ার দাম বরাবরই বেশি। সেই কারণে সীমান্ত পথে চামড়া পাচারের প্রবণতা বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশিষ্টরা।সরকার নির্ধারিত দামে জেলাতে কোথাও চামড়া বেঁচা কেনা করতে দেখা যায়নি।
এছাড়াও এবার ঈদে চামড়ার দাম নেই বললেই চলে। অনেকে সড়কে ফেলে চলে গেছে। এ সুযোগে একটি মহল চামড়া সংগ্রহ করে লবন দিয়ে মজুদ করে রেখেছে। সময় সুযোগ পেলে তা ভারতে পাচার করার চেষ্টা করবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের সব সীমান্তে চামড়া পাচার রোধে স্বরাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। এর আলোকে সকল সীমান্ত এলাকায় তৎপর রয়েছে বিজিবি।
সূত্র জানায়, খুচরা ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা নির্ধারিত দামের চেয়ে আরো কম দামে চামড়া কিনে মজুদ করে রাখছেন। তারা স্থানীয় বাজারে চামড়া না তুলে নিজস্ব কায়দায় তা সংরক্ষণ করছেন। দেশের বাজারে দাম কম হওয়ায় এই চামড়া বাংলাদেশে রাখা সম্ভব হবে কি না তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে সংশয় রয়েছে।
কোরবানির পশুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও সাতক্ষীরার সব উপজেলাতে চামড়ার দামে ধস নেমেছে। বিক্রেতা ও মৌসুমী ব্যবসায়ীদের অভিযোগ চামড়া ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে কোরবানির পশুর চামড়ার দামে এই বিপর্যয় হয়েছে।
রোববার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পৌরসভার অধিকাংশ এলাকার চামড়ার অস্থায়ী বাজারে গিয়ে দেখা যায়, ছোট গরুর চামড়া ১০০ থেকে ১৫০ টাকা, মাঝারি আকারের প্রতিটা চামড়া ১৫০ থেকে ২০০ টাকা এবং বড় চামড়া ২০০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ছাগলের চামড়া কোনও ব্যাপারী কিনতে রাজি হচ্ছেন না। যদিও কেউ বিক্রি করতে পারলেও পাচ্ছেন নাম মাত্র মূল্য ১০ টাকা।
সাতক্ষীরা বড়বাজার মসজিদের মুয়াজজিন আব্দুস সামাদ জানান, ‘আগে কোরবানি দেওয়ার আগেই চামড়ার দাম বাসায় দিয়ে যেতো। যেন অন্য কাউকে চামড়া না দেই। এবার আমার একটি ছাগলের চামড়ার সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ কোনও দাম বলেনি। পরে চামড়াটি ফেলে দি।
আমলাপাড়া বড় মাদরাসার শিক্ষক মো. তারেক হাসান বলেন, ‘সকাল থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৪৫৫ পিস গরুর চামড়া পেয়েছি। এখানে ব্যাপারীরা চামড়া প্রতি ১৫০ টাকা দাম দিতে চাইছে। ছাগলের চামড়া বিনামূল্যেও নিতে রাজি না ।
শহরের এলাকার চামড়া ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, ১ লাখ থেকে ২ লাখ টাকা দামের আটটি গরুর চামড়া ২৫০ টাকা প্রতিটি বিক্রি করতে হয়েছে। ছাগলের ৪টি চামড়া গরুর চামড়ার সঙ্গে বিনামূল্যে দিয়েছি।
আড়তদার আবুল কালাম বলেন, ‘গরুর চামড়া যেটা খুব ভালো সেটা তিন শ টাকা দিয়ে কিনছি। অধিকাংশ চামড়া নষ্ট করে ফেলেছে। যার জন্য কম দাম বলা হচ্ছে। এগুলো ঢাকায় নিয়ে গেলে আমরাও ভালো দাম পাব না। ঢাকায় ছাগলের চামড়া নেয় না,তাই আমরাও কিনছি না। কেউ কেউ গরুর চামড়ার সঙ্গে এমনিতেই ছাগলের চামড়া দিয়ে যাচ্ছে। তখন ১০ থেকে ২০ টাকা দেওয়া হচ্ছে। এখানে আমরা যেগুলো কিনছি সেগুলো লবণ ছাড়া। প্রতিটি চামড়ায় পরিবহন খরচ, লবণ খরচ, শ্রমিকের মজুরিসহ আরও ১২০ থেকে ১৫০ টাকা খরচ হবে।
সাতক্ষীরা ৩৮ বিজিবি’র কর্মকতা জানান, সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে যাতে ভারতে চামড়া পাচার না হয় সেজন্য সাতক্ষীরায় বিজিবির দুটি ব্যাটালিয়নের আওতাধিন ১৩৮ কি.মি স্থল ও ১০০ কি.মি জলসীমা সীমান্ত এলাকাজুড়ে কঠোর নজরদারী রয়েছে। কোনো চোরচালানী যাতে এপার থেকে ওপারে চামড়া পাচার করতে না পারে সেজন্য বিজিবি সীমান্ত জুড়ে বিশেষ সতর্কাবস্থাসহ গোয়েন্দা নজরদারীতে রয়েছে।

Check Also

সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ডের উদ্যোগে সভা অনুষ্ঠিত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি সাতক্ষীরা শহর শখার ২ নং ওয়ার্ড (রাজারবাগান ও সরকারপাড়া ইউনিট) এর উদ্যোগে …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।