ক্যাইমবার্তা রিপোট: কালিগঞ্জ: কালিগঞ্জের চাম্পাফুলে পাষ- পিতা ও সৎ মায়ের লালসার কারণে হত্যাকান্ডের শিকার আরিফুলের (২০) লাশ গর্ত থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বেলা আড়াইটার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে একটি গর্ত থেকে আরিফুলের হাড় ও পরিহিত প্যান্ট উদ্ধার করা হয়। এরআগে আরিফুলের মা খালেদা খাতুন (৩৮) বাদী হয়ে ইমান আলী ও তার তৃতীয় স্ত্রী জহুরা খাতুনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেন। শনিবার বিকেলে গ্রেপ্তারকৃতরা বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে।
এজাহার ও বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, কাবিখা কর্মসূচিতে কাজ করে আরিফুল তার পিতার কাছে টাকা জমা রাখে। গত ২৪-০৬-২০২০ তারিখে মোবাইল কেনার জন্য জমানো টাকা থেকে ৬ হাজার টাকা পিতা ইমান আলীর কাছে চাইলে তিনি টাকা দিতে অস্বীকার করেন। ২৫-০৬-২০২০ তারিখে রাত সাড়ে ৮টার দিকে টাকা নিয়ে আবারও ইমান আলৗ ও জহুরা খাতুনের সাথে আরিফুলের কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে ইমান আলী মোড়ল ও তার তৃতীয় স্ত্রী জহুরা খাতুন আরিফুল ইসলামকে শ^াসরোধে হত্যা করে। লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ওই রাতে গামছা দিয়ে টেনে ভিটার এক পাশে নিয়ে খেঁজুরপাতা মুড়িয়ে আনুমানিক সাড়ে ৩ ফুট গর্ত করে লাশ পুতে রাখে ইমান আলী। এঘটনা ধামাচাপা দিতে আরিফুল নিখোঁজ হয়েছে প্রচার দিয়ে এলাকার বিভিন্ন স্থানে খুঁজতে থাকে তারা। এমনকি ছেলের নিখোঁজের বিষয়ে গত ২৭-০৮-২০২০ তারিখে কালিগঞ্জ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন ইমান আলী।
প্রতিবেশীদের সন্দেহ হওয়ায় বিভিন্ন সময়ে জিজ্ঞাসাবাদে বিভ্রান্তিমূলক কথাবার্তা বলার এক পর্যায়ে গত ৪ সেপ্টেম্বর দুপুরের পর স্থানীয় ইউপি সদস্য গোলাম কাইয়ুম ও সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা মেম্বর রাধারাণী অধিকারীসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিকট জহুরা খাতুন ও ইমান আলী জানায়, তাদের ছেলে আরিফুল প্রায় ৪ মাস আগে আত্মহত্যা করেছিল। পরবর্তীতে তাকে বসতভিটার এক কোনায় কবর দেয়া হয়েছে। ইমান আলী মোড়ল ও জহুরা খাতুনের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গাইন, ইউপি সদস্য গোলাম কাইয়ুম, সাইলুজ্জামান খান, রাধা রাণী অধিকারী, গ্রামপুলিশ ও স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতায় লাশ গুমের স্থান চিহ্নিত করে কালিগঞ্জ থানায় খবর দেয়া হয়। খবর পেয়ে অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. দেলোয়ার হুসেনের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে ইমান আলী ও জহুরা খাতুনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।
এঘটনায় আরিফুলের মা (ইমান আলীর তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী) খালেদা খাতুন বাদী হয়ে ইমান আলী মোড়ল ও ছোট বউ জহুরা খাতুনকে আসামি করে কালিগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৬, তারিখ: ০৫/০৯/২০২০ খ্রি.)। শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান ও থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম আজিজুর রহমান উপস্থিত থেকে আরিফুলের লাশ (হাড় ও পরিহিত প্যান্ট) উদ্ধার করেন। সংগৃহীত হাড় ল্যাবে পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এসএম আজিজুর রহমান।
এদিকে মামলা দুই আসামি ইমান আলী মোড়ল ও জহুরা খাতুনকে শনিবার বেলা ৩টায় বিজ্ঞ আদালতে হাজির করা হলে তারা ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেছে বলে নিশ্চিত করেছেন থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. দেলোয়ার হুসেন।