ক্রাইমবাতা ডেস্করিপোটঃ ঢাকার দুইটি আসনসহ আসন্ন চারটি উপনির্বাচন ঘিরে বিএনপিতে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে। দীর্ঘদিন মাঠের রাজনীতির বাইরে থাকা নেতাকর্মীরা সম্ভাব্য প্রার্থীদের ঘিরে শোডাউনে নেমেছেন। প্রার্থীরাও নিজেদের সাংগঠনিক শক্তিমত্তা প্রদর্শন করতে সর্বোচ্চ সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে দলের হাইকমান্ডের নজর কাড়ার চেষ্টা করছেন। এর ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সমর্থকদের মধ্যে সাংঘর্ষিক পরিস্থিতিরও সৃষ্টি হচ্ছে। দলের হাইকমান্ড নেতাকর্মীদের স্বতস্ফূর্ত শোডাউন ইতিবাচকভাবে দেখলেও যেকোনো ধরনের হট্টগোলের বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে প্রতিটি ঘটনা তদন্ত করে বহিষ্কার পর্যন্ত করা হতে পারে, এমন সতর্কবার্তাও জানিয়ে
একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। পরে দলের অভ্যন্তরে নানা আলোচনার পর সেই সিদ্ধান্তে পরিবর্তন আনা হয়। কিন্তু করোনা মহামারীর মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করায় বিএনপি গত জুলাই মাসে অনুষ্ঠিত দুইটি উপনির্বাচন বর্জন করে। এর ফলে আসন্ন উপনির্বাচনগুলোতে বিএনপি অংশ নেবে কি না তা নিয়েও প্রথম দিকে এক ধরনের ধোঁয়াশা ছিল। দলের হাইকমান্ড সেই সংশয় উড়িয়ে দিয়ে নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দিয়ে ইতোমধ্যে তৎপরতা শুরু করেছে। মাঠে নেমে পড়েছে সম্ভাব্য প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ঢাকা-৫ এবং নওগাঁ-৬ আসনে উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ হবে আগামী ১৭ অক্টোবর। এরপরই অনুষ্ঠিত হবে শূন্য হওয়া অন্য দুইটি আসন ঢাকা-১৮ এবং সিরাজগঞ্জ-১ আসনে উপনির্বাচন। গত শনিবার গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এই চার আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়নপ্রত্যাশাী ২৮ জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছে বিএনপি। এর আগে দুই দিন মনোনয়ন ফরম বিক্রি ও জমা নেয়া হয়েছে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে।
সাক্ষাৎকার এবং ফরম জমা-উত্তোলনে সম্ভাব্য প্রার্থীরা ব্যাপক শোডাউন দিয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা-১৮ ও ঢাকা-৫ এর প্রার্থীরা বিপুল সমাগম ঘটিয়ে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন, জমা দিয়েছেন এবং সাক্ষাৎকার পর্বে অংশ নিয়েছেন। কার অবস্থান কতো শক্ত, এটি জানান দিতে গিয়ে প্রার্থীদের অনুসারি নেতাকর্মীদের মধ্যে হট্টগোল, মারামারির মতো ঘটনাও ঘটেছে। গত শনিবার গুলশান কার্যালয়ে সাক্ষাৎকার দিতে আসা ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী যুবদল উত্তরের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন ও মহানগর উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এম কফিল উদ্দিনের সমর্থকদের মধ্যে মারামারি হয়েছে। মাথা ফেটে রক্ত বের হতেও দেখা গেছে কয়েকজনের। এই আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী ৯ জনের মধ্যে সাতজনই এই অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য এস এম জাহাঙ্গীরকে দায়ী করেছেন। এই ঘটনার আগে এস এম জাহাঙ্গীরকে মনোনয়ন না দিতে বিগত নির্বাচনে দলের আটজন কাউন্সিলর প্রার্থী দলের দফতরে চিঠি দেন। মনোননয়নপ্রত্যাশী এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদ গতকাল বলেছেন, তার ১৫-২০ জন কর্মী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, অপ্রীতিকর এই ঘটনায় মারাত্মক ক্ষুব্ধ হয়েছে হাইকমান্ড। শনিবার সাক্ষাৎকার গ্রহণের পর ঢাকা-১৮ আসনের সব প্রার্থীকে ডেকে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এ সময় তিনি বলেন, ‘অনভিপ্রেত এই ঘটনায় তিনি নিজে হেয় হয়েছেন, দল দেশবাসীর সামনে হেয় হয়েছে। আমরা ছোট হয়েছি। এই ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে, প্রয়োজনে বহিষ্কার করা হবে।’
‘ফলাফল কী’ হবে তা জেনেও আসন্ন সব উপনির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিএনপি। দলটির দায়িত্বশীল নেতারা বলছেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশনের মুখোশ তারা বারবার উন্মোচন করতে চান বলেই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এ ছাড়া করোনায় সাংগঠনিক কার্যক্রম নেই। নির্বাচনকে ঘিরে মাঠের রাজনীতিতে গতিশীলতাও ফিরে আসতে পারে।