ক্রাইমবার্তা রির্পোট: তালা: সাতক্ষীরা সংবাদদাতা: তালায় মাছ চুরির অভিযোগে ছেলেকে মারধর করা কথা শুনে তাঁকে বাঁচাতে চিংড়িঘেরে ছুটে গিয়েছিলেন বাবা। কিন্তু সেখানে যাওয়ার পর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের ঘেরের লোকজন বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খলিলনগর ইউনিয়নের হাজরাকাটি উত্তর বিলে। এ ঘটনায় তালা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার মশিয়ার রহমানকে আটক করেছে পুলিশ।
মারা যাওয়া ব্যক্তির নাম লুৎফর নিকারী (৬০)। তিনি তালা উপজেলার জিয়ালা নলতা গ্রামের বাসিন্দা। লুৎফরকে হত্যার অভিযোগ তুলে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমানের ফাঁসির দাবিতে জিয়ালা নলতা গ্রামের কয়েক শ মানুষ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে আটটায় উপজেলা শহরে মিছিল করেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, তালার হাজরাকাটি উত্তর বিলের ৬০ বিঘা জমিতে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমানের একটি চিংড়িঘের রয়েছে। সোমবার রাতে ওই ঘের থেকে মাছ চুরির অভিযোগে সেলিম নিকারীকে আটক করে মারধর করছিলেন ঘেরের লোকজন। এ খবর শুনে তাঁর বাবা লুৎফর নিকারী ছেলেকে উদ্ধারের জন্য সেখানে যান। এ সময় তাঁকেও ঘেরের লোকজন বেদম পিটুনি দেন। একপর্যায়ে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন। এ সময় ওই হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক রওশন দায়িমী তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
হত্যার ঘটনায় নিহতের ছেলে সেলিম নিকারী তিন জনের নামে হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলার আসামীরা হলেন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সরদার মশিয়ার রহমান ,তালা সরকারী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি শেখ তুহিন ও রনি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা ও মৃত লুৎফর নিকারীর ছেলে সেলিম নিকারী বলেন জানান, নিহত লুৎফর নিকারীর ছেলে সেলিম নিকারী সমরকারী খালে মাছ ধরছিল। এ সময় পাশ^বর্তী মশিউর রহমানের ঘের থেকে সে মাছ চুরি করেছে বলে অভিযোগ করা হয়। মশিউর রহমানের ঘের কর্মচারী রনি ও কয়েকজন সেলিমকে মারধর করে ভাইস চেয়ারম্যানের কাছে নিয়ে যায়। এ খবর পেয়ে সেলিমের বাবা লুৎফর নিকারী তার বাড়িতে যান। এসময় ভাইস চেয়ারম্যান মশিউর রহমান, তালা সরকারি কলেজের ছাত্রলীগ সভাপতি তুহিন ও ঘের কর্মচারী রনি সহ কয়েকজন লুৎফর নিকারী ও তার ছেলে সেলিমকে লাঠিসোটা দিয়ে বেপরোয়াভাবে মারধর করতে থাকে। এক পর্যায়ে লুৎফর নিকারীর গলায় গামছা পেচিয়ে তার শ^াসরোধ করা হয়। কিছুক্ষন পর তিনি জ্ঞান হারালে দুজনকেই তালা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার লুৎফর নিকারীকে মৃত ঘোষনা করেন।
নিহতের ভাতিজা জেয়ালা নলতা গ্রামের রুহুল আমিন নিকারী জানান, রাতে নলবুনিয়া বিলের সরকারি খালে তার চাচাতো ভাই সেলিম নিকারী মাছ ধরছিল। ওই খালের সঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যান সরদার মশিয়ার রহমানের মাছের ঘের রয়েছে। সেলিম মাছ ধরার সময় মশিয়ারের সহযোগী রনি মাছ চুরির অভিযোগে তাকে আটক করে। এরপর সরদার মশিয়ার রহমান ঘটনাস্থলে পৌঁছে রনি ও তার অপর সহযোগী তুহিন শেখকে নিয়ে সেলিমকে মারপিট করে।
তিনি আরও বলেন, মারপিটর ঘটনাশুনে সেলিম নিকারীর বাবা লুৎফর নিকারী ঘটনাস্থলে দৌঁড়ে যায়। সেখানে যাওয়া মাত্রই সরদার মশিয়ার, তুহিন ও রনি একত্রে তাকেও মারপিট করে।
পরে গ্রাামবাসী গিয়ে লুৎফর রহমানকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়। সেলিমকেও তার পাশে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায়।
তবে আটক ঘের মালিক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান সরদার মশিয়ার রহমানের দাবী, তিনি ওই সময়ে ঘেরে ছিলেন না। মৃত লুৎফর রহমানের ছেলে সেলিম নিকারী তার মৎস্য ঘেরে মাছ চুরি করতে আসলে ঘেরের কর্মচারীরা তাকে হাতে নাতে ধরে ফেলে। তাছাড়া মৃত লুৎফর রহমান নিকারীকে মারপিটও করা হয়নি। তিনি অসুস্থ্য ছিলেন।
তালা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রাজীব সরদার জানান, তাকে মৃত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়েছিল। তবে নিহতের শরীরের কোথাও আঘাতের চিহ্ন নেই।
সোমবার রাত ১২টার দিকে লুৎফর নিকারীর লাশ দেখতে যান ভাইস চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান। তখন তাঁর ছেলে সেলিম নিকারী পুলিশের কাছে অভিযোগ করেন, সরদার মশিয়ারই তাঁর বাবাকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।
তালা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ মেহেদী রাসেল জানান, হত্যার ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। যার মামলা নং ৭, তারিখ ১৮-৮-২০ ইং। এই মামলায় সরদার মশিয়ার রহমানকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। তিনি আরো জানান, নিহতের লুৎফর নিকারীর লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরার তালা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার হুমায়ন কবীর বলেন, এ ঘটনায় তালা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমানকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের আটকের চেষ্টা চলছে। আবু সাইদ বিশ্বাস:সাতক্ষীরা: ১৮/০৮/২০২০