ক্রাইম,বার্তা রিপোট : লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে নিহত বেড়ে ৭৮ জনে পৌঁছেছে। আহত হয়েছেন ৪ হাজারের বেশি। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত উদ্ধারকাজ জারি রয়েছে। হতাহতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। মঙ্গলবার শহরটির বন্দর এলাকায় এ বিস্ফোরণ ঘটে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী হাসান হামাদ টেলিভিশনে দেওয়া এক বক্তব্যে এ তথ্য জানান। এ খবর দিয়েছে দ্য হারেৎস ও গাল্ফ নিউজ।
খবরে বলা হয়, বিস্ফোরণের প্রভাব শহরজুড়ে অনুভূত হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে বহুদূর পর্যন্ত বিস্ফোরণের ফলে সৃষ্ট ‘শকওয়েভ’ ফাটল ধরিয়েছে অসংখ্য ভবনে।
বিস্ফোরণের পরপরই বিশাল মাশরুম আকৃতির ধোয়া উঠে যায় উপরের দিকে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই হতাহতদের দিয়ে ভরে গেছে শহরটির সবগুলো হাসপাতাল। আগুন নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার মোতায়েন করা হয়েছে।
লেবাননের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেনারেল মোহাম্মদ ফাহমি প্রধানমন্ত্রী দিয়াবের সঙ্গে ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে জানান, বিস্ফোরণটির কারণ সম্পর্কে জানতে আমাদের তদন্তের জন্য অপেক্ষা করা উচিৎ। তবে প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া তথ্য থেকে ইঙ্গিত মিলেছে যে, বহু সময় আগে এক জাহাজ থেকে জব্দ করা উচ্চ মাত্রার বিস্ফোরক পদার্থ থেকে এ বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। বিস্ফোরক পদার্থগুলো বন্দরের একটি গুদামঘরে সংরক্ষণ করা ছিল। এমনটা জানান দেশটির জননিরাপত্তা বিষয়ক প্রধান আব্বাস ইব্রাহিমও।
স্থানীয় টেলিভিশন এলবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বিস্ফোরক পদার্থগুলো ছিল সোডিয়াম নাইট্রাইট। তবে কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেনি। এদিকে, প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলের উপরে কমলা রঙের মেঘ দেখা গেছে। নাইট্রাইট জাতীয় পদার্থের বিস্ফোরণের পরপর এমন বিষাক্ত নাইট্রোজেন অক্সাইড গ্যাস তৈরি হয়ে থাকে। বৈরুতের গভর্নর মারওয়ান আব্বুদ বলেন, শহরটি একটি ‘দুর্যোগ এলাকায়’ পরিণত হয়েছে ও যে ক্ষতি হয়েছে তার মাত্রা বিশাল।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব জানিয়েছেন, বিপজ্জনক ওই গুদামঘরে এই বিস্ফোরণের পেছনে যারা জড়িত তাদেরকে এর মূল্য দিতে হবে। টেলিভিশনে প্রচারিত এক বক্তব্যে তিনি বলেন, আমি আপনাদের কাছে প্রতিজ্ঞা করছি যে, এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ীরা জবাবদিহিতা না করে পার পাবে না। দায়ীদের এর মূল্য দিতেই হবে। ঘটনাটি ঘিরে একটি তদন্ত চালু করা হবে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, গাল্ফ নিউজে জোড়া বিস্ফোরণের কথা বলা হয়েছে। যদিও কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করেনি। লেবাননের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদের বরাত দিয়ে এও বলা হয়েছে যে, নিহতের সংখ্যা ৩০ জন। এক প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে গাল্ফ নিউজ আরো জানিয়েছে, তিনি বিস্ফোরণের আগ মুহূর্তে আকাশ থেকে কিছু পড়তে দেখেছেন। অন্যান্যরা বলেছে, তারা ২০০৬ সালের ইসরাইলি যুদ্ধের সময় যেমন বিমানের আওয়াজ পাওয়া যেত, বিস্ফোরণের তেমন আওয়াজ শুনতে পেয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে লেবাননের সশস্ত্র দল হিজবুল্লাহর সঙ্গে ইসরাইলের বর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে এ বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে, ইসরাইলের রাজনৈতিক এক সূত্রের বরাত দিয়ে হারেৎস জানায়, বিস্ফোরণটির সঙ্গে ইসরাইল কোনোভাবেই জড়িত ছিল না। ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী গাবি আশকেনাজি জানান, তারা আন্তর্জাতিক মধ্যস্ততাকারীদের মাধ্যমে লেবাননকে সকল প্রকার মানবিক ও মেডিক্যাল সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছেন।
বৈরুত-ভিত্তিক টিভি চ্যানেল আল-মায়াদীনের এক প্রতিবেদনে লেবাননের এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, বিস্ফোরণটি কোনো সন্ত্রাসী হামলা ছিল না। লেবানিজ প্রধানমন্ত্রী দিয়াব বিস্ফোরণের শিকারদের স্মরণে বুধবার একদিনের জাতীয় শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। আল মায়াদীন হিজবুল্লাহর সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বিস্ফোরণটি ইসরাইলি বিমান হামলা ছিল না।
এদিকে, বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, ২০০৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরির হত্যাকাণ্ড নিয়ে এক মামলার রায় প্রকাশের আগ দিয়ে এ বিস্ফোরণ ঘটলো। আগামী শুক্রবার জাতিসংঘের একটি ট্রাইব্যুনাল মামলার চার আসামিকে নিয়ে রায় দেওয়ার কথা রয়েছে। চার আসামিই ইরান-সমর্থিত হিজবুল্লাহর সদস্য।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, তারা নিবিড়ভাবে ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করছে ও সবধরনের সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জানান, বিস্ফোরণটির কারণ সম্পর্কে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন জানান, যুক্তরাজ্য সম্ভাব্য সকল ধরনের সহায়তা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে। এছাড়া, বিস্ফোরণের পর লেবাননকে সহায়তা প্রদানের ইছা প্রকাশ করেছে ফ্রান্স, ইরান, তুরস্ক, জর্ডান, সাইপ্রাস ও কাজাখাস্তানও।