আবু সাইদ বিশ্বাসও রুহুল কুদ্দুস:আশাশুনি (সাতক্ষীরা) প্রবল জোয়ারে উপকূলে বাঁধ ভেঙ্গে সাতক্ষীরার বস্তৃণী অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ঘর বাড়ি ছেড়ে উচ্চু স্থানে আশ্রায় নিয়েছে হাজারো মানুষ। এক দিকে আকাশ পানি অন্যদিকে সমুদ্রের লোনা পানি বসতবাড়িতে ঢুকে পড়ায় নাস্তানাবুধ গোটা জেলা। গত দ’ুদিনের টানা বৃষ্টি ও প্রবল জোয়ারে জেলার নি¤œাঞ্চল পানিতে ভাসতে। পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে প্রায় পঁচ লক্ষাধীক মানুষ। দিনভর বাঁধ রক্ষার চেষ্টা করেও প্রবল জোয়ারে কাছে অসহায় হতে হচ্ছে উপকূল বাসির। স্থায়ী টেকশই বেঁড়ি বাঁধের নানা আশ্বাসের পরও বাস্তবে তা দেখা পায়নি ক্ষতিগ্রস্থরা। ফলে নিদারুন কষ্টে দিনাপাতিত করছে তারা। হুহু করে নতুন নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করায় আতঙ্ক বাড়ছে।
ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের রেশ কাটতে না কাটতেই উপকূলীয় মানুষ গুলোর বেঁচে থাকার স্বপ্ন ম্লান করে দিল। নদীর প্রবল জোয়ারের চাপে রিং বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয়েছে ছয়টি ইউনিয়নের শতাধীক গ্রাম। অন্য দিকে টানা আকাশ বন্যায় জেলার নিম্মাঅঞ্চলের বেশির ভাগ অংশ প্লাবিত হয়ে পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে কয়েক লক্ষ মানুষ
শুক্রুবার প্রবেশ করা পানিতে আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর ও শ্রীউলা ইউনিয়ন পানির মধ্যে ডুবে গেছে । এর আগে বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) দুপুরে শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা ইউনিয়নের লেবুগুনিয়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়।
গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল ইসলাম জানান, কপোতাক্ষের প্রবল জোয়ারের তোড়ে লেবুগুনিয়া এলাকায় বাঁধ ভেঙে যায় সেই জায়গাটি এলাকাবাসী স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামত করে আসার পর শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে তার পাশে দুটি স্থানে আবারও ভেঙে গেছে। লেবুগুনিয়া, চকবারা, গাবুরা ও খোলপেটুয়া গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে হাজারো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, বাঁধ মেরামতে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনী নভেম্বরের কাজ শুরু করবে।
আম্পান দুর্গত আশাশুনির প্রতাপনগর ও শ্রীউলার অর্ধেক মানুষ গত ৩ মাস ঘর ছাড়া। কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে, কেউ বেড়িবাঁধে, আবার কেউ জোয়ার সময় উচু স্থানে থেকে ভাটিতে পুরাতন ভিটেতেই বসবাস করছিল। কিন্তু সেটাও আর রইলো না। আমাবশ্যায় খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদের পানি বেড়ে সব এলাকাই ভেসে গেছে।
অন্যদিকে আশাশুনিতে কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে অর্ধশত গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
আশাশুনি উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী জানান, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা বাঁশ দিয়ে রিং বাঁধ দিয়েছিলেন। সেই বাঁধ সবই ভেঙে গেছে জোয়ারের তোড়ে। কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে শ্রীউলা ও প্রতাপনগর ইউনিয়ন পুরোপুরি প্লাবিত হয়েছে। এতে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শ্রীউলা ইউনিয়নের হাজরাখোলা এলাকায় ও প্রতাপনগর ইউনিয়নের কুড়িকাওনিয়া, হিজলিয়া, কোলা, চাকলা, হরিশখালী এলাকার বাঁধ ভেঙে গোটা এলাকা প্লাবিত হয়েছে।তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের সময় এই বাঁধগুলো ভেঙে যায় আজও মেরামত করতে পারিনি। নদীর জোয়ারের পানিতে আবারও নতুন করে প্লাবিত হয়েছে গোটা এলাকা। এছাড়া আশাশুনি সদরে দয়ারঘাট জেলেখালী এলাকায় বাঁধ ভেঙে সেখানেও পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ।
উপজেলার আশাশুনি, শ্রীউলা ও প্রতাপনগর ইউনিয়নের হাজার হাজার ঘরবাড়ি গত ২০ মে আম্পানের তান্ডবে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে প্লাবিত হয়। সেই থেকে এলাকার মানুষ পানিতে নাকানি চুপানি খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করে আসছে।
এদিকে সাতক্ষীরা শহরের পূর্বাংশের মাঠপাড়া এলাকা থেকে বদ্দিপুর পর্যন্ত এবং পশ্চিমাংশের ইটাগাছা হতে রসুলপুর পর্যন্ত নি¤œাঞ্চল গত কয়েক মাস পানিতে নিমজ্জিত ছিল। মৎস্য ঘেরের কারণে এসব এলাকার পানি নিষ্কাশনের প্রায় সকল পথ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বহু মানুষের গৃহ ছাড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে। রোপা আমন খেত তলিয়ে গেছে। সবজিসহ অন্যান্য ফসলেও ক্ষতি হয়েছে।
শ্যামনগর পানি উন্নয়ন বোর্ড গাবুরা ইউপির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজ্জাদুর রহমান বলেন গাবুরার লেবুবুনিয়া ৪টি পয়েন্টে আনুমানিক ১৩০ ফিট বেড়ী বাঁধ ভেঙ্গেছে। ভাঙ্গনকৃত স্থানটি মেরামতের জন্য জিও ব্যাগ,বাঁশ ও প্রয়োজনীয় মালামাল পেীছে গেছে। স্থানীয়দের সহায়তায় বেড়ী বাঁধ সংস্কার কাজ দ্রুত শুরু হবে।
শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুজর গিফারী বলেন, গাবুরা এলাকার বেশ কয়েকটি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। জোয়ারের সময় পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। বাঁধ সংস্কারের জন্য কাজ শুরু করা হয়েছে। গাবুরার লেবুবুনিয়া ভাঙ্গনকৃত স্থান মেরামতের জন্য ২ হাজার জিও ব্যাগ জরুরী ভিত্তিতে প্রেরণ করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী (শ্যামনগর) আবুল খায়ের বলেন, ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের পর লেবুগুনিয়ায় স্থানীয় জনগণ ও প্রশাসন মিলে একটি রিং বাঁধ দিয়েছিল। সেটির ছয়টি পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে। সেগুলো মেরামতে কাজ চলছে। শুক্রবার দুপুরের দিকে আরও দুইটি পয়েন্টে ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। সংস্কারের জন্য আমরা কাজ শুরু করেছি।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী (আশাশুনি) সুধাংশু জানান, চাকলা, হিজলা, কোলাসহ বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। চাকলা হিজলা ও কোলা এলাকায় বাঁধ সংস্কারের জন্য সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যেহেতু বর্ষাকাল চলছে সেজন্য সেনাবাহিনী কাজ শুরু করেনি। কাজের পরিবেশ পাওয়া মাত্রই তারা বাঁধ রক্ষার কাজ শুরু করবে। তিনি বলেন, বর্তমানে যেসব স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে সেসব স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে বাঁধ সংস্কারের কাজ অব্যাহত রেখেছে।
আবু সাইদ বিশ্বাস:সাতক্ষীরা: ২১/০৮/২০২০