# সহপাঠীদের জীবননাশের শঙ্কায় স্ট্যামফোর্ড শিক্ষার্থীরা
স্টাফ রিপোর্টার: পুলিশের গুলীতে নিহত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের গাড়িতে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন করেছে সহপাঠিরা। এতে লাঠিচার্জ করেছে পুলিশ। পুলিশের লাঠির আঘাতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। বামনা থানার ওসির বিরুদ্ধে লাঠিচার্জের অভিযোগ করেছেন আহত ও প্রত্যক্ষদর্শীরা।
গতকাল শনিবার বেলা ১২টার দিকে সিফাতের নিজ বাড়ি বরগুনার বামনা উপজেলায় সিফাতের মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন শুরু করে তার সহপাঠিরা। এ সময় পুলিশ এসে প্রথমে মানববন্ধনের ব্যানার ও মাইক ছিনিয়ে নেয়। পরে লাঠিচার্জ করে মানববন্ধন পণ্ড করে দেন পুলিশ।
সিফাতের বন্ধুরা মানববন্ধন চালিয়ে গেলে বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস আলী তালুকদার ছুটে এসে শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা শুরু করে। এতে ৪ জন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়। আহতরা হলেন- মো. রুবেল, ইমরান, রায়হান ও মিথুন।
মানববন্ধনে অংশগ্রহণকারী পুলিশের লাঠিচার্জে আহত মো. রুবেল বলেন, আমরা আমাদের বন্ধুর মুক্তির জন্য মানববন্ধনে দাঁড়িয়েছি। আমরা শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন করছিলাম। এর আগে আমরা মানববন্ধনের জন্য পুলিশকে জানালে তারা আমাদের মানববনন্ধন করতে দেয়নি। সারা বামনাতে টহল বসিয়ে আমাদের ভয়ভীতি দেখিয়েছে। আজ যখন শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন শুরু করেছি তখন প্রথমে পুলিশ এসে আমাদের ব্যানার নিয়ে যায়। পরে ওসি ইলিয়াস এসে ওসি প্রদীপের চেয়েও ভয়ংকর রূপ ধারণ করে আমাদের উপর লাঠিচার্জ করেন।
শিক্ষার্থী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, পুলিশ এভাবে জঘন্যতমভাবে গালিগালাজ ও অহেতুক লাঠিচার্জ করতে পারে আমরা জীবনে প্রথম দেখেছি। ওসি মানববন্ধনে থাকা শিক্ষার্থী ও সিফাতের নানা এনায়েত কবির হাওলাদারকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেছে যেটা মোটেও কাম্য নয়। সিফাতের নানা এনায়েত কবির হাওলাদার বলেন, পুলিশের আজকের ভূমিকা খুবই দুঃখজনক। আমি এখন আমার নাতিকে নিয়ে সংশয়ে আছি।
বামনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইলিয়াস আলী তালুকদার বলেন, আমাদের অনুমতি না নিয়ে কতিপয় দুষ্কৃতিকারী সড়কে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে এবং রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করতেছে এমন সংবাদ পেয়ে আমি মানববন্ধনটি বন্ধ করে দেই।
এদিকে পুলিশের গুলীতে নিহত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের সঙ্গে থেকে গ্রেপ্তার স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির দুই শিক্ষার্থী ও চলচ্চিত্রকর্মী সাহেদুল ইসলাম সিফাত এবং শিপ্রা দেবনাথের জীবননাশের আশঙ্কা করছেন স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা। তাঁরা দুই শিক্ষার্থীকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
এই দুই শিক্ষার্থীর মুক্তিসহ চারদফা দাবিতে গতকাল শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়টির রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী ক্যাম্পাসের সামনে মানববন্ধন ও মিছিল করেছেন একদল শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয়টির ফিল্ম ও মিডিয়া স্টাডিজ এবং স্ট্যামফোর্ড ফিল্ম স্টুডেন্ট সিনে ফোরামের উদ্যাগে এই কর্মসূচি পালিত হয়।
চার দফা দাবি তুলে ধরেন বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র সানাউল কবীর সিদ্দিকী। ওই দুই শিক্ষার্থীর মুক্তি ছাড়াও অন্য দাবির মধ্যে রয়েছে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার, ওই দুই শিক্ষার্থীকে মামলার অভিযোগ থেকে অব্যাহতি, দুই শিক্ষার্থী ও তাঁদের পরিবারকে সামাজিকভাবে নিরাপত্তা প্রদান। ওই দুই শিক্ষার্থী মুক্তি পেয়ে বাসায় না ফেরা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়।
পুলিশের গুলিতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় আটক শিপ্রা দেবনাথ ও সাহেদুল ইসলাম সিফাতের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সিদ্ধেশ্বরী, রমনা , ঢাকা, ৮ আগস্ট। ছবি: দীপু মালাকার
পুলিশের গুলীতে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান নিহত হওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার শিপ্রা দেবনাথ ও সাহেদুল ইসলাম সিফাতের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। সিদ্ধেশ্বরী, রমনা, ঢাকা, ৮ আগস্ট। ছবি: দীপু মালাকার
মানববন্ধনে উপস্থিত একজন ছাত্র বললেন, মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খানের হত্যার ঘটনায় সরাসরি প্রত্যক্ষদর্শী হলেন সিফাত। এ জন্য জীবননাশের আশঙ্কা বেশি করছেন তাঁরা।
গত ৩১ জুলাই রাতে মেজর (অব.) সিনহা ও সাহেদুল টেকনাফের মেরিন ড্রাইভ সড়ক ধরে যাচ্ছিলেন। বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর তল্লাশিচৌকিতে পুলিশের গুলীতে নিহত হন সিনহা মো. রাশেদ খান। ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার করা হয় সাহেদুলকে। তিনি ও শিপ্রা দেবনাথ দুটি আলাদা মামলায় এখন কারাগারে।
Check Also
ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়
দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …