ক্রাইমবাতা ডেস্ক রিপোট: লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ দুটি বিস্ফোরণের ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১০০ জন হয়েছে। আহতের সংখ্যা ৪ হাজারের বেশি।
বিবিসি জানায়, ভয়াবহ দুটি বিস্ফোরণের পর লেবাননের শহরটি কেঁপে উঠে। বিস্ফোরণের শব্দে বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন।
শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে ঘন ধোঁয়ার কু-লী উঠতে দেখা গেছে। ১৫০ মাইল দূরের এলাকাতেও কম্পন অনুভূত হয়।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব গতকাল বুধবার তিনদিনব্যাপী রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি দুই সপ্তাহের জরুরি অবস্থা ঘোষণার ব্যাপারে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
বৈরুতের বন্দরের একটি রাসায়নিকের গুদাম থেকে ওই বিস্ফোরণ ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে লেবানন কর্তৃপক্ষ।
প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের বৈঠকে মন্তব্য করেন, গুদামটিতে প্রায় ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট মজুদ ছিল এবং তাই বিস্ফোরিত হয়েছিল মঙ্গলবার।
বৈঠকে তিনি বলেন, এটি অগ্রহণযোগ্য যে, কোন ধরনের সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়া প্রায় ২ হাজার ৭৫০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট একটি গুদামে ছয় বছর ধরে ছিল।
লেবাননের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এটা মেনে নেওয়ার মত না এবং এই ইস্যুতে আমরা চুপ থাকতে পারি না। যারা এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী তাদের শাস্তি পেতে হবে।
তবে ঠিক কী কারণে বিশাল এই বিস্ফোরণ ঘটলো তা সম্পর্কে সুস্পষ্টভাবে এখনো কিছু বলা হয়নি।
এদিকে ইসরাইল-লেবানন সীমান্তে কিছু দিন ধরে উত্তেজনা চললেও এ বিস্ফোরণের সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা থাকার কথা নাকচ করেছে তেল আবিব।
ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায়, বৈরুতের বন্দর এলাকা থেকে বড় গম্বুজ আকারে ধোঁয়া উড়ছে, এর কিছুক্ষণের মধ্যে বিকট বিস্ফোরণে গাড়ি, ভবন উড়ে যেতে দেখা যায়।
এই বিস্ফোরণকে বোমা হামলার সঙ্গে তুলনা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, ভয়ংকর এই বিস্ফোরণ দেখে মনে হচ্ছে বোমা হামলার কারণে হয়েছে।
লেবানন রেডক্রস জানিয়েছে, আহত বহু মানুষকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে চিকিৎসার জন্য।
আল জাজিরা তাদের প্রতিবেদনে লিখেছে, ‘বৈরুত হাসপাতালের করিডোরও ভরে গেছে আহত ও রক্তাক্ত মানুষে।’
এ ঘটনায় নিহতদের মধ্যে একজন বাংলাদেশি আছেন বলে নিশ্চিত করেছেন লেবাননের বাংলাদেশ দূতাবাস। তিনি সেখানে বৈধভাবে একটি স্প্যানিশ কোম্পানিতে কাজ করতেন।
এ ছাড়া বিস্ফোরক গুদামের নিকটবর্তী বাংলাদেশ নৌবাহিনী জাহাজ বিজয়-এর ২১ জন সদস্য আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ২০ জন শঙ্কামুক্ত রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২০১০ সাল হতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশগ্রহণ করে আসছে। ভূ-মধ্যসাগরে মাল্টিন্যাশনাল মেরিটাইম টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে বর্তমানে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘বিজয়’ ইউনিফিলে বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় নিয়োজিত রয়েছে।
যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ
যেন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ। পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটছে। তাতে বাতাস পুড়ে গেছে। উড়িয়ে নিয়েছে বাড়িঘর, মাটি, পানি- যা পেয়েছে সামনে। দূর দেশ থেকে পাওয়া যাচ্ছে বারুদের গন্ধ। আতঙ্কে কাঁপছে পুরো লেবানন, আশপাশের দেশ।
বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে। অনেক বাড়ির বারান্দা উড়ে গেছে কোথায় কেউ বলতে পারেন না। আগুনসমেত ধোঁয়া উঠে গেছে উর্ধ্বকাশে। বিস্ফোরণের ভয়াবহতা এতটাই তীব্র, প্রলয়ংকারী ছিল যে, ১২৫ কিলোমিটার দূরে পাশের দেশ সাইপ্রাস থেকে তা অনুভূত হয়েছে। ধ্বংস হয়ে গেছে বহুল আলোচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী সাদ হারিরি বাড়ি। তবে তিনি নিরাপদ আছেন বলে তার দল নিশ্চিত করেছে।
শত্রু রাষ্ট্র ইসরাইল এমন হামলা চালানোর থিওরি প্রত্যাখ্যান করেছে লেবাননের হিজবুল্লাহ। প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব আজ বুধবারকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেছেন। অন্যদিকে জরুরি প্রতিরক্ষা কাউন্সিলের বৈঠক আহ্বান করেছেন প্রেসিডেন্ট মিশেল আওন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরাইল।
বৈরুতের হোটেল দিউ হাসপাতাল আহত রোগীতে ভরে গেছে। সেখানে চিকিৎসা নিচ্ছেন কমপক্ষে ৫০০ মারাত্মক আহত ব্যক্তি। তারা আর মানুষকে গ্রহণ করতে পারছে না। লেবাননের রেডক্রস বলেছে, আহত মানুষের ফোনকলে তারা ডুবে যাচ্ছেন। অসংখ্য মানুষ এখনও ধ্বংসাবশেষ বা বাড়িতে আটকা পড়ে আছেন।
স্থানীয় ফাদি রুমিয়েহ বিস্ফোরণস্থল থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে এবিসি মলে অবস্থান করছিলেন। তিনি বিস্ফোরণকে বর্ণনা করেছেন এভাবে- এ যেন পারমাণবিক বোমার বিস্ফোরণ। সারা শহরে ধ্বংসস্তূপ। ২ কিলোমিটার দূরের ভবনও আংশিক ধসে পড়েছে। পুরো ঘটনা যেন একটি যুদ্ধক্ষেত্রে। ধ্বংসযজ্ঞ চরম পর্যায়ের। কোনো ভবনের জানালা অক্ষত নেই।
২ সপ্তাহব্যাপী জরুরি অবস্থা জারির পরিকল্পনা
লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় কমপক্ষে ৭৮ জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে ৪ হাজারেরও বেশি মানুষ।
ভয়াবহ এই বিস্ফোরণের পর মন্ত্রিসভার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন এবং দু’সপ্তাহব্যাপী জরুরি অবস্থা জারির ঘোষণা দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান তিনি। খবর আল-জাজিরার।
মঙ্গলবার ভয়াবহ এ বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা বৈরুত। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছে কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে আহতদের উদ্ধারে কাজ করছেন উদ্ধারকর্মীরা।
এ বিস্ফোরণের কারণ এখনও স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, বন্দরের একটি গুদামে গত ছয় বছর ধরে মজুদ করে রাখা ২ হাজার ৭শ’ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট থেকে এ বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি
রাজধানী বৈরুতে বিধ্বংসী বিস্ফোরণের কারণ যাই হোক না কেন, এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি দিলেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব। খবর আল-জাজিরার।
এই বিস্ফোরণকে ‘বিপর্যয়’ আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী দিয়াব বলেছেন, বৈরুত বন্দরে বিস্ফোরণের ঘটনায় সংশ্লিষ্ট প্রত্যেককে জবাবদিহি করতে হবে এবং দায়ী ব্যক্তিদের মাশুল গুণতে হবে।
বিস্ফোরণ ঘটিয়ে যারা কয়েক ডজন মানুষকে হত্যা করা হয়েছে এবং কয়েক হাজার মানুষকে আহত করা হয়েছেন তাদের সবার বিচার করা হবে। এ ঘটনার তদন্তে দেখা হবে ২০১৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বিপজ্জনক গুদামগুলো কতটা ভয়ঙ্কর।
বিপর্যয় থেকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করতে বন্ধুপ্রতিম দেশগুলোকে আহ্বান জানিয়েন দিয়াব বলেছেন, যে সব দেশ এই দেশকে ভালোবাসে তাদের জরুরি ভিত্তিতে আমাদের পাশে দাঁড়ানো ও জরুরি সহায়তা করার আহ্বান জানাচ্ছি।
যে কারণে বিস্ফোরণ
বিপর্যয় কাটাতে বন্ধু রাষ্ট্রগুলোর কাছে সহযোগিতা চেয়েছে লেবানন সরকার। এদিকে, ইসরাইল সাফ জানিয়ে দিয়েছে, বিস্ফোরণের সঙ্গে তাদের কোন যোগসূত্র নেই।
লেবানিজ নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান জানিয়েছেন, সমুদ্রবন্দরের কাছে একটি রাসায়নিক গুদাম থেকে বিস্ফোরণের সূত্রপাত হয়েছে। কয়েকটন নাইট্রেট বিস্ফোরিত হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে।
দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী হামাদ হাসান জানান, বিস্ফোরণের পরপরই ছিন্নবিচ্ছিন্ন মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। বৈরুত হাসপাতালের করিডোরও ভরে গেছে আহত ও রক্তাক্ত মানুষে।
ইসরাইলের সঙ্গে লেবাননের সীমান্ত নিয়ে উত্তেজনা চলছে। ঘটনার পরপরই ইসরাইলী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিস্ফোরণের সঙ্গে তাদের কোন যোগসূত্র নেই।
এমন এক স্পর্শকাতর সময়ে লেবাননে বিস্ফোরণ হলো যখন দেশটি ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী রফিক হারিরির হত্যাকা- নিয়ে জাতিসংঘ ট্রাইব্যুনালের রায়ের তিনদিন আগে সংঘটিত এই বিস্ফোরণের কারণ পুরোপুরি স্পষ্ট নয়।