আন্তর্জাতিক ডেস্কঃপ্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান এবং ইরানের প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি মঙ্গলবার তুরস্কের আঙ্কারায় পঞ্চম তুর্কি-ইরানী উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা কাউন্সিলের বৈঠকের পর একটি যৌথ সংবাদ সম্মেলন করেন।
প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়িপ এরদোগান বলেন, তুরস্ক ও ইরানের মধ্যে আলোচনা বিপুল সংখ্যক আঞ্চলিক সমস্যার সমাধানে একটি নীতি নির্ধারণী ভূমিকা পালন করেছে।
বৈঠকের উদ্বোধনী ভাষণে রুহানি বলেন, “তুরস্ক এবং ইরান দুটি মিত্র এবংবন্ধু দেশ। আমাদের সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও এ সম্পর্ক একটি শক্তিশালী ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে আছে। অতএব, আমরা বেদনাদায়ক সময়ের মধ্যে দিয়ে গেলেও, আমাদের সম্পর্কের কোন ক্ষতি হয়নি। উভয় দেশের মধ্যে সুপ্রতিবেশি সুলভ সম্পর্ক বিদ্যমান ।আমাদের সম্পর্ক একই সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ, পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং অবশ্যই পারস্পরিক স্বার্থের উপর দাঁড়িয়ে আছে।
এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতার জন্য তুরস্ক-ইরান সম্পর্ক গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করে রুহানি আরও বলেন: “উভয় দেশের জনগণ সবসময় শান্তি এবং বন্ধুত্বকে সমর্থন করে। অতীতে এবং বিশেষ করে গত সাত বছরে উভয় দেশ আমাদের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও উন্নত ও শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা অবলম্বন করেছে। তিনি বলেন, “ইরান এবং তুরস্ক এই অঞ্চলের সবচেয়ে ভূ রাজনৈতিক গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত।
ভিডিও লিংকের মাধ্যমে এ বছরের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে এরদোগান জোর দিয়ে বলেছেন যে করোনাভাইরাস মহামারীর চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও এই সভা আয়োজন আমাদের একটি শক্তিশালী সদিচ্ছার পরিচয় বহন করে।”মহামারী পরিস্থিতি শিথিল করার সাথে সাথে, আমি বিশ্বাস করি আমাদের সম্পর্ক আবার আগের স্তরে পৌঁছাবে। মহামারীর প্রাথমিক সময়ে আমরা ইরানকে যে চিকিৎসা সাহায্য এবং সরঞ্জাম সরবরাহ করেছি, আমরা দেখিয়েছি যে আমরা ইরানের জনগণের পাশে আছি,” উল্লেখ করে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, আশা করি উভয় দেশই এই মহামারীর ক্ষতি কাটিয়ে উভয় দেশের সম্পর্ক আগের চেয়ে শক্তিশালী হবে। “
“আমি বিশ্বাস করি যে আজ আমরা যে সিদ্ধান্ত নেব তা আমাদের বর্তমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে গতি লাভ করবে। আমাদের মন্ত্রীবৃন্দ এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন।” এরদোগান আরও বলেন যে,‘ মহামারী শেষ হওয়ার সাথে সাথে তিনি ইরানের প্রেসিডেন্টের সাথে ব্যক্তিগতভাবে সাক্ষাৎ করতে চান।’
এটা ছিল উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা কাউন্সিলের পঞ্চম সভা। এর আগে ২০১৮ সালে রাজধানী আঙ্কারায় কাউন্সিলের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। তুরস্ক-ইরানী উচ্চ পর্যায়ের সহযোগিতা কাউন্সিল, যা ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়,যা তুরস্ক-ইরান সম্পর্কের একটি কাঠামোগত ভিত্তি প্রদান করেছে।
সম্মেলনের পর একটি ঘোষণায় উভয় পক্ষই সু প্রতিবেশী সুলভ সম্পর্ক উন্নয়নে তাদের দৃঢ় সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করেছে। তারা কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঘনিষ্ঠ পরামর্শ এবং সহযোগিতার উপর জোর দেন যাতে নাগরিকদের মহামারী প্রতিরোধ ও কার্যক্রমের জন্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা, ওষুধ এবং সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য আরো ভালো প্রস্তুতি নিশ্চিত করা যায়।
উভয় দেশ তাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বাড়ানো সহ যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন, যৌথ সড়ক পরিবহন কমিটি, এবং একই সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতার নতুন পরিকল্পনা প্রণয়ন ব্যাপারে ঐক্যমত পৌছেছে।।
অন্যদিকে পিকেকে এবং তার ইরানী সহযোগী কুর্দিস্তান ফ্রি লাইফ পার্টি (পিজাক) এবং এই অঞ্চলের সকল সন্ত্রাসী সংগঠন তুরস্ক এবং ইরান উভয়ের নিরাপত্তার জন্য একটি সাধারণ হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা সন্ত্রাসবাদ এবং সংগঠিত অপরাধ প্রতিরোধে যৌথ অপারেশনসহ ফলাফল ভিত্তিক সহযোগিতার জন্য সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছে। তুরস্ক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক তালিকাভুক্ত পিকেকে তুরস্কের বিরুদ্ধে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সন্ত্রাসী অভিযান চালিয়েছে। তারা নারী ও শিশুসহ প্রায় ৪০,০০০ লোকের মৃত্যুর জন্য দায়ী।
উপরন্তু, দুই দেশ সিরিয়ার গৃহযুদ্ধকে স্পর্শ করেছে, যেখানে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তুরস্ক এবং ইরান আস্তানা সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তের আলোকে সকল চুক্তির সাথে সামঞ্জস্য রেখে সিরিয়ার সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, ঐক্য এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি তাদের দৃঢ় অঙ্গীকারের উপর জোর দিয়েছে। তারা তাদের দৃঢ় বিশ্বাস পুনর্ব্যক্ত করেছে যে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের রেজুলেশন- ২২৫৪ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সিরিয়ার সংঘাতের সমাধান করা যাবে।
তুরস্ক, ইরান এবং রাশিয়া নয় বছর ব্যাপী যুদ্ধের স্থায়ী সমাধান খুঁজতে সিরিয়ার যুদ্ধবাজ পক্ষকে একত্রিত করার জন্য আস্তানা প্রক্রিয়া শুরু করে। প্রধান এজেন্ডা হচ্ছে সাংবিধানিক ব্যবস্থা, রাজনৈতিক রূপান্তর, নিরাপত্তা এবং পুনর্বাসন। জেনেভায় জাতিসংঘের পৃষ্ঠপোষকতায় শান্তি আলোচনার সুবিধার্থে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাসে তুরস্কে আস্তানা প্রক্রিয়ার প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
সম্মেলনে ইরাক, ফিলিস্তিন-ইজরায়েল সংঘাত এবং আফগানিস্তানের বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়। উভয় দেশই ইজরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের একটি স্থায়ী সমাধানের জন্য তাদের দৃঢ় সমর্থন ব্যক্ত করেছে এবং তার রাজধানী হিসেবে কুদস (জেরুজালেম) সহ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার কথা পুনরাবৃত্তি করেছে। উল্লেখ্য যে, ইজরায়েল কর্তৃক ১৯৬৭ সালে পূর্ব জেরুজালেম দখল এবং পরে তাদের গৃহীত অত্যন্ত বিতর্কিত পদক্ষেপ এখনও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দ্বারা স্বীকৃত নয়।
(ডেইলি সাবাহ অবলম্বনে, মুহাম্মাদ ওবায়দুল্লাহ)
Check Also
ভোমরা বন্দরে চার মাসে ৪০০ কোটি টাকা আয়
দক্ষিণবঙ্গ সাতক্ষীরার আধুনিক নিরাপদ ও পরিবেশ বান্ধব বাণিজ্যিককেন্দ্র ভোমরা স্থল বন্দর। আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র্য …