জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে রক্ষা পেল চৌগাছার প্রাথমিকের সহঃশিক্ষকের সংসার

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট( চৌগাছা) যশোরঃযশোরের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের হস্তক্ষেপে রক্ষা পেলো চৌগাছার বহিলাপোতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আসলাম উদ্দিনের সংসার। নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে তিনি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর ৩শ টাকার স্ট্যাম্পে এ বিষয়ে একটি লিখিত অঙ্গীকার নামা দিয়েছেন। গত ১৩ আগস্ট শিক্ষককের স্ত্রীর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বরাবর করা অভিযোগ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হয়। ওইদিনই উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ওই শিক্ষককে নোটিশ করেন। পরে শিক্ষা অফিসারের কার্যালয়ে এ বিষয়ে সমাধান হয়।
জেলা প্রাথমক শিক্ষা অফিসারের নিকট লিখিত অঙ্গিকার নামায় তিনি বলেন গত ২৯ জুলাই আমার স্ত্রী আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দেন তা আংশিক সত্য। আমি গত দুই বছর ধরে আমার স্ত্রী ও সন্তানদের ভরন পোষণ আংশিক প্রদান করি। আপনার কাছে অভিযোগের আলোকে গত ১৩ আগস্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসার আমাকে একটি নোটিশ প্রদান করেন। নোটিশের পরিপেক্ষিতে গত ১৫ আগস্ট (প্রকৃতপক্ষে ১৮ আগস্ট) উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে আমার স্ত্রী, সন্তান ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে অঙ্গিকার করি যে, ভবিষ্যতে আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানদের সহিত সুখে শান্তিতে বসবাস করিব। এখন থেকে আমি আমার স্ত্রী ও দুই সন্তানের ভদ্রোচিতভাবে ভরণ পোষন করিব। যখন যাহা প্রয়োজন তাহা সাধ্যের মধ্যে থাকিয়া দিতে বাধ্য থাকিব। ইহাতে কোন ভুল হইবে না। ভুল করিলে তাহারা আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে পারিবে। আমার স্ত্রী (নামউল্লেখ করে) ও আমার দুই সন্তানকে (দু’জনেরই নাম উল্লেখ করে) অহেতুক শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করিলে আমার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করিত পারিবে। যদি করি তাহা হইলে আমার বিরুদ্ধে যে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করিলে তাহা মাথা পাতিয়া গ্রহণ করিব। আমি আমার স্ত্রী ও সন্তানদের ভবিষ্যতে কোনদিন ঘরের মধ্যে কিংবা বাহিরে রাখিয়া তালাবদ্ধ করিব না। আমি অসামাজিক কর্মকান্ডে লিপ্ত থাকতে পারি বলে আমার স্ত্রী আমাকে অহেতুক সন্দেহ করে। যদি কেউ আমার চরিত্রের বিষয়ে আমার স্ত্রীর নিকট অভিযোগ করে তাহা হইলে তাহার সত্যতা যাচাই পূর্বক আইনের আশ্রয় লইতে পারিবে। আমার স্ত্রী তাহার আত্মীয় স্বজনদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখিয়া চলিবে, তাহাতে আমার কোন আপত্তি থাকিবে না। তবে তাদের বাড়িতে যাওয়া আসার ব্যাপারে আমার আপত্তি থাকিলে তাহা মানিয়া চলিতে হইবে। সর্বসম্মতিক্রমে উভয়ে স্বাক্ষর করিলাম। উপজেলা শিক্ষা অফিস ও ওই শিক্ষকের মেয়ে নিশ্চিত করেছেন নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করা এই অঙ্গীকারনামা শুক্রবার উপজেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে। উপজেলা শিক্ষা অফিসার সেটি জেলা শিক্ষা অফিসারের নিকট পৌছে দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে শিক্ষক আসলাম উদ্দিনের বিরুদ্ধে পরকীয়া প্রেমে আসক্তি, স্ত্রী-সন্তানদের ভরণ পোষন না দেয়া, তাদের শারীরিকভাবে নির্যাতন করা এবং নিজ বাড়িতে তালাবদ্ধ করে রাখার অভিযোগ করে ২৯ জুলাই যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট লিখিত অভিযোগ করেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার বিষয়টি সরেজমিনে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য চৌগাছা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে নির্দেশ দেন। পরে ১৩ আগস্ট নোটিশের মাধ্যমে ১৮ আগস্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসে এ বিষয়ে আপোষ মিমাংশা হয়। সেখানে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও চৌগাছা পৌরসভার ৬ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আতিয়ার রহমান, চৌগাছা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক অমেদুল ইসলামসহ সাংবাদিক ও গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত অভিযোগে ওই শিক্ষকের স্ত্রী দাবি করেছিলেন শিক্ষক আসলাম উদ্দিনের সাথে ৩০ (ত্রিশ) বছর আগে তার বিয়ে হয়। তাদের ২টি সন্তান আছে। মেয়ে (নাম উল্লেখ করেছেন) এম, এ পাশ করেছে। এখনও বিয়ে হয়নি। ছেলে (নাম উল্লেখ করেছেন) নবম শ্রেণির ছাত্র। তিনি লেখেন ‘আমার স্বামী দীর্ঘদিন যাবৎ পরকীয়া প্রেমে আসক্ত হইয়া বিগত ৪/৫ বৎসর যাবৎ আমাদের উপর অত্যাচার নির্যাতন করিয়া আসিতেছে। প্রায়ই আমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করিয়া আহত করিলে আমার সন্তানদের সাহায্যে ডাক্তারের শরণাপন্ন হই। যাহার প্রমাণ আমার দুই সন্তান দিবে। শত অত্যাচার নির্যাতন করিলেও সন্তানদের মুখের দিকে চাহিয়া আমি স্বামীর সংসারে আছি। বিগত ৪ বৎসর যাবৎ আমার স্বামী আমাকে ও সন্তানদের কোন প্রকার ভরণ পোষন দেয় না। তাই আমার বাবা মায়ের সহযোগীতায় সন্তানদের লইয়া মানবেতর জীবনযাপন করিতেছি। আমার স্বামী যখন তখন ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখে। আমি সন্তানসহ স্বামীর বাড়িতে মানবেতর জীবনযাপন করিতেছি। তাহার অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করিয়া অদ্যাবধি তাহাকে ফিরাইতে পারি নাই। গত জানুয়ারী মাস থেকে তার অত্যাচারের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় আমি ও আমার সন্তানসহ সহ্যসীমা অতিক্রম করায় মানবিক কারণে আমি আপনার শরনাপন্ন হইয়াছি।
উল্লেখ্য ওই শিক্ষকের সংসারের সমস্যা সমাধানের জন্য বিগত কয়েক বছরে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে একাধিকবার মিমাংসার চেষ্টা করা হলেও শিক্ষক ও তার স্ত্রী-সন্তানদের অনড় অবস্থানের কারনে কোন সমাধান করা যায়নি। পরে ওই শিক্ষকের স্ত্রী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের নিকট তার সংসার বাচানোর আবেদন জানিয়ে আবেদন করেন।

চৌগাছা উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মহোদয়ের নির্দেশে ওই শিক্ষক ও তার পরিবারকে অফিসে ডাকি। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সামনে উভয় পক্ষ তাদের ৩০ বছরের সংসার টিকিয়ে রাখার পক্ষে অভিমত ব্যক্ত করেন। পরে ওই শিক্ষক নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট করে ৩শ টাকার স্ট্যাম্পে লিখিত অঙ্গীকার নামা দিয়েছেন ভবিষ্যতে তিনি এমন ধরনের কোন অন্যায় করবেন না। পরিবার পরিজন নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করবেন।

চৌগাছা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আতিয়ার রহমান বলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের হস্তক্ষেপে এ বিষয়ে একটি সুষ্ঠ সমাধান হয়েছে। আমি শিক্ষক পরিবারটির সমস্যা সুষ্ঠ সমাধানের জন্য জেলা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, সংশ্লিষ্ট সহকারী শিক্ষা অফিসার ও স্থানীয় সাংবাদিকদের এজন্য ধন্যবাদ জানাই।

Check Also

ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়

দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।