ক্রাইমবার্তা রিপোট : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক এবং তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্য খুন হওয়ার ঘটনায় কয়েকজন পদত্যাগী জুনিয়র অফিসারসহ উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শুক্রবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দিয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর আয়োজিত মিলাদ ও দোয়া মাহফিলে প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে এ কথা বলেন। সমাজসেবা অধিদপ্তর জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে এই বিশেষ মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। খবর ইউএনবির
কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কিছু পদচ্যুত সদস্য এবং কিছু উচ্চপদস্থ সদস্য সেখানে ছিলেন, যারা এই ষড়যন্ত্রের (তার পরিবারের সদস্যদের সাথে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার) সাথে জড়িত ছিলেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সামরিক সচিব কর্নেল জামিল উদ্দিন আহমদ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন এবং তার ভাই লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল সেনাবাহিনীর কর্মকর্তা ছিলেন। দুজনকেও সেদিন নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল।
তিনি উল্লেখ করেন, তার ছোট ভাই শেখ রাসেলের তখন মাত্র দশ বছর। তার স্বপ্ন ছিল সেনাবাহিনীতে যোগদান করার।
তিনি বলেন, ‘তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস হলো তাকে (রাসেল) সেনাবাহিনীর সদস্যরা নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। আমি এখনও তার অপরাধ কী ছিল তার উত্তর অনুসন্ধান করছি, আমি জানি না তার অপরাধ কী ছিল।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খুনিদের তৎকালীন সরকার বিভিন্ন বড় বড় জায়গায় চাকরি দিয়ে পুরস্কৃত করেছিল।
তিনি বলেন, ‘আমি এই ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে চাই। আমরা সর্বদা সজাগ থাকি যাতে দেশের মানুষ নিরাপদে থাকতে পারে, সুন্দর জীবনযাপন করতে পারে এবং এমন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে যেখানে সকল মানুষ তাদের অধিকার ভোগ করবে।’
এই প্রসঙ্গে তিনি স্মরণ করেন, হত্যার পর বিচারের দাবি করা হলে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে বাধা দেয়া হয়েছিল। শেখ হাসিনা ১৫ আগস্ট হত্যার বর্ণনা দিয়ে বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা এবং তাদের পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল।
আবেগপ্রবণ কণ্ঠে শেখ হাসিনা বলেন, তার ছোট বোন এবং তিনি নিজে খুনিদের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারেননি এবং এমনকি বিচার দাবিও করতে পারেননি।
প্রধানমন্ত্রী এতিম ও দুর্দশাগ্রস্ত শিশুসহ যারা পিছিয়ে রয়েছেন তাদের জীবন অর্থবহ নিশ্চিত করার জন্য তাদের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। এ বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে এই লক্ষ্যে সততা, ত্যাগ ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করার আহ্বান জানান। শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সরকার সব মহলের মানুষের কল্যাণে সব সময় কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী সকলকে অনাথ, প্রবীণ, অটিস্টিক ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পাশাপাশি যারা এখনও পিছিয়ে রয়েছেন তাদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। এতিমদের কল্যাণে তার সরকারের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের নিজের পায়ে দাঁড়াতে বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে।
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, এতিমদের বাবা-মা বা অভিভাবক নেই ভাবা উচিত নয়, বরং তাদের আরও ভালো জীবিকা নির্বাহের জন্য সরকার তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী প্রবীণদের জন্য আগে প্রবর্তিত ‘শান্তি নিবাশ’ উল্লেখ করে বলেন, আগামী দিনে এই প্রকল্পটি পুনরায় চালু করা হবে।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় ও এর বিভিন্ন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে অংশ নেন।
এর আগে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালো রাতে শহীদ হওয়া বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ুর পাশাপাশি দেশ ও জাতির অব্যাহত শান্তি, অগ্রগতি ও সমৃদ্ধির জন্যও দোয়া কামনা করা হয়।