গত ১১ বছরেও টেকসই বেড়িবাঁধ প্রকল্প আলোর মুখ দেখেনি

খুলনা অফিস : গত ১১ বছর ধরে খুলনার সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় জনপদ কয়রায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ প্রকল্প আটকে আছে। সর্বশেষ তিন মাস আগে দু’টি প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।

এলাকাবাসী জানায়, ২০০৭ সালের ১৫ নবেম্বরের সিডরের জলোচ্ছ্বাসের বাঁধ ভেঙে প্লাবিত হয় কয়রা উপজেলা। ২০০৯ সালের ২৫ মে আইলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়। এরপর ২০১৯ সালের ১০ মে ফনী ও ১০ নবেম্বরের বুলবুলে বাঁধ ভেঙেও ক্ষতি হয়। এ বছরের ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্পানে ৪ ঘণ্টাব্যাপী তান্ডবে বাঁধ, ঘরবাড়ি সব তছনছ হয়ে যায়। উপজেলার ২১টি স্থানে বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এর মধ্যে প্রথম দিকে ৯টি স্থান ভেঙে লোকালয়ে কপোতাক্ষ ও শাকবাড়িয়া নদীর পানি প্রবেশ করে। পরে আরও ৫টি স্থান ভেঙে যায়। এতে ৪২টি গ্রাম লবণ পানিতে প্লাবিত হয়।  ৫১ হাজার ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এমন পরিস্থিতিতে ২০ আগস্ট জোয়ারের পানিতে আবারো বাঁধ ভেঙে কয়রায় চারটি গ্রাম প্লাবিত হয়ে দুর্ভোগে পড়েছে অন্তত ১০ হাজার মানুষ। কপোতাক্ষ আর কয়রা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে প্লাবিত হয়েছে ২ নম্বর কয়রা, গোবরা, ৩ নম্বর কয়রা ও বেদকাশি গ্রাম।

পাউবোর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, উপকূলীয় এলাকার টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণে ৮ হাজার কোটি টাকার ৪টি প্রকল্প গ্রহণ করার কথা জানানো হয়। এরপর চলতি অর্থ বছর থেকে কাজ শুরুর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।  ৪টি প্রকল্পের মধ্যে দু’টি খুলনার এবং অপর দু’টি সাতক্ষীরায়।

গোবরা গ্রামের মফিজুর রহমান বলেন, আমরা জোয়ারে ডুবি আর ভাটায় ভাসি। ঝড়-বৃষ্টি হলেই বছরের অধিকাংশ সময় এই অবস্থা হয়।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, আইলা থেকে আম্পান ১১ বছর। এখন পর্যন্ত প্রাপ্তির খাতা কিন্তু শূন্য। এই অবহেলা মেনে নেওয়ার মতো না। স্বেচ্ছাশ্রমে কয়রার মানুষ যে রিং বাঁধগুলো দিয়েছে তার ওপর একটি ঝুড়ি মাটি ফেলতে পারেনি পাউবো।  অনেক স্থান এখনও ভাঙা।

দক্ষিণ বেদকাশি ইউপি চেয়ারম্যান জি এম কবি শামছুর রহমান বলেন, তার ইউনিয়নে পাউবোর ২৭ কিলোমিটারসহ উপজেলার সিংহভাগ বেড়িবাঁধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। জাইকা ও বিশ্বব্যাংকের লোকজন ঝুঁকিপূর্ণ এসব বাঁধ কয়েকবার পরিদর্শন করেছেন। জাতীয়, আঞ্চলিক ও স্থানীয় পর্যায়ে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের ব্যাপারে অনেকবার সভা ও সেমিনার হয়েছে। কিন্তু কবে নাগাদ পাউবো টেকসই বাঁধ নির্মিত হবে তার কোন হদিস নেই।

কয়রা উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, এটা ভাঙন কবলিত এলাকা। টেকসই বেড়িবাঁধ আজও হয়নি।

এ ব্যাপারে পাউবোর ১৪/১ পোল্ডারের শাখা কর্মকর্তা মো. মশিউল আবেদীন বলেন, সরকার সুন্দরবন উপকূলীয় কয়রায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।  তবে কবে নাগাদ কাজ শুরু হবে সেটা বলতে পারব না।

পাউবো সাতক্ষীরা নির্বাহী প্রকৌশলী সুধাংশু সরকার বলেন, কয়রার ১৪/১ ও ১৪/২ পোল্ডারের দু’টি প্রকল্প পানি উন্নয়ন বোর্ডে জমা দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসে ১৪/১ পোল্ডারের প্রকল্পটি প্লানিং কমিশনে চলে গেছে। এখন একনেকে পাস হলে কাজ শুরুর বিষয়ে বলা যাবে।

Check Also

আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের খালিয়া রাস্তার বেহাল দশা।। বিপত্তিতে শতাধিক পরিবার।।দ্রুত সংস্কার দাবি 

এস,এম মোস্তাফিজুর রহমান,আশাশুনি।।আশাশুনি উপজেলার খাজরা ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড খালিয়া গ্রামের সানাপাড়ার প্রায় শতাধিক পরিবার একটি …

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

***২০১৩-২০২৩*** © ক্রাইমবার্তা ডট কম সকল অধিকার সংরক্ষিত।